ফের উত্তপ্ত রাজনৈতিক অঙ্গন

৫ জানুয়ারি ঘিরে দুই দলের কর্মসূচি

ঢাকায় দু’টি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ : এখনো অনুমতি পায়নি বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের প্রস্তুতি ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালে এই দিনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো দেশ-বিদেশে চলছে বিতর্ক। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে প্রতিবছর দেশের বড় দুই দল দিবসটি পালন করে বিপরীত মেরু থেকে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিবসটি পালন করে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হিসেবে। আর মাঠের বিরোধী দল বিএনপি দিবসটি পালন করে ‘গণতন্ত্র হত্যা’। ২০১৫ সালে দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বাধা দেয়ায় টানা ৯২দিন হরতাল-অবরোধ হয়েছে।
সেই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ওইদিন নিজ নিজ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির বর্জন ও বিরোধীতার মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। যে আসনগুলোতে ভোট হয়েছে সেখানেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সামান্যই। সংবিধান রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করছে দলটি। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে উল্লেখ করে দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে তারা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। দিনটিতে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। কখনো একই স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা, কখনো বা পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ করতে চাইলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীসহ সারাদেশেই। দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষেরাও।
বিগত দিনগুলোর মতো এবারও একই দিনকে পৃথক দিবস হিসেবে পালন করতে মাঠে নামছে দল দুটি। গতবার একই স্থানে কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও এবার পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে দলের নেতারা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে চাইলেও সেখানে অনুমতি পাচ্ছে না বিএনপি। ইতোমধ্যে সেখানে ইসলামিক ইউনাইটেড পার্টিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে আশা ছাড়ছেনা বিএনপি। গতকাল পর্যন্তও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কোন কারণে সোহরওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দিলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সেখানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে চিঠিও দেয়া হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে।
অন্যদিকে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবসে রাজধানীতে দুটি স্থানে সমাবেশ পালন করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর সমাবেশ করবে বনানী খেলার মাঠে। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। এই সমাবেশেও প্রধান অতিথি থাকবেন ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র নেতারা এ জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বলে জানিয়েছেন মহানগর দক্ষিণের নেতারা।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে চায় তারা। সমাবেশের জন্য ২ জানুয়ারি গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বিএনপির আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য চাওয়ায় ইসলামিক ইউনাইটেড পার্টিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি এটিকে সরকারের হীন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই উল্লেখ করেছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপিকে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার জন্য এখনো অনুমতি দেয়নি পুলিশ। গণমাধ্যম সুত্রে জানতে পারলাম সেখানে ৫ জানুয়ারি একটি অখ্যাত ও অজানা একটি দলকে নাকি অনেক আগেই জনসভার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে যে দলটি জনগণের ভোটে বার বার ক্ষমতায় থেকেছে, যে দলটি বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করে, সে দলটির আবেদনকে পাশ কাটিয়ে অনেক আগেই অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ যে কথা বলছে সেটি সরকারের হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ। এটি সরকারের হিংসাপরায়ণ নীতির একটি অংশ। তবে কোন কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ না পেলে নয়াপল্টনেও সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি আমরা। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পেলে সেখানে সমাবেশ করবে। তা না হলেও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি আছে। এই সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে তারা জানান। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিকল্প হিসেবে নয়াপল্টনের সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রিজভী বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই-সরকার বিএনপি’র গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানাবে। সমাবেশের অনুমতি দিয়ে বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ করে দিবে। যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া হয় তাহলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগামী ৫ জানুয়ারি সমাবেশের অনুমতি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।