সুইসাইডাল গেম

প্রযুক্তির ছোবল কীভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে এর একটি ভয়াবহ নমুনা হিসেবে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে একটি অনলাইন সুইসাইডাল গেম। পত্রপত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, এই গেমটির কারণে বিশে^র নানা দেশে ঘটেছে অনেক কিশোর-তরুণের আত্মহত্যার ঘটনা । বাংলাদেশেও দুয়েকটি ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অনুসন্ধানে আরো কিছু ছেলে-মেয়ের আসক্তির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তির ভালো দিক যেমন আছে তেমনি আছে ভয়াবহ ক্ষতির দিকও। এখন আমাদের নিরাপদ গৃহকোণগুলোও আর নিরাপদ নেই। বিশে^র সকল ভালো-মন্দের একেকটি ‘জানালা’ আমাদের ঘরগুলোতেও স্থাপিত হয়ে গেছে। ভালো-মন্দের বিচার ও প্রযুক্তির মুখে লাগাম পরানোর সদিচ্ছা বা সক্ষমতা না থাকায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম পরিণত হচ্ছে মন্দের সহজ শিকারে। আলোচিত গেমটি এর সাম্প্রতিক নমুনা। জানা গেছে ফিলিপ বুদেইকিন নামক জনৈক রুশ যুবক এ খেলার উদ্ভাবক। সে ছিল মনোবিজ্ঞানের একজন ছাত্র। একসময় তাকে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। গেমটির প্রচলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘সমাজে যাদের কোনো গুরুত্ব নেই তাদের আত্মহননের প্ররোচনা দেয়ার মাধ্যমে সমাজকে পরিষ্কার করার জন্য এটা করা হয়েছে।’ তার এই বক্তব্যেও আছে তরুণ প্রজন্মের প্রতি তাচ্ছিল্য এবং তাদের মাঝে হতাশা বিস্তারের এক সূক্ষ্ম প্রয়াস। পৃথিবীতে যে কত হিং¯্র স্বভাবের মানুষ রয়েছে আর কতভাবে যে এরা চরিতার্থ করে এদের জিঘাংসা ও পাশবিকতা কে তার হিসাব রাখে? নানা দেশের যে সকল কিশোর-তরুণ এদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে তারা সম্ভবত কল্পনাও করতে পারছে না যে, সে এক হিং¯্র মানুষের জিঘাংসার শিকার মাত্র। কেন তুমি নিজের ক্ষতি করে আরেকজনকে তার পাশবিকতা চরিতার্থ করার সুযোগ দিবে? ওই হিং¯্র পশুটি তার হিং¯্রতা ও পাশবিকতার আগুনে জ¦লে পুড়ে মরুক, তুমি কেন তার জ¦ালা জুড়াতে যাবে? তার জীবনে যদি ব্যর্থতা থাকে, লাঞ্ছনা থাকে সেটার দায় তার নিজের। হে সরল কিশোর, হে সম্ভাবনাময় তরুণ! তুমি কেন বলি হতে যাবে এক পাপিষ্ঠের পাপ-ইচ্ছার? জীবন তো মূল্যহীন নয়। এই জীবনকে কাজে লাগিয়েই তো আমাদের অর্জন করতে হয় আখেরাতের সফলতা। কাজেই কেউ যদি তোমাকে জীবন থেকে নিরাশ করে তাহলে বুঝতে হবে, সে বন্ধু নয়, শত্রু। সে এক ছদ্মবেশী দুর্বৃত্ত যে তোমাকে লুণ্ঠন করতে চায়। জীবনে দুঃখ-বেদনা থাকে। সম্মান-অসম্মান, সফলতা-ব্যর্থতা, সক্ষমতা-অক্ষমতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালো লাগা-খারাপ লাগাÑ এই সবই জীবনের একেকটি অনুষঙ্গ। এই সব নিয়েই জীবন। আর সে কারণেই জীবন বিচিত্র, বর্ণিল। জীবনে ব্যর্থতা আছে বলেই সাফল্য এত আনন্দের। অপ্রাপ্তি আছে বলেই প্রাপ্তি এত আরাধ্য। সবার জীবনেই থাকে ব্যর্থতা ও অপ্রাপ্তি। থাকে বিচিত্র উপায়ে। প্রত্যেকে শুধু নিজের সুখ-দুখই পূর্ণরূপে জানে ও উপলদ্ধি করে বলে অন্যের সাথে তার নিজের তুলনাটা প্রায়শ সঠিক হয় না। অন্যের সকল অবস্থা জানা নেই বলে কখনো কারো এই ধারণা জাগতে পারে যে, ওরা সবাই সুখী, সফল, পরিবারে ও সমাজে প্রয়োজনীয়, কিন্তু আমি দুখী, ব্যর্থ, সবার কাছেই অপ্রয়োজনীয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরাও কিন্তু অন্যকে দেখে এই রকমের একটি নিঃশ^াস মোচন করছে। এ যেন সেই পংক্তিরই বাস্তব উদাহরণÑ নদীর এ কূল কহে ছাড়িয়া নিঃশ^াস, ঐ কূলেতে সর্বসুখ আমার বিশ^াস… এই যে অতৃপ্তি, মানসিক যন্ত্রণা এটা দূর হয় ঈমানী চেতনার দ্বারা। এই চেতনা যত দুর্বল হয় যাতনাও তত বাড়তে থাকে। তো এই যাতনাগ্রস্ত মানবমনের এই দুর্বল অংশে খোঁচা দিয়ে যারা রক্ত ঝরায়, বঞ্চনা-অপমানের স্মৃতি ও উপলদ্ধিগুলোকে জাগ্রত করে, অবশেষে জীবন থেকেই নিরাশ ও বিমুখ করে তোলে এরা অনেক বড় পাপী। এরা ইবলিসের দোসর, মানবতার শত্রু। মানবকে শেষ করবার জন্য এরা হাত দেয় মানুষের সবচেয়ে কোমল জায়গা তার হৃদয়ে। দুরাচার পাপাত্মা ইবলীস যে মানবের সবচেয়ে বড় শত্রু সে কীভাবে কাজ করে? সে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। কুরআনের ভাষায় একে বলা হয়েছে ‘ওয়াসওয়াসা’। ইবলীস মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা দেয়, তাকে ভয় দেখায়, আনন্দের আশা দেয়, আর এভাবেই ধীরে ধীরে তাকে অন্যায় কর্মে প্ররোচিত করে। হায়! আমরা যদি চিনতাম আমাদের চরম শত্রুকে! হায়! আমরা যদি বুঝতাম জীবনের পরম মূল্য! মানুষের মন বড় সংবেদনশীল জায়গা। এটি ভালো ও মন্দের অবতরণস্থল। তাই ভালো-মন্দের পরিচয় সম্পর্কে যে মন সচেতন, ভালোকে গ্রহণ করার আর মন্দকে বর্জন করার জন্য যে মনে আছে অতন্দ্র প্রহরা ঐ মনে মন্দ তার আসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূক্ষ্ম বাস্তবতা কী সহজ ভাষায় বয়ান করেছেনÑ ‘আদমের বেটার (মনে) শয়তানের স্পর্শও লাগে। লাগে ফেরেশতার পরশও। শয়তানের স্পর্শ হচ্ছে, অনিষ্টের প্ররোচনা আর সত্যে অবিশ^াস, পক্ষান্তরে ফেরেশতার পরশ হচ্ছে, কল্যাণের উৎসাহ ও সত্যে বিশ^াস। তো যে (তার মনে) ফেরেশতার পরশ অনুভব করে সে যেন বিশ^াস করে, এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এবং যেন আল্লাহর প্রশংসা করে আর যে ভিন্ন কিছু অনুভব করে সে যেন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ এরপর তিনি কুরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করেনÑ اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৯৮৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯৯৭ একজন মুসলিম একথাও জানেন যে, শয়তান শুধু জিন-জাতিতেই নয়, মনুষ্য জাতিতেও আছে। ‘ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা দেয়ার কাজটিও শুধু জিন্ন শয়তানই করে না, মানুষ শয়তানও করে। কুরআন মাজীদ বলছেÑ (তরজমা) বল, আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে মন্ত্রণা দেয় লোকের অন্তরে, জিন্নের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে। Ñসূরা নাস (১১৪) : ১-৩ তো উভয় শ্রেণির কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় নেয়া জরুরি। যে আল্লাহর আশ্রয় নেয় তার কোনো ভয় নেই। আল্লাহ তাআলাই অসহায়ের সহায়, নিরাশ্রয়ের আশ্রয়। যে দুঃখ-বেদনা কেউ শোনে না তা আল্লাহ শোনেন, যে দুঃখ-বেদনা কেউ মোচন করে না তা আল্লাহ মোচন করেন। আল্লাহই সকলের দুঃখ-বেদনা মোচনকারী, আল্লাহর স্মরণই বেদনা হারক, হতাশা বিদূরক। ওয়াসওয়াসার এক বৈশিষ্ট্য গোপনীয়তা। এটা সীমাবদ্ধ থাকে শিকার ও শিকারীর মধ্যেই। এটিও এর ভয়াবহতার এক দিক। গোপনীয়তা টুটে গেলে এর ক্রিয়াও শিথিল হয়ে যায়। আর একারণেই কুমন্ত্রণাদাতার প্রথম চেষ্টা থাকে শিকার যেন বিষয়টি প্রকাশ না করে, কারো সাথে আলোচনা না করে। কাজেই এই সকল অবস্থার প্রথম কর্তব্য, আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া এরপর বিজ্ঞ কল্যাণকামীকে অবস্থা জানানো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতে এমন অনেক ঘটনা আছে, যাতে দেখা যায়, সাহাবীগণ নিজ নিজ অবস্থা তাঁকে জানিয়েছেন। আর তিনি তাদের সমাধানের উপায় বাতলে দিয়েছেন। কোনো সাহাবী কোনো কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁর কাছে এলে তিনি তার ভীতি দূর করেছেন। কেউ ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত হয়ে নিজের ঈমান সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে এসেছেন তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আশ^স্ত করেছেন এবং তার দুশ্চিন্তা দূর করেছেন। কাজেই যে কোনো অস্বাভাবিক বিষয়ে গোপনীয়তা ক্ষতিকর। যত দ্রুত তা বিজ্ঞজনকে জানানো হবে সমস্যার সমাধান তত সহজ হবে। পক্ষান্তরে যত দেরি হবে সমস্যাও তত জটিল হবে। একারণেই দেখা যায়, দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোকেরা তাদের দুর্বৃত্তপনা অব্যাহত রাখার জন্য বিষয়টি গোপন রাখতে প্ররোচিত ও বাধ্য করে। মা-বাবা, উস্তায-শিক্ষক এবং জ্ঞানী প্রজ্ঞাবান মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে ক্ষতিসাধনের ষোলকলা পূরণ করে। কাজেই চূড়ান্ত ক্ষতি হওয়ার আগেই প্রাজ্ঞ আপনজনদের জানিয়ে নিজের একাকিত্ব দূর করা কর্তব্য। মানবের সবচেয়ে আপন তাঁর সৃষ্টিকর্তা। তাঁর বিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমেই মানুষ তার ক্ষতির সূচনা করে। প্রত্যেকে যদি নিজের জীবন ও কর্মে একটি মানদ- অনুসরণ করে তাহলে এ জাতীয় অনেক ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা সম্ভব। মানদ-টি হচ্ছেÑ لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো আনুগত্য নয়।’ অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা জীবন ও জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞতা-অনভিজ্ঞতার কারণে যে সকল বিপদের শিকার হয় এর সিংহভাগের সূচনা হয় আল্লাহর নাফরমানীর দ্বারা। কৌতুহলবশত এবং উত্তেজনাবশত এরা প্রথমে ‘ছোট’ পাপটি করে, এরপরই জড়িয়ে যায় প্রতারণার জালে। একপর্যায়ে ফিরে আসতে চাইলেও আর তা পারে না। এর অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। শুধু মাদকাসক্তি ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাগুলোই যদি বিশ্লেষণ করা হয় যে, কীভাবে একটি সম্ভাবনাময় তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল কিংবা কীভাবে একটি ফুটফুটে মেয়ে ধর্ষিতা হয়ে গেল, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, কৌতুহল, প্ররোচনা, প্রলোভন, উত্তেজনা ইত্যাদির বশবর্র্তী হয়ে ভিকটিম স্বেচ্ছায় এক দুই কদম এগিয়ে গেছে, এর পরই প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। অথচ সর্বাবস্থায় মাদক থেকে, পর্দালঙ্ঘন থেকে দূরে থাকার বিধান ইসলামে রয়েছে। শুরু থেকেই এই বিধান দূঢ়ভাবে পালন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ঐ প্রতারণার শিকার হতে হত না। কাজেই কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার আগে এবং কারো আদেশ বা অনুরোধ রক্ষার আগে তা শরীয়তে বৈধ কি না ভেবে দেখা প্রয়োজন। আলোচ্য গেমটিতেও ছেলে-মেয়েরা এ্যাডমিনের হুকুম পালন করে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হচ্ছে, নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করছে এবং সবশেষে আত্মহত্যার হুকুমও পালন করছে। এই সবগুলো কাজই নাজায়েয। আর আত্মহত্যা তো এক ভয়বহ কবীরা গুনাহ। কাজেই যে-ই এসবের আদেশ করুক, কোনো মুসলিম তা পালন করতে পারে না। মুসলিম তো পালন করবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশ। প্রত্যেক মুসলিমকে অন্যায় আদেশ প্রত্যাখ্যান করার সাহস অর্জন করতে হবে। অন্যায় আদেশ পালনে কোনো গৌরব নেই। গৌরব তা প্রত্যাখ্যান করতে পারাতে। কাজেই হে কিশোর! হে তরুণ! ভেঙ্গে ফেল আচ্ছন্নতার শৃঙ্খল! মুষ্ঠিবদ্ধ কর তোমার হাত। আর দৃপ্তকণ্ঠে বল, না, না, না। কারো অন্যায় হুকুম পালন করব না। নিজের অমিত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করব না। যে আমাকে ধ্বংসের প্ররোচনা দেয় সে আমার বন্ধু নয়, শত্রু। সে আমার প্রভু নয়, আমার প্রভুর দাস। আমার প্রভু এক লা-শরীক আল্লাহ। আমি তাঁরই সকাশে সমর্পিত। তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত। প্রযুক্তির এ জাতীয় ধ্বংসাত্মক বিষয়গুলো আবারো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের একটি বড় অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে কি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে যত বিলম্ব করবে ততই বিপদ বাড়তে থাকবে। আমরা দেশের উচ্চ আদালতের বিজ্ঞ বিচারকদের মোবারকবাদ দিতে চাই তারা গেমটি বন্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সকল বেহায়াপনা ও ঈমান বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধেও তাদের এমন সুয়োমোটো উদ্যোগ কামনা করে।