কবরের পাশে মোনাজাতে কাঁদলেন খালেদা জিয়া

ছোট ছেলে হওয়ায় আরাফাত রহমান কোকোর প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভালবাসা ছিল একটু বেশিই। সেই আদরের ছেলেই কিনা মাকে চিরবিদায় জানিয়ে শুয়ে আছেন বনানী কবরস্থানে। তার জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সদস্যদের কথা বলার সময় কোকোর কথা আসলে কেঁদে ফেলেন বিএনপি চেয়াপারসন। সেই ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল (বুধবার) বনানী করবস্থানে নিজেও অঝঁরে কাঁদলেন, কাঁদালেন তার সাথে থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও বিএনপি নেতাকর্মীদেরও। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো। গতকাল ছিল তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কোরআনখানি, শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া-মাহফিলের মাধ্যমেই দিনটি পালন করেছে পরিবারের সদস্য ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। দিবসটিতে গতকাল বাদ আসর বনানী কবরস্থানে কোকোর কবর জিয়ারত করেন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এসময় তিনি চেয়ারে বসে প্রায় আধা ঘণ্টা আস্তে আস্তে কোরআন শরিফ পড়েন। কোরআন পড়া শেষ করে তিনি কবর জিয়ারত করেন। কবর জিয়ারত শেষ হলে ছেলের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এসময় তিনি ছেলের জন্য দোয়া করতে করতে অঝঁরে কেঁদে ফেলেন। তার কান্না দেখে উপস্থিত পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তারাও কেঁদে ফেলেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কোকোর বড় খালা, এক মামা, দুই মামী। দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আমানউল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, হেলাল খান, নুরে আরা সাফা, আফরোজা আব্বাস, কাজী আবুল বাশার, মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, আহসানউল্লাহ হাসান, শফিউল বারী বাবু, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মামুন হাসান, রাজীব আহসান প্রমূখ। এদিকে কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করে সকাল থেকেই কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ মাগরিব বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে ফাতেহা পাঠ, কুরআন খতম এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাইয়ুম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে সকালে আরাফাত রহমান কোকোর তৃতীয় মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বনানী কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত করেন। এছাড়া যুবদল, ছাত্রদল, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দলসহ বিএনপির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও কোকোর কবর জিয়ারত করে দোয়া মোনাজাত করেন।
রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কোকো : মীর নাছির
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেছেন, ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা জারির মাধ্যমে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে জিয়া পরিবারের উপর রাষ্ট্রীয় নির্যাতন শুরু করে। শুধুমাত্র জিয়া পরিবারের সন্তান হওয়ায় সেদিন কারাবরণের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল আরাফাত রহমান কোকোকে। গতকাল (বুধবার) দলীয় কার্যালয় মাঠে আরাফাত রহমান কোকোর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর বিএনপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, শহীদ জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো একজন ক্রিকেট প্রেমী হিসেবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছিলেন জাতি তা কখনো ভুলবে না। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সহ-সভাপতি এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, হারুন জামান, শফিকুর রহমান স্বপন, নিয়াজ মোহাম্মদ, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইসকান্দর মির্জা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আনোয়ার হোসেন লিপু, গাজী মোঃ সিরাজ উল্লাহ প্রমুখ। পরে দলীয় কার্যালয় জামে মসজিদে আরাফাত রহমান কোকোর মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।