আরাকানে সীমাহীন বর্বরতা

রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যা ধর্ষণ অগ্নিসংযোগ লুটতরাজ নির্যাতন ও বিতাড়ন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে : বর্মী সেনাসহ যৌথবাহিনী আরও বেপরোয়া : সীমান্তজুড়ে হাজার হাজার উদ্বাস্তুর করুণ দুঃখ শোকের ঈদ : আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৮৭ হাজার : জীবন ও উজ্জত-আব্রু বাঁচাতে পঙ্গপালের মতো ছুটছে অসংখ্য মানুষ : নিহত শত শত : নাফ নদীতে এ যাবত ৫৭ জনের লাশ উদ্ধার : গুলি-বোমায় আহত অর্ধশত রোহিঙ্গা কাতরাচ্ছে চমেক হাসপাতালে : আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী: বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতার প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই
মিয়ানমারের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আদিবাসী রোহিঙ্গা (রো-আং) অধ্যুষিত আরাকান (রাখাইন) প্রদেশে সীমাহীন বর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্মী সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা, সীমান্তরক্ষী বিজিপি, পুলিশ এমনকি উগ্র মগদস্যুরা দিনের পর দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১১ আগস্ট থেকে সীমিতভাবে হলেও ২৪ আগস্টের কালোরাত থেকে ব্যাপক মাত্রায় প্রতিদিনই পৈশাচিক কায়দায় চালাচ্ছে দমনাভিযান। ফলে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে (রাখাই স্টেট) গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানরা দলে দলে স্রোতের মত পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারলেও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে আরো হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্ত এলাকা ছাড়াও উখিয়া-টেকনাফের পথে ঘাটে রোহিঙ্গাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। জীবন ও ইজ্জত-আব্রুটুকু বাঁচাতে পঙ্গপালের মতো বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসা এ সকল অন্ন-বস্ত্রহীন রোহিঙ্গাদের কান্না যেন থামার মত নয়। গভীর জঙ্গল-পাহাড় ও নদী পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও পাখির মতো গুলি করে মারা হচ্ছে অনেককে। গণহত্যা, গণধর্ষণ, বৃষ্টির মতো গুলি ও বোমা বর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ নির্যাতন ও বিতাড়নসহ তাবৎ অত্যাচার-নিপীড়ন রক্তাক্ত আরাকানে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, আরাকানের অবরুদ্ধ পরিস্থিতি এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সেনা অভিযানে কমপক্ষে ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। নাফ নদীতে নৌকাডুবি এবং খুন করার পর নদীতে নিক্ষেপ ও সীমান্তে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার ঘটনাবলীতে এ যাবত ৫৭ জন রোহিঙ্গা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তজুড়ে হাজার হাজার ভাগ্যাহত উদ্বাস্তু ঝড়-বৃষ্টি-রোদে খোলা আকাশের নিচে দুঃখ শোকের ঈদুল আযহা অতিবাহিত করেছে। গতকাল সকালেও সীমান্তের লাগোয়া ওপার থেকে গুলিবর্ষণ ও বোমার আওয়াজের সাথে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আহাজারি ভেসে আসে। রোহিঙ্গাদের বসতিগুলোর উপর দেখা গেছে ধোঁয়ার কুন্ডলী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ১১ দিনে বাংলাদেশে বাধ্য হয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।তবে বেসরকারি হিসেবে তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ঘুমধুম, পালংখালী, থাইনখালী, টেকনাফের হোয়াইক্যং বিজিবি চেকপোস্টের পাশে মাঠে এদিক সেদিক, রাস্তার পাশে রোদ-বৃষ্টিতে বিচরণ করছে শত শত রোহিঙ্গা নারী শিশু-পুরুষ। তাছাড়া লোকালয় এবং লেদা, নয়াপাড়া, কুতুপালং, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে ঢুকে পড়ছে শত শত রোহিঙ্গা। এমনকি অনেক রোহিঙ্গা উপকুলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার শামলাপুর চলে গেছে। আবার কিছু রোহিঙ্গাকে উঞ্চিপ্রাং সরকারী প্রাইমারী স্কুলে এবং নিকটবর্তী রইক্ষং নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সব চেয়ে বেশী দেখা গেছে কাঞ্জরপাড়ায়। এখানে নাফ নদীর পাশে ধান ক্ষেতে কয়েক মাইল জুড়েই ছিটিয়ে ছটিয়ে আছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। তবে বিজিবি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে কড়া টহল দিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পুশ ব্যাক করেছে প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে। আরাকানের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়ায় বর্মী বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এ যাত প্রায় অর্ধশত রোহিঙ্গা কোনমতে পালিয়ে এসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সহায়-সম্বল সবকিছুই পেছনে ফেলে ভিনদেশে বাধ্য হয়েই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মহিলা পুরুষরা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তারা জানান, পালিয়ে বাসা রোহিঙ্গাদের অনেকেরই স্বামী, স্ত্রী, ভাইবোন, সন্তান, পরিবার-পরিজন কিংবা প্রতিবেশী বর্মী বাহিনীর গুলি-বোমায় হয় নিহত হয়েছে অথবা এখনও নিখোঁজ। একের পর একে মুসলমানদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বেছে বেছে বোমা-গুলিবর্ষণ ছাড়াও কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মহিলাদের গণধর্ষণ, বাড়িঘরে লুটপাট, ধরপাকড় দিনে-রাতে চলছেই। সবরকম পৈশাচিক কায়দায় দলন-পীড়ন চালিয়ে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙ্গালী’ আখ্যায়িত করে খেদানোর নামে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। আর এভাবেই চলছে রোহিঙ্গাদের সমূলে উচ্ছেদ। বর্মী বাহিনী দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠেছে। তাদের অত্যাচার থেকে কোন মুসলমান রোহিঙ্গা রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি মাত্র এক সপ্তাহের সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে মা ছুটে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন সীমান্ত বরাবর নো ম্যানস ল্যান্ডের দিকে। কিন্তু পেছনের দিকে তাকানোর মতো পরিস্থিতি নেই তাদের। ফেলে আসা অথবা নিখোঁজ থাকা পরিজনদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তার পরিণতি ভেবে উদ্বাস্তুরা চরম উৎকণ্ঠা, বিলাপ আর শোকে ভেঙে পড়ছে।
বিভিন্ন স্থানে জমায়েত এসব রোহিঙ্গারা খাদ্য পানির অভাবে কাতর হয়েগেছে। কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ৪/৫ দিন ধরে তারা না খেয়েই আছে। আবার কয়েকজন বলেছে যেখানে যা পেয়েছে তা খেয়ে এপর্যন্ত এসেছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা খুবই দুর্বল হয়েগেছে। খাদ্য-বস্ত্রের জন্য অভাবে কোন মানুষ দেখলেই ভূবুক্ষ রোহিঙ্গারা দৌড়ায় খাদ্য-বস্ত্রের জন্য। এই পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন ও পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনসহ জেলার পদস্থ কর্মকতারা।
বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রোহিঙ্গা মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল আরাকান (রাখাইন) রাজ্য ছেড়ে রোহিঙ্গারা জীবন ও মুসলিম রোহিঙ্গা মহিলারা তাদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষায় বাধ্য হয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঠাঁই নিচ্ছে। তাছাড়া এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের জিরো লাইনে বা নো ম্যানস ল্যান্ড বরাবর ভিড় করেছে। গত শনিবার পবিত্র ঈদুল আযহার দিনটি লাখো নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গার জন্য ছিল স্বজন হারানোর শোক-বিলাপ আর নিজেদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি পেছনে ফেলে আসার দুঃখ বেদনা আহাজারিতে সকরুণ। আনন্দের বদলে ছিল ক্ষুধা-পিপাসা, চিকিৎসা ও মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুর অভাব। যাদের একসময় ছিল স্বচ্ছল সুন্দর সংসার তা এখন ছারখার। লতা-পাতা, খড়-খুটো, চাটাই বা পলিথিন দিয়ে নো ম্যানস ল্যান্ডে এবং টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাছে ঝুপড়ি তৈরি করে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় নিয়েই পশুপাখির চেয়েও অধম ও দুঃসহ অবস্থায় দিনগুজরান করছে ভাগ্যাহত হাজার হাজার বনিআদম। এর বাইরেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যৌথ নির্মম দমনাভিযান থেকে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা আরাকানের পাহাড়-জঙ্গল, নদীতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আরাকান তাদের কাছে এক ভয়াল জনপদের নাম।
গত ২৪ আগস্ট আরাকানে (রাখাইন) ২০টি নিরাপত্তা চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের হামলার সাথে সাথেই রাজ্যজুড়ে সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘরে আগুন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়নসহ অবর্ণনীয় অত্যাচার শুরু করে। এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পায়। অথচ ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)’ আগে থেকে নাম না জানা একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠিকে মিয়ানমার শাসকরা ওই হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করে এবং ‘আরসা’ও হামলার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে বলেই জানানো হয়েছিল। তদুপরি পরদিনই (২৫ আগস্ট) মিয়ানমার সরকার ‘আরসা’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অথচ ‘আরসা’ কিংবা ক্ষুদ্র কোন গ্রুপের কৃতকর্মের জন্য কেন নিরীহ বর্মী নাগরিক সমগ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকেই গণহত্যা, ধর্ষণ, আগুন, বোমা, বিতাড়নসহ বর্বর অত্যাচার নিপীড়নের মাধ্যমে উচ্ছেদ এবং বাংলাদেশের দিকে জোর-জবরদস্তিতে ঠেলে পাঠিয়ে দিতে হবে সেই প্রশ্নের কোন জবাব মিলছে না। মানবাধিকার সংগঠনসমূহ এর বিরুদ্ধে কিছুটা সোচ্চার হলেও প্রভাবশালী দেশ ও বিশ্বসংস্থাগুলোর বিবেক যেন রোহিঙ্গাদের দলন-পীড়নের বেলায় ভোঁতা হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে ভেসে আসা আরও এক রোহিঙ্গা মহিলা ও একজন শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার ঘুনধুম জলপাইতলী পয়েন্টে সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা দম্পতির লাশ পাওয়া গেছে। আরাকানের মংডু ঢেঁকিবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাফরুল্লাহ ও তার স্ত্রী আয়েশার গুলিবিদ্ধ লাশ পুলিশ ও বিজিবি উদ্ধার করে। বর্মী সেনাদের গুলিতে গুরুতর আহতাবস্থায় ছুটে পালানোর সময় সীমান্তের কাছে তারা মারা যান। গত শনিবার নাফ নদীর দুটি স্থান থেকে রোহিঙ্গা মহিলাসহ তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত ৬ দিনে নাফ নদী থেকে ভাসমান এবং স্থল সীমান্তে পড়ে থাকা ৫৭ জন রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার লাশ নাফ নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবার ১৯ জন ও গত শুক্রবার ২৬ জন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনুদ্দিন খান বলেন, লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতার প্রশংসা করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশের মতো করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। টুইটার বার্তায় সা¤প্রতিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর দেওয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন মালালা। এরইমধ্যে রাখাইনের সন্ত্রাস ও সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
ওদিকে, মিয়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বাংলাদেশে আসছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল-জাজিরা।তবে কবে তিনি আসছেন সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি ওই প্রতিবেদনে।
গত রোববার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশ গুপ্ত কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেয় ১৬০ পরিবারের ৪৯৭জন হিন্দু শরণার্থীদের পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা চলছে। গণহত্যার মতো মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল করে আইনের কাঠগড়ায় আনার দায়িত্ব জাতিসংঘকে নিতে হবে। মিয়ামারে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সোচ্চার হয়ে মানবতাবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলারও আহবান জানান।
এদিকে আরাকানের বিভিন্ন গ্রামে, পাড়ায় ও রাস্তাঘাটে মিয়ানমার সেনাসহ যৌথ বাহিনীর অব্যাহত নির্মম দমনাভিযানে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত আরও ৫ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে তাদেরকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন মোঃ ইউনুছ (২০), মোঃ আলম (২০), বশির উল্লাহ (৬৫) ও খালেদ হোসেন (২৫)। আর বোমায় ঝলসে গেছেন হোসাইন জোহা (২২)। চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই মোঃ জহির একথা নিশ্চিত করেন। এর আগে গত শুক্র ও শনিবার ৮ জন রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য চমেক ভর্তি হন। তারা হলেন নাজিম উল্লাহ (২৫), মো. হাসান (২৪), আবদুল মোতালেব (২৬), ওসমান গণি (২০), সাদ্দাম হোসেন (২২), নুর হুদা (২৮), আসমত উল্লাহ (২৩) ও আবু বক্কর সিদ্দিক (২৪)। আরাকানে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা খেদাও ও নির্মূল অভিযানে এ নিয়ে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় পুড়ে যাওয়া মোট ৪৬ জন রোহিঙ্গা চমেকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে এক যুবক গত ২৬ আগস্ট এবং অপর এক শিশু ৩০ আগস্ট মারা যান। সর্বশেষ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ ও বোমায় আগত ভর্তিকৃতরা আরাকানের মংডু এলাকার বাঘঘোনা, মেরুল্লা, ঢেঁকিবুনিয়া, বুচিদং এলাকার বাসিন্দা।
হাসপাতালের বেডে আহতরা গুলি ও বোমার আঘাতের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তারা জানান, আরাকানে মুসলমানদের পাড়ায় পাড়ায় সেনাবাহিনী নির্বিচারে খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরুগলো একের পর এক জ্বালিয়ে দিচ্ছে। মিয়ানমার বাহিনীর পাশবিক অত্যাচারে সেখানে টিকে থাকার মতো পরিস্থিতি আর নেই। রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা জানান, গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট থেকে ভয়াবহ মাত্রায় দমন-পীড়ন শুরু করা হলেও আসলে বিগত ১১ আগস্ট আরাকানের মুসলমান জনসংখ্যা-বহুল বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন ও টহলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এতে করে রোহিঙ্গারা অভাব-অনটনে এবং সীমাহীন আতঙ্কে পড়েন। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এক কলসি খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। এরপরই ২৪ ও ২৫ আগস্ট শুরু হয় চরম ও বর্বর অত্যাচার-নিপীড়ন, গণহত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়ন। দমনাভিযানে আটক ও গুম হওয়া শত শত রোহিঙ্গার ভাগ্যে কী ঘটেছে কেউই তা বলতে পারে না। উদ্বাস্তুদের চোখে স্পষ্ট ছিল ভীতি আর আতঙ্কের চাপ। বোবা কান্নায় তাদের অন্তর গুমড়ে মরছে।