• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ট্যাক্সির চেয়ে কম ভাড়ায় মহাকাশ ভ্রমণ!

    ট্যাক্সির চেয়েও কম খরচে ভারতীয়দের মহাকাশ ভ্রমণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটির মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এই ভ্রমণে একজন যাত্রীকে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া গুণতে হবে বড়জোর সাত টাকা করে!
    ইসরোর এক পদস্থ কর্তা বলেছেন, এটা আর ইসরোর ভাবনা-চিন্তার চৌহদ্দিতেই আটকে নেই। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। মহাকাশকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের প্রস্তুতি অনেক দিন আগেই নিতে শুরু করে ইসরো। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের বহু দিনের সেই স্বপ্নের সার্থক রূপায়ণ ঘটে যখন ফেব্রুয়ারিতে ৮২টি বিদেশি উপগ্রহ সহ একই সঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহকে মহাকাশে পাঠায় ইসরো। এ বার মহাকাশকে আরো বেশি বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে ইসরো, সাধারণ ভারতীয়দের জন্য সস্তায় মহাকাশ পর্যটনের ব্যবস্থা করে।
    হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, এলন মাস্কের ‘স্পেস-এক্স’ ও আমাজনের আসন্ন মহাকাশ পর্যটনের ঘোষিত স্কিমগুলির চেয়ে খরচের নিরিখে, তা অনেকটাই কম হবে। কিলোমিটার-পিছু খরচ পড়বে খুব বেশি হলে, সাত টাকা। সেই হিসেবে যাত্রীপিছু মহাকাশ পর্যটনের খরচ হবে কম-বেশি ১২ কোটি টাকা।
    মুরগীর ডিমে তা দিচ্ছে মানুষ
    মুরগীর ডিমে তা দিচ্ছে মানুষ
    পরিচিত পৃথিবীতে কতো আজব কাণ্ডই না করে মানুষ। বুদ্ধিমানরা এসব অদ্ভুতুড়ে খেয়ালকে কাণ্ডজ্ঞানহীন আখ্যা দিলেও, পিছু হটার পাত্র নন সেইসব পাগলাটে মানুষেরা। প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিতে হাজির হন তাদের কেউ কেউ।
    এই যেমন- ফরাসী শিল্পী আব্রাহাম পোয়িনচেভাল গত বুধবার থেকে প্যারিসের ‘প্যালাইস ডি টোকিও’ যাদুঘরের একটি কাঁচঘেরা কক্ষে বসে বসে মুরগীর ডিমে তা দিচ্ছেন সেগুলো ফোটানোর জন্য। ‘শরীরের তাপমাত্রায় মুরগীর ডিম ফোটানো’ এটি তার সাম্প্রতিক একটি পারফরমেন্স স্টান্ট। আগামী ২১-২৬ দিনের মধ্যেই তার শরীরের নিচে রক্ষিত ১০টি ডিম ফুটে মুরগীর ছানা বের হবে বলে বিশ্বাসী তিনি।
    পোয়িনচেভালের ভাষ্যমতে, ‘ডিম ফোটার পর সম্ভবত আমি মুরগী হয়ে যাবো।’ তাকে দেখতে আসা কৌতূহলী মানুষদের হাস্যভরে এমন কথাও শোনান তিনি। তবে এবারে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তিনি একটু সাবধানী ভূমিকা পালন করেছেন। সরাসরি ডিমের উপর বসে না গিয়ে একটি চেয়ারের নিচে ফুটো করে ঝুড়ি বেধে দিয়েছেন। এছাড়া শরীরের উষ্ণতা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে কোরিয়ান শিল্পী সেগুলুই লি’র তৈরি একটি কম্বল মুড়ে নিয়েছেন। শরীরে কোনো ক্ষতি হবে না কিন্তু উষ্ণতা বাড়াবে এমনসব খাবার খাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে দিনে মাত্র আধঘণ্টা সময় ব্যয় করতে পারবেন। তবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা ওই কাঁচের ঘরেই করে নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
    এর আগেও বেশ কিছু অদ্ভুতুড়ে স্টান্ট প্রদর্শন করে সবাইকে চমকে দেন পোয়িনচেভাল। একটি বৃহৎ চুনাপাথরের দুটি খণ্ডের ভেতর নিজের শরীরের আকৃতির খোপে কয়েকদিন কাটিয়ে দেন তিনি।
    তারও আগে, ২০১৪ সালের এপ্রিলে প্যারিস যাদুঘরে রক্ষিত একটি খেলনা ভালুকের ভেতর তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবস্থান করেন।
    এছাড়াও, প্যারিসের গার্ড ডু নর্ড রেল স্টেশনের বাইরে মাটি থেকে ৬৫ ফুট উপরের একটি পাটাতনে এক সপ্তাহ অতিবাহিত করেন তিনি। বিবিসি।

    অবশেষে নোবেল পুরস্কার নিতে সম্মত হলেন বব ডিলান

    অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার নিতে সম্মত হয়েছেন মার্কিন সংগীত শিল্পী বব ডিলান। সুইডিশ একাডেমি সোমবার এই কথা ঘোষণা করেছে।
    গত অক্টোবরে পুরস্কার ঘোষণা হলেও ডিলান পুরস্কার গ্রহণ করেননি কিংবা নোবেল পুরস্কার গ্রহণের ভাষণ দেননি। সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, তারা একান্তে ডিলানের সঙ্গে দেখা করে তার হাতে পুরস্কার তুলে দেবে। ৭৫ বছর বয়সী ডিলান সেখানে দুটি কনসার্ট করতে গেছেন।
    তবে তিনি প্রকাশ্যে নোবেল পুরস্কার গ্রহণের বক্তব্য দেবেন না, বরং রেকর্ডকৃত একটি ভাষণ পরবর্তীতে প্রকাশ করবেন। যদি জুন মাসের মধ্যে ডিলান বক্তব্য প্রদান না করেন তাহলে পুরস্কারের ৯ লাখ ডলার হাতছাড়া করতে হবে। সুইডিশ একাডেমির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি প্রফেসর সারা ডারিয়ুস বলেন, সুখবরটি হচ্ছে বব ডিলান ও সুইডিশ একাডেমি এই সপ্তাহে মিলিত হচ্ছে। বৈঠকটি হবে ছোট এবং আন্তরিক, কোনো গণমাধ্যম উপস্থিত থাকবে না। শুধু বব ডিলান এবং একাডেমির সদস্যরা উপস্থিত থাকবে।
    প্রফেসর ডারিয়ুস বলেন, এর আগেও রেকর্ড করা ভাষণ দিয়েছেন নোবেল পুরস্কার জয়ীরা। ২০১৩ সালে এলিস মুনরো রেকর্ড করা ভাষণ দিয়েছিলেন। বিবিসি।

    বাংলাদেশে ২৪ এপ্রিল পবিত্র শবে মেরাজ: আজ রজব মাস শুরু

    গতকাল বুধবার বাংলাদেশের আকাশে ১৪৩৮ হিজরি সনের পবিত্র রজব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র রজব মাস গণনা শুরু হবে। আগামী ২৪ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।

    গতকাল সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

    সভায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রেস) মো. মিজান-উল-আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. ছাইফুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ বিএম আমিনউল্লাহ, অতিরিক্ত প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসতিয়াক হোসেন, ধর্ম সচিবের একান্ত সচিব মো. গোলাম মওলা, ওয়াকফ প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার অধ্যক্ষ প্রফেসর সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবদুর রহমান, স্পারসোর সিএসও মো. শাহ আলম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান, লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব আবু রায়হান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    পানের হোক্কাইডো উপকূলে ভূমিকম্প

    জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইডো উপকূলের দক্ষিণ-পশ্চিমে মঙ্গলবার সকালে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৫ দশমিক ৬ বলে জানানো হয়েছে।
    জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) জানায়, ৪১.৯ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ১৩৮.৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে স্থানীয় সময় সকাল ৭ টা ৩১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
    জেএমএ আরো জানায়, হোক্কাইডোর দক্ষিণ-পশ্চিমে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূ-পৃষ্ঠের মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে।
    এদিকে ভূমিকম্পের ফলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি। আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানান, ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতিরও কোন খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া জাপানের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পের ফলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতাও লক্ষ্য করা যায়নি।

    জাপানে তুষারধসে ৮ স্কুল শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা

    জাপানের একটি স্কি রিসোর্টে তুষারধসের শিকার আট হাইস্কুল শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সোমবার সকালে টোচিগি জেলার নাসুর কাছে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এলাকাটি রাজধানী টোকিও থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে। বার্তা সংস্থা কিয়োদো জানিয়েছে, এ ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়েছেন, কিন্তু ওই আট শিক্ষার্থীর বেঁচে থাকার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ঘটনার সময় ওই জায়গায় বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী ও তাদের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হয়েছে, সেখানে সাতটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা পবর্তারোহণের বড় ধরনের একটি ইভেন্টে অংশ নিচ্ছিল। উদ্ধার অভিযান চললেও খারাপ আবহাওয়া ও ভারী তুষারপাতের কারণে অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। নাসু শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি স্কি রিসোর্ট আছে। গত দুইদিন ধরে ওই এলাকায় ভারী তুষারপাত হচ্ছে। সেখানে তুষারধসের সতর্কতাও জারি করা ছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। বিবিসি।

    ‘বড় টিম’ হওয়ার জন্য ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে মাশরাফি

    বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে এখন আর দুর্বল কোন দল নয় । বরং সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় পারফরমেন্স দিয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে তারা ক্রমান্বয়ে বিশ্ব ক্রিকেটকে জানান দিয়ে আসছে টাইগাররা । তবে ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের পরিণত করতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে । আর এ জন্য দলের ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা-দায়ী অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ।
    মাশরাফি চান ক্রিকেটের বড় দলগুলোর মত তার দলের ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের ইনিংসগুলোকে বড় ইনিংসে উন্নীত করার মন্ত্র শিখে নিতে পারে ।
    ডাম্বুল্লায় প্রথম লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ওডিআই তে তামিম ইকবালের ১২৭ রানের ইনিংস বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর হিসেবে ৩২৪ রানের পাহাড় গড়ে দিতে সাহায্য করেছে। তামিমের এই লম্বা ইনিংস খেলার সময় সাকিব ও সাব্বির দুটি ঝরো ফিফটিও দারুণ সাহায্য করেছে।
    তামিম যদিও বাংলাদেশের ‘সেরা’ ব্যাটসম্যান তবুও তার ৫০ কে ১০০ তে উন্নীত করার হার বেশ করুণ । ৪২ টা ওডিআই ফিফটির বিপরীতে তামিমের শতক মাত্র ৮ টি। অন্যদিকে ৩৩ টা ফিফটির বিপরীতে সাকিবের আছে ৬ টি শতক। চারটি শতকের সঙ্গে মুশফিকের আছে ২৩ টি ফিফটি। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌম্য সরকার ২১ ওডিআই ম্যাচে চার ফিফটির বিপরীতে মাত্র ১ টি শতক করেছেন।
    দেশের বাইরে খেলার জন্য ব্যাটিং আমাদের শক্তি উল্লেখ করে দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, বড় স্কোর করতে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ৫০-৭০ রানের রান মার্ক পর করুক। এটাই এখন আমাদের জন্য শেখার সময় ।  সাব্বির মিস করলেও তামিম গত ম্যাচে শতক করেছে । যখন কেউ এমন বড় ইনিংস খেলে তখন ম্যাচ সহজ হয়ে যায়।
    মাশরাফি আরো বলেন, ম্যাচ শেষ করে আসাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।খেলোয়ারদের বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য থাকলে প্রতিপক্ষের গড়ে দেয়া বড় স্কোর দলীয়ভাবে অতিক্রম করা সহজ হয়ে ওঠে।
    গত নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কিছু কৌশলগত পরিবর্তন তাদের খেলায় যোগ করা শুরু করে।
    মাশরাফি জানান, দেশের মাটিতে সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজের পর থেকেই আমরা খেলোয়ারদের মধ্যে কিছু কৌশলগত টেকনিক নিয়ে কিছু কাজ করি। এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজে সেগুলো প্রয়োগ করা হলেও কিছু সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়া তেমন কিছু হয় নি। কিন্তু এখানে অামরা একটি টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচ জিতে নিয়েছি। অন্তিমগুলোও বিদেশের মাটিতে জিততে সময় নেয়। আমরাও শিখছি। নিউজিল্যান্ডে হয়ত জিততে পারিনি কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের কাজে এসেছে।
    আগামীকাল একই ভেন্যুতে লঙ্কানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওডিআই ম্যাচে মুখোমুখি হবে মাশরাফি বাহিনী।

    জাপানে তুষার ধস : ৮ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার আশঙ্কা

    জাপানের উত্তর টোকিও এলাকার স্কি রিসোর্টে তুষার ধসের ঘটনায় ৮ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে উদ্ধারকারী দল। এর আগে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল ৩ শিশু তুষার ধসের পর নিখোঁজ রয়েছে। সোমবার সকালে উত্তর টোকিওর নাসু অনসেন ফ্যামিলি স্কি রোসোর্টে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
    জাপানের সংবাদ সংস্থা ‘কিয়োদো’র উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, ৮ শিশু নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাটি আরো বেশি হতে পারে। উদ্ধারকারী দল এখনো সেখানে কাজ করছে।
    জাপানের একাধিক স্কুল থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্কি রিসোর্টটিতে এসেছিল। মোট ৫০ জন ধসের সময় রিসোর্টটিতে ছিল।
    এই ঘটনার পর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরো কেউ নিখোঁজ রয়েছে কিনা, অথবা এই ঘটনায় আহত অবস্থায় আছে কিনা, তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে। বিবিসি।
    কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগুন : নাশকতা না দুর্ঘটনা
    হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৮০৮ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় এখনো বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। ওই ঘটনার এক বছর পার হতে না হতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের একটি ই-মেইল থেকে ব্যাংকগুলোকে ভুয়া বার্তা পাঠানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে একই বিভাগে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনা কাকতালীয় না পরিকল্পিত তা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন-এটি শুধুমাত্র দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, নাকি ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতিবাজরা তাদের অপরাধ আড়াল করতে এই অগ্নিকান্ড ঘটিয়েছেন। রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতরা তথ্য-প্রমাণ পুড়িয়ে ফেলার জন্য তিন দিনের এক লম্বা ছুটির আগে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলেও অনেকের ধারণা। আগুনের ভয়াবহতা খুব বেশি না। তবে এ নিয়ে সন্দেহ অত্যন্ত তীব্র। ঘটনার পরপর বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে এ নিয়ে তীর্যক সমালোচনা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িতরা তথ্য-প্রমাণ গায়েব করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এমনটাই আলোচিত হয়েছে। এই ঘটনাকে পরিকল্পিত বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশের দুই ঘণ্টার মধ্যে আগুন লাগায় অনেকে নাশকতা বলতেও দ্বিধা করেননি। বিএনপি নেতারাও রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না হওয়ায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আগুন লাগার ঘটনায় জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে এই ঘটনার সাথে সরকার জড়িত বলেও উল্লেখ করেছেন। এদিকে গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দুই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। একই সঙ্গে আগুন লাগার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে অগ্নিকান্ডের খবর বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ ফায়ার সার্ভিসকে জানায়নি। স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির নিয়ামক এই প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভবনের অবকাঠামো অগ্নিনির্বাপক উপযোগী নয় বলেও জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
    অর্থনীতিবিদ ড. আবু আহমেদ বলেন, একের পর এক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্ঘটনা রহস্যজনক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন বেহাল অবস্থায় বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। রিজার্ভ চুরির পর বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি হওয়া বিরল ঘটনা। এমতাবস্থায় সরকারকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, এটা বিদেশী ষড়যন্ত্র। বিশেষ করে পাকিস্তানের। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তান পন্থীরাও এ ঘটনা ঘটাতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমাদের শত্রæ।
    রিজার্ভ চুরি ও আগুন লাগার দুটি ঘটনা কাকতালীয় নাকি উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানকে। এমন প্রশ্নে বিব্রত অর্থপ্রতিমন্ত্রী প্রকাশ্যে এর সাদৃশ্যের কথা স্বীকার না করলেও বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
    আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক তহবিল লোপাটের মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা। চুরি হওয়া আট কোটি দশ লাখ ডলার চলে গিয়েছিল ফিলিপিন্সের ব্যাংক ও জুয়ার বাজারে। সে অর্থ ফেরত আনার জন্য তদ্বিরও করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিষয়টি এখন সে দেশে অনেকটাই স্থবির আছে।
    সূত্র মতে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে এমনিতেই সমালোচিত বাংলাদেশ ব্যাংক, এর ওপর বৃহস্পতিবারের আগুন লাগার ঘটনা বিষয়টিকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ দু’টি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। উভয় ঘটনার মধ্যে একটি সাদৃশ্য এ প্রশ্নটিকে আরও জোরালো করেছে, আর তা হচ্ছে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছিল ৩ দিনের ছুটির ফাঁকে, এবারও আগুন লাগার ঘটনার পরে রয়েছে তিন দিনের ছুটি। সঙ্গত কারণেই, দুটি ঘটনা কাকতালীয় নাকি উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিকে রহস্যজনক মনে করছেন। তাদের মতে, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ধামাচাপা বা নথিপত্র গায়েব করতেও কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ১৪ তলায় অবস্থিত বৈদশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ। আর এর ঠিক উপরের তলাতেই রয়েছে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মনিটরিং দফতর। যেখানটায় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা ও দেশের ব্যাংক খাতের বড় বড় অনিয়মের নথিপত্র রয়েছে। অপরদিকে নিচের তলাতে ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ।
    অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি গতকাল তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভের টাকা লুটের পর ই-মেইলে ভুয়া বার্তার ঘটনা। এর পরপরই একই বিভাগে আগুন লাগার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। পর পর কেনো এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে! এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গাফিলতি আছে কি-না? সে বিষয়ে গভীরভাবে উচ্চতর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ামক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’। এখানে একের পর এক দুর্ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা উদ্বিগ্ন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার। বিশেষ করে এসব ঘটনায় অন্যকোনো লিংক আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না।
    বৃহস্পতিবার এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এসব কর্তাব্যক্তির উপস্থিতি বাড়তি গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্ব কেন? অবশ্যই কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকার কথা। এতে বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটলে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। যদিও গতকাল এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এই ঘটনাকে স্বাভাবিক বলেই মন্তব্য করেছেন। এদিকে কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং দেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ামক এই ব্যাংকের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন রাখেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। তিনি বলেন, অগ্নিকাÐ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। ভবনের অবকাঠামো অগ্নিনির্বাপক উপযোগী নয়। তাছাড়া ফায়ার অ্যালার্মগুলোও অকার্যকর।
    ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলের। একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও অগ্নিনির্বাপণে কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের কিছু জানানো হয়নি। এলাকাবাসীর ফোনে তারা নিজ উদ্যোগে ছুটে গেছেন। আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তদন্তে বিস্তারিত আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যেন জোরদার করা হয় সেজন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান। এছাড়া মাঝে মধ্যে অগ্নিকান্ড ঘটলে কী করণীয় সে বিষয়ে ট্রায়াল যেন নিয়মিত করা হয় সেই সুপারিশও থাকবে কমিটির পক্ষ থেকে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপনে ফায়ার অ্যালার্মসহ দরকারি সরঞ্জামাদি রাখা এবং কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করবেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
    এদিকে, গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দুই তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত কমিটির তিন সদস্য গতকাল সকাল ১০টা ২৪ মিনিটে ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় যান। সেখানে তারা দেড়-দুই ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরে সাংবাদিকদের তদন্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল সাংবাদিকদের বলেন, আগুন লাগার সময়ে ওই বিভাগের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। রাত ৮টার মধ্যে নিরাপত্তা বিভাগ নিয়মানুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব বিভাগের দরজা বন্ধ করে দেয়। আর রাত ৯টার পরে আগুন লাগে। বিষয়টা প্রথমে নিরাপত্তা বিভাগ জানতে পেরে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাক ও তার সহকারীর দুইটি কক্ষই পুড়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় অন্যান্য ডেস্কের কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই দুই কক্ষে থাকা টেবিল, চেয়ার, সোফা ইত্যাদি পুড়েছে। কিন্তু ওইখানে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে, তা স্পষ্ট করে তিনি বলেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল (অব.) মো. মাহমুদুল হক খান চৌধুরী ও কমন সার্ভিসেস্ ডিপার্টমেন্ট-২-এর মহাব্যবস্থাপক মো. তফাজ্জল হোসেন।
    জানা গেছে, মহাব্যবস্থাপকের কক্ষে থাকা দু’টি কম্পিউটার, কয়েকটি চেয়ার, দু’টি টেবিল, একটি ফটোকপি মেশিন এবং মহাব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, তদন্ত শেষ হলে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। রিজার্ভ চুরির তথ্য আড়াল করা বা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে অগ্নিকান্ডরর যে কথা বলা হচ্ছে, তাও সঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভ্রান্তিকর কথা বলা হচ্ছে। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকের যে বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের কক্ষে আগুন লেগেছে সেখান থেকে বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখান থেকে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদন হয়না, এমনকি আর্থিক লেনদেন সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্যও থাকে না। এদিকে গতকাল দুপুরের পর পরই ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আগুন পোড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা বিকেল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এসময়ে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
    আলোচনায় রিজার্ভ চুরি ও ৩ দিনের ছুটি
    ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম হ্যাকড করে রিজার্ভ ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা চুরি করা হয়। সেদিনটা ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুইদিন শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি পালিত হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি। আবার ৭ ফেব্রæয়ারি (সোমবার) চীনের নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি ছিল ফিলিপাইনে। এই ছুটির ফাঁকে মার্কিন ফেডারেল ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে স্থানান্তর করা হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। তিন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনের ছুটির দিনগুলোকে সমন্বয় করেই হ্যাকাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এবার আগুন লাগার পরের দুইদিন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি, আবার রবিবার বিভিন্ন দেশের ছুটির সঙ্গে বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবসের ছুটিও রয়েছে।
    ছুটির ফাঁকে আগুন লাগার ঘটনায় রিজার্ভ চুরির সময়ের সাদৃশ্য থাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা ঠিক হবে না। তবে আপাতত এমনটি মনে হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও উল্লেখ করেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বারবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাকতালীয় হোক আর যা-ই হোক, এভাবে আগুন লাগার পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। আমাদের আইসিটি বিভাগ, বুয়েট ও কম্পিউটার সায়েন্সের বিশেষজ্ঞদের দেখানো হবে। ঘটনা যা-ই ঘটুক, প্রকৃত ঘটনা সবাইকে জানানো হবে। এখানে ঢেকে রাখার কিছু নেই। সাংবাদিকদের মাধ্যমে তিনি দেশবাসীকে সরকারের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান।
    রিজার্ভ চুরি নিয়ে বিবিসি বাংলা
    বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। অপরাধীরা ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিবিসি বাংলা ফিলিপিন্সের ইনকোয়ারার পত্রিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাসের বরাত দিয়ে একটি সংবাদ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে। যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রথমে বিস্তারিত ফাঁস করে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। এই সংবাদ প্রকাশের দুই ঘন্টা পরই বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন লাগে। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে- ফিলিপিন্সের কিছু কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, যারা এ অপরাধের সূচনা করেছিল তারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতরের লোক। ফিলিপিন্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক ড্যাক্সিম লুকাসকে বলেছে- বাংলাদেশ অযথাই ফিলিপিন্সের ঘাড়ে বেশি দোষ চাপাচ্ছে। অপরাধীরা হয়তো ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
    বাংলাদেশ ব্যাংকের জিডি
    বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্মপরিচালক নুরুল ইসলাম মতিঝিল থানায় জিডি করেন। মতিঝিল থানার এসআই ইব্রাহিম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জিডিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয় ৩০তলা ভবনের ১৪ তলার বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আগুনের শিখা দেখা যায়। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ৩০ মিনিটের ভেতরের মধ্যে আগুনের শিখা নিভিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বন জানানো হয়েছে।
    উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার ২০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মাসুদ বিশ্বাসের কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুরোপুরি নেভানো হয় রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে। এ ঘটনা তদন্তে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। একটি তিন সদস্যের অন্যটি পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামালের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

    ২৫শে মার্চ: গণহত্যা দিবস আজ

    আজ সেই ভয়াল ও বীভত্স কালরাত্রির স্মৃতিবাহী ২৫ মার্চ, জাতীয় গণহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা এই দিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এ রাতে বর্বর পাক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আর এদিন বাঙ্গালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের এক নৃশংস বর্বরতা।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার সেই বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং একুশে ফেব্রুয়ারির মতোই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘটানো গণহত্যার দিনটি জাতীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৪৬ বছর পর গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে সর্ব সম্মতিক্রমে এ প্রস্তাব পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য উল্লিখিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। সংসদে পাস হওয়ার পর গত ২০ মার্চ মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ দিবসটি পালনে গত ২১ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিকভাবে কেন গণহত্যা দিবস পালন করা উচিত, এর পেছনে সমস্ত তথ্য উপাত্ত, যুক্তি উপস্থাপনে ডকুমেন্টস তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে এসব তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন দেশ বা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে সবাই ব্যস্ত। তাই এটা শেষ হলেই ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের যুক্তিগুলো তুলে ধরে তারা পুরোদমে কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করবে।
    কী ঘটেছিল সেদিন: ২৫ মার্চের সেই দিন শেষে নেমেছে সন্ধ্যা। গভীর হতে শুরু করেছে রাত। তখনো কেউ জানে না কী ভয়ঙ্কর, নৃশংস ও বিভীষিকাময় রাত আসছে বাঙালির জীবনে। ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমের। ঘরে ঘরে অনেকে তখন ঘুমিয়েও পড়েছে। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জীপ,  ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠলো আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পাক জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তান্ডব। হকচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে। মানুষের কান্না ও আর্তচিত্কারে ভারি হয়ে ওঠে শহরের আকাশ। মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হলো লাশের শহরে। ঢাকা শহরের রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে তারা বাঙালি নিধন শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল অর্ধ লক্ষাধিক বাঙালিকে। আর এর মানব ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো কালিমালিপ্ত আরেকটি অধ্যায়। নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হলো বিশ্ববিবেক।
    শুধু নিষ্ঠুর ও বীভংস হত্যাকান্ডই নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। পাক হানাদাররা সেই রাতে অগ্নিসংযোগ, মর্টার সেল ছুঁড়ে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ কয়েক জন গণমাধ্যম কর্মীকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জান্তাদের কালো থাবা থেকে রক্ষা পায়নি। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য. ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের নয় শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাদের এই সশস্ত্র অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল একটি। আর তা হলো বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করা।
    ২৫ মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে এক দল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। এ সময় বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়েনার দল। অবশ্য গ্রেফতার হওয়ার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাত্ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তত্কালীন ইপিয়ারের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। আর এই ওয়্যারলেস বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছে। চট্টগ্রাম উপকূলে নোঙ্গর করা একটি বিদেশি জাহাজও এ বার্তা গ্রহণ করে। তখন চট্টগ্রামে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের তত্কালীন শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এই রাত একদিকে যেমন বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম মুহূর্তটি প্রত্যক্ষ করেছিল, তেমনি এ রাতেই সূচিত হয়েছিল জঘন্যতম গণহত্যার। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল তাদের এ দেশীয় দোসর ঘাতক দালাল, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
    নানা কর্মসূচী:জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে সেই কালরাতে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার বীর বাঙালীদের। রাজধানীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। শোকাবহ জাতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশী দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিবসটি পালনে ২ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রর্দশনীসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ মার্চ: গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। এই প্রদর্শনী চলবে দু’দিন। এছাড়া দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় গণহত্যা দিবস পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি রয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর লালবাগ আজাদ মাঠে এবং একই সময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের উদ্যোগে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া
    আগামী ৩০ মার্চ যশোরের চুকনগর বধ্যভূমিতে বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। জনসভা দুটিতে নেতৃত্ব দিবেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
    আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারাদেশে সভা, সমাবেশ, পশাভাযাত্রা, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করার জন্য আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
    আবারো শীর্ষ ধনী বিল গেটস ট্রাম্পের পতন
    ফোর্বস সাময়িকীর সেরা ধনীদের তালিকায় আবারো শীর্ষস্থান দখল করেছেন টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তবে ধনীদের তালিকায় নিজের অবস্থান থেকে ২০০ ধাপ পতন হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। প্রভাবশালী সাময়িকীটি সোমবার বিশ্বের সেরা দুই হাজার ধনীর তালিকা প্রকাশ করেছে। ৮৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে এবার তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন বিল গেটস। গত চার বছর ধরেই তিনি তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছেন। তালিকার শীর্ষস্থানে থাকা ধনীদের মধ্যে বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর এর মধ্যে বেশিরভাগ ধনী ব্যক্তিই প্রযুক্তি বিষয়ক ব্যবসায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিল গেটসের পরেই রয়েছেনÑ বিলিয়নিয়র ওয়ারেন বাফেট। তার সম্পদের পরিমাণ ৭৫.৬ বিলিয়ন ডলার। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছেন অনলাইন ভিত্তিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। গত বছরের তুলনায় ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে তার সম্পদের মূল্যমান হয়েছে ৭২.৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ তালিকার ৫ নম্বর এবং ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি অ্যালিসন রয়েছেন তালিকার সপ্তম অবস্থানে। ফোর্বস জানায়, তালিকায় থাকা ১৮৩ প্রযুক্তিবিষয়ক ব্যবসায়ীর সম্পদের মূল্যমান ১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিলিয়নিয়রের তালিকায় ১৩ ভাগ নতুন সদস্য যোগ হওয়ায় এবার ধনীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৩ জন। সর্বোচ্চসংখ্যক ৫৬৫ বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ৩১৯ জন বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে চীন এবং ১১৪ জন বিলিয়নিয়র নিয়ে তালিকার তৃতীয় শীর্ষস্থানে রয়েছে জার্মানি।
    মুকুট ফিরে পেলেন সাকিব
    টেস্টে সেরা অল রাউন্ডারের লড়াইটা অশ্বিনের সঙ্গে ভালোই চলছে সাকিবের। টেস্টের সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট হারিয়েছিলেন সাকিব ভারতের অশ্বিনের কাছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ে  অশ্বিন টেস্ট রেটিং পয়েন্টে (৪৯৩) এতোটাই উপরে উঠেছিলেন যে, নিউজিল্যান্ড সফরে ক্রাইশ্চার্চে ডাবল সেঞ্চুরিতে ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্টে (৪৪৩) পেয়েও অশ্বিনের পেছনে ছিলেন সাকিব। তবে পি সারা ওভালে বাংলাদেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি এবং ৬ উইকেটে (২ ইনিংস মিলে) টেস্ট অল রাউন্ডারের মুকুট ফিরে পেয়েছেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান সিরিজে ভারতের অশ্বিনের সর্বশেষ রেটিং যেখানে ৪০৮, সেখানে দুর্দান্ত অল রাউন্ড পারফরমেন্সে সাকিবের  সর্বশেষ রেটিং পয়েন্ট ৪৩১। এক সঙ্গে তিন ফরমেটের ক্রিকেটে সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট লম্বা সময় মাথায় ছিল তার। সম্প্রতি টেস্ট অল রাউন্ডারের মুকুট হারিয়ে আবারো তা পুনরুদ্ধারে নতুন উচ্চতায় উঠে এলেন সাকিব। ওয়ানডে,টি-২০ এবং টেস্ট তিন ফরমেটের ক্রিকেটে এক সঙ্গে সেরা অল রাউন্ডারের মুকুট মাথায় উঠল আবারো সাকিবের।
    শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সিরিজ সেরা সাকিবের পারফরমেন্সে ব্যাটিং এবং বোলিং র‌্যাঙ্কিংয়েও সাকিবের অবস্থানের উন্নতি ঘটিয়েছে। ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ ধাপ উপরে উঠে সাকিবের অবস্থান এখন ২১তম। টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ৬৭৬ রেটিং পয়েন্টে অবস্থান করছেন তিনি। বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে সেখানে ১ ধাপ উন্নতি হয়ে ১৭তম অবস্থানে এখন সাকিব (৬৩৮ পয়েন্ট)।
    শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট পারফরমেন্সে ৯ ধাপ এগিয়ে ২৪ নম্বরে রয়েছেন তামিম ইকবাল। আইসিসি প্রকাশিত সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে তার রেটিং পয়েন্ট এখন ৬৫৪। একধাপ এগিয়ে ২৮ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছেন মুশফিক। তার রেটিং পয়েন্ট এখন ৬৪৪। বাংলাদেশের শততম টেস্টে দুর্দান্ত এক স্পেলে (৭-১-২৪-৩) শ্রীলঙ্কাকে কাঁপিয়ে দেয়া বাঁ হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান টেস্টে বোলারদের র‌্যাকিংয়ে ২০ ধাপ লাফিয়ে এখন অবস্থান করছেন ৪৭ নম্বরে। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্ট (৩৬০) পেয়েছেন তিনি।
    টেস্ট এ ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার উপরে আছেন যথারীতি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং (৯৪১) পয়েন্ট পেয়েছেন তিনি। রাঁচি টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিতে ভারতের টপ অর্ডার চেতশ্বর পুজারা ৪ ধাপ লাফিয়ে উঠে এসেছেন ২ নম্বরে। ক্যারিয়ার সেরা রেটিং পয়েন্ট ( ৮৬১)অর্জন করেছেন তিনি  বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান নড়চড় হয়নি, ভারতের বাঁ হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ক্যারিয়ার সেরাপ ৮৯৯ পয়েন্ট নিয়ে আছেন র‌্যাকিংয়ে সেরা অবস্থানে। তার পেছনে আছেন অশ্বিন (৮৬২)। এক ধাপ নীচে নেমে ৩ নম্বরে অবস্থান করছেন এখন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ (৮৫৪)

    জল আছে নতুন সাত ‘পৃথিবী’তে!

    নতুন সাত ‘পৃথিবী’ রীতিমতো তরল জলে টইটুম্বুর হয়ে আছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এই সাত গ্রহে সাগর, মহাসাগর রয়েছে। আর সেই পানি ঢাকা নেই কোনো পুরু বরফের চাদরের তলায়। যে তাপমাত্রা থাকলে পৃথিবীর সাগর, মহাসাগরের পানি তরল অবস্থায় থাকতে পারে, ঠিক সেই তাপমাত্রা আছে নতুন এই সাত গ্রহে। তাই সদ্য আবিষ্কৃত নতুন সাত গ্রহের পানিও রয়েছে একেবারে তরল অবস্থায়।
    ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন নতুন সাত গ্রহের মূল আবিষ্কারক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মিশেল গিলন।
    তিনি জানান, আগামী বছর নাসা মহাকাশে পাঠাচ্ছে আরও বড়, আরও দক্ষ টেলিস্কোপ। যার নাম- জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। তাই গিলনের প্রত্যাশা, ‘হয়তো আগামী বছরের মধ্যেই আমরা জানতে পারব ঠিক কতটুকু পানি আছে নতুন সাত গ্রহে।’
    গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরে বসে পাঁচ বিজ্ঞানী ঘোষণা করেছিলেন ‘পৃথিবী’র মতো নতুন সাত গ্রহের আবিষ্কারের খবর।

    শততম টেস্টে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়

    শততম ওয়ানডের পর শততম টেস্টটা জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ। কলম্বোর পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কাকে উইকেট হারালো টাইগাররা।
    চতুর্থ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ১৯১ রানের জবাবে ৪ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। জয়সূচক রানটি আসে মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে। তার সঙ্গে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ইতিহাসের চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজেও সমতায় শেষ করল মুশফিকুর রহিমের দল।
    প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১২৯ রানের লিড টপকে সবক’টি উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার লিড হয় ১৯০ রান। আর দলীয় সংগ্রহ ৩১৯। ১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২২ রানে একই সাথে সৌম্য ও ইমরুল কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে তামিম ইকবাল ১০৯ রানের জুটি গড়ে তোলেন। পেরেরার বলে চান্ডিমালের হাতে ধরা পড়ার আগে ১২৫ বলে ৮২ রান করেন তামিম। দলীয় রান তখন ১৩১। দলীয় ১৪৩ রানে আউট হয়ে যান সাব্বির রহমানও। আউট হওয়ার আগে ৪২ রান করেছিলেন তিনি।
    পেরেরার বলে পঞ্চম উইকেট হিসেবে সাকিবের পতনের পরে আশঙ্কা জেগে ওঠে। দলের তখন প্রয়োজন আরো ২৯ রান। মোসাদ্দেকের সঙ্গে ২৭ রানের এক লড়াকু জুটি গড়ে সেই আশঙ্কা দূর করেন মুশফিক। ১৮৯ রানে মোসাদ্দেক হেরাথের শিকার হয়ে ফেরত যাওয়ার পরে সুইপ করে দুই রান তুলে নিয়ে শততম টেস্ট জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।
    এর আগে কলম্বো টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করেছিলো ৩৩৮ রান। জবাবে সাকিব আল হাসানের দারুণ সেঞ্চুরি এবং মোসাদ্দেক, মুশফিক, সৌম্যদের ফিফটিতে ৪৬৭ রান করে বাংলাদেশ; লিড ১২৯ রানের। সেই লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ধসের পরেও করুনারত্নের সেঞ্চুরি ও লোয়ার অর্ডারে দিলরুয়ান পেরেরার অর্ধশত রানে ১৯১ রানের লিড দিতে সক্ষম হয় শ্রীলংকা। কিন্তু শততম টেস্টটি স্মরণীয় করে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়েই পৌছে যায় সেই লক্ষ্যে।

    প্রযুক্তি : সেলফি

    বর্তমান সময়ে সেলফি-আসক্তি অনেকটা মনোরোগের পর্যায়ে চলে গেছে। মনস্তত্ববিদগণ এভাবেই তা ব্যাখ্যা করছেন। সেলফির বিচিত্র রূপ ও ব্যাপক বিস্তার সামনে রাখলে তাদের ব্যাখ্যার যথার্থতা বেশ বুঝে আসে।

    কিছু কিছু সেলফি আছে যা  সরাসরি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। হিংস্র প্রাণীর সাথে সেলফি, চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি,পাহাড়ের চূড়ার প্রান্তে পা ঝুলিয়ে সেলফি, আরো কত রকমের সেলফি যে মানুষ তুলছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত-নিহত হচ্ছে তা একজন সাধারণ পত্রিকা-পাঠকেরও অজানা নয়। এখন তো সেলফির দৌরাত্ম্য ইবাদত-বন্দেগী পর্যন্তও পৌঁছে গেছে। মুসলমানের বহু কাঙ্ক্ষিত ইবাদত হজ্বে ও তাওয়াফেও সেলফির ছড়াছড়ি!

    সেলফির মূল কথাটি হচ্ছে নিজেকে বা নিজের বিশেষ কোনো মুহূর্তকে নিজে ধারণ করা। এই ধারণের প্রেরণা কী, উদ্দেশ্য কী?সাধারণত তা হয় মনের ইচ্ছা পূরণ, ক্ষণিকের আনন্দ এবং অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন ।

    মনের সকল ইচ্ছা পূরণ কি মানুষের জন্য কল্যাণকর? আর মানুষের কাছে  সবকিছু উপস্থাপন করে কী লাভ? নিজেকে ও নিজের সকল মুহূর্তকে উপস্থাপন করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে। কুরআন মাজীদ আমাদের শেখাচ্ছে, ‘আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাব্বুল আলামীন।’

    আমার হজ্ব, আমার তাওয়াফ তো মানুষের জন্য নয়, আমার নিজের ইচ্ছা পূরণ বা বিনোদনের জন্যও  নয়, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবার জন্য। আমি কি চিন্তা করেছি, সেলফির মতো সামান্য একটি ইচ্ছাপূরণের দ্বারা আমার ইবাদতটিই মাটি হয়ে যাচ্ছে? সেলফির দ্বারা তো ইবাদতের স্বরূপই বদলে যায়। বলুন তো ইবাদতের মধ্যে যে আল্লাহর বান্দা সেলফিগ্রস্ত হয় তার উদ্দেশ্য কি ইবাদত থাকে, না ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি? সে তো ইবাদত করছে না, ছবি  তোলার জন্য ইবাদতের অঙ্গ-ভঙ্গি করছে। কিংবা অন্তত আল্লাহকে ভুলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই প্রাণহীন অঙ্গ-ভঙ্গির কী মূল্য তাহলে আল্লাহর কাছে হতে পারে?কুরআন মাজীদের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

    لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ  وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ  وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا  وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.

    পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্য (বান তো সে) যে, ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, শেষ দিবসের উপর, সমস্ত ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের উপর… -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭

    ঈমানদারের জন্যও এ আয়াতে এই গভীর শিক্ষা আছে যে, তার ইবাদত-বন্দেগীও যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত না হয়।

    আরেক জায়গায় মুমিনদের লক্ষ্য করে ইরশাদ হয়েছে-

    لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ  وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.

    আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তার (কুরবানীর প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া…। -সূরা হজ্ব (২২) : ৩৭

    অথচ কুরবানীর মতো ইবাদতও যারা ভিডিও করে থাকেন তারা কি কুরবানীর পশুর রক্ত-মাংসের মধ্যেই বাধা পড়ে গেলেন না?

    আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইবাদতের প্রাণ হচ্ছে ‘যিকরুল্লাহ’ আল্লাহর স্মরণ। একারণেই সালাত ও কুরবানী, হজ্ব ও তাওয়াফ সব ক্ষেত্রেই কুরআন-সুন্নাহয় ‘আল্লাহর স্মরণ’ কথাটি উল্লেখিত হয়েছে। ছবি তোলা, ভিডিও করা ইত্যাদির মাধ্যমে ইবাদতের এই বড় অনুষঙ্গটি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা তো বলাই বাহুল্য।

    দ্বিতীয়ত, সেলফি যদি হয় বিনোদন তাহলে ইবাদত-বন্দেগীতে সেলফিগ্রস্ততার দ্বারা কি ইবাদতকে বিনোদনে পরিণত করা হয় না?

    দ্বীন-ধর্মকে ক্রীড়া ও বিনোদনে পর্যবসিত করা তো অনেক বড় অপরাধ।

    তৃতীয়ত, সেলফিতে যখন যোগ হয় লোকের বাহবা পাওয়ার চিন্তা তখন এর মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’।

    চিন্তা করলে দেখা যায়, উপরের যে কোনো একটি বিষয়ই ইবাদতকে বিনষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য হজ্ব-কুরবানীর মতো বাঞ্ছিত ও প্রতীক্ষিত ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলা কত বড় নির্বুদ্ধিতা! দেখুন, শয়তান কত সহজে আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত ইবাদতগুলো মাটি করে দেয়!

    এরপর আসুন ঝুঁকিপূর্ণ সেলফি প্রসঙ্গে। যে সেলফির জন্য তরুণ-যুবকেরা জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলছেন তারা হয়তো সচেতন নন যে, এভাবে তারা একটি গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। শরীয়তের বিধানে এটা বৈধ নয়। এ তো উপযুক্ত কারণ ছাড়া নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা, যা পরিষ্কার নিষেধ। হাদীস শরীফে তো মৃত্যুর কামনা করতেও নিষেধ করা হয়েছে তাহলে নিজেকে মৃত্যু-ঝুঁকির মুখোমুখি করার তো প্রশ্নই আসে না।

    মানুষের জীবন অতি মূল্যবান। এই একটিমাত্র জীবনকে কাজে লাগিয়ে যেমন মানুষকে আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তি ও সাফল্য অন্বেষণ করতে হয় তেমনি পৃথিবীর অনেক এবং অনেকের দায়-দায়িত্বও পালন করতে হয়। তাহলে অর্থহীন কাজে এই জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা মর্মান্তিক অবিবেচনা নয় কি? হায়! মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তান যে মানুষকে কতভাবে প্ররোচিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে!

    প্রিয় বন্ধু! আপনি কি একজন সাহসী যুবক? আপনি কি আনন্দ পান অন্যের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া বা আলাদা হওয়ার মধ্যেই?তাহলে আপনাকে স্বাগতম! ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানায় অর্থহীন কাজে নয়, অর্থপূর্ণ কর্মের বিস্তৃত অঙ্গনে-মানবসেবায়,জাতিগঠনে, ন্যায়ের বিস্তারে, অন্যায়ের প্রতিরোধে। দেখুন, একজন বহু সাধ্য-সাধনা করে তেলতেলে মুলিবাঁশ বেয়ে উঠে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল। এই কর্মে সে এমনই অভাবিতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল যে, শুধু মাটির মানুষ নয়, গাছের বানরও অভিভূত হয়ে গেল; বলুন তো এতে তার কী প্রাপ্তি ঘটল?

    তাই আজেবাজে কাজ নয়, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র হচ্ছে জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও কর্ম-কুশলতা। চলুন না, এই সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাই। আর এগিয়ে যাই একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে সন্তুষ্ট করবার জন্য, একমাত্র যাঁর কাছেই আমাদের সকল কর্ম ও মুহূর্ত থাকবে চির অক্ষয়।