জাপান ও পূর্ব ইওরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা

এবার সংবাদ বিশ্লেষণ। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনযো আবে পূর্ব ইওরোপ সফরে গিয়ে রোববার বুলগেরিয়ায় শীর্ষ বৈঠক করেছেন। এর পর সার্বিয়া ও রুমানিয়া সফরে দু দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সাথে তাঁর শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে যথাক্রমে সোমবার ও মঙ্গলবার। জাপান ও পূর্ব ইওরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা’র সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন পূর্ব ইওরোপীয় অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ, কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ইকোনমিকস্‌’এর অধ্যাপক মাসাহিকো ইওশিই।

“বুলগেরিয়া ও রুমানিয়া ইওরোপীয় ইউনিয়ান ই ইউ’তে যোগ দিয়েছে ২০০৭ সালের ১লা জানুয়ারি। সার্বিয়া এখনও প্রার্থী, দেশটি এখনও ই ইউ’তে যোগ দিতে পারেনি। গণতন্ত্রায়ন, বিচার বিভাগের সংস্কার ও দুর্নীতি-বিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্বের কারণে বুলগেরিয়া ও রুমানিয়া, ই ইউ’র সদস্য দেশসমূহের মধ্যে লোকজনের অবাধ চলাচলে অনুমতি প্রদানকারী শেনগেন চুক্তির শরিক এখনও হতে পারেনি। এর অর্থ, দেশদুটিকে ই ইউ’র অন্য সদস্য দেশেরা ইউনিয়ানের পুরোদস্তুর সদস্য হিসেবে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি।

তবে জানুয়ারির শুরু থেকে বুলগেরিয়া ই ইউ পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। দেশটি এই দায়িত্ব পালন করবে জুন মাসের শেষ দিক পর্যন্ত। একই দায়িত্ব রুমানিয়া’র পালন করার কথা আগামী বছরের প্রথমার্ধে। এই পরিষদটি ই ইউ’র সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এর সভাপতি’র দায়িত্ব হচ্ছে আলোচনাকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেওয়া এবং আলোচ্যসূচির সমন্বয়সাধন করা। সাধারণত প্রত্যেক সভাপতি দেশ আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার সময় নিজস্ব অভিনব বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শনের চেষ্টা করে। বর্তমান সভাপতি বুলগেরিয়া সদস্য দেশসমূহকে, ইওরোপীয় ইউনিয়ানের ভবিষ্যত এবং ইউনিয়ানের মুদ্রা ইওরো’র স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, সাবেক যুগোস্লাভিয়ান দেশসমূহ এবং আলবেনিয়া সহ দক্ষিণপূর্ব ইওরোপীয় দেশসমূহ হিসেবে অভিহিত দেশগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিও আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে। ই ইউ’র নতুন সদস্য বুলগেরিয়া ই ইউ পরিষদের সভাপতি’র দায়িত্বে আসীন হয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এরকম সময়ে প্রধানমন্ত্রী আবে’র বুলগেরিয়া সফরকে আমি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ব’লে মনে করছি।

তাছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বুলগেরিয়া, রুমানিয়া এবং সার্বিয়া ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন ঘটার পর থেকে মোটর গাড়ি শিল্পকে কেন্দ্র ক’রে ই ইউ’র উৎপাদন ঘাঁটি হিসেবে নিজেদের ভূমিকা ও গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এসব দেশে কম মজুরিতে বেশ সুদক্ষ কর্মী পাওয়া যায় অনেক। জাপানী মোটর গাড়ি ও অন্যান্য শিল্পের এসব দেশের বাজারে জায়গা ক’রে নিতে পারার ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই তিনটি দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তুরস্কের সাথে, যেখানে একটি জাপানি মোটর গাড়ি নির্মাতার কারখানা আছে। মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনের মত ক্ষেত্রে জাপানের সাথে পূর্ব ইওরোপীয় দেশসমূহের সম্পর্ক জোরদার হয়ে উঠতে পারে। রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভাল প্রসার ঘটেছে, সেখানকার কর্মীশক্তিকে কাজে লাগানোর নেটওয়ার্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে”।

সংবাদ বিশ্লেষণ শেষ হোল । জাপান ও পূর্ব ইওরোপীয় দেশসমূহের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা’র সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করলেন পূর্ব ইওরোপীয় অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ, কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ইকোনমিকস্‌’এর অধ্যাপক মাসাহিকো ইওশিই।