• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ

    জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল : বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আনন্দে উদ্বেল জাতি

    হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং-বেরং এর ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে আনন্দ-উদ্বেল জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করলো বীর শহীদদের। সর্বস্তরের মানুষের ফুলের ভালবাসায় সিক্ত হলেন জাতির সূর্য সৈনিকরা।
    গতকাল সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও এরপর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যারা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। তখন শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। জাতির যে বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই শহীদদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী।
    পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারো ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    এরপরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ১৪ দল, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ক‚টনীতিকবৃন্দ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে লাল সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
    জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটা পরিচিত মুখ। আমরা অর্থনৈতিক অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি এবং খেলাধুলাতেও অনেক অগ্রগতীসাধন করেছি। আমাদের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে যে উন্নয়নশীল দেশের ভিতরে আমরা সাংবিধানিক ও গণতন্ত্র চর্চা করতে পেরেছি। এবং দীর্ঘদিন পরে হলেও ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মনে রাখতে হবে৭১ সালে যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিল তাদের বিরোধীতার মুখে এতো বছর পরও শেখ হাসিনা সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাজা কার্য্যকর করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনেছে।
    এদিকে বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা উবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
    পরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
    বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মইন খান সাংবাদিকদের বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা যাত্রা শুরু করেছিলাম দুটি আদর্শ নিয়ে একটি হচ্ছে গণতন্ত্র ও আরেকটি হচ্ছে বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তার খেটেখাওয়া মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে আদর্শ সেই আদর্শ নিয়ে।
    তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়ে ৪৭ বছরে যাচ্ছি সেই প্রশ্নগুলো এখন নতুন করে জেগে উঠছে। আমরা বিশ্বাস করতাম পাকিস্থানের যে কাঠামো সেই কাঠামোতে গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, সেটাই কিন্তু একটা মূল উদ্দেশ্য ছিল। সেজন্যই আমরা অত্যান্ত জোর গলায় বলেছিলাম আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চাই। অথচ বার বার বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিঘিœত হচ্ছে।
    আজকের যে সংসদ সেই সংসদের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তৃনমুলের যে কোন একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন এখানে জনগনের কেউ প্রতিনিধিত্য করে।
    ৩০০ আসনের ১৫৪ জন ভোট ছাড়া নির্বাচিত। বাকি ১৪৬ জন নির্বাচিত হয় শত করা ৫ শতাংশ ভোটে। এ কারণেই কি আমরা বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
    আজকে সত্যিকার অর্থে বহুদলীয় গণতন্ত্র এদেশে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, আমি বলবো স্বাধীনতা সময় লক্ষ লক্ষ লোক রক্ত দিয়ে এ দেশকে প্রতিষ্ঠা করেছিল আমরা তাদের আর্দশের প্রতি আমরা সত্যনিষ্ঠা থাকতে পারিনা।
    আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রতিটি মানুষের মনের কথা এটি। যে আমরা এ দেশে গণতন্ত্র করবো, খেটেখাওয়া মানুষকে একটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জীবন আমরা দিব, যাতে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
    এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পু®পস্তবক অর্পন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের, সরকারি কর্ম কমিশন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, বিআইডবিøউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষনা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষন কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গামের্ন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ তৃনমুল গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিট, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষনা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাবি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, বিমান শ্রমিক লীগ, ইঞ্জিনিয়াস ইনস্টিটিউট, বাংলঅদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, প্রবাসী কল্যান ব্যাংক, বঙ্গবন্ধু ফিসারিজ পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ খৃষ্টান এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
    এদিকে ঢাকা জেলা কমিউনিটি পুলিশের উদ্যোগে আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ২৬টি বড় এলইডি প্রজেক্টর বসানো হয়েছে। এসব প্রজেক্টরের মাধ্যমে ১৯৪৭ থেকে ৭১ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ দেখানো হয়। এ ছাড়া স্মৃতিসৌধের ভেতরের মুক্তমঞ্চে ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
    প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্থানি সেনা বাহিনী গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও যুদ্ধে সক্রিয় সহায়তাকারী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুলাহ খান নিয়াজী। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্থানি বাহিনীকে পরাজিত করার দিনটি প্রতি বছর উদযাপিত হয়।

    মায়ের কাছে ফেরা

    Posted by admin on December 16
    Posted in Uncategorized 

    মায়ের কাছে ফেরা

    হামিদুর ছেলেটা গায়েগতরেই বেড়েছেন। পেশল বাহু, চিতানো বুক, পেটানো হাত-পা। নাকের নিচে গোঁফের রেখা। আসলে তো কিশোরই। বয়স কত হবে? ১৮? কিংবা এক বছর কম বা বেশি। মনের বয়সে তিনি কিশোরই রয়ে গেছেন।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম বলেন, ‘সিপাহি হামিদুর।’

    ‘স্যার।’

    হামিদুর ক্যানভাসের জুতা মাটিতে ঠুকে স্যালুট দেন। নামের আগে সিপাহি পরিচয়টা তাঁকে খুশি করে তোলে।

    ‘তোমার হাতের ডাল রান্নাটা কিন্তু পৃথিবীর এক নম্বর। আমাদের লঙ্গরখানার বাবুর্চি আক্কেল আলীর ডাল যা হয়, তাকে ঠিক পাক করা বলে না। ওটা হলো ঘুঁটা। তোমারটা হলো পৃথিবীর এক নম্বর। কী বলো?’

    ‘স্যার। সিপাহি আপনার কথায় একটুখানি ওজর-আপত্তি করে স্যার।’

    ‘আমার কথায় ওজর! বলো কী!’

    ‘আপনি পারমিশন দিলে বলতে পারি স্যার।’

    ‘পারমিশন দিচ্ছি। বলো। শুনি তোমার কী আপত্তি!’

    সিপাহি হামিদুর তাঁর হাত দুটো একত্র করেন। বিনয়ের ভঙ্গি আনেন চেহারায়। হাত কচলাতে কচলাতে বলেন, ‘স্যার, পৃথিবীর সেরা ডাইলটা পাক করে আমার মা। আমার মায়ের হাতের পাক করা ডাইল যদি খেতেন, তাহলে স্যার কী যে বলতেন। জান্নাতি সুবাস। মায়ের হাতের ডাইলের কোনো তুলনা হয় না স্যার। আল্লাহ বাঁচি থুলে দেশ স্বাধীন হলে আপনাকে খাওয়াব স্যার। আপনার কথা মাকে কত বলিছি। মা অনেক দোয়া করিছেন। বলেছেন, তোর স্যারের এক শ বছর পরমায়ু হবে। নেকদার আদমি।’

    ‘তাহলে তুমি বোধ হয় ডাল পাক করার কায়দাটা মায়ের কাছ থেকেই শিখেছ। তোমার রান্নার হাতও খুব ভালো।’

    ‘স্যার। সেটি হয়তো ঠিক কয়ে থাকবেন। আমার মা তো পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে। চব্বিশ পরগনার ডুমিয়া থানার চাপড়া গ্রামে ছিলেন তাঁরা। পাকিস্তান হওয়ার পর ইন্ডিয়া থেকে এই পারে চইলে এসেছেন। আসার সময় আর তো কিছু সাথে করে আনতে পারেননি। ডাইল আর লাবড়া পাক করার কায়দাকানুন সাথে করে এনেছেন।’ বলে সিপাহি হামিদুর হাসেন। তাঁর দাঁতগুলো ঝকঝকে। তাঁর কচিমুখে দাঁতগুলোকেই সবচেয়ে বেশি করে চোখে পড়ে। আর হাসলে তাঁর চোখের তারাও ঝিলিক তোলে। ক্যাপ্টেন কাইয়ুম স্নেহের চোখে তাকান। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চাইছে। সেটা তাঁকে চেপে ধরতে হবে। তিনি সৈনিক। আছেন যুদ্ধের ময়দানে। এখানে মায়া-মমতার স্থান যে নেই বললেই চলে।

    ত্রিপুরার এক পাহাড়ের ঢালে তাঁদের ক্যাম্প। একটা মিউনিসিপ্যাল অফিসের লাগোয়া দুটো টিনে ছাওয়া পাকা ঘর। তারই পাশে ঘন গাছগাছালির আড়ালে তাঁবু। সেই তাঁবুর রংও ধূসর। দূর থেকে দেখে কেউ বুঝবে না এখানে ক্যাম্প গাড়া হয়েছে। মাঠে সবুজ ঘাস। এই এলাকায় বৃষ্টি হয় খুব বেশি। পশ্চিম দিকে শ্রীমঙ্গল। চা-বাগান সীমান্তের ওপার-এপার—দুই পারেই। সমান মাপে কাটা চা-বাগানের মাথার ওপারে ছায়াবৃক্ষের সারি।

    পশ্চিমাকাশে কে যেন হলদি গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়েছে। অস্তরাগ এসে পড়েছে হামিদুর রহমানের মুখের এক পাশে। চুলের এক পাশটায় রঙিন আলো ওর মুখে শৈশবের লালিত্যকে উসকে দিতে চাইছে। কিন্তু তাঁর শক্ত চোয়াল ফুটিয়ে তুলতে চাইছে সৈনিক জীবনের দৃঢ়তা। অবরুদ্ধ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে তাঁরা লড়ছেন। ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে তাঁরা প্রায়ই ঢুকে পড়ছেন দেশের ভেতরে।

    হামিদুর বলেন, ‘স্যার। আপনার কথা শুনে আমার আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। বলি?’

    ‘বলো।’ কাইয়ুম বসে আছেন একটা টিপয়ের ওপর। মিউনিসিপ্যাল ঘরটার বারান্দায়। হামিদুর রহমান মাঠে।

    হামিদুর বলেন, ‘স্যার। আপনি বললেন না পাক করার কায়দার কথা। আমার মায়ের নামও স্যার কায়দা।’

    কাইয়ুম বলেন, ‘মানে?’

    ‘আমার মায়ের নাম স্যার কায়েদাতুননেসা। তাইলে স্যার কায়দাই হলো না?’

    ‘তা হলো।’

    ‘আর তোমার বাবার নাম?’

    ‘আমার পিতার নাম স্যার আক্কাস আলী মণ্ডল।’

    ‘তার দ্বারা কী বোঝা গেল?’

    ‘স্যার?’

    ‘তার দ্বারা বোঝা গেল, তোমার পিতা মোড়ল ছিলেন।’

    ‘না স্যার। জমিজমা কিছু নাই। সে আমাদের দাদা-দাদার দাদার কোনো দিন কিছু ছিল কি না, তা তো জানি না। কিন্তু আমাদের স্যার কিছু নেই তো। বাবা তো দিনমজুরি করে খায়। এই ধরেন আমাকে নিয়েই তাদের যত আশা। আমি তো স্যার বলেছি, তোমাদের চিন্তা করতে হবি না নে, আমার স্যার আছেন। আমাকে তিনি রান্নার কাজ থেকে প্রমোশন দিয়ে সিপাহি করেছেন। তোমরা দোয়া করো। দেশ স্বাধীন হলে তোমাদের অভাব থাকবি নে। কারও অভাবই থাকবে না। আমিও তো সিপাহি হয়েই গিয়েছি। দেশ স্বাধীন হলে স্যার মানুষ কি আর না খেয়ে কষ্ট পাবি স্যার?’

    ‘না। তা কেন পাবে?’

    ‘স্যার, মা বলিছেন, মা আপনের জন্যি অনেক দোয়া করেন। নামাজের শেষে নামাজের জায়গায় বসেই দোয়া করেন।’

    ‘কবে বললেন তিনি তোমাকে এত কথা?’

    ‘আমি স্যার গেলাম না মার্চ মাসের শেষের দিকে। চট্টগ্রাম থেকে চলে গেলাম তো ঝিনাইদহে। সেখান থেকে ধরেন আমাদের কালীগঞ্জের খর্দ্দ খালিশপুর গ্রামে। অল্পের জন্যে না সেই রাতে বেঁচে গেলাম। আপনিও বাঁচলেন, আমাদেরও বাঁচালেন। আগে থেকেই তো বলে রেখেছিলেন যে ওরা আক্রমণ করার আগেই আমরা রিভল্ট করব। তবু তো স্যার কত বাঙালি জওয়ান আর অফিসারকে পাঞ্জাবিরা মেরে ফেলল। আমরা না হয় আপনার অর্ডারে আর বুদ্ধি-বিবেচনায় সটকে যেতে পারলাম। তবে স্যার আমি প্রথমে বাড়ি গিয়েছিলাম।’

    ‘ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলে। তাই আমাদের বিদ্রোহী দলে না এসে ঝিনাইদহ চলে গেলে।’

    হামিদুর লজ্জা পান। গোধূলির আলোয় তাঁর মুখখানা আরও লাজরাঙা হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘না। ভ্যাবাচেকা খাই নাই। মায়ের মুখটা মনে পড়ে গেল। ঝিনেদাতে স্যার মুজাহিদ বাহিনীতে জয়েন করেছিলাম। লেখাপড়া তো বেশি দূর করিনি। ক্লাস ফাইভ পাস দিয়েছি। পরে গিয়েছিলাম হাইস্কুলে। পড়াশোনা করার সামর্থ্য তো ছিল না স্যার। বাবা দিনমজুর। বোঝেনই তো। জয়েন করলাম মুজাহিদ বাহিনীতে। সেখানেই দেখি, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা ট্রেনিং করছে। কী সুন্দর মার্চ করে, পিটি-প্যারেড করে। খোঁজখবর নিয়ে আমিও জয়েন করে ফেললাম। সেখান থেকে ট্রেনিং করতে চলে গেলাম চট্টগ্রামে। ট্রেনিং আর কী। খালি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর। শেখ সাহেব তো দেশ স্বাধীন করে ফেলবেই। পাঞ্জাবিরা বিদায় নিবে। যদি দরকার হয় আমরা হাতিয়ার হাতে নিব। শেখ সাহেব একবার হুকুম দিলেই হয়। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। আমরা তো প্রস্তুত হয়েই ছিলাম স্যার। তাই ভ্যাবাচেকা খাই নাই। কিন্তু মায়ের মুখটা মনে পড়ল। মা তো স্যার। আমারে দেখতে চায়। চট্টগ্রামে মেস থেকে বের হব, দেখি হলুদ পোস্টকার্ড। মায়ের চিঠি। মা লেখাপড়া তেমন জানে না। তবু চিঠি লেখে। লিখছে, বাবা হামিদুর, তোমাকে কত দিন দেখি না। মনটা পোড়ে। দেশের পরিস্থিতিতেও তোমাকে নিয়া ভাবনা হয়। চিঠিটা পড়ে ভাবলাম, দেশের লাইগে যুদ্ধে তো যাবই। যাই, মায়ের মুখটা একটু দেখে আসি। মায়ের দোয়া হলো আসল দোয়া। কী বলেন স্যার।’

    ‘নিশ্চয়ই।’

    ‘আরেকটা প্রশ্ন ছিল স্যার।’

    ‘আরও একটা প্রশ্ন! রাতের বেলা ডালটা তুমি রাঁধবে তো, হামিদুর?’

    ‘অবশ্যই স্যার। ডাল রাঁধব। আজ রাতে রুটি না স্যার। ভাতই পাক করব স্যার। আপনে আমার হাতের পাক পছন্দ করেন। আপনি আমাকে বাবুর্চি থেকে সিপাহিতে প্রমোশন দিয়েছেন। আপনি যা বলবেন, আমি তা-ই করব স্যার। আপনি বললে এখনই জান দিয়ে দেব। ধরেন স্যার পাকিস্তানি ট্যাংক আসতেছে। আপনি বললেন, যাও হামিদুর, এই মাইন বুকে বেঁধে ট্যাংকের সামনে শুয়ে পড়ো। লাই ডাউন। আমি বলব, ইয়েস স্যার। থ্যাংক ইউ স্যার। জয় বাংলা। আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুয়ে পড়ব।’

    ‘তা তুমি করবে আমি জানি।’

    ‘চট্টগ্রামে ট্রেনিং একাডেমিতে আমাদের বাঙালি অফিসারদের আর জোয়ানদের স্যার ২৫ মার্চ রাতে যেভাবে ওরা পাইকারিভাবে ক্লোজ করে লাইন করে গুলি করেছে…আমাকে স্যার অর্ডার দেন, আমি এখনই চলে যাব…মাইন দেন…গ্রেনেড দেন…।’

    ‘ঠান্ডা হও হামিদুর। এক দিনে লড়াইয়ে জেতা যায় না। একটা একটা করে ব্যাটল লড়তে হয়। অনেক ব্যাটলে তুমি সামনে এগোবে। অনেক ব্যাটলে পেছনে হটবে। আসলে তুমি জিততে চাও ওয়ার। রাইট?’

    ‘ইয়েস স্যার।’

    ‘তোমার প্রশ্নটা কী ছিল যেন?’

    ‘স্যার। কঠিন একটা কথা বলব স্যার। রাগ করবেন না। মাতৃভূমি জিনিসটা কী স্যার। মাতৃভূমি মানে সবাই বলে মায়ের ভূমি। মাতৃভাষা সবাই বলে মায়ের ভাষা। আমার মায়ের ভূমি তো স্যার ইন্ডিয়া। আবার আমার দেশ তো বাংলা।’

    ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হামিদুর রহমানের কোম্পানির সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধে মুখোমুখি হয় ধলুইয়ের এখানেই, ২৮ অক্টোবর ১৯৭১

    সূর্যের আলো কমে আসছে। আকাশে ঝাঁক বেঁধে পাখিরা ঘরে ফিরছে। আর্মি ব্যাটালিয়নের মতো একজন তার পিছে দুজন তার পিছে তিনজন—এই অর্ডারে পাখিরা উড়ছে। মাথার ওপরে একটা কামরাঙাগাছ। টিয়া পাখি ঝাঁক বেঁধে হল্লাচিল্লা করা শুরু করেছে।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম বলেন, ‘শোনো। তোমার প্রশ্নের উত্তরটা আমি আগে থেকে জানি। তাই উত্তরটা দিতে পারলাম। মাতৃভূমি মানে মায়ের ভূমি নয়। মাতৃভূমি মানে দেশ আমার মা। মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা নয়। মাতৃভাষা মানে ভাষা আমার মা।’

    সিপাহি হামিদুর রহমান, সৈনিক নম্বর ৩৯৪৩০১৪, হাঁ করে শোনেন।

    ‘ধন্যবাদ স্যার। আমি আমার মনের মধ্যে উথালপাতাল করা সওয়ালের জওয়াব পেয়ে গেছি।’

    ‘কী পেলে?’

    ‘বাংলাদেশ আমার মা স্যার। আমার মা আজ বন্দিনী। তাকে মুক্ত করাই আমার কাজ। এই জন্য নিজের জীবন দান করতে পারা গৌরবের কাজ হবে স্যার। আমার মা কায়েদাতুননেসাও তাইলে খুশি হবেন।’

    ‘যাও হামিদুর। আজকের রাতের খাবার রান্নাটা তুমি একটু টেককেয়ার কোরো।’

    ‘স্যালুট স্যার। আমি নিজ হাতে পাক করব স্যার।’

    হামিদুর লঙ্গরখানার দিকে যান। স্যারের জন্য তিনি আজকে ভাত রাঁধবেন। মুরগি জোগাড় করতে হবে। এই শিবিরে খাবারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। রাতে দুটো করে রুটি আর খোসাসমেত ডাল। দুপুরে ভাত আর সবজি। মাছ বা মুরগি সপ্তাহে দুই দিন। নিজেদের প্রতিদিনের ভাতা থেকে চাঁদা দিয়ে তাঁরা মাঝেমধ্যে একটু ভালো খাওয়ার চেষ্টা করেন। কাইয়ুম বলেন, খাওয়া ভালো দরকার সৈনিকদের। তাহলে তারা যুদ্ধটা ভালোমতো করতে পারবে।

    অক্টোবর মাস। ২৮ তারিখ। হেমন্তের এই দিনেই এবার শীত পড়েছে ভয়ংকর। সারা রাত কুয়াশায় ঢাকা থাকে চা-বাগান, ছায়াবৃক্ষ আর পাহাড়ের ঢাল ভরে থাকা বিচিত্র বৃক্ষরাজি। এরই ফাঁক দিয়ে বয়ে যায় স্রোতস্বিনী পাহাড়ি ঝরনা। দুপুরের দিকে রোদ পড়লে দূর থেকে মনে হয় গলে যাওয়া রুপার বিছা যেন কোনো পাহাড়ি রমণীর শ্যামল কোমর ঘিরে ঝকমক করছে।

    সীমান্তের ওপারে শ্রীমঙ্গলের ধলুই। সেখানে পাকিস্তানি পোস্ট। ওই পোস্ট আক্রমণ করা হবে। দখলমুক্ত করা হবে ধলুই। সেখানে উড়বে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-হলুদ-সবুজ পতাকা।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুমের নেতৃত্বে চলেছে মুক্তিবাহিনীর দল। কুয়াশার আড়ালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে যাওয়া সহজ হবে। ওরা টেরও পাবে না। তিন দিক থেকে ঘিরে ধরবে ওরা শত্রুদের। পেছনের দিকটা খোলা রাখবে যাতে শত্রুরা পশ্চাদপসরণ করতে পারে।

    তাদের হাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ আছে পর্যাপ্ত। এই যুদ্ধে জয়লাভ না করার কোনো কারণ নেই। তবে যথাসম্ভব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

    তাদের মুক্তিসেনার দলে এবার থাকছেন সিপাহি হামিদুরও। রান্নার কাজ থেকে প্রমোশন দিয়ে তাঁকে কাইয়ুম তাঁর রানার বানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমে মুজাহিদের ট্রেনিং পাওয়া আর পরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ট্রেনিং তাঁর মনোবল আর সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি তাই সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া শুরু করেছেন। কোদালকাঠির যেখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ, সেখানে কদিন আগে হঠাৎ আক্রমণ করেছিল পাকিস্তানিরা। মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সৈন্যদের লড়াই হলো। সেই লড়াইয়ে হামিদুর ভালো করেছেন। অল্প বয়স, শরীর-স্বাস্থ্য সুঠাম আর বেসিক ট্রেনিং অনেক এফএফের চেয়ে ভালো। যোদ্ধা হিসেবে তাই তাঁর ভালো করারই কথা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাঁর সাহস আছে, তিনি কথা শোনেন, যা বলা হবে তা-ই পালন করবেন। এমন সৈনিকই তো অধিনায়কদের প্রথম পছন্দের।

    কুয়াশার চাদরে ঢেকে তাঁরা ধীরে ধীরে পা রাখেন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে। ধলুই পোস্টটার চারদিকে গাছগাছালি কেটে তারা পরিষ্কার করে রেখেছে। সেটা ১৬০০ বর্গগজের বেশি জায়গা নয়।

    কিন্তু তার চারপাশে চা-বাগান, পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, গাছগাছালি প্রচুর। আক্রমণ করার জন্য আদর্শ জায়গা। অসুবিধা হলো, নিজেদের পোস্টটা পাকিস্তানিরা বানিয়েছে উঁচুতে। সেখান থেকে গুলি ছুড়লে নিচের আক্রমণকারীরা অসুবিধায় পড়বেই।

    তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলা সম্পন্ন। কাইয়ুম প্রথম ফায়ারটা করবেন। তারপর তিন দিক থেকে একযোগে প্রচণ্ড আক্রমণ করবেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রথমেই প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করলে অনেক সময় কাজ হয়। শত্রুরা শক্তির প্রচণ্ডতা আঁচ করে সহজেই রণে ভঙ্গ দেয়।

    কিন্তু কুয়াশা এত নিচু হয়ে আছে যে ঠিকভাবে ওদের পোস্টটা দেখা যাচ্ছে না। গাছের ওপরে আলো ফুটে আছে। কিন্তু মানুষসমান উচ্চতায় কুয়াশা। তাঁরা সামনে কিছুই দেখছেন না।

    একটা উপায় আছে। একজনকে গাছে তুলে দেওয়া।

    তিনি ওপর থেকে দেখুন, ঠিক কোন জায়গায় পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটিটা।

    একজন মুক্তিবাহিনীর ছেলে উঠে পড়েন গাছে, ‘স্যার, ঠিক এই বরাবর স্যার।’

    বলতে না-বলতেই শত্রু বাহিনী গুলি ছুড়তে শুরু করে। মুহূর্তেই গর্জে ওঠে কাইয়ুমের রাইফেল। আর তিন দিক থেকে শত্রু বাহিনীর গুলির উৎস অভিমুখে একযোগে পাল্টা গুলি চালাতে থাকে মুক্তিবাহিনী।

    উভয় পক্ষ গুলি চালাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী এগোতে পারছে না। ওদের এলএমজি পোস্টটা বড় জ্বালাচ্ছে। ঠিকমতো বসিয়েছে তারা এলএমজি। সেই এলএমজির নাগালের মধ্যে কিছুতেই ঢোকা যাচ্ছে না।

    না, আর তো সহ্য করা যায় না। আজ যে করেই হোক, ধলুই তারা শত্রুমুক্ত করবেই।

    একটাই করণীয়।

    একজনকে সাহস দেখাতে হবে। ক্রলিং করে যেতে হবে পোস্টের একেবারে হাতের নাগালে। হ্যান্ডগ্রেনেড ছুড়ে মারতে হবে এলএমজি পোস্টের বাংকারে। তাহলেই নিষ্ক্রিয় হবে শত্রুর এলএমজি। তারপর ধলুই দখল মুহূর্তকয়েকের ব্যাপার।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম তখন একটা নালার ভেতরে। দুপাশে নলখাগড়া, ঢোলকলমি, কলমিলতা, ধইঞ্চা, লজ্জাবতী, শটির ঝোপঝাড়। দু-একজন মুক্তিযোদ্ধার পায়ে জোঁক গেঁথে বসেছে। নলিনের কনুই ছিঁড়ে গেছে কাঁটা গাছে। রক্ত ঝরছে। কিন্তু যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে এগুলো কোনো খেয়াল করার মতো ব্যাপারই নয়।

    মাথার ওপর দিয়ে শাঁই করে শাঁই করে গুলি উড়ে যাচ্ছে।

    পাখিরা আর্তনাদ করে উড়ে উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে যেদিকে পারে।

    কাইয়ুম বললেন, একজন সাহসী জওয়ান আমার দরকার। কে যাবে? এলএমজি পোস্টে যাবে পেছন দিক দিয়ে। ক্রল করে, চা-পাতা, ঝোপঝাড়ের আড়ালে দ্রুত। দুটো গ্রেনেড দিচ্ছি সঙ্গে। বাংকারের ভেতরে গ্রেনেড ছুড়তে হবে। এলএমজিটা থামিয়ে দিতে পারলেই উই উইল ব্রেক ইন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তিন দিক থেকে একযোগে ঢুকে যাব। ওদের বাকি লোকেরা তখন পালানোর পথ পাবে না। ওদের এলএমজি পোস্ট হবে আমাদের এলএমজি পোস্ট। কে যাবে?

    হামিদুর বললেন, ‘আমি যাব স্যার।’

    সময় নেই। দুটো গ্রেনেড দ্রুত তুলে দেওয়া হলো হামিদুরের হাতে।

    হামিদুর ক্রল করছেন গুইসাপের মতো। কিন্তু দ্রুত। চা-পাতা নড়ছে। বিষকাটালির ঝোপ দুলছে।

    ডান দিক থেকে হঠাৎ আক্রমণ। শত্রু বিভ্রান্ত।

    বাইনোকুলার দিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন কাইয়ুম। কুয়াশাটা কি আজকে যাবেই না, না যাওয়াই ভালো। তাহলে কুয়াশার আড়ালে হামিদুর পৌঁছে যেতে পারবেন শত্রুর পোস্টে।

    দ্রিম দ্রিম। দুটো গ্রেনেড চার্জের শব্দ।

    তারপর স্তব্ধতা। মানে এলএমজি পোস্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।

    এক দল মুক্তিবাহিনী ছুটে গেল এলএমজি পোস্টে। তখনো সেখানে ধোঁয়া উড়ছে।

    কিন্তু হামিদুর কই?

    এলএমজি পোস্টের ১০ গজ নিচে পড়ে আছেন হামিদুর। রক্তে তাঁর কাঁধ ভেসে যাচ্ছে। পেটের দিকটায় রক্তের বন্যা।

    কথা বলতে পারলেন না হামিদুর। স্তব্ধ হয়ে গেল সবকিছু।

    মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর দেহ কাঁধে তুললেন। নিয়ে এলেন তাঁকে আম্বাসার হাসিমারা ছড়ায়। ত্রিপুরা জেলায়।

    সেখানেই কবরস্থ করা হলো তাঁকে। কাঁচা মাটি দেওয়া হলো তাঁর দেহের ওপরে। দেশের মুক্তির জন্য তিনি শহীদ হয়েছেন।

    ২৮ অক্টোবর যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা শেষ হলো ১ নভেম্বর। ধলুই শত্রুমুক্ত হলো। সেখানে উড়িয়ে দেওয়া হলো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

    এরও বহুদিন পর হামিদুরকে মনে পড়ল কাইয়ুমের। মনে হলো, হামিদুর কি শেষ কোনো কথা বলতে চেয়েছিলেন অন্তিম মুহূর্তটিতে?

    একসময় হামিদুর তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মাতৃভূমি কী। তিনি বলেছিলেন, দেশই হলো মা।

    হামিদুর কি মায়ের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন? তিনি কি চেয়েছিলেন তাঁর শেষ আশ্রয় হোক মায়ের কোলে? কবরটা হোক দেশের মাটিতে?

    শহীদ হওয়ার ৩৬ বছর পরে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের কবর উত্তোলন করে ত্রিপুরা থেকে ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়।

    ক্যাপ্টেন কাইয়ুম—যিনি পরে মেজর হয়েছিলেন—তাঁর মনে হয়, হামিদুর তাঁর মায়ের কাছে ফিরে আসতে পেরেছেন।

    হামিদুর রহমান

    জন্ম

    ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৩

    মৃত্যু

    ২৮ অক্টোবর ১৯৭১

    জন্মস্থান

    খর্দ্দ খালিশপুর, মহেশপুর, ঝিনাইদহ

    যোদ্ধা

    ১ম ইস্ট বেঙ্গলের সি কোম্পানি

    যুদ্ধ

    সিলেটের শ্রীমঙ্গলের ধলুই সীমান্তে

    পদবি

    সিপাহি

    সমাধি

    প্রথমে ত্রিপুরার হাসিমারায়।

    পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে

    দুই পা হারানো ফিলিস্তিনিকে যেভাবে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা

    বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে দুই পা হারানো এক ফিলিস্তিনিসহ দুইজনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এসময় শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
    শুক্রবার জুমার নামাজের পর ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে বিক্ষোভের সময় এই হত্যাকাণ্ড চালায় দখলদার বাহিনী। আহতদের পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খবর: আনাদোলু এজেন্সি।
    ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেন, শহীদদের একজন ইয়াসের সোকার (৩২)। অপরজন ইব্রাহিম আবু সাউরাইয়া (২৯)।
    উল্লেখ্য, ইব্রাহিম আবু সাউরাইয়া ২০০৮ সালে গাজায় চালানো ইসরাইলের সর্বাত্মক সামরিক অভিযানে দুই পা হারিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দখলদার ইহুদি সেনারা।

    এদিকে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিক্ষোভে বড় ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হন যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
    প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী এবং তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে।

    যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা ট্রাম্পের এই একতরফা ঘোষণার নিন্দা জানায়।
    ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়। সর্বাত্মক প্রতিরোধের ডাক দেয় অপর সংগঠন ফাতাহ। এরপর বিক্ষোভে গুলি করে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দখলদার ইসরাইলি সেনারা। আটক করে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনিকে।

    সাম্প্রদায়িকতা : চীনে ধর্মকর্মে বিধি নিষেধ

    চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে অব্যাহত রয়েছে মুসলিম নিপীড়ন। প্রকাশ্যেই লঙ্ঘন করা হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার। কয়েক মাস আগে এ বছরের ১লা এপ্রিল মুসলিম পুরুষদের লম্বা দাড়ি ও মেয়েদের বোরকা নিষিদ্ধ করেছিল চীনা কর্তৃপক্ষ। প্রদেশের আইন প্রণেতারাও এ নিষেধাজ্ঞায় সম্মতি দিয়েছিলেন এবং তা প্রদেশটির সরকারী ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল।  (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২ এপ্রিল, ২০১৭)

    এখন আবার আদেশ জারি করা হয়েছে, মুসলিমেরা নিজেদের কাছে কুরআনে কারীম ও জায়নামায রাখতে পারবেন না। জায়নামায, কুরআন মাজীদ, তাসবীহসহ সকল ধর্মীয় সরঞ্জাম পুলিশের কাছে জমা দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে। শুধু হুকুম ও হুমকিই নয়, প্রদেশের পুলিশ গ্রামে-শহরে সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ

    উঠেছে। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৪ অক্টোবর, ২০১৭)

    এ যেন একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়েও ইসলাম চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞা। ইসলামের কোনো চিহ্নই কি এরা ধরে রাখতে দিবে না মুসলমানদের? চীনা প্রশাসনের এই অন্যায় পদক্ষেপের এক সাহসী জবাব দিয়েছেন সেনেগালের জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ডেম্বা বা। এখন লোনে তুর্কির ক্লাব বেসিক তাসে খেললেও মূলত তিনি  চীনের ফুটবল লিগের ক্লাব সাংহাই সেনহুয়ার একজন খেলোয়ার। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘যদি তারা (চাইনিজরা) জানত যে, মুসলিমরা মেঝেতেই নামায পড়তে পারে এবং লাখ লাখ মুসলিম কুরআন না খুলেই মুখস্থ পড়তে পারে, তাহলে সম্ভবত তারা মুসলমানদেরকে তাদের হৃৎপি- খুলে হস্তান্তরের আদেশ দিত।’ (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৪ অক্টোবর, ২০১৭, পৃ.৫)

    তার এই জবাবটি হাজার হাজার বার রি-টুইট হয়েছে। ইতিহাসও বারবার এই সত্য প্রমাণ করেছে যে, জুলুম-অত্যাচার করে মুসলমানদের দমানো যায় না। খোদ গণচীনের ইতিহাসও কি এটাই প্রমাণ করেনি?। মুসলিমেরা কি চীনের ভয়াবহ ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবে’র যুগ অতিক্রম করে আসেননি? এইসব বিধি-নিষেধ চীনের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণœ করবে এবং এসবের দ্বারা সংখ্যালঘু মুসলিমদের বীতশ্রদ্ধ করা ছাড়া আর কোনোই লাভ হবে না।

    আশ্চর্যের বিষয় এই যে, দশকের পর দশক ধরে জিনজিয়াং প্রদেশের মুসলিমদের উপর নানা প্রকারের জুলুম-অত্যাচার হলেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য নেই। যেন মানবাধিকার, ধর্মীয় অধিকার ইত্যাদি কোনো কিছুই মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

    বিশ^ব্যাপী ইসলাম ও মুসলিম-বিরোধী প্রচার-প্রচারণা দ্বারা দেশে দেশে মুসলমানদের প্রতি এই যে শীতল মনোভাব তৈরি করা হয়েছে এটি বর্তমান সভ্যতার কপালে অঙ্কিত এক ‘কলংক-রেখা’। ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীর অন্য সকল জাতি গোষ্ঠীর তুলনায় মুসলিমরাই সবচেয়ে উদার ও মানবতাবাদী জাতি। ইসলামের শৌর্য-বীর্যের যুগে অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর প্রতি মুসলিমেরা যে উদারতা ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেছেন তা অন্য কোনো জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাসে পাওয়া যায় না। চীনের যে অঞ্চলগুলোতে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে তা প্রধানত মুসলিম মুবাল্লিগণের উন্নত জীবনযাত্রা ও উন্নত আখলাকের দ্বারা হয়েছে। ইসলামে কাউকে ইসলামগ্রহণে বাধ্য করার বিধান নেই এবং তা করাও হয়নি। যেসকল অঞ্চলে ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে তা ইসলামের সত্যতা ও সৌন্দর্যের কারণে বিস্তার লাভ করেছে বলেই সীমাহীন জুলুম-অত্যাচারের পরও ইসলাম সেখানে টিকে আছে।

    জিনজিয়াং-এর মুসলিমদের উপর সাম্প্রতিক বিধি-নিষেধ চীনের কম্যুনিস্ট শাসন ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সেই কুখ্যাত যুগের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে, যার লৌহ যবনিকা থেকে চীনারা বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে বিগত আশির দশক থেকেই। চীনের ইতিহাসে প্রসিদ্ধতম মামলাটিও তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নৃশংসতা ও অরাজকতার বিরুদ্ধেই। আশির দশক থেকেই ওখানে মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যেসকল ‘সংস্কার’ সূচিত হয়েছে জিনজিয়াংয়ের মুসলিমদের উপর আরোপিত এই সকল বিধি-নিষেধ কি তাতে কালিমা লেপন করছে না?

    এখানেও মুসলিম নিপীড়িনে ব্যবহৃত হচ্ছে সেই বহুল ব্যবহৃত ‘জঙ্গিবাদ দমনের’ অস্ত্র। বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক রাজধানী উরুমকিতে একের পর এক দাঙ্গায় প্রায় ২০০ লোকের প্রাণহানির পর ২০০৯ সালে চীন সরকার এ অঞ্চলের মুসলমানদের উপর…।

    এই সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামার যথাযথ তদন্ত হচ্ছে কি? সঠিক তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার ন্যায়সঙ্গত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, কিন্তু তা না করে একটি গোটা জাতির বিরুদ্ধে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণ কখনোই শান্তির অনুকূল ব্যবস্থা হতে পারে না।

    মনে পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার ‘ওয়ান নেশন’ দল থেকে নির্বাচিত উগ্রবাদী নারী সিনেটর পলিন হ্যানসনের ঘটনাটি। এ বছরেরই ১৭ই আগস্ট পলিন হ্যানসন বোরকা পরে সিনেটে যোগ দিলে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল জর্জ ব্র্যান্ডিস তাকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘সিনেটর হ্যানসন! আজ আপনার বোরকা পরে চেম্বারে অবির্ভূত হওয়ার বিষয়টি আমি এড়িয়ে যেতে পারছি না। কারণ, আমরা সবাই জানি, আপনি ইসলামের অনুসারী নন। আমি আপনাকে শ্রদ্ধার সাথে সতর্ক করতে ও পরামর্শ দিতে চাই, আপনি অস্ট্রেলিয়ানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যে অপরাধ করেছেন সে ব্যাপারে সতর্ক হোন।’

    জর্জ ব্র্যান্ডিস আরো বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে বিশ^াসী পাঁচ লাখ অস্ট্রেলিয়ান রয়েছেন আমাদের অস্ট্রেলিয়ায়। এদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ভালো অস্ট্রেলিয়ান। আর সিনেটর হ্যানসন, চরমভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভালো অস্ট্রেলিয়ান আর কঠোর অনুসারী মুসলিম হওয়ার মাঝে কোনো দ্বন্দ নেই।’

    এর পর জর্জ ব্র্যান্ডিস ঐ সিনেটরকে লক্ষ্য করে যে কথাটি বলেছেনÑ তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে তার ‘প্রি-এমিনেন্ট পোর্টফলিও রেসপন্সিবিলিটি’ রয়েছে। আর গোয়েন্দা বাহিনীর পরামর্র্শও সুস্পষ্ট, চরমপন্থা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন ইসলামী সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা। এই কমিউনিটিকে উপহাস করা, এক কোণে ঠেলে দেয়া, এর ধর্মীয় পোশাক নিয়ে তামাশা করা ইত্যাদি হচ্ছে মর্মাহত করার মতো বিষয়। আমি আপনাকে বলব, আপনি আপনার আচরণের উপর নজর দিন। (দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২১ আগস্ট, ২০১৭)

    পাঁচ লক্ষ মুসলিমের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় যদি জর্জ ব্র্যান্ডিসের মতো একজন সুবিবেচক  আইন কর্মকর্তা থাকতে পারেন তাহলে পাঁচ কোটিরও বেশি মুসলিমের দেশ চায়নাতে কি এরকম দু-চারজন জর্জ ব্র্যান্ডিসও নেই, যারা সংখ্যালঘু মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের রাষ্ট্রকে সুপরামর্শ দিতে পারেন?

    পরিশেষে আল্লামা মুফতী তাকী উসমানীর একটি পরামর্শ এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। তিনি ১৯৮৫-এর নভেম্বরে চীন সফরের যে সফরনামা লিখেছেন তাতে এক জায়গায় লিখেছেনÑ

     

    ‘এইসব বিষয়ের সাথে এদিকটিও সামনে থাকা জরুরি যে, মুসলমানদের বর্তমান স্বাধীনতাটুকুও এসেছে দীর্ঘ নির্যাতন-নিপীড়নের পর। কাজেই আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা  উচিত হবে না, যা এই স্বাধীনতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখন মুসলমানদের এগিয়ে যেতে হবে গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সাথে।’ (জাহানে দীদাহ, পৃ. ৪৭১)

    রোহিঙ্গা নারী-শিশুর পক্ষে সোচ্চার জোলি

    যৌন নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পক্ষে এবার সোচ্চার হয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের বিশেষ দূত ও প্রিভেনিটং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ইনিশিয়েটিভের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।

    গতকাল বুধবার কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীবিষয়ক মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে হলিউড তারকা জোলি এ আওয়াজ তোলেন।

    এই ভাষণের আগে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল এম মাহফুজুর রহমান যৌন শোষণ ও হয়রানি নিয়ে জোলির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে মাহফুজুর রহমান রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁকে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় জোলি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে জানান, তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের দেখতে আসার পরিকল্পনা করছেন। তিনি সেখানে মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করবেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদার মানবিকতা দেখিয়েছে, তিনি এর প্রশংসা করেন।

    জোলি বলেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় প্রতিটি রোহিঙ্গা নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র হামলারও নিন্দা জানান।

    অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ‘উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি চিফ অব ডিফেন্স নেটওয়ার্ক’-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

    জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীবিষয়ক মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

    তুরস্কে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদ্‌যাপন

    তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতি উদ্‌যাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

    উপস্থিতির একাংশদূতাবাসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের শুরুতেই ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রদর্শিত হয়। এ ভাষণের পরিচিতি ও প্রসারের লক্ষ্যে তা বাংলা, ইংরেজি ও তুর্কি ভাষায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
    বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা। এ ভাষণ ছিল দেশবাসীর প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইউনেসকোর এই স্বীকৃতি শুধু এ ভাষণের স্বীকৃতি নয়; বঙ্গবন্ধুর উদ্দীপ্ত ও প্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতিগঠনে তাঁর অপরিমেয় অবদানের স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আকাঙ্ক্ষারও স্বীকৃতি। তার বক্তব্যের পর আগত অতিথিদের কয়েকজন সভায় বক্তব্য রাখেন।
    উপস্থিতির একাংশঅনুষ্ঠানে তুরস্কে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি, বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিদের বাংলাদেশি খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়।

    ডলফিনও পড়ে প্রেমে, সঙ্গিনীকে দেয় উপহার!

    প্রেমে কেবল মানুষেরাই পড়েনা, জলের নীচের প্রাণীরাও প্রেমের ভেলায় গা ভাসায়। এমনকি প্রেমিকাকে উপহার দেয়ার চল রয়েছে গভীর সমুদ্রের বাসিন্দাদের মধ্যেও। উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় এক দশক ধরে গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া’ (ইউডব্লিউএ)’র বিজ্ঞানীরা।
    তাদের দাবি, প্রেমিকাকে নেচে-গেয়ে খুশি করার পাশাপাশি উপহারও দিতে ভালবাসে পুরুষ ডলফিনরা। আর সবচেয়ে পছন্দের উপহার- সামুদ্রিক স্পঞ্জ। সমুদ্রের ঢেউ কাটিয়ে কখনও শূন্যে লাফিয়ে ওঠা, কখনও এক ডুবে বেশ জলকেলি। নাচের সঙ্গে চলে শিস দিয়ে গানও।সমুদ্রবিজ্ঞানী থেকে পর্যটক, এ দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন অনেকেই। তবে তারা যে উপহারও দিয়ে থাকে প্রেমিকাকে, সেটা এত দিন জানা যায়নি। একটি প্রাপ্তবয়স্ক অস্ট্রেলীয় হাম্পব্যাক পুরুষ ডলফিনকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানাতে গিয়ে ব্যাপারটা ধরা পড়েছে গবেষকদের ক্যামেরায়।
    প্রথমে একটি ডলফিন পরিবারকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানানো শুরু হয়। লক্ষ করা হয়, বাবা-মা ও তাদের ছানার কার্যকলাপ। তাতে দেখা যায়, এক ডুবে পুরুষ ডলফিনটি চলে যায় সমুদ্রের একেবারে গভীরে। তার পর সমুদ্রতট থেকে একটি স্পঞ্জ উপড়ে নিয়ে সাঁতরে যায় সঙ্গিনীর কাছে।
    গবেষকদের বিশ্বাস, ডলফিন-কূলে এভাবেই হয়তো পুরুষেরা খুশি করে ‘গিন্নিদের’। এভাবে উপহার দেয়ার মধ্যে সম্ভবত পুরুষের শক্তি প্রদর্শনও রয়েছে। ইউডব্লিউএ’র গবেষক সিমোন অ্যালেন জানিয়েছেন ‘সায়েন্টিফিক জার্নাল’ এ প্রকাশিত হয়েছে তাদের গবেষণাপত্রটি। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

    বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ব

    জাতিসংঘে তোপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

    ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুসালেম স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব। ৫৬টি দেশের দেড় শ’ কোটিরও বেশি মুসলিমের পাশাপাশি খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ঘোষণাকে মেনে নিতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকে বিশ্বের প্রায় সব বৃহৎ শক্তির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামূলক। পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
    নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নিলো যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে। ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোর দেন। আর ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরো ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে। জরুরি বৈঠকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরাইলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে’।
    তবে জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে। নিকি হ্যালে বলছেন, ‘বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরাইলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা কিনা ক্ষতি এনেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারে না’।
    এদিকে অধিকৃত গাজা উপত্যকায় গতকাল বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। গাজা থেকে ইসরাইলি ভূখন্ডে রকেট হামলার জবাবে ইসরাইলের ওই বিমান হামলায় শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। শুক্রবার হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি শহর লক্ষ্য করে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করে যোদ্ধারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরের দিন শুক্রবার ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করেন ফিলিস্তিনিরা। ওইদিন বিক্ষোভে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে আরো দুই ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটে।
    ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় হামাসের চারটি স্থাপনায় ইসরাইলি বিমান বাহিনী (আইএএফ) হামলা চালিয়েছে। এরমধ্যে দুটি অস্ত্র উৎপাদন এলাকা, একটি অস্ত্রাগার ও একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
    গতকালের এই হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস। ফিলিস্তিনি এই স্বাধীনতাকামী সংগঠন বলছে, হামাস সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরাইলি হামলায় ছয় শিশুসহ আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে ২৫ জন। ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী ঘোষণার পর বিক্ষোভের আগুনে উত্তাল ফিলিস্তিনে এ নিয়ে চারজনের প্রাণহানি ঘটলো। এছাড়া আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার একশ’ জন।
    আরবসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন মুসলিমরা। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির নিন্দা ও ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনে সংহতি জনাতে হাজার হাজার মুসলিম বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় ও মার্কিন পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন। জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, মিসর, ইরাক, তুরস্ক, তিউনিশিয়া এবং ইরানে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মকর্তা ডিনা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের সামনে কয়েক শ’ মুসলিম ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে সমবেত জুমা নামায আদায় ও বিক্ষোভে অংশ নেয়।
    আরব বিশ্ব ও মার্কিন পশ্চিমা মিত্র রাষ্ট্রগুলো ট্রাম্পের বুধবারের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে জেরুজালেমের অবস্থান। সউদী আরব সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে বলেছে যে, এ ঘোষণা চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে আরো চাঙা করে তুলবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর ফিলিস্তিনে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। বিবিসির একজন সংবাদদাতা বলছেন, উপসাগরীয় এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, মি ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তা ইরান এবং আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের জিহাদিদের চাঙা করে তুলবে। বাহরাইনে মানামা ডায়ালগ ইভেন্ট নামে এক বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে সউদী প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সালের কথায় তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল। তিনি বলছেন, এ ঘোষণা জঙ্গি গ্রুপগুলোর জন্য অক্সিজেনের মতো কাজ করবে এবং তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে। প্রিন্স তুর্কি আল-ফয়সাল গত ২০ বছর ধরে সউদী আরবের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ সম্মেলনে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলির একটি প্রবন্ধ পড়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি আসেননি।
    বিশ্বের অধিকাংশ দেশই পূর্ব জেরুজালেমকে ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল জোরপূর্বক দখল করে আছে বলে মনে করে। জেরুজালেমের প্রাচীন নগরীও ইসরাইলের দখলে রয়েছে; যা মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্র ভূমি হিসেবে স্বীকৃত।
    জেরুজালেম প্রশ্নে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন যৌথভাবে’ মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সমাধানের অংশ হিসেবে ৭০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি অনুসরণ করে এসেছে। বুধবার সেই নিয়ম ভেঙে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি এবং এখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের নির্দেশ দিলেন।
    ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভেঙে একদিকে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল, অন্যদিকে আরব ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়, তাতে জেরুজালেমের জন্য স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং এককভাবে তা নিজ দেশের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয়। সেই অন্তর্ভুক্তি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় কখনো মেনে নেয়নি। ১৯৯৫ সালে ইসরাইল ও পিএলও স্বাক্ষরিত অসলো শান্তিচুক্তিতে উভয় পক্ষ মেনে নেয় যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জেরুজালেমের প্রশ্নটি নির্ধারিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০০০ সালে হোয়াইট হাউসের লনে ইসরাইলি নেতা র‌্যাবিন ও ফিলিস্তিন নেতা আরাফাত যে শান্তি কাঠামো স্বাক্ষর করেন, তাতেও এই প্রশ্নে উভয় পক্ষের সম্মতি ছিল।
    কলমের এক খোঁচায় সব বদলে দিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের কট্টর দক্ষিণপন্থী ইহুদি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে জেরুজালেমকে নিজেদের একচ্ছত্র রাজধানীর স্বীকৃতির দাবি করে আসছেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে এই দাবি তিনি মেনে নেবেন। আপাতভাবে ট্রাম্প নিজের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন, কিন্তু এই এক ঘটনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রশ্নে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজের ভূমিকা তিনি নিজেই বাতিল করে দিলেন।
    ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, এর ফলে শান্তিপ্রক্রিয়া নস্যাৎ হওয়ার ব্যবস্থা পাকাপাকি হলো। এরপর যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে আর দাবি করতে পারে না। ইসরাইলি দৈনিক হারেৎস এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে মন্তব্য করেছে, এই সিদ্ধান্তে শুধু লাভ হলো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার অতি কট্টরপন্থী সমর্থকদের।
    আরও স্পষ্ট করে বলেছেন ফিলিস্তিনি নেতা হানান আশরাবি। তাঁর কথায়, এর ফলে কেবল শান্তিপ্রক্রিয়ার মৃত্যু হলো তা-ই নয়, এই অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ত্বরান্বিত হলো।
    জেরুজালেম আরব ও ইহুদি উভয়ের কাছে পবিত্র নগর। কয়েক বছর আগে কাজের সূত্রে একজন সাংবাদিক সেই শহরে গিয়েছিলেন। তখন পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেমের ফারাক দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। পশ্চিম জেরুজালেম সব সুযোগসংবলিত অতি আধুনিক একটি শহর, পূর্ব জেরুজালেম ভগ্নপ্রায়। এই শহরের প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি অধিবাসীর জন্য নির্ধারিত এলাকায় ইসরাইল ক্রমশই নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ করে চলেছে, এর ফলে পূর্ব জেরুজালেম দ্রæত তার আরব চরিত্র হারাচ্ছে। পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসন বসতি স¤প্রসারণে আপত্তি জানালেও ট্রাম্প তাতে নীরব সম্মতি জানিয়েছেন। ইসরাইলে ট্রাম্পের নতুন রাষ্ট্রদূত এই স¤প্রসারণের পক্ষে। এ ব্যাপারে তিনি কোনো রাখঢাক করেননি।
    ঠিক এ সময়েই কেন ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সেই রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই কাজে নেতৃত্ব দিতে তিনি নিজ জামাতা জ্যারেড কুশনারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ঠিক কীভাবে শান্তি আসবে, তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আছে কি না, ট্রাম্প বা কুশনার কেউই তা খোলাসা করে বলেননি। বুধবার তার ঘোষণায় ট্রাম্প দাবি করেন, শান্তিপ্রক্রিয়ায় নতুন পথ অনুসরণের জন্যই তার এই সিদ্ধান্ত। ‘আমি ঠিক কাজটিই করেছি।’ বলেন তিনি।
    কোনো কোনো ভাষ্যকার অবশ্য অন্ধকারেও আলোর সম্ভাবনা দেখেছেন। লক্ষণীয়, বুধবারের ঘোষণায় ট্রাম্প এই এলাকায় আরব ও ইহুদিদের জন্য স্বতন্ত্র দুটি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানান। যদি দুই পক্ষ তা-ই চায়, তাহলে তিনি তাতে সমর্থন জানাবেন। আরও লক্ষণীয়, একই ঘোষণায় ট্রাম্প ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের চূড়ান্ত সীমান্ত কী হবে, সে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। তা থেকে কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন, দুই পক্ষ চাইলে পূর্ব জেরুজালেমে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানীও হতে পারে। সে সিদ্ধান্ত নেবে বিবাদের দুই পক্ষ। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, শান্তিপ্রক্রিয়া প্রশ্নে আলোচনা চলবে, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেই উদ্দেশ্যে খুব শিগগির এই অঞ্চল সফরে আসবেন।
    ঘোষিত হলেও এ মুহূর্তেই জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরিত হচ্ছে না। এ জন্য জায়গা নির্বাচন থেকে ভবন নির্মাণের জন্য তিন-চার বছর লেগে যাবে। ট্রাম্পের সময়কালে এই সিদ্ধান্ত আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
    শান্তিপ্রক্রিয়ার সমর্থনে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নেননি। কোনো কোনো ভাষ্যকার বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য ছিল নিজের রক্ষণশীল সমর্থকদের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা পোক্ত করা। শুধু মার্কিন ইহুদি লবি নয়, রিপাবলিকান দলের ইভানজেলিক্যাল অংশ এই সিদ্ধান্তে তাদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছে। কংগ্রেসে দুই দলের অধিকাংশ সদস্যই এই সিদ্ধান্তে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
    মনে রাখা দরকার, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন ফিলিস্তিনি ও আরব বিশ্ব প্রবলভাবে বিভক্ত। ট্রাম্প তাদের দুর্বলতার এই সুযোগ গ্রহণ করলেন। কোনো কোনো আরব দেশ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালেও এই প্রশ্নে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ তারা নেবে’ একথা ভাবার কোনো কারণ নেই। সউদী আরব ইরানকে একঘরে করার লক্ষ্যে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, মিসর ও আমিরাতের রাজ্যগুলোও এই আঁতাতের অংশ। মিসরের ধর্মীয় নেতারা ইসরাইলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ফিলিস্তিনি গ্রæপ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
    ইউরোপীয়রা নীতিগতভাবে ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে কথা বললেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাহসী কোনো পদক্ষেপ তারা নেবে না, এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই। জাতিসংঘ আরও একটি অর্থহীন প্রস্তাব গ্রহণের চেষ্টা নেবে, যা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিতে নস্যাৎ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সব ভার ফিলিস্তিনিদের একাই বহন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘রক্ষাকর্তা হবে’ এত দিন এই ভ্রম তাঁরা জাগিয়ে রেখেছে। মাহমুদ আব্বাসের বিভক্ত ও দুর্বল নেতৃত্ব সেই ভ্রম কাটিয়ে উঠলেও আরেক দফা বিক্ষোভ ও সহিংসতার বাইরে তারা আর কী করতে পারেন, তা পরিষ্কার নয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, এপি, রয়টার্স, ডি ডবিøউ।
    তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধ
    জেরুজালেমকে ইসরাইলি রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে তীব্র বিক্ষোভের মুখে তিউনিসিয়ায় দূতাবাস বন্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল স্থানীয় সবাদমাধ্যম দোস্তর ডটওআরজির বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে তিউনিসিয়ায় মার্কিন দূতাবাস বন্ধের খবর দিয়েছে। তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিশে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা দেশটিতে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের। তিউনিসিয়া চলাচলে সরকারি নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
    মিডল ইস্ট আই বলছে, তিউনিসিয়ায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকা ও সমাবেশ এড়িয়ে চলতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে দূতাবাস। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুক্রবার তিউনিসিয়ার বিক্ষোভকারীদের মার্কিন দূতাবাসমুখী পদযাত্রায় বাধা দিয়েছে দেশটির পুলিশ।
    জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে তিউনিসিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী তিউনিসে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলবের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি বলেছেন, তার দেশ জেরুজালেম ঘোষণা সংক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছে।

    প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা -ফখরুল

    বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
    শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। বৃহস্পতিবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে নিয়ে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
    মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নামে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তাকে এজন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

    জাপানের শিন্টো মন্দিরে সামুরাই তলোয়ার নিয়ে হামলা, নিহত ৩

    জাপানের রাজধানীর টোকিওর টোমিওকা হাচিমাংগু মন্দিরে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে সামুরাই তলোয়ার ও ছুরি নিয়ে হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার হামলাকারী শিন্টো মন্দিরটির প্রধান পুরোহিত ও তার বোন নাগাকো টোমিওকাকে হত্যা করে।
    পরবর্তীতে শিগেনাগা নামের ওই ব্যক্তি হামলায় তার সহযোগী ও প্রেমিকাকে হত্যা করে, সে নিজেও আত্মহত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা সামুরাই তলোয়ার ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, ৫৮ বছর বয়সী নাগাকো টোমিওকো গাড়ি থেকে নামার সময় তার উপর হামলা করা হয়। শিগেনাগার সহযোগী নারী প্রথম নাগাকোর ড্রাইভারকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে। ড্রাইভার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু টোমিওকার বুকে ও ঘাড়ে গভীর ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে, পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
    সন্দেহভাজনরা তখন মন্দিরের অন্য অংশ চলে যায়। পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছে, আমাদের বিশ্বাস সন্দেহভাজন শিগেনাগা প্রথমে তার সন্দেহভাজন সহযোগীকে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে। জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শিগেনাগা ও টোমিওকার মধ্যে কে হবে মন্দিরটির প্রধান পুরোহিত সেটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল।
    শিগেনাগা টোমিওকা ১৯৯০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শিন্টো মন্দিরটির প্রধান পুরোহিত ছিলেন। ২০০১ সালে তার পিতা এসে তাকে বরখাস্ত করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং নাগাকো টোমিওকাকে দ্বিতীয় প্রধান পুরোহিত নিয়োগ করেন। ২০১০ সালে তাদের বাবা পদত্যাগের পরে নাগাকো টোমিওকা প্রধান পুরোহিত হন। ২০০৬ সালে শিগেনাগা হুমকি চিঠি দিয়েছিলেন যে নাগাকোকে নরকে পাঠাবেন।
    শিন্টো জাপানের আদি ও স্থানীয় ধর্ম। টোমিওকা হাচিমাংগু মন্দিরটি ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত যা আগস্টের ফুকাগাওয়া হাচিমান সামার ফেস্টিভ্যালের জন্য জনপ্রিয়। মন্দিরটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি প্রথম ওই মন্দিরগুলোর মধ্যে যারা শিন্টো মন্দিরে পর্যটক ও দান আকর্ষণ করতে সুমো টুর্নামেন্ট আয়োজন শুরু করেছিল। জাপানের রাজা ও রাণী ২০১২ সালে এই মন্দির সফর করেছিলেন। বিবিসি।

    রাহুল গান্ধীই ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হচ্ছেন

    ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির বিগত উনিশ বছরের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সোনিয়া গান্ধী এবার নতুন নেতৃত্বের হাতে দলটির হাল ছাড়তে চাচ্ছেন। তবে জানা গেছে, প্রকাশ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় রাহুল গান্ধীই হতে যাচ্ছেন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এ রাজনৈতিক দলটির আগামী দিনের কর্ণধার। এখন শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।
    গতকাল সোমবার দিল্লির আকবর রোডে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাহুল। এর আগে, রাহুলকে সভাপতি পদে দেখতে ৮৯টি প্রস্তাব পেশ করেন কংগ্রেসের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া সারাদেশের অন্তত ৯ হাজার আঞ্চলিক প্রতিনিধির সমর্থন গেছে রাহুলের পক্ষে।
    গতকাল সোমবার ছিল দলটির সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে নিয়ে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে যান বর্তমান দলটির সহসভাপতি রাহুল গান্ধী। দিনের শেষে আর কারো মনোনয়নের খবর না আসায় বলা যাচ্ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন রাহুল গান্ধী। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

    ‘আগাম নির্বাচন’ চান না আ’লীগ নেতারাই

    বাতাসে শোনা যাচ্ছে আগাম নির্বাচনের গুঞ্জন। সংবিধান অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আরো এক বছর বাকি থাকতেই ‘আগাম নির্বাচনের’ আওয়াজ উঠছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা ঘোষণা দিয়েছেন ‘সরকার চাইলেই ইসি আগাম নির্বাচন দিতে প্রস্তুত’। সিইসির এ কথায় বিএনপির নেতারা সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে আগাম নির্বাচনের দাবি করলে তাঁর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। রাজনীতির মাঠে ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদেনি’ প্রবাদের মতোই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কথার যুদ্ধে এগিয়ে থাকতে চান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কোন সময়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন; তাহলে দলের পক্ষ থেকে আমরা অংশ গ্রহণ করতে পারব।’
    বাস্তবতা হলো ক্ষমতাসীন দলের মাঠের চিত্র ভিন্ন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা তথা শেখড় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তারা কেউ আগাম নির্বাচন চান না। রাজনীতি ও সার্বিক পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে তাদের মত হলো নির্বাচন আগাম নয় বরং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কারণ ‘বিএনপির প্রস্তুতি নেই’ ভেবে যদি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়; তা অভ্যন্তরের বিরোধ দলকে আরো বিপর্যয়কর অবস্থায় ফেলবে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতাও মনে করছেন আগাম নির্বাচন হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেয়ার সময় বলেছেন, ‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে না এলে দলটির পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে। অবশ্য দলটির নেতারাও জানে আগামী নির্বাচনে না এলে মুসলিম লীগের মতো করুণ পরিণতি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে’। মাঠের রাজনীতিক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের হয়তো কিছুটা ‘বাস্তবতা’ আছে। বিএনপি এখনো অগোছালো দল। যারা রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করেন তাদের অনেকেই মনে করেন হামলা-মামলায় যে ভাবে কোমড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে তাতে সরকারবিরোধী বড় কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা বিএনপির নেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন আওয়ামী লীগের ইমেজের যে ধ্বস; জনপ্রিয় কোনও ইস্যু নিয়ে মাঠে নামলে এবার বিএনপিকে হয়তো খালি হাতে ঘরে ফিরতে হবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কর্মকান্ড মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। উন্নয়নের কথা বলা হলেও মানুষ নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে। এতে মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাতে পারেনি। সুযোগ পেলে ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মানুষ নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা ভাঙতে পারে। কী হলে কী হবে তা কেবল সময়ই বলে দেবে। বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগ আরেক দফা ক্ষমতায় থাকতে চায়। বিএনপি আর ক্ষমতার বাইরে থাকতে চায় না। সে জন্যই আওয়ামী লীগের কিছু নেতা সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে ‘আগাম নির্বাচন’ করে আরো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু সারাদেশের চিত্র কি?
    পেশাগত কারণে গত সাড়ে তিন বছরে দেশের ৩৫টি জেলা ঘুরেছি। জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রামের হাট-বাজার, চরাঞ্চরে আমজনতার সঙ্গে কথা বলেছি। খুব কম জেলা উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন গ্রাম পেয়েছি সেখানে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তণীল কোন্দল নেই। দলের পদপদবি এবং ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এসব কোন্দলের সিকিভাগ খবরও মিডিয়ায় আসে না। তাছাড়া দল ক্ষমতায় থাকায় দলীয় নেতারা এমন সব সন্ত্রাস-দখল-নৈরাজ্যকর কান্ডকারখানা করেছেন যে সাধারণ মানুষ দলটির উপর চরম ক্ষুব্ধ। আবার আওয়ামী লীগের যারা নির্বাচিত এমপি তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই শেকড়ের নেতাদের বিরোধ। তছাড়া কয়েক বছরে বিএনপিসহ সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে জুলুম নির্যাতন করা হয়েছে তাতে মানুষ ‘পরিবর্তনের’ জন্য মুখিয়ে রয়েছে। গ্রামে এমন চিত্রও দেখেছি সাধারণ মানুষ ‘শুধু ঝামেলা এড়াতে’ নিজেদের আওয়ামী লীগার হিসেবে পরিচয় দেন। এমনকি মোবাইলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, স্থানীয় এমপির ভাষণ রেকর্ড করে রাখেন; চলার পথে অপরিচিত দু’চারজনকে দেখলেই সেই রেকর্ড বাড়িয়ে তাদের ধারণা দেন আমি আওয়ামী লীগার। গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তাদের প্রায় কেউই মনে করেন না ৫ জানুয়ারিতে কোনো নির্বাচন হয়েছে। বিনা ভোটে ১৫৩ জনকে সংসদ সদস্য হন। শত শত ভোট কেন্দ্রে একটি ভোটও পরেনি। হাজার হাজার ভোট কেন্দ্রে একটি থেকে ১০টি ভোট পড়েছে। নির্বাচনে কত ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে সে খবর এক ঘন্টায় দেয়া সম্ভব; অথচ নির্বাচন কমিশন তিন দিন পর ৪০ ভাগ ভোট দানের খবর দিয়েছে। বিএনপি থেকে বলা হয় শতকরা ৫ ভাগ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরাও একই অভিমত দেয়। শুধু কি তাই! যারা এমপি নির্বাচিত হন তাদের শতকরা ৯০ ভাগ এমপি প্রথম দুই বছর নির্বাচনী এলাকায় যেতে সাহস পাননি। পরবর্তীতে পুলিশী প্রহরায় গেলেও অনেকেই নাজেহাল হয়েছেন; আবার কেউ পুলিশ প্রহরায় এলাকা ছেড়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরণী অবস্থা এমন যে সর্বত্রই বিরোধ আর ভীতিকর অবস্থা। গাইবান্ধার জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার এক নেতা জানান, আইন শৃংখলা রক্ষার নামে জনগণের ওপর জুলুম করায় মানুষ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। মানুষের আক্রমনের ভয়ে কয়েক মাস আগেও তারা (আওয়ামী লীগ নেতা) একাই চলাফেরা করতে ভয় পেতেন। এখন সে ভয় কমলেও আগাম ভোটের বাতাস শুরু হওয়ায় আবার ভীতি ছড়াচ্ছে। কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় সবখানেই ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে বিরোধ। কোথাও এমপির সঙ্গে বিরোধ কোথাও মূল দলের সঙ্গে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরোধ। এ অবস্থায় ভোট হলে প্রতিটি আসনে ৫ থেকে ২৫ জন নেতা দলীয় নমিনেশন পাওয়ার চেস্টা করবে। নমিনেশন যারা পাবেন না তারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
    আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, আগাম নির্বাচনী প্রচার করা হচ্ছে তিন কৌশল সামনে রেখে। প্রথমত ঃ আগাম নির্বাচনের আবহ তৈরি করে বিএনপিকে চাপে রাখা; মাঠপর্যায়ে দলের বিশৃঙ্খলা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে মানুষকে কাছে টানা। সারাদেশে নির্বাচনী হাওয়া তৈরি হলে বিএনপিসহ বিরোধীরা এর বাইরে চিন্তা করার সুযোগ পাবে না; আবার হঠাৎ করে নির্বাচনী প্রস্তুতি ঝামেলায় পড়বে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা হলে দলটি আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি দিতে পারে। আগে থেকে মানুষকে নির্বাচনমুখী করে রাখতে পারলে আন্দোলনে সফল হতে পারবে না বিএনপি।
    দ্বিতীয়ত ঃ আগাম নির্বাচনের পক্ষ্যের ব্যাক্তিরা মনে করছেন মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ খুবই বিশৃঙ্খল এবং কোন্দলে জর্জরিত। প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচার নিয়ে মাঠে নামলে অভ্যন্তরীণ এই বিরোধ কমে আসবে। পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে শতাধিক নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। পাঁচ শতাধিক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য তৃর্ণমূলের কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে বহিষ্কৃত নেতাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরের ২ মার্চ জেলা পর্যায়ের নেতাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয় এখন থেকে শুধু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করবে। এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচনের আগে ছোট অপরাধে কাউকে দল থেকে বের না করার কৌশল নেওয়া হয়েছে।
    তৃতীয়ত ঃ জাতিসংঘসহ বিদেশী সংস্থা, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে বিদেশে দফায় দফায় আলোচনা-বৈঠক-সুনানী-সেমিনার হচ্ছে। কয়েক মাস আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রাসেলসে বৈঠকের পর সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শ ও প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন হয় কিনা সেটা দেখার জন্য প্রায়ই বিদেশী কূটনীতিকরা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাত করছেন। ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগে যে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফর করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভোটে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেন; পরবর্তীতে এরশাদ সেই গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন; সেই ভারতও মনে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের বিকল্প নেই। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে পশ্চিমারা মনে করেন প্রতিবেশি ভারত বাংলাদেশের প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনে ভেতরে ভেতরে ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারি ভোটবিহীন বিতর্কিত নির্বাচনে অনেকটা প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে ভূমিকা পালন করেছে। এখন বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ সরকারকে সে বার্তা দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাও মাধব ঢাকা সফর করে ‘সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায় ভারত’ এই বার্তা দিয়েছেন। ফলে চেষ্টা করেও আরেকবার ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচন করা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ্যে সম্ভব নয়। সে জন্য জনপ্রিয়তা থাকতেই ‘আগাম নির্বাচন’ করা উচিত। কিন্তু মাঠের এতোই বিশৃংখল অবস্থা যে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ বেশি ঝামেলায় পড়বে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক নেতা এই বলে অভিমত দেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলে দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে নীতি নির্ধারকরা আগাম নির্বাচন দেবেন তা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সময় নিয়ে নির্বাচনের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক না করে হঠাৎ করে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে ভোটের আগে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ভয়ঙ্কর সংঘাত মোকাবিলা করতে হবে।

    সুইসাইডাল গেম

    Posted by admin on December 4
    Posted in Uncategorized 

    সুইসাইডাল গেম

    প্রযুক্তির ছোবল কীভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে এর একটি ভয়াবহ নমুনা হিসেবে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে একটি অনলাইন সুইসাইডাল গেম। পত্রপত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, এই গেমটির কারণে বিশে^র নানা দেশে ঘটেছে অনেক কিশোর-তরুণের আত্মহত্যার ঘটনা । বাংলাদেশেও দুয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অনুসন্ধানে আরো কিছু ছেলে-মেয়ের আসক্তির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তির ভালো দিক যেমন আছে তেমনি আছে ভয়াবহ ক্ষতির দিকও। এখন আমাদের নিরাপদ গৃহকোণগুলোও আর নিরাপদ নেই। বিশে^র সকল ভালো-মন্দের একেকটি ‘জানালা’ আমাদের ঘরগুলোতেও স্থাপিত হয়ে গেছে। ভালো-মন্দের বিচার ও প্রযুক্তির মুখে লাগাম পরানোর সদিচ্ছা বা সক্ষমতা না থাকায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম পরিণত হচ্ছে মন্দের সহজ শিকারে। আলোচিত গেমটি এর সাম্প্রতিক নমুনা। জানা গেছে ফিলিপ বুদেইকিন নামক জনৈক রুশ যুবক এ খেলার উদ্ভাবক। সে ছিল মনোবিজ্ঞানের একজন ছাত্র। একসময় তাকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। গেমটির প্রচলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘সমাজে যাদের কোনো গুরুত্ব নেই তাদের আত্মহননের প্ররোচনা দেয়ার মাধ্যমে সমাজকে পরিষ্কার করার জন্য এটা করা হয়েছে।’ তার এই বক্তব্যেও আছে তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাচ্ছিল্য এবং তাদের মাঝে হতাশা বিস্তারের এক সূক্ষ্ম প্রয়াস। পৃথিবীতে যে কত হিং¯্র স্বভাবের মানুষ রয়েছে আর কতভাবে যে এরা চরিতার্থ করে এদের জিঘাংসা ও পাশবিকতা কে তার হিসাব রাখে? নানা দেশের যে সকল কিশোর-তরুণ এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে তারা সম্ভবত কল্পনাও করতে পারছে না যে, সে এক হিং¯্র মানুষের জিঘাংসার শিকার মাত্র। কেন তুমি নিজের ক্ষতি করে আরেকজনকে তার পাশবিকতা চরিতার্থ করার সুযোগ দিবে? ওই হিং¯্র পশুটি তার হিং¯্রতা ও পাশবিকতার আগুনে জ¦লে পুড়ে মরুক, তুমি কেন তার জ¦ালা জুড়াতে যাবে? তার জীবনে যদি ব্যর্থতা থাকে, লাঞ্ছনা থাকে সেটার দায় তার নিজের। হে সরল কিশোর, হে সম্ভাবনাময় তরুণ! তুমি কেন বলি হতে যাবে এক পাপিষ্ঠের পাপ-ইচ্ছার? জীবন তো মূল্যহীন নয়। এই জীবনকে কাজে লাগিয়েই তো আমাদের অর্জন করতে হয় আখেরাতের সফলতা। কাজেই কেউ যদি তোমাকে জীবন থেকে নিরাশ করে তাহলে বুঝতে হবে, সে বন্ধু নয়, শত্রু। সে এক ছদ্মবেশী দুর্বৃত্ত যে তোমাকে লুণ্ঠন করতে চায়। জীবনে দুঃখ-বেদনা থাকে। সম্মান-অসম্মান, সফলতা-ব্যর্থতা, সক্ষমতা-অক্ষমতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালো লাগা-খারাপ লাগাÑ এই সবই জীবনের একেকটি অনুষঙ্গ। এই সব নিয়েই জীবন। আর সে কারণেই জীবন বিচিত্র, বর্ণিল। জীবনে ব্যর্থতা আছে বলেই সাফল্য এত আনন্দের। অপ্রাপ্তি আছে বলেই প্রাপ্তি এত আরাধ্য। সবার জীবনেই থাকে ব্যর্থতা ও অপ্রাপ্তি। থাকে বিচিত্র উপায়ে। প্রত্যেকে শুধু নিজের সুখ-দুখই পূর্ণরূপে জানে ও উপলদ্ধি করে বলে অন্যের সাথে তার নিজের তুলনাটা প্রায়শ সঠিক হয় না। অন্যের সকল অবস্থা জানা নেই বলে কখনো কারো এই ধারণা জাগতে পারে যে, ওরা সবাই সুখী, সফল, পরিবারে ও সমাজে প্রয়োজনীয়, কিন্তু আমি দুখী, ব্যর্থ, সবার কাছেই অপ্রয়োজনীয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরাও কিন্তু অন্যকে দেখে এই রকমের একটি নিঃশ^াস মোচন করছে। এ যেন সেই পংক্তিরই বাস্তব উদাহরণÑ নদীর এ কূল কহে ছাড়িয়া নিঃশ^াস, ঐ কূলেতে সর্বসুখ আমার বিশ^াস… এই যে অতৃপ্তি, মানসিক যন্ত্রণা এটা দূর হয় ঈমানী চেতনার দ্বারা। এই চেতনা যত দুর্বল হয় যাতনাও তত বাড়তে থাকে। তো এই যাতনাগ্রস্ত মানবমনের এই দুর্বল অংশে খোঁচা দিয়ে যারা রক্ত ঝরায়, বঞ্চনা-অপমানের স্মৃতি ও উপলদ্ধিগুলোকে জাগ্রত করে, অবশেষে জীবন থেকেই নিরাশ ও বিমুখ করে তোলে এরা অনেক বড় পাপী। এরা ইবলিসের দোসর, মানবতার শত্রু। মানবকে শেষ করবার জন্য এরা হাত দেয় মানুষের সবচেয়ে কোমল জায়গা তার হৃদয়ে। দুরাচার পাপাত্মা ইবলীস যে মানবের সবচেয়ে বড় শত্রু সে কীভাবে কাজ করে? সে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। কুরআনের ভাষায় একে বলা হয়েছে ‘ওয়াসওয়াসা’। ইবলীস মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দেয়, তাকে ভয় দেখায়, আনন্দের আশা দেয়, আর এভাবেই ধীরে ধীরে তাকে অন্যায় কর্মে প্ররোচিত করে। হায়! আমরা যদি চিনতাম আমাদের চরম শত্রুকে! হায়! আমরা যদি বুঝতাম জীবনের পরম মূল্য! মানুষের মন বড় সংবেদনশীল জায়গা। এটি ভালো ও মন্দের অবতরণস্থল। তাই ভালো-মন্দের পরিচয় সম্পর্কে যে মন সচেতন, ভালোকে গ্রহণ করার আর মন্দকে বর্জন করার জন্য যে মনে আছে অতন্দ্র প্রহরা ঐ মনে মন্দ তার আসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূক্ষ্ম বাস্তবতা কী সহজ ভাষায় বয়ান করেছেনÑ ‘আদমের বেটার (মনে) শয়তানের স্পর্শও লাগে। লাগে ফেরেশতার পরশও। শয়তানের স্পর্শ হচ্ছে, অনিষ্টের প্ররোচনা আর সত্যে অবিশ^াস, পক্ষান্তরে ফেরেশতার পরশ হচ্ছে, কল্যাণের উৎসাহ ও সত্যে বিশ^াস। তো যে (তার মনে) ফেরেশতার পরশ অনুভব করে সে যেন বিশ^াস করে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এবং যেন আল্লাহর প্রশংসা করে আর যে ভিন্ন কিছু অনুভব করে সে যেন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ এরপর তিনি কুরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করেনÑ اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৮৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯৯৭ একজন মুসলিম একথাও জানেন যে, শয়তান শুধু জিন-জাতিতেই নয়, মনুষ্য জাতিতেও আছে। ‘ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা দেয়ার কাজটিও শুধু জিন্ন শয়তানই করে না, মানুষ শয়তানও করে। কুরআন মাজীদ বলছেÑ (তরজমা) বল, আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে মন্ত্রণা দেয় লোকের অন্তরে, জিন্নের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে। Ñসূরা নাস (১১৪) : ১-৩ তো উভয় শ্রেণির কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় নেয়া জরুরি। যে আল্লাহর আশ্রয় নেয় তার কোনো ভয় নেই। আল্লাহ তাআলাই অসহায়ের সহায়, নিরাশ্রয়ের আশ্রয়। যে দুঃখ-বেদনা কেউ শোনে না তা আল্লাহ শোনেন, যে দুঃখ-বেদনা কেউ মোচন করে না তা আল্লাহ মোচন করেন। আল্লাহই সকলের দুঃখ-বেদনা মোচনকারী, আল্লাহর স্মরণই বেদনা হারক, হতাশা বিদূরক। ওয়াসওয়াসার এক বৈশিষ্ট্য গোপনীয়তা। এটা সীমাবদ্ধ থাকে শিকার ও শিকারীর মধ্যেই। এটিও এর ভয়াবহতার এক দিক। গোপনীয়তা টুটে গেলে এর ক্রিয়াও শিথিল হয়ে যায়। আর একারণেই কুমন্ত্রণাদাতার প্রথম চেষ্টা থাকে শিকার যেন বিষয়টি প্রকাশ না করে, কারো সাথে আলোচনা না করে। কাজেই এই সকল অবস্থার প্রথম কর্তব্য, আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এরপর বিজ্ঞ কল্যাণকামীকে অবস্থা জানানো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতে এমন অনেক ঘটনা আছে, যাতে দেখা যায়, সাহাবীগণ নিজ নিজ অবস্থা তাঁকে জানিয়েছেন। আর তিনি তাদের সমাধানের উপায় বাতলে দিয়েছেন। কোনো সাহাবী কোনো কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর কাছে এলে তিনি তার ভীতি দূর করেছেন। কেউ ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত হয়ে নিজের ঈমান সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে এসেছেন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আশ^স্ত করেছেন এবং তার দুশ্চিন্তা দূর করেছেন। কাজেই যে কোনো অস্বাভাবিক বিষয়ে গোপনীয়তা ক্ষতিকর। যত দ্রুত তা বিজ্ঞজনকে জানানো হবে সমস্যার সমাধান তত সহজ হবে। পক্ষান্তরে যত দেরি হবে সমস্যাও তত জটিল হবে। একারণেই দেখা যায়, দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোকেরা তাদের দুর্বৃত্তপনা অব্যাহত রাখার জন্য বিষয়টি গোপন রাখতে প্ররোচিত ও বাধ্য করে। মা-বাবা, উস্তায-শিক্ষক এবং জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে ক্ষতিসাধনের ষোলকলা পূরণ করে। কাজেই চূড়ান্ত ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রাজ্ঞ আপনজনদের জানিয়ে নিজের একাকিত্ব দূর করা কর্তব্য। মানবের সবচেয়ে আপন তাঁর সৃষ্টিকর্তা। তাঁর বিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমেই মানুষ তার ক্ষতির সূচনা করে। প্রত্যেকে যদি নিজের জীবন ও কর্মে একটি মানদ- অনুসরণ করে তাহলে এ জাতীয় অনেক ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা সম্ভব। মানদ-টি হচ্ছেÑ لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো আনুগত্য নয়।’ অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞতা-অনভিজ্ঞতার কারণে যে সকল বিপদের শিকার হয় এর সিংহভাগের সূচনা হয় আল্লাহর নাফরমানীর দ্বারা। কৌতুহলবশত এবং উত্তেজনাবশত এরা প্রথমে ‘ছোট’ পাপটি করে, এরপরই জড়িয়ে যায় প্রতারণার জালে। একপর্যায়ে ফিরে আসতে চাইলেও আর তা পারে না। এর অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। শুধু মাদকাসক্তি ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাগুলোই যদি বিশ্লেষণ করা হয় যে, কীভাবে একটি সম্ভাবনাময় তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল কিংবা কীভাবে একটি ফুটফুটে মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে গেল, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, কৌতুহল, প্ররোচনা, প্রলোভন, উত্তেজনা ইত্যাদির বশবর্র্তী হয়ে ভিকটিম স্বেচ্ছায় এক দুই কদম এগিয়ে গেছে, এর পরই প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। অথচ সর্বাবস্থায় মাদক থেকে, পর্দালঙ্ঘন থেকে দূরে থাকার বিধান ইসলামে রয়েছে। শুরু থেকেই এই বিধান দূঢ়ভাবে পালন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ঐ প্রতারণার শিকার হতে হত না। কাজেই কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার আগে এবং কারো আদেশ বা অনুরোধ রক্ষার আগে তা শরীয়তে বৈধ কি না ভেবে দেখা প্রয়োজন। আলোচ্য গেমটিতেও ছেলে-মেয়েরা এ্যাডমিনের হুকুম পালন করে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হচ্ছে, নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করছে এবং সবশেষে আত্মহত্যার হুকুমও পালন করছে। এই সবগুলো কাজই নাজায়েয। আর আত্মহত্যা তো এক ভয়বহ কবীরা গুনাহ। কাজেই যে-ই এসবের আদেশ করুক, কোনো মুসলিম তা পালন করতে পারে না। মুসলিম তো পালন করবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশ। প্রত্যেক মুসলিমকে অন্যায় আদেশ প্রত্যাখ্যান করার সাহস অর্জন করতে হবে। অন্যায় আদেশ পালনে কোনো গৌরব নেই। গৌরব তা প্রত্যাখ্যান করতে পারাতে। কাজেই হে কিশোর! হে তরুণ! ভেঙ্গে ফেল আচ্ছন্নতার শৃঙ্খল! মুষ্ঠিবদ্ধ কর তোমার হাত। আর দৃপ্তকণ্ঠে বল, না, না, না। কারো অন্যায় হুকুম পালন করব না। নিজের অমিত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করব না। যে আমাকে ধ্বংসের প্ররোচনা দেয় সে আমার বন্ধু নয়, শত্রু। সে আমার প্রভু নয়, আমার প্রভুর দাস। আমার প্রভু এক লা-শরীক আল্লাহ। আমি তাঁরই সকাশে সমর্পিত। তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত। প্রযুক্তির এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলো আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের একটি বড় অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে যত বিলম্ব করবে ততই বিপদ বাড়তে থাকবে। আমরা দেশের উচ্চ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকদের মোবারকবাদ দিতে চাই তারা গেমটি বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সকল বেহায়াপনা ও ঈমান বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধেও তাদের এমন সুয়োমোটো উদ্যোগ কামনা করে।

    প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা মুসলমান : পরিস্থিতি ও করণীয়

    জাপানে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণ, আহত ১৪

    জাপানের মধ্যাঞ্চলে শুক্রবার একটি রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কমপক্ষে ১৪ জন আহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উদ্ধার কর্মীরা একথা জানান।
    টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে আরাকাওয়া কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির একটি কারখানা থেকে ঘন কালো ধোয়ার কুণ্ডলী উপরের দিকে উঠতে দেখা যায়। এ কারখানা থেকে কাগজ তৈরির কেমিক্যাল উৎপাদন করা হতো। ফুজি নগরীর দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা কাজুহিকো হাকোইয়ামা বলেন, ‘বিস্ফোরণে কারখানাটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ১৪ জন দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে কয়জনের অবস্থা গুরুতর তা আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি।’
    কর্মকর্তারা জানান, এ সময় কারখানাটিতে উৎপাদন চলছিল কিনা এবং এতে কোন দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে কিনা সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে সুস্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। স্থানীয় জরুরী সংস্থা জানায়, সেখানে দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, ফুজি নগরী জাপানের রাজধানী টোকিও’র প্রায় ১শ’ কিলোমিটার পশ্চিমের বিশ্ব বিখ্যাত মাউন্ট ফুজির পাদদেশে অবস্থিত। এএফপি।