• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • সিঙ্গাপুরের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন হালিমা ইয়াকুব

    নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তিনি মালয় সম্প্রদায়ের ৬২ বছর বয়স্ক হালিমা ইয়াকুব। যিনি দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সোমবার দেশটির নির্বাচন বিভাগ তাকে প্রেসিডেন্ট পদে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
    স্থানীয় দৈনিক নিউ স্ট্রেইট টাইমস গতকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, অন্য সব প্রার্থী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তিনিই এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশটির প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নির্বাচনে আর কোনো যোগ্য প্রার্থী না থাকায় হালিমা ইয়াকুবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
    সিঙ্গাপুরের অষ্টম এবং প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন হালিমা। যিনি বাণিজ্য সমৃদ্ধ দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবেন। জানা গেছে, কুইন স্ট্রিটে ১৯৫৪ সালের ২৩ আগস্ট হালিমা’র জন্ম। ১৯৭০ সালে তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুলে এবং পরে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসে (এনটিইউসি) একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর তাকে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১১ সালে তিনি সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও খেলাধুলা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এর দু’বছর বাদে তিনি দেশটির সংসদে প্রথম নারী স্পিকার নিযুক্ত হন। বিবিসি।

    জার্মানির গণমাধ্যমে সু চির সমালোচনা

    মিয়ানমারের রোহিঙ্গা লোকজনের ওপর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস অভিযানে অং সান সু চির নীরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে জার্মানির পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে।

    জার্মানির শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে রোহিঙ্গা জাতিসত্তার ওপর অত্যাচার ও নিজভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা গত কয়েক দিন ধরে প্রকাশিত হচ্ছে।

    গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক স্পিগেল পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘মিয়ানমারে রক্তপাতে সুচির নীরবতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে গভীর রাতে নৌকায় ঠাসাঠাসি করে ভীত-সন্ত্রস্ত পলায়নপর মানুষ নিয়ে নদী পাড়ি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনেকে আবার খালি পায়ে কাদা মারিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত পৌঁছাচ্ছেন। অনেক পুরুষের কাঁধে বাবা-মা। প্রতিবেদনে চার দিন আগে আসা শরণার্থী আমিনার বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার কথা বলা হয়েছে। আমিনা জানিয়েছেন, এখন সে জানে না কোথায় তার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।

    বিগত সময়ে ২ লাখ ৭০ হাজার মুসলিম রোহিঙ্গার মিয়ানমারে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ ও নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত মিয়ানমারের সাবেক গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নীরবতার সমালোচনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ  অং সান সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার বাজেয়াপ্তের জন্য নোবেল শান্তি কমিটির কাছে দরখাস্ত করেছেন বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।

    জার্মানির আর এক শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘যাইট’-এ রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার ও তাদের পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। তারা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, আগামী তিন মাসে বাংলাদেশে শরণার্থীদের পুনর্বাসনে ১ কোটি ১৫ লাখ ইউরোর প্রয়োজন পড়বে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘যাইট’ পত্রিকা লিখেছে, মিয়ানমার সরকারের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও এই মানবতর ঘটনায় অং সান সু চির নীরবতা লজ্জাজনক।

    জার্মানির সুড ডয়েচে যাইটুং পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিসত্তার ওপর হামলা এবং বাংলাদেশে তাদের আশ্রয় নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।

    রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রতিবাদে মিয়ানমার জাতীয় দলের কোচের পদত্যাগ

    মিয়ানমারের চরমপন্থী বৌদ্ধ ও সামরিক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মিয়ানমারের জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ইরানি কোচ রেজা কুর্দি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে রেজা কুর্দি মিয়ানমারের জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। রোহিঙ্গাদের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
    ইরানের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির সভাপতি কিয়ামমার হাশেমী তার পদত্যাগের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গত দুই সপ্তাহে নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে এক হাজার জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে নতুন করে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে

    অক্সফোর্ডই বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়

    বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডই। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তালিকা প্রকাশ করেছে টাইমস সাময়িকী। টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, চলতি বছরও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম স্থান নিজেদের দখলে রেখেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের তালিকায় চার নাম্বারে থাকা কেমব্রিজ চলতি বছর তালিকার দুই নাম্বারে উঠে এসেছে। গত ১৩ বছরে এই প্রথমবার বিশ্বসেরার তালিকার প্রথম দুটি স্থানেই দুই ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। পঞ্চম স্থানও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির দখলে। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার প্রথম দশের ছয়টিই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। তালিকার প্রথম দশে মার্কিন ও ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আধিপত্যের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছে সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি জুরিখ। তালিকার ৯ নাম্বারে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণামূলক উৎকর্ষ, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা, বিভাগ, বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ইত্যাদি আরও নানা খুঁটিনাটি দিক বিবেচনা করে দেখা হয়েছে। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার প্রথম ২৫০টির মধ্যে কোনো ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। বিবিসি

    ‘সু চির নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়’

    মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে দেয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির প্রধান।
    সু চি’র নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেয়ার জন্য গত কিছুদিন ধরেই দাবি তুলেছেন অনেকে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার দেশে যে ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে, তাতে নিশ্চুপ ভূমিকার কারণে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
    অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে সু চি’র নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদনে সই করেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস এন্ডারসন বলেছেন, ১৯৯১ সালে দেয়া এই পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ এই পুরস্কার নরওয়ে দেয়নি। পুরস্কার দিয়েছে নোবেল কমিটি।
    তিনি আরো বলেন, কাউকে যখন এই পুরস্কার দেয়া হয়, তাকে আগের কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই দেয়া হয়। একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর কি করছেন, তা দেখা আমাদের এখতিয়ারে পড়ে না, একটা আমাদের কাজও নয়।

    আরাকানে সীমাহীন বর্বরতা

    রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ লুটতরাজ নির্যাতন ও বিতাড়ন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে : বর্মী সেনাসহ যৌথবাহিনী আরও বেপরোয়া : সীমান্তজুড়ে হাজার হাজার উদ্বাস্তুর করুণ দুঃখ শোকের ঈদ : আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৮৭ হাজার : জীবন ও উজ্জত-আব্রু বাঁচাতে পঙ্গপালের মতো ছুটছে অসংখ্য মানুষ : নিহত শত শত : নাফ নদীতে এ যাবত ৫৭ জনের লাশ উদ্ধার : গুলি-বোমায় আহত অর্ধশত রোহিঙ্গা কাতরাচ্ছে চমেক হাসপাতালে : আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী: বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতার প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই
    মিয়ানমারের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আদিবাসী রোহিঙ্গা (রো-আং) অধ্যুষিত আরাকান (রাখাইন) প্রদেশে সীমাহীন বর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্মী সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা, সীমান্তরক্ষী বিজিপি, পুলিশ এমনকি উগ্র মগদস্যুরা দিনের পর দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১১ আগস্ট থেকে সীমিতভাবে হলেও ২৪ আগস্টের কালোরাত থেকে ব্যাপক মাত্রায় প্রতিদিনই পৈশাচিক কায়দায় চালাচ্ছে দমনাভিযান। ফলে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাই স্টেট) গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা দলে দলে স্রোতের মত পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারলেও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে আরো হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্ত এলাকা ছাড়াও উখিয়া-টেকনাফের পথে ঘাটে রোহিঙ্গাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। জীবন ও ইজ্জত-আব্রুটুকু বাঁচাতে পঙ্গপালের মতো বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসা এ সকল অন্ন-বস্ত্রহীন রোহিঙ্গাদের কান্না যেন থামার মত নয়। গভীর জঙ্গল-পাহাড় ও নদী পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও পাখির মতো গুলি করে মারা হচ্ছে অনেককে। গণহত্যা, গণধর্ষণ, বৃষ্টির মতো গুলি ও বোমা বর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ নির্যাতন ও বিতাড়নসহ তাবৎ অত্যাচার-নিপীড়ন রক্তাক্ত আরাকানে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, আরাকানের অবরুদ্ধ পরিস্থিতি এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সেনা অভিযানে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নাফ নদীতে নৌকাডুবি এবং খুন করার পর নদীতে নিক্ষেপ ও সীমান্তে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার ঘটনাবলীতে এ যাবত ৫৭ জন রোহিঙ্গা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তজুড়ে হাজার হাজার ভাগ্যাহত উদ্বাস্তু ঝড়-বৃষ্টি-রোদে খোলা আকাশের নিচে দুঃখ শোকের ঈদুল আযহা অতিবাহিত করেছে। গতকাল সকালেও সীমান্তের লাগোয়া ওপার থেকে গুলিবর্ষণ ও বোমার আওয়াজের সাথে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আহাজারি ভেসে আসে। রোহিঙ্গাদের বসতিগুলোর উপর দেখা গেছে ধোঁয়ার কুন্ডলী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ১১ দিনে বাংলাদেশে বাধ্য হয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।তবে বেসরকারি হিসেবে তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ঘুমধুম, পালংখালী, থাইনখালী, টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি চেকপোস্টের পাশে মাঠে এদিক সেদিক, রাস্তার পাশে রোদ-বৃষ্টিতে বিচরণ করছে শত শত রোহিঙ্গা নারী শিশু-পুরুষ। তাছাড়া লোকালয় এবং লেদা, নয়াপাড়া, কুতুপালং, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে ঢুকে পড়ছে শত শত রোহিঙ্গা। এমনকি অনেক রোহিঙ্গা উপকুলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার শামলাপুর চলে গেছে। আবার কিছু রোহিঙ্গাকে উঞ্চিপ্রাং সরকারী প্রাইমারী স্কুলে এবং নিকটবর্তী রইক্ষং নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব চেয়ে বেশী দেখা গেছে কাঞ্জরপাড়ায়। এখানে নাফ নদীর পাশে ধান ক্ষেতে কয়েক মাইল জুড়েই ছিটিয়ে ছটিয়ে আছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। তবে বিজিবি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে কড়া টহল দিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পুশ ব্যাক করেছে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে। আরাকানের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ায় বর্মী বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এ যাত প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা কোনমতে পালিয়ে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সহায়-সম্বল সবকিছুই পেছনে ফেলে ভিনদেশে বাধ্য হয়েই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মহিলা পুরুষরা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তারা জানান, পালিয়ে বাসা রোহিঙ্গাদের অনেকেরই স্বামী, স্ত্রী, ভাইবোন, সন্তান, পরিবার-পরিজন কিংবা প্রতিবেশী বর্মী বাহিনীর গুলি-বোমায় হয় নিহত হয়েছে অথবা এখনও নিখোঁজ। একের পর একে মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বেছে বেছে বোমা-গুলিবর্ষণ ছাড়াও কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মহিলাদের গণধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটপাট, ধরপাকড় দিনে-রাতে চলছেই। সবরকম পৈশাচিক কায়দায় দলন-পীড়ন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালী’ আখ্যায়িত করে খেদানোর নামে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। আর এভাবেই চলছে রোহিঙ্গাদের সমূলে উচ্ছেদ। বর্মী বাহিনী দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠেছে। তাদের অত্যাচার থেকে কোন মুসলমান রোহিঙ্গা রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি মাত্র এক সপ্তাহের সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে মা ছুটে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন সীমান্ত বরাবর নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে। কিন্তু পেছনের দিকে তাকানোর মতো পরিস্থিতি নেই তাদের। ফেলে আসা অথবা নিখোঁজ থাকা পরিজনদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তার পরিণতি ভেবে উদ্বাস্তুরা চরম উৎকণ্ঠা, বিলাপ আর শোকে ভেঙে পড়ছে।
    বিভিন্ন স্থানে জমায়েত এসব রোহিঙ্গারা খাদ্য পানির অভাবে কাতর হয়েগেছে। কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ৪/৫ দিন ধরে তারা না খেয়েই আছে। আবার কয়েকজন বলেছে যেখানে যা পেয়েছে তা খেয়ে এপর্যন্ত এসেছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা খুবই দুর্বল হয়েগেছে। খাদ্য-বস্ত্রের জন্য অভাবে কোন মানুষ দেখলেই ভূবুক্ষ রোহিঙ্গারা দৌড়ায় খাদ্য-বস্ত্রের জন্য। এই পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন ও পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনসহ জেলার পদস্থ কর্মকতারা।
    বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোহিঙ্গা মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল আরাকান (রাখাইন) রাজ্য ছেড়ে রোহিঙ্গারা জীবন ও মুসলিম রোহিঙ্গা মহিলারা তাদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষায় বাধ্য হয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঠাঁই নিচ্ছে। তাছাড়া এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের জিরো লাইনে বা নো ম্যানস ল্যান্ড বরাবর ভিড় করেছে। গত শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহার দিনটি লাখো নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গার জন্য ছিল স্বজন হারানোর শোক-বিলাপ আর নিজেদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি পেছনে ফেলে আসার দুঃখ বেদনা আহাজারিতে সকরুণ। আনন্দের বদলে ছিল ক্ষুধা-পিপাসা, চিকিৎসা ও মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুর অভাব। যাদের একসময় ছিল স্বচ্ছল সুন্দর সংসার তা এখন ছারখার। লতা-পাতা, খড়-খুটো, চাটাই বা পলিথিন দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে এবং টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাছে ঝুপড়ি তৈরি করে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় নিয়েই পশুপাখির চেয়েও অধম ও দুঃসহ অবস্থায় দিনগুজরান করছে ভাগ্যাহত হাজার হাজার বনিআদম। এর বাইরেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যৌথ নির্মম দমনাভিযান থেকে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা আরাকানের পাহাড়-জঙ্গল, নদীতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আরাকান তাদের কাছে এক ভয়াল জনপদের নাম।
    গত ২৪ আগস্ট আরাকানে (রাখাইন) ২০টি নিরাপত্তা চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার সাথে সাথেই রাজ্যজুড়ে সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়নসহ অবর্ণনীয় অত্যাচার শুরু করে। এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। অথচ ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)’ আগে থেকে নাম না জানা একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠিকে মিয়ানমার শাসকরা ওই হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করে এবং ‘আরসা’ও হামলার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে বলেই জানানো হয়েছিল। তদুপরি পরদিনই (২৫ আগস্ট) মিয়ানমার সরকার ‘আরসা’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ ‘আরসা’ কিংবা ক্ষুদ্র কোন গ্রুপের কৃতকর্মের জন্য কেন নিরীহ বর্মী নাগরিক সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকেই গণহত্যা, ধর্ষণ, আগুন, বোমা, বিতাড়নসহ বর্বর অত্যাচার নিপীড়নের মাধ্যমে উচ্ছেদ এবং বাংলাদেশের দিকে জোর-জবরদস্তিতে ঠেলে পাঠিয়ে দিতে হবে সেই প্রশ্নের কোন জবাব মিলছে না। মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এর বিরুদ্ধে কিছুটা সোচ্চার হলেও প্রভাবশালী দেশ ও বিশ্বসংস্থাগুলোর বিবেক যেন রোহিঙ্গাদের দলন-পীড়নের বেলায় ভোঁতা হয়ে গেছে।
    এদিকে গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে ভেসে আসা আরও এক রোহিঙ্গা মহিলা ও একজন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার ঘুনধুম জলপাইতলী পয়েন্টে সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে। আরাকানের মংডু ঢেঁকিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাফরুল্লাহ ও তার স্ত্রী আয়েশার গুলিবিদ্ধ লাশ পুলিশ ও বিজিবি উদ্ধার করে। বর্মী সেনাদের গুলিতে গুরুতর আহতাবস্থায় ছুটে পালানোর সময় সীমান্তের কাছে তারা মারা যান। গত শনিবার নাফ নদীর দুটি স্থান থেকে রোহিঙ্গা মহিলাসহ তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত ৬ দিনে নাফ নদী থেকে ভাসমান এবং স্থল সীমান্তে পড়ে থাকা ৫৭ জন রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার লাশ নাফ নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবার ১৯ জন ও গত শুক্রবার ২৬ জন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনুদ্দিন খান বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
    অন্যদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতার প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশের মতো করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। টুইটার বার্তায় সা¤প্রতিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন মালালা। এরইমধ্যে রাখাইনের সন্ত্রাস ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
    ওদিকে, মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বাংলাদেশে আসছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল-জাজিরা।তবে কবে তিনি আসছেন সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি ওই প্রতিবেদনে।
    গত রোববার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশ গুপ্ত কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয় ১৬০ পরিবারের ৪৯৭জন হিন্দু শরণার্থীদের পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা চলছে। গণহত্যার মতো মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল করে আইনের কাঠগড়ায় আনার দায়িত্ব জাতিসংঘকে নিতে হবে। মিয়ামারে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সোচ্চার হয়ে মানবতাবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলারও আহবান জানান।
    এদিকে আরাকানের বিভিন্ন গ্রামে, পাড়ায় ও রাস্তাঘাটে মিয়ানমার সেনাসহ যৌথ বাহিনীর অব্যাহত নির্মম দমনাভিযানে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত আরও ৫ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে তাদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন মোঃ ইউনুছ (২০), মোঃ আলম (২০), বশির উল্লাহ (৬৫) ও খালেদ হোসেন (২৫)। আর বোমায় ঝলসে গেছেন হোসাইন জোহা (২২)। চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মোঃ জহির একথা নিশ্চিত করেন। এর আগে গত শুক্র ও শনিবার ৮ জন রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য চমেক ভর্তি হন। তারা হলেন নাজিম উল্লাহ (২৫), মো. হাসান (২৪), আবদুল মোতালেব (২৬), ওসমান গণি (২০), সাদ্দাম হোসেন (২২), নুর হুদা (২৮), আসমত উল্লাহ (২৩) ও আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪)। আরাকানে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা খেদাও ও নির্মূল অভিযানে এ নিয়ে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় পুড়ে যাওয়া মোট ৪৬ জন রোহিঙ্গা চমেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে এক যুবক গত ২৬ আগস্ট এবং অপর এক শিশু ৩০ আগস্ট মারা যান। সর্বশেষ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় আগত ভর্তিকৃতরা আরাকানের মংডু এলাকার বাঘঘোনা, মেরুল্লা, ঢেঁকিবুনিয়া, বুচিদং এলাকার বাসিন্দা।
    হাসপাতালের বেডে আহতরা গুলি ও বোমার আঘাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তারা জানান, আরাকানে মুসলমানদের পাড়ায় পাড়ায় সেনাবাহিনী নির্বিচারে খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরুগলো একের পর এক জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার বাহিনীর পাশবিক অত্যাচারে সেখানে টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি আর নেই। রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা জানান, গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট থেকে ভয়াবহ মাত্রায় দমন-পীড়ন শুরু করা হলেও আসলে বিগত ১১ আগস্ট আরাকানের মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন ও টহলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এতে করে রোহিঙ্গারা অভাব-অনটনে এবং সীমাহীন আতঙ্কে পড়েন। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক কলসি খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। এরপরই ২৪ ও ২৫ আগস্ট শুরু হয় চরম ও বর্বর অত্যাচার-নিপীড়ন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়ন। দমনাভিযানে আটক ও গুম হওয়া শত শত রোহিঙ্গার ভাগ্যে কী ঘটেছে কেউই তা বলতে পারে না। উদ্বাস্তুদের চোখে স্পষ্ট ছিল ভীতি আর আতঙ্কের চাপ। বোবা কান্নায় তাদের অন্তর গুমড়ে মরছে।

    আশরায়ে যিলহজ্ব ও আইয়ামে তাশরীক : তাওহীদের উচ্চারণে পরিশুদ্ধ হোক আমাদের জীবন

    সময়ের প্রতিটি অংশই মূল্যবান। কোনো অংশই অবহেলা করার মতো নয়। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দ্বারাই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এটা যেমন পার্থিব ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সত্য আখিরাতের ক্ষেত্রেও। তাই জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত অত্যন- মূল্যবান। তবে আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার ফায়েদার জন্য কিছু সময়কে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। তাই কিছু সময়, কিছু দিন এমন রয়েছে, যা অন্য সময়ের চেয়ে অধিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও মহিমাময়। আসন্ন ‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ ও ‘আইয়ামে তাশরীক’ অর্থাৎ যিলহজ্বের প্রথম তেরটি দিন এমনি মহিমান্বিত ও অর্জনের মৌসুম।

    ‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ বছরের শ্রেষ্ঠ দশক

    যিলহজ্বের প্রথম দশককে পরিভাষায় ‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ বলে। এই দশ দিন হচ্ছে বছরের সর্বোত্তম দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এই দশকের রজনীগুলোর শপথ করে বলেছেন, (তরজমা) ভোর বেলার কসম আর কসম দশ রাত্রির।-সূরা ফজর : ১-২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ও মুজাহিদ রাহ.সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত্রি দ্বারা আশরায়ে যিলহজ্বই উদ্দেশ্য।

    হাফেয ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫-৫৩৬

    তাই অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে পুরো বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘দশক’ হল আশরায়ে যিলহজ্ব। রমযানের শেষ দশকের চেয়েও যার ফযীলত ও গুরুত্ব বেশি। কেননা যিলহজ্বের এই প্রথম দশকে এমন দু’টি ইবাদত রয়েছে যা পুরো বছরের অন্য কোনো সময় আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমযানেও নয়। এই দু’টি ইবাদতের জন্য আল্লাহ তাআলা আশরায়ে যিলহজ্বকেই নির্বাচন করেছেন। এই দু’টি ইবাদতের একটি হল হজ্ব, আর দ্বিতীয়টি কুরবানী। কুরবানী যদিও ১১ ও ১২ যিলহজ্বেও দেওয়া যায়, কিন্তু বছরের অন্য কোনোদিন এই ওয়াজিব কুরবানী সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে রমযানের শেষ দশকের চেয়ে আশরায়ে যিলহজ্বের হজ্ব ও কুরবানীর রয়েছে বাড়তি ফযীলত। আবার অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে রমযানের শেষ দশকই উত্তম। কারণ তাতে রয়েছে হাজার মাসের চাইতে উত্তম লাইলাতুল কদরের মতো মহিমান্বিত রজনী। ওলামায়ে কেরামের এই দু’টি মতের সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে অনেক মুহাক্কিক আলেম বলেছেন, আশরায়ে যিলহজ্বের দিন ও রমযানের শেষ দশকের রাত্রি উত্তম। এভাবে উভয় দলীলের মাঝে সমন্বয় করা যেতে পারে।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৩৯; ইসলাহী খুতবাত ২/১২২-১২৪; লাতায়িফুল মাআরিফ ২৯৫-২৯৬

    যাই হোক, রমযানের পরে আশরায়ে যিলহজ্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোনো দিন নেই-এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় এবং এতে সকলেই একমত। হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা)‘আশরায়ে যিলহজ্বের দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।’-সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস ৩৮৫৩ আর যিলহজ্বের প্রথম দশকের মধ্যে শেষ দু’দিন নবম তারিখ ও দশম তারিখ হল পুরো বছরের সর্বোৎকৃষ্ট দিন। যাকে হাদীসের ভাষায় ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর বলা হয়। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস : ৩৮৫৩; মুসনাদে আহমদ ৪/৩৫০ হাদীস : ১৯০৭৫

    আশরায়ে যিলহজ্বের সর্বোৎকৃষ্ট আমল

    কুরআন-সুন্নাহে আশরায়ে যিলহজ্বের এই আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুণ এ দশটি দিন হল অর্জনের ভরপুর মৌসুম। এই দিনগুলোতে করা ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়।

    হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-(তরজমা) আশরায়ে যিলহজ্বের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিন (এর কোনো আমল) নেই।’ -সহীহ বুখারী হাদীস : ৯৬৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৬৮ এই হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, আশরায়ে যিলহজ্বের যে কোনো নেক আমলের চাইতে উত্তম কোনো আমল হতে পারে না। যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম জানতেন যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই তাই আশরায়ে যিলহজ্বের আমলের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা শোনার পর তারা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘জিহাদও কি এই দশ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়?’ নবীজী জবাব দিলেন, না। জিহাদও উত্তম নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এই দশদিনের আমলের চেয়ে উত্তম হতে পারে যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস-ায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হল। অতঃপর জিহাদের ময়দানে জান-মাল সবকিছু বিসর্জন করে দিয়ে কিছু নিয়েই ঘরে ফিরে এল না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭৫৮; ফাতহুল বারী ২/৫৩১-৫৩২

    এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা গেল যে, এই দশ দিনে করা যে কোনো নেক আমল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম আমল। পুণ্য অর্জনের এর চেয়ে উপযোগী সময় আর কী হতে পারে? এখন প্রশ্ন হল, মুমিনরা কী কী আমল দ্বারা এই দশ দিনকে জীবন- ও প্রণবন- করে তুলতে পারে?

    আশরায়ে যিলহজ্বের আমল

    আমরা আগেই বলেছি এবং হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, এই দশ দিনের যে কোনো আমল চাই নফল নামায-রোযা হোক বা যিকির-তাহাজ্জুদ, তা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় ও অতি পছন্দনীয়। তাই যে কোনো নফল ইবাদত যেমন নামায-রোযা, যিকির-তাহাজ্জুদ, দান-খয়রাত ইত্যাদি এই দশ দিনে করা হলে তার ফযীলত ও মর্যাাদা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যাবে। তাই এই ক’দিন সাধ্যমতো নফল ইবাদতের প্রতিও মনোযোগী হওয়া উচিত। এছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এই দশ দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথাও বলা হয়েছে।

    জাপানের ‘ধ্বংস অতি আসন্ন’ বলে উ. কোরিয়ার হুঁশিয়ারি

    যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নেয়ায় জাপানের ‘ধ্বংস অতি আসন্ন ’ বলে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশ উত্তর কোরিয়া টোকিওকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। জাপানের ওপর দিয়ে পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ায় কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলের উত্তেজনা অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটেই উত্তর কোরিয়া এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলো।
    এর আগে, এশিয়ার এ দ্বীপ রাষ্ট্রের ওপর দিয়ে মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে বিশ্বব্যাপী একধরণের সতর্কাবস্থা তৈরি করে উত্তর কোরিয়া। দেশটির এ ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ পিয়ংইয়ংয়ের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।
    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে উত্তর কোরিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে ‘নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে এর কঠোর নিন্দা জানান। তিনি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে চাপ আরো জোরদার করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্মত হন। অপরদিকে উত্তর কোরিয়া ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হবে বলে সতর্ক করেছে। এএফপি।