সরকারের ইচ্ছামত রায় না দেওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়
আত্মপক্ষ সমর্থনকালে খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা জেনেছি যে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়া থেকেই প্রধান বিচারপতি এস. কে সিনহার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের অপতত্পরতা শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় তাকে অসুস্থ ঘোষণা করে ন্যক্কারজনকভাবে জোর করে ছুটিতে এবং দেশের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে দেশে না ফিরে পদত্যাগ করতে তাকে বিশেষ পন্থায় বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের পছন্দ মাফিক রায় না দেয়ার কারণে দেশের প্রধান বিচারপতিকে যেখানে এমন ভাগ্য বরণ করতে হয় সেখানে অন্য বিচাররকদের সামনে ন্যায়বিচারের সুযোগ ও পরিবেশ কি আর থাকতে পারে? এই পরিস্থিতিতে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের কতটা আস্থা থাকতে পারে আপনি (বিচারক) সেটা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে পঞ্চম দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিচারকের উদ্দেশ্যে আদালতে এমন বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে তার সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে অসমাপ্ত বক্তব্য রাখার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ এবং দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে খালেদা জিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার যে, এর প্রতিটি মামলাই আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই এবং আমাকে ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করেই এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সে কারণেই আমরা অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা মামলা-মোকদ্দমায় মোটেই ভীত নই। তবে দেশবাসী ও আমাদের আশংকার কারণ অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সংবাদ-মাধ্যমের এখন কোনো স্বাধীনতা নেই। তা সত্ত্বেও যতটুকু খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতে পেরেছে তাতেই বুঝা গেছে যে, প্রধান বিচারপতি এস. কে সিনহাকে তার পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এ মামলার বিবরণ থেকে আমি আরো জেনেছি যে, কুয়েতের দেয়া অনুদানের অর্থ দুইভাগ করে দুটি ট্রাস্টকে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আইনের কোনো লংঘন হয়নি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার কিংবা অন্য কারো কোনোভাবে লাভবান হবার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রাস্ট দুটির কোনোটিতেই আমি কোনো পদে কখনো ছিলাম না এবং এখনো নেই। অনুদানের অর্থ আনা বা বিতরণের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল না।  ট্রাস্টের কেউ কোনো অনিয়ম বা আইনের লংঘন করলে সে ব্যাপারে ট্রাস্ট আইনে অভিযোগ বা মামলা হতে পারে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন কিভাবে ট্রাস্টের কথিত অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে মামলা রুজু করে? এটা কি তাদের আওতা ও এখতিয়ারের ভেতরে পড়ে? তাছাড়া এখানে কোনো রকম দুর্নীতিও হয়নি। এই মামলায় আমাকে কেন অভিযুক্ত করা হয়েছে তাও আমার বোধগম্য নয়।