• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • পাপ-পুণ্যের ধারা

    দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের কর্মক্ষেত্র। এই কর্ম যাতে সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে আঞ্জাম দেওয়া যায়, সেজন্য মানুষকে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ, শক্তি-সামর্থ্য ও দিকনির্দেশনা দান করা হয়েছে। এসব কাজে লাগিয়ে একজন মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি-ধন্য হতে পারে। দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানকে জ্যোতির্ময় করতে পারে। গড়ে তুলতে পারে নেক ও সওয়াবের প্রভূত সঞ্চয়।

    এ প্রচেষ্টার সর্বশেষ সীমা হল মৃত্যু। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সকল সম্পর্ক। নিঃশেষ হয়ে যায় যাবতীয় কর্মক্ষমতা। না ভালো কাজের শক্তি থাকে, না মন্দ কাজের। না সওয়াব উপার্জনের সক্ষমতা থাকে, না গোনাহ কামানোর।

    মৃত্যুর পর শুরু হওয়া জীবনের প্রথম মনযিল হল কবর। কবরের জীবনের পর সকলকে আল্লাহ তাআলার কাছে সমবেত হতে হবে। তিনি পার্থিব জীবনের হিসাব-নিকাশ নিবেন এবং ভালো-মন্দ যাবতীয় কর্মের প্রতিদান দিবেন। তখন কারো ঠিকানা হবে জান্নাত, কারো জাহান্নাম।

    সেদিন নেককার ও গোনাহগার উভয়েরই নিজ নিজ কৃতকর্ম স্মরণ হবে। নেককার আফসোস করবে কেন আরো বেশি নেক অর্জন করেনি। আর গোনাহগারের অনুতাপ তো হবে অন্তহীন- কেন গোনাহ থেকে বেঁচে থাকেনি। কেউ কেউ তাদেরকে আবার দুনিয়াতে পাঠানোর আবেদন করবে। কিন্তু এ কি সম্ভব?

    বুদ্ধিমানের কর্তব্য গোনাহ থেকে যথাসম্ভব বেঁচে থাকা। আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ ও শান্তির পথে অগ্রগামী হওয়া এবং মৃত্যুর আগেই মৃত্যু ও তার পরের জীবনের যথোচিত প্রস্তুতি নেওয়া।

    আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে তাঁর প্রিয় মুমিনদেরকে এ কথাই স্মরণ করিয়েছেন-

    وَ اَنْفِقُوْا مِنْ مَّا رَزَقْنٰكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْ لَاۤ اَخَّرْتَنِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ وَ لَنْ یُّؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا  وَ اللهُ خَبِیْرٌۢ بِمَا تَعْمَلُوْنَ .

    আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর, এর আগে যে, তোমাদের কারো মৃত্যু এসে যাবে আর তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কিছু কালের জন্য সুযোগ দিলে না কেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। যখন কারো নির্ধারিত কাল এসে যাবে তখন আল্লাহ তাকে কিছুতেই অবকাশ দিবেন না। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবহিত। -সূরা মুনাফিকূন (৬৩) : ১০-১১

    হাদীসে বুদ্ধিমানের পরিচয় এভাবে ব্যক্ত হয়েছে-

    الْكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، وَتَمَنَّى عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.

    বুদ্ধিমান সে-ই যে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম সে-ই যে নিজের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে এবং আল্লাহর কাছে (বৃথা) আশা পোষণ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৫৯

    চতুর্থ খলীফা আলী ইবনে আবী তালিব রা.-এর একটি বক্তব্যে দুনিয়া-আখেরাতের স্বরূপ ও আমাদের করণীয় এভাবে বর্ণিত হয়েছে-

    إِنَّ الدُّنْيَا قَدْ تَرَحَّلَتْ مُدْبِرَةً، وَإِنَّ الْآخِرَةَ مُقْبِلَةٌ وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ، وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلَ.

    দুনিয়া ফিরে যাচ্ছে আর আখেরাত এগিয়ে আসছে। আর এ দুটির প্রত্যেকটিরই আছে সন্তানাদি। তোমরা আখেরাতের সন্তান হও। কারণ আজ শুধু আমল, হিসাব নেই। আর আগামীকাল শুধু হিসাব, আমল নেই। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩৫৬৩৬

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক বিশেষ নিআমত হল, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমলের ধারা বন্ধ হয়ে গেলেও জীবদ্দশায় নির্দিষ্ট কিছু আমল করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে। অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের জন্য সওয়াব পৌঁছার ব্যবস্থা করে যেতে পারে এবং চাইলে অন্য কেউও তাকে সওয়াব পৌঁছাতে পারে। এ উভয় পদ্ধতিই আল্লাহ তাআলার একান্তই দয়া ও অনুগ্রহ। নতুবা বান্দার কি সাধ্য ছিল কর্মক্ষমতা হারানোর পরও প্রতিদান লাভের? প্রথম পদ্ধতিটির নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। আলোচনার সহজতার জন্য একে ‘সওয়াব লাভের উপায়’ বলা যেতে পারে। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ‘ঈসালে সওয়াব’ নামে অধিক পরিচিত। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে প্রথম পদ্ধতিটি (সওয়াব লাভের উপায়) সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা উপকারী বলে মনে হচ্ছে।

     

    সওয়াব লাভের উপায়

    সঠিক পদ্ধতি ও সহীহ নিয়তে করা মুমিনের কোনো নেক আমলই বৃথা যায় না। আল্লাহ তাআলার কাছে এর বিনিময় সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পর যেহেতু কোনো আমল করা সম্ভব নয় তাই সওয়াব ‘কামাই করা’ও অসম্ভব। তবে এমন কিছু আমল আছে, যা জীবদ্দশায় করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব ও উপকারিতার ধারা অব্যাহত থাকে । যথা-

    এক. সদকায়ে জারিয়া

    সদকামাত্রই উপকারী ও বিরাট সওয়াবের কাজ। এর বহু প্রকার ও ধরন রয়েছে। কিছু সদকা আছে অস্থায়ী। যেমন কাউকে খাদ্যদ্রব্য দান করা। আর কিছু সদকা আছে স্থায়ী। যেমন মসজিদ নির্মাণ করা। এই প্রকার সদকাকে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বলা হয়। সদকায়ে জারিয়া করলে মৃত্যুর পরও দানকারীর ‘সওয়াব-সঞ্চয়’ সমৃদ্ধ হতে থাকবে। এর ¯্রােতধারা তার ‘পুণ্য-তরি’কে চলমান রাখবে।

    এখানে সদকায়ে জারিয়ার কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি :

    ১. মসজিদ নির্মাণ।

    ২. মকতব-মাদরাসা প্রতিষ্ঠা।

    ৩. দ্বীনী পাঠাগার ও দ্বীনী কিতাবের ব্যবস্থা করা।

    ৪. ঈদগাহ বানানো।

    ৫. কবরস্থান করা।

    ৬. যে কোনো দ্বীনী কাজের জন্য জমি ওয়াফ্ক করা।

    ৭. এতীম ও অসহায় লোকদের বাসস্থান ও উপার্জনের ব্যবস্থা করা।

    ৮. রাস্তা ও পুল নির্মাণ করা।

    ৯. পানির ব্যবস্থা করা।

    ১০. ফলদার বৃক্ষ রোপণ করা।

    ১১. সরাইখানা তৈরি করা।

    ১২. সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইত্যাদি।

    দুই. উপকারী ইলম

    উপকারী ইলম অর্জনের গুরুত্ব ও ফযীলত অপরিসীম। এর উপকারিতা হাসিল করতে পারে প্রথমত ব্যক্তি নিজেই। সেই সাথে যদি এর প্রচার-প্রসার করা হয়, মানুষকে শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া হয়, যা দ্বারা তারা যুগ-যুগ ধরে উপকৃত হতে থাকবে, কল্যাণ ও শান্তির পথে এগুতে থাকবে এবং যার ধারাবাহিকতা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও চলমান থাকবে, তবে তা আরো বেশি মহিমময়। যতদিন এই ইলম দুনিয়াতে আলো ছড়াতে থাকবে ততদিন তার সওয়াবের ভুবনও আলোকিত হতে থাকবে।

    তিন. নেক সন্তানসন্তান-সন্ততি আল্লাহ তাআলার এক মহা মূল্যবান নিআমত। এ শুধু পার্থিব অবলম্বনই নয়; আখেরাতের সম্বলও বটে। নিজের দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর করার পক্ষে বড় সহায়ক। সততা-যোগ্যতা ও তাকওয়া-তহারাতের উপর তাকে প্রতিষ্ঠিত করলে মা-বাবা দুনিয়া-আখেরাত সবখানে উপকৃত হবেন এবং মৃত্যুর পরও এই বৃক্ষের সুফল ভোগ করতে থাকবেন।

    উপরোক্ত তিনটি বিষয় হাদীসে এভাবে ব্যক্ত হয়েছে-

    إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.

    মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সমস্ত আমল তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমল তিনটি হচ্ছে- সদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম, যা থেকে উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩১০

    আরেকটি হাদীসে এসেছে, ‘মানুষ যা কিছু রেখে যায় তার মধ্যে তিনটি জিনিস উত্তম- নেক সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। এমন সদকা যা অব্যাহত থাকে। এর সওয়াব সে লাভ করে। এবং এমন ইলম, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।’ -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৪৯৫

    এ তিনটি কাজ পৃথক পৃথকভাবেও বর্ণিত হয়েছে। উপকারী ইলম সম্পর্কে ‘সুনানে ইবনে মাজাহ’র (২৪০) একটি বর্ণনা এ রকম-

    مَنْ عَلَّمَ عِلْمًا فَلَهُ أَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِه، لَا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الْعَامِلِ.

    যে কাউকে ইলম শিক্ষা দেয়, সে এ অনুযায়ী আমলকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। আমলকারীর সওয়াব থেকে কমানো হবে না।

    অন্য এক হাদীসে এসেছে-

    أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ أَنْ يَتَعَلَّمَ الْمَرْءُ الْمُسْلِمُ عِلْمًا ثُمَّ يُعَلِّمَهُ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ.

    উত্তম সদকা হল নিজে ইলম শিক্ষা করা এবং অপর মুসলিম ভাইকে তা শিক্ষা দেওয়া। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৪৩

    নেক সন্তান সম্বন্ধে এক হাদীসের ইরশাদ-

    إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَرْفَعُ الدَّرَجَةَ لِلْعَبْدِ الصَّالِحِ فِي الْجَنَّةِ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ، أَنَّى لِي هَذِهِ؟ فَيَقُولُ: بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ.

    আল্লাহ তাআলা জান্নাতে নেককারের মর্যাদা উঁচু করলে সে জিজ্ঞেস করবে, হে আমার প্রতিপালক! এটা আমার জন্য কোথা থেকে এল? তিনি বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ইস্তিগফারের কারণে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১০৬১০

    চার. নেক কাজের সূচনা

    নেক কাজের সূচনা করা যথেষ্ট কঠিন। সূচনাকারীকে কত বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়! কত ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়! এসব কিছু পেছনে ফেলে একটি নেক কাজের ভিত্তি স্থাপন করলে পরবর্তী সময়ে যারা ঐ কাজ করবে তাদের সকলের সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে।

    জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আলবাজালী রা.  থেকে বর্ণিত, একবার কিছু বেদুঈন কম্বল পরিহিত অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল। তিনি তাদের দুরবস্থা দেখলেন। তারা ভীষণ অভাবগ্রস্ত ছিল। উপস্থিত লোকদেরকে তিনি তাদের জন্য দান করার প্রতি উৎসাহিত করলেন। কিন্তু এ কাজে তারা কিছুটা দেরি করল। এতে নবীজীর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ ফুটে উঠল। কিছুক্ষণ পর এক আনসারী একটি রূপার থলি নিয়ে এল। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এল। এভাবে একে একে সকলেই দান করলেন। তখন নবীজীর চেহারায় প্রসন্নতা ফুটে উঠল। তিনি ইরশাদ করলেন-

    مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ.

    যে ইসলামে কোনো উত্তম নিয়ম চালু করে, যে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমল করা হয়, তার জন্য আমলকারীদের অনুরূপ সওয়াব লেখা হবে। তাদের সওয়াব সামান্য পরিমাণও কমানো হবে না। আর যে ইসলামে কোনো মন্দ নিয়ম চালু করে, যে অনুযায়ী পরবর্তীতে আমল করা হয়, তার জন্য আমলকারীদের অনুরূপ গোনাহ লেখা হবে। তাদের গোনাহ কিছুমাত্রও কমানো হবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০১৭

    পাঁচ. মৃত সুন্নাহ জীবিত করা

    যে কোনো সুন্নাহ মানুষের কর্ম থেকে বিলুপ্ত হতে থাকলে তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে হারাতে শুরু করলে তো কথাই নেই। আরো কঠিন হয় যখন সেটার জায়গায় কোনো বিদআত এসে ঢুকে পড়ে। এ জাতীয় মৃত সুন্নাহ পুনরুজ্জীবিত করলে পরবর্তীতে যারা ঐ সুন্নাহর অনুসরণ করবে তাদের সকলের অনুরূপ সওয়াব তার আমলনামায় জমা হবে।

    নবীজীর ইরশাদ-

    مَنْ أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي قَدْ أُمِيتَتْ بَعْدِي، فَإِنَّ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلَ مَنْ عَمِلَ بِهَا…

    যে আমার পরে একটি মৃত সুন্নাহ জীবিত করবে সে পরবর্তীতে যারা এ অনুযায়ী আমল করে, তাদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তাদের সওয়াব সামান্য পরিমাণও কমবে না। আর যে এমন কোনো নবআবিষ্কৃত বিষয় উদ্ভাবন করবে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পছন্দ নয়, পরবর্তীতে যারা এ অনুযায়ী আমল করে, তাদের সমপরিমাণ গোনাহ তার উপর বর্তাবে। তবে তাদের গোনাহ বিন্দুপরিমাণও কমবে না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৭

    ছয়. হেদায়েতের দিকে ডাকা

    ইসলামে ব্যক্তিগত সংশোধনে আত্মতৃপ্তি পছন্দনীয় নয়; আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও অন্যান্যদের হেদায়েতের ব্যাপারেও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের দ্বীনের সহীহ বুঝ ও সমঝ অর্জন এবং নিজের জীবনে তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি মুসলিমের এক দায়িত্ব হল অপরকে এর দিকে ডাকা, তার কাছে ইসলামের কল্যাণকর শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া। বস্তুত দাওয়াত হচ্ছে হেদায়েতের নূর সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার এক মূল্যবান উপায়। যারা এই দাওয়াতে সাড়া দেবে তাদের অনুরূপ সওয়াব আহ্বানকারীর সংগৃহীত হবে। তাদের আমলের ধারা যদি তার মৃত্যুর পর পর্যন্ত বহাল থাকে, তাহলে ততদিন পর্যন্তই সে এর সওয়াব পেতে থাকবে।

    হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

    مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ…

    যে মানুষকে হেদায়েতের দিকে ডাকে পরবর্তীতে যারা তা অনুসরণ করে তাদের অনুরূপ সওয়াব তাকে দান করা হবে। তবে ওদের সওয়াব বিন্দুপরিমাণও কমবে না। আর যে গোমরাহীর দিকে ডাকে পরবর্তীতে যারা তা অনুসরণ করে তাদের সমপরিমাণ গোনাহ তাকে বহন করতে হবে। এতে ওদের গোনাহ সামান্য পরিমাণও কমবে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস  ২৬৭৪

    সারকথা হল, এ ছয়টি কাজ (সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম, নেক সন্তান, নেক কাজের সূচনা, মৃত সুন্নাহের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও হেদায়েতের দিকে ডাকা) করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব লাভ করা যাবে।

    এখানে প্রসঙ্গক্রমে দুটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন মনে হচ্ছে-

    (ক) উপরোক্ত ছয়টি কাজ মৌলিক শিরোনাম মাত্র। প্রত্যেকটির বিস্তর শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এক সদকায়ে জারিয়ারই তো কত প্রকার! উপকারী ইলমের কত অঙ্গন ও অনুষঙ্গ! নেক কাজ ও সুন্নাহ্র কত বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি এবং হেদায়েতের দিকে ডাকার কত পথ ও পন্থা!

    এ ছয়টি কাজের মধ্যে শেষ তিনটি মূলত উপকারী ইলমেরই শাখা। আরও খুলে বললে কুরআন-সুন্নাহ্য় ‘সদকা’ শব্দ যে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, সেই হিসেবে নেক সন্তান ও উপকারী ইলমকেও ‘সদকায়ে জারিয়া’ বলা যায়। ‘সহীহ ইবনে খুযায়মা’ গ্রন্থে নি¤েœাক্ত শব্দে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-

    إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِن مِنْ عَمَلِه وَحَسَنَاتِه بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا عَلِمَهُ وَنَشَرَهُ، أَوْ وَلَدًا صَالِحًا تَرَكَهُ، أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ، أَوْ بَيْتًا لِابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ، أَوْ نَهَرًا كَرَاهُ، أَوْ صَدَقَةً أَخْرَجَهَا مِنْ مَالِهِ فِي صِحَّتِهِ وَحَيَاتِهِ، تَلْحَقُهُ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهِ.

    মুমিনের মৃত্যুর পর তার যেসব আমল তার সাথে যুক্ত হয় তা হল- তার শেখানো ও প্রচারিত ইলম। তার রেখে যাওয়া নেক সন্তান। মসজিদ নির্মাণ করা। সরাইখানা তৈরি করা। পানির নহর খনন করা। জীবদ্দশায় সুস্থ অবস্থায় দান-খায়রাত করা। এগুলোর সওয়াব সে মৃত্যুর পরও পায়। -সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৪৯০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৪২

    ইমাম বায়হাকী রাহ. (৪৫৮হি.) এ হাদীসটির সাথে এধরনের আরেকটি হাদীস বর্ণনা করে বলেন-

    ‘এ দুটি বর্ণনার সহীহ হাদীসের (যাতে আছে যে, তিনটি ছাড়া সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়) সাথে বিরোধ নেই। কারণ এতে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বলা হয়েছে, যা এখানের অতিরিক্ত আমলগুলোকে শামিল করে।’ -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/২৪৮

    (খ) এগুলো শুধু সওয়াবের জন্য বিশেষ নয়; গোনাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ কেউ যদি গোনাহের কাজে ‘গোনাহে জারিয়া’র সূচনা করে, ক্ষতিকর জ্ঞানের প্রচার-প্রসার করে, ছেলে-মেয়েকে অসৎরূপে গড়ে তুলে, খারাপ কাজের সূচনা বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, মানুষকে গোমরাহীর দিকে ডাকে, তাহলে যতদিন তা বাকি থাকবে ততদিন তার গোনাহের বোঝা ভারি হতে থাকবে। এই অন্ধকার ছড়ানোর ধারা তার মৃত্যুর পরও চলমান থাকলে মৃত্যুর পরও তার আমলনামা অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে থাকবে।

    এ সংক্রান্ত কিছু হাদীস তো পাঠক ইতোমধ্যেই লক্ষ করেছেন। নিম্নে আরও কিছু আয়াত ও হাদীস পেশ করছি।

    কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

    لِیَحْمِلُوْۤا اَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً یَّوْمَ الْقِیٰمَةِ وَ مِنْ اَوْزَارِ الَّذِیْنَ یُضِلُّوْنَهُمْ بِغَیْرِ عِلْمٍ اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوْنَ.

    কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের (কৃত গোনাহের) পরিপূর্ণ ভারও বহন করবে এবং তাদেরও ভারের একটা অংশ, যাদেরকে তারা অজ্ঞতার কারণে বিপথগামী করছে। -সূরা নাহল (১৬) : ২৫

    অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

    وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَعَ أَثْقَالِهِمْ.

    তারা নিজেদের গোনাহের বোঝা বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরো কিছু বোঝা। -সূরা আনকাবুত (২৯) : ১৩

    নবীজীর ইরশাদ-

    لاَ تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَّ القَتْلَ.

    যে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে এর গোনাহের একটা অংশ প্রথম আদম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ সেই প্রথম হত্যার প্রবর্তন করেছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৩৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৭৭

    আর এগুলো গোনাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া শরীয়তের বিধান ‘একজনের গোনাহের বোঝা আরেকজনের উপর বর্তাবে না’- এর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ, একজনের গোনাহের ভার আরেকজনের উপর বর্তাবে না; যদি এর সাথে তার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকে। অন্যথায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকলে তার উপরও এর একাংশ গোনাহ বর্তাবে। বলাই বাহুল্য, এটা অন্যের বোঝা নয়, নিজেরই সংশ্লিষ্টতার বোঝা।

    সূরা নাহলের ২৫ নং আয়াতের তাফসীরে শাইখুল ইসলাম যাকারিয়া আনসারী রাহ. (৯২৬ হি.) বলেন,

    তারা নিজেদের কুফ্র অবলম্বনের বোঝা বহন করবে। সেই সাথে তাদের কারণে যারা বিপথগামী হয়েছে তাদেরও পুরোপুরি বা আংশিক গোনাহ। আর আল্লাহর ইরশাদ-  وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی

    এর অর্থ হল, যেখানে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই- না কারণগত না অন্য কোনোভাবে। -ফাতহুর রহমান পৃ. ৩০৪

    খলীল আহমদ সাহারানপুরী রাহ. (১৩৪৬হি.) من دعا إلى هدى হাদীসটির ব্যাখ্যায় বলেছেন,

    ‘তুমি যদি প্রশ্ন কর, এ তো বাহ্যিকভাবে আল্লাহর ইরশাদ, وَ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ اُخْرٰی -এর সাথে সাংঘর্ষিক?

    আমি বলব, উভয়ের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কারণ গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী অনুসরণকারীদের গোনাহ বহন করেনি; বরং তারা যে তার কারণে পথভ্রষ্ট হয়েছে সেটার গোনাহ বহন করেছে।’ -বাযলুল মাজহুদ ১৩/৩৭

    এজন্য গোনাহের ধারা চলমান থাকে এমন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি।

    ভূমিকম্প সম্ভাবনা মানচিত্রে গোটা জাপানই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে

    দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে মধ্যে রয়েছে, এগুলো এতোটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যে বড় বড় ভবনও ধসে পড়তে পারে যদিও প্রায় গোটা জাপানই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

    ভূমিকম্প গবেষণা উন্নয়ন সদর দপ্তর এপ্রিলের ২৭ তারিখ ২০১৭ সালের জাতীয় ভূকম্পীয় বিপদ মানচিত্র প্রকাশ করে।

    কানতো, তোকাই, কিনকি এবং শিকোকু অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলীয় কোনো কোনো শহরে আগামী তিন দশকের মধ্যে ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি স্কেলে ৬ বা তারও বেশি মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।

    ভূমিকম্প গবেষণা কমিটির চেয়ারম্যান নাওশি হিরাতা বলেন, উচ্চ ঝুঁকি এলাকার বাইরেও যে সব মানুষ রয়েছেন তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে।

    “দয়া করে মনে করবেন না আপনার এলাকা নিরাপদ” বলেন হিরাতা, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিরাতা বলেন “বরং বিবেচনা করুন গোটা জাপানই ভূমিকম্পের ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে”।

    ঝুঁকি মানচিত্র সক্রিয় ফল্টের অবস্থান, ইতিপূর্বের ভূমিকম্পের সক্রিয়তা এবং পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে, এ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।

    প্রস্তুতি নিচ্ছে টোকিও

    উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে, সরকার অনলাইনে উত্তর কোরিয়া আক্রমন করলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে তথ্য প্রদান করছেন এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছেন।

    জনমনে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্ধিত পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে এবং সরকার ও ক্ষমতাসীন এলডিপি’র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার সম্ভাবনা রয়েছে।

    প্রধান মন্ত্রী পরিষদ সচিব ইয়োশিহিদে সুগা একটি উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন উত্তর কোরিয়া’র সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয়ের নাগরিক প্রতিরক্ষা পোর্টাল সাইট।

    “আমরা জনগনের জন্যে এক গুচ্ছ পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেছি যাতে করে নাগরিকরা সতর্কতার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন” তিনি বলেন।

    নতুন সংযুক্ত সুপারিশে যখন একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিকটবর্তী এলাকায় পতিত হবে, নাগরিকদেরকে শক্ত কোনো ভবনে বা শপিং কমপ্লেক্সের ভূগর্ভস্থ অঞ্চলে কীভাবে আশ্রয় নিতে হবে তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

    সুপ্রিমকোর্টে ভাস্কর্য স্থাপনে সরকারের মতামত নেয়া হয়নি: আইনমন্ত্রী

    আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য স্থাপনের পূর্বে আমাদের (সরকার) কোনো মতামত নেয়া হয়নি। যেহেতু সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গণ প্রধান বিচারপতির সেহেতু এই ভাস্কর্য উঠানোর ব্যাপারে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
    মঙ্গলবার বিচার, প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
    আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিমকোর্ট অত্যন্ত পবিত্রস্থান। এটা যেন কোনোভাবেই কলুষিত এবং অরাজকতা না হয় সেটা সকলের বিবেচনা করা উচিত।
    কিমের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক ট্রাম্প
    উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক বেশি বিপদজনক। এমনটা বলেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। এতে ইঙ্গিত মিলছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানদের প্রতি মস্কোর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তার পরিবর্তন ঘটেছে। ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে রাশিয়ার মিডিয়া ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দৃশ্যত বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিক হ্যারিয়েট অ্যাগারহোম লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তানে বোমা সবচেয়ে বড় বোমা ফেলার পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের অবস্থান থেকে সরে যেতে থাকে। অভিযোগ করা হয় জোর করে ক্রিমিয়া দখল করেছে মস্কো। রাশিয়া আরো অভিযোগ করে, তাদের মিত্র বাশার আল আসাদের সেনাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয়েছে।
    ক্রেমলিনপন্থি সংবাদ পাঠক দমিত্রি কিসলিয়ভ তার সাপ্তাহিক টিভি শো ‘ভেস্তি নেদেলি’তে বলেছেন, বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের উষ্ণ শ্বাস অনুভব করছে। দু’জন ব্যক্তির মধ্যকার বিরোধের ফলে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তারা হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন। তারা দু’জনেই ভয়ানক। কে বেশি বিপদজনক? এ প্রশ্ন করে তিনিই উত্তর দেন- সবচেয়ে বেশি বিপদজনক হলেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার নেতার চেয়ে ট্রাম্প অনেক বেশি আবেগী ও অনিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, এই দু’জনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আছে অনিশ্চয়তা। তবে তারা যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। দমিত্রি কিসলিয়ভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে কম ভীতি রয়েছে কিম জং উনের মধ্যে। কারণ, কিম আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তিনি অন্য কোনো দেশে হামলা চালাননি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উপক‚লে কোনো নৌ সমরাস্ত্র পাঠাননি। তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে ক্রেমলিন অর্থাৎ সরকারের বক্তব্যের মিল রয়েছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেছেন, কিসলিয়ভের অবস্থার কাঠাকাছি। তবে তা সব সময় নয়। দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

    টি-২০ অধিনায়ক সাকিব

    Posted by admin on April 23
    Posted in Uncategorized 

    টি-২০ অধিনায়ক সাকিব

    ৩ বছর আগে দুই অধিনায়ক ফর্মুলাকে বেছে নিয়ে তার সুফল পেয়ে এবার তিন অধিনায়ক ফর্মূলা প্রয়োগ করলো বিসিবি। ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিমের হাত থেকে ওয়ানডে এবং টি-২০ অধিনায়কত্ব নিয়ে এই দুই ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে দায়িত্বটা তুলে দিয়েছিল বিসিবি মাশরাফির উপর। তিন ফরমেটের ক্রিকেটে তিন অধিনায়ক চায় বিসিবি, সম্প্রতি শ্রীলংকা সফরের মাঝপথে মাশরাফিকে বিসিবি এবং টীম ম্যানেজমেন্ট তা তা জানিয়ে দিলে শুধু অধিনায়ক পদ থেকেই নয়, টি-২০ ক্রিকেটককেও আনুষ্ঠানিকভাবে গুডবাই জানিয়েছেন টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি (২৮ ম্যাচে ১০ জয়)। মাশরাফির পরিবর্তে এই ফরমেটের ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে বিসিবি’র প্রথম পছন্দ যে সাকিব আল হাসান, শ্রীলংকা বসেই মিডিয়াকে তা জানিয়ে দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। গতকাল বিসিবি’র পরিচালনা পরিষদের সভায় টি-২০’র নাম্বার ওয়ান অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতিÑ ‘সামনে পাকিস্তান আসতে পারে, এছাড়া খুব শিগগির টি-২০তে আমাদের তেমন কোনো খেলা নেই। তারপরও আজ (গতকাল) বোর্ড সভায় আমরা নতুন টি-২০ অধিনায়ক কে হবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সাকিব যেহেতু সহ-অধিনায়ক ছিল, এমনিতেই ওর নাম চলে এসেছে। তাছাড়া অন্য নামও ছিল। তবে সব দিক বিবেচনা করে সবার চেয়ে এগিয়ে গেছে। ওর পারফরম্যান্স এখন অসাধারণ। অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে সে।’
    দ্বিতীয় মেয়াদে পেলেন তিনি এই দায়িত্ব। মাশরাফির ইনজুরিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে এর আগেও করেছেন টি-২০তে সাকিব অধিনায়কত্ব। তবে টি-২০ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বের প্রথম মেয়াদে তার রেকর্ড মোটেও ভাল নয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে ৪ ম্যাচের ক্যাপ্টেনসিতে সব ক’টি ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরে গেছে।

    ‘হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন’

    বিশ্বে এখন আনুমানিক ৩২৫ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি অথবা সি রোগে ভুগছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আর হেপাটাইটিসে মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুক্রবার একথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিশ্বে হেপাটাইটিস পরিস্থিতিকে জনস্বাস্থ্যের প্রতি গুরুতর হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে ‘জরুরি’ ভিত্তিতে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
    বিশ্বে ২০১৫ সালে হেপাটাইটিসে ১০ লাখ ৩৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। এই সংখ্যা যক্ষ্মা (টিবি) ও এইচআইভি আক্রান্তদের মৃত্যুর চেয়ে কম নয়। বরং, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এইচআইভি ও টিবি’র তুলনায় হেপাটাইটিসে মৃত্যুর হার প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
    হেপাটইটিস রোগের ক্ষেত্রে প্রায়ই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় না। কিন্তু ‘বি’ ও ‘সি’ টাইপ হেপাটাইটিস থেকে যথাক্রমে লিভার সিরোসিস এবং ক্যান্সার হতে পারে।
    এছাড়াও ওইসব রোগে আক্রান্তদের সচেতনতার অভাবে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস ‘বি’- মূলত শারীরিক প্রক্রিয়ায় রক্ত ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়ায়। যদিও মাত্র ৯ শতাংশ ব্যক্তি তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস ‘সি’- প্রাথমিকভাবে রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এতে আক্রান্তদের ২০ শতাংশ তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ও চিকিৎসার সুবিধার অভাবের কারণে লাখ লাখ মানুষ ধীরে ধীরে যকৃতের বিভিন্ন রোগ ও ক্যান্সার এবং পরিশেষে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।হেপাটাইটিস ‘বি’ মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায়। চীন, মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এর অন্তর্ভুক্ত। অনুমান করা হয়, এ অঞ্চলের ১১৫ মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। এর পরেই আফ্রিকার অবস্থান। আফ্রিকার ৬০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে আশার কথা, বর্তমানে হেপাটাইটিস ‘বি’-এর কার্যকর ভ্যাকসিন রয়েছে।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস ‘সি’ সাধারণত অনিরাপদ ইনজেকশন ব্যবহারের জন্য হয়ে থাকে এবং মাদকসেবিদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোন ভ্যাকসিন নাই।
    ইউরোপ এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেই মূলত ‘হেপাটাইটিস সি’-এর প্রকোপ বেশি দেখা যায় এবং ওই দুইটি অঞ্চলের যথাক্রমে ১৪ মিলিয়ন এবং ১৫ মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ‘হেপাটাইটিস’ আক্রান্তদের ৮০ শতাংশকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

    আজান অসাধারণ এক অনুভূতি : পিয়াঙ্কা

    নিজের অজান্তেই আজান বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন ভারতের চিত্র নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বরং বলা যায়, তাকে এই বিতর্কে টেনে আনা হল। একটি পুরনো ভিডিওতে আজান দেওয়া নিয়ে প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই উস্কে উঠেছে আজান বিতর্কের নয়া পর্ব ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার। গত বছর ভোপালে প্রকাশ ঝা-র ‘জয় গঙ্গাজল’ ফিল্মের শুটিংয়ের সময় ভিডিওটি তোলা হয়েছিল। ফিল্মের শুটিং চলাকালীন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ভোপালে একটা সময় আমার সবচেয়ে ভাল লাগে। ওই সময়টার জন্য আমি রীতিমতো অপেক্ষা করে থাকি। সেটা সন্ধ্যেবেলায় আজানের সময়টা। প্যাকআপের পর টেরাসে গিয়ে বসি। আর সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে শুনতে পাই আশপাশের লাউডস্পিকার থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও অসাধারণ এক অনুভ‚তি হয়। পরিবেশটাও কেমন যেন অদ্ভুত শান্ত হয়ে যায়। সারা দিনে এটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের সময়। এক মিনিটের কম সময়ের এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘুরতে শুরু করেছে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রæপেও। আশ্চর্য হলেও সত্য, এতে সোনু নিগমের বক্তব্যের পুরোপুরি উল্টো সুর শোনা গিয়েছে। এবিপি।

    গ্রিক মূর্তি সরিয়ে নিন

    সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে গ্রিক মূর্তি সরিয়ে (স্থানান্তর) নিতে বা ঢেকে দিতে প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার  প্রধান বিচারপতিকে এ পরামর্শ দিয়েছেন বলে  গতকাল সোমবার  মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজেই জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
    সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারপতিদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, সুপ্রিমকোর্টের সামনে যে গ্রিক ভাস্কর্য জাস্টিশিয়া তৈরি করেছেন, এ জাস্টিশিয়া কোথায় পেয়েছেন? এ ভাস্কর্যে আবার শাড়ি পরিয়েছেন। যা পরা ছিল, তাই পরান। দেখতেও তো সুন্দর না, আবার পরানো হয়েছে শাড়ি- শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা একেকজন।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, কাছেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। সেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। ওখান থেকে এ ভাস্কর্য দেখা যায়। হয় ওই ভাস্কর্য ওখান থেকে সরিয়ে (স্থানান্তর) দেন, আর না হলে ওই ভাস্কর্যকে ওই দিক থেকে আড়াল করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন, যেন ঈদগাহ থেকে দেখা না যায়।
    সূত্র জানায়, বিচারপতিদের আবাসিক ভবনের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে যে বক্তব্য দেন, সে বক্তব্যের প্রশংসা হয় মন্ত্রিসভায়। এ সময় সুপ্রিমকোর্টের সামনের নবনির্মিত গ্রিক মূর্তি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তোলেন বলে জানা গেছে।
    বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে
    আগামী নভেম্বরে উৎক্ষেপণ হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম রেপ্লিকাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
    উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে এ স্যাটেলাইট নির্মাণের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
    ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) ‘রিকগনিশন অফ এঞ্জিলেন্স’ পুরস্কারও পেয়েছে।
    বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন চ‚ড়ান্ত অনুমোদন
    রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রেখে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
    বৈঠক শেষে  মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী টাউন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডন্যান্স-১৯৭৬ অনুযায়ী আরডিএ চলছিল। সামরিক শাসনামলে জারিকৃত আইন-অধ্যাদেশকে সুপ্রিমকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় নতুন করে এই আইন করা হচ্ছে।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইনে আরডিএ কর্তৃপক্ষকে ভূমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং শহরের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আগের মতোই আছে। মহাপরিকল্পনা পরিপন্থী ভূমি ব্যবহার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য এক বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
    তিনি আরো বলেন, জলাধার আইনের বিষয়টি ওই সময়ে ছিল না, এটা প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় এখানে (নতুন আইনে) আনা হয়েছে। জলাধার খনন বা ভরাট করলে এবং পাহাড় বা টিলা কাটলে মালিককে (এই কর্তৃপক্ষ) বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে জানিয়ে শফিউল বলেন, আদেশ অমান্য করলে এক বছরের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। নিচু জমি ভরাট করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করলেও একই সাজা হবে।
    কালারফুল ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের ভারত সফর অনেক ‘কালারফুল’ এবং অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ছিল বলে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ওপর উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করাটাও ছিল সম্মানের। সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাক্ষরিত হয় ৩৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থানের সুযোগ ও সম্মান পৃথিবীর খুবই কমসংখ্যক বিদেশি সরকারপ্রধান পেয়ে থাকেন।
    ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা বা গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, জনযোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক স¤প্রসারণ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
    ভুটান ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমোদন
    বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটান ও ওমানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একটি খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরে এই চুক্তি হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) ভুটান যাচ্ছেন।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি আদান-প্রদান অন্যান্য চুক্তির মতোই গতানুগতিক। পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি হবে। তবে দুই পক্ষ চাইলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এই চুক্তি নবায়ন করতে পারবে। সভায় বাংলাদেশ ও ওমানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই চুক্তি হলে উভয় দেশের মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের প্রভাব বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
    ‘আয় অধ্যাদেশ’ হবে আয়কর আইন
    ‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’-এর বিধানাবলী ‘আয়কর আইন, ২০১৭’ হিসেবে পাস করার প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
    অধ্যাদেশটি সামরিক শাসনামলে করা হয়েছে, এটা পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ১৯৮৪ থেকে অধ্যাদেশের যত সংশোধন হয়েছে সবগুলোকে একত্রিত করে একটা সমন্বিত আইন করা হয়েছে। সময় না থাকায় এটা আপাতত ইংরেজিতে করা হয়েছে, পরে বাংলায় নতুনভাবে করা হবে। নতুন আইনে কোনো পরিবর্তন আইন হয়নি।
    মুজিবনগর দিবসে জাতিকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন
    মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৭ এপ্রিল (মুজিবনগর দিবস) উপলক্ষে মন্ত্রিসভা জাতিকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। যেহেতু এটা একটি ঐতিহাসিক দিবস, আজকের এই দিনে প্রথম বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। সেজন্য মন্ত্রিসভা সবাইকে অভিনন্দন জানায় এবং ওই সময়ে যারা নেতৃস্থানীয় ছিলেন যেমন- মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ সবাইকে স্মরণ করা হয়।

    উ. কোরিয়ায় আকস্মিক হামলা করবেন ট্রাম্প!
    ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না :মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট *পানমুনজামে মাইক পেন্স *উস্কানিমূলক পদক্ষেপ না নিতে আহ্বান জাপান প্রধানমন্ত্রীর:
    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ায় আকস্মিক হামলা চালাতে পারেন। তিনি ইতোমধ্যে তার সামরিক উপদেষ্টাদের হামলার পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, হামলার জন্য সমন্বিত বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলার কাজ চলছে। প্রথমে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো হতে পারে। এদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্যের কিংবা আমাদের সামরিক বাহিনীর শক্তির পরীক্ষা করবেন না। অন্যদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীও আর কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ না নিতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়া চীনের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন উত্তর কোরিয়া সীমান্তে সেনাবাহিনী এবং চিকিত্সা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।

    আকস্মিক হামলার প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের

    প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা নস্যাত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় তার একটি পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের অন্যতম উপদেষ্টা লে: জেনারেল এইচ আর ম্যাকমাস্টার নিশ্চিত করেছেন, কমান্ডার ইন চীফ হিসেবে প্রেসিডেন্ট কোরিয় উপত্যকায় স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠানোর নির্দেশ দেন। কয়েকটি বিকল্পের মধ্যে একটি হতে পারে সমন্বিত বিশেষ বাহিনীর উত্তর কোরিয়ায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা। উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ার করতেই সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে হঠাত্ হামলার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আমেরিকার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে উত্তর কোরিয়ার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে টানেল তৈরি। ফলে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে কিভাবে উত্তর কোরিয় নেতা কিম জং উনকে মোকাবেলা করা যায় এবং কোথায় হামলা করা যায় তার একটি মানচিত্রও তৈরির কাজ চলছে। ম্যাকমাস্টার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলায় আমাদেরকে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রেসিডেন্ট। ম্যাকমাস্টার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রবিবার উত্তর কোরিয়া ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ার কয়েক ঘন্টা পরই ম্যাকমাস্টার কড়া বিবৃতি দেন। তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট আকস্মিক হামলা করতেই পছন্দ করেন। ফলে উত্তর কোরিয়ায় যে কোনো সময় সামরিক অভিযানে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গেও আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক, অথনৈতিক এবং অন্যান্য উপায়ে কিমকে পরমাণু অস্ত্রের প্রকল্প থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ম্যাকমাস্টার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার উস্কানি দেবেন না কিম। দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করেছে, উত্তর কোরিয়া ষষ্ঠবারের মতো পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। আর এই ধরনের পরীক্ষার পরই দেশটিতে সামরিক আঘাত আসতে পারে। তবে কিম মার্কিন হুঁশিয়ারি প্রত্যাখান করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বেশি উস্কানি দিলে পরমাণু হামলা চালানো হবে। শনিবার প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম সাং ইলের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে সামরিক সরঞ্জামের বড় ধরনের প্রদর্শনী চালিয়েছেন কিম। ওই প্রদর্শনীতে নতুন দুটি আন্ত:মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রও প্রদর্শন করেছেন।

    জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশি হিসেবে চীনকে দায়িত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করবে বলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন। তবে ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, চীন এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে সহযোগিতা করছে।

    দক্ষিণ কোরিয়ায় মাইক পেন্স

    মাইক পেন্স দক্ষিণ কোরিয়া সফরে আছেন। তিনি সিউলে উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য্যের কিংবা এর সামরিক বাহিনীর শক্তির পরীক্ষা নেবেন না। তাহলে ফল ভাল হবে না। সমপ্রতি সিরিয়া এবং আফগানিস্তানে কিন্তু এর কিছুটা পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো হামলা কিংবা পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত হুমকি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আর উত্তর কোরিয়া নিয়ে সব ধরনের বিকল্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কৌশলগত ধৈর্য্যের যুগ শেষ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র চীনের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করেন, চীন ইতিবাচক কিছু একটা করবে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চীনের বাণিজ্য নীতিরও সমালোচনা করেন। মাইক পেন্স দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী অসামরিকীকরণকৃত এলাকা পানমুনজাম পরিদর্শন করেছেন। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে তিনি ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। পেন্সের এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের পাশেই আছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

    চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব উ. কোরিয়ার

    চীনের এক শীর্ষ কূটনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেনি উত্তর কোরিয়া। চলতি মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ এক শীর্ষ কূটনীতিক উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলেও সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ইস্যু নিয়ে কাজ কূটনীতিক উ ডেউই উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলে তা নাকচ করা হয়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়াকে আর কোনো উস্কানিমূলক পদক্ষেপ না নিতে আহবান জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র : ডেইলি মিরর, সিএনএন ও রয়টার্সের।

    অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না -খালেদা জিয়া

    নতুন বাংলা বছরের দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ’ জনগণ মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

    আজ শুক্রবার বিকালে দলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন এই হুশিয়ারি দেন।

    তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা দেখে অনেকে এগিয়ে আসতে চায় অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের নামে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে দেশকে দুর্বল করার জন্য।

    বাংলাদেশে যখন ৮ কোটি লোক ছিলো নিজেরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। আজকে ১৬/১৭ কোটি লোক ঐক্যবদ্ধ, তাদের কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমরা সকলকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, কিন্তু কেউ যদি আমাদের বন্ধু হয়ে প্রভু হতে চায়, সেটা আমরা কখনো মেনে নেবো না, মানবো না। কারো প্রভুত্ব বাংলাদেশের মানুষ স্বীকার করবে না।

    নতুন বছর সকলের জন্য শুভ হবে কামনা করে দেশবাসীসহ নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া।

    তিনি বলেন, নববর্ষ যেন বাংলাদেশের মানুষের মনের সত্যিকারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। আমরা কী চাই? আমরা চাই গণতন্ত্র, আমরা চাই উন্নয়ন, আমরা চাই শান্তি, আমরা চাই জনগণের কল্যাণ, প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, শিক্ষা সুযোগ প্রদান ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা।

    তাই গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিএনপি সবসময়ে জনগণের কল্যাণ ও জাতীয় ঐক্যের বিশ্বাস করে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আমরা দেশ থেকে বিদায় করবো সন্ত্রাস, গুম-খুন-হত্যা ও জঙ্গি হামলা বিদায় করবো। বিদায় করবো নানারকম ষড়যন্ত্র। এসব বিদায় করে দেশে প্রতিষ্ঠা করবো শান্তি ও সুশাসন।

    নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস’ এর আয়োজনে বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

    দুপুর থেকে নয়া পল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান সমাবেশে রূপ নেয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় সুতির শাড়ি পরিহিতা খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।

    বর্ণাঢ্য আয়োজনে তবলা, হারমোনিয়াম, ডুগডুগি, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনায় শুরু হয় পহেলা বৈশাখের জাসাসের এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জাসাস শিল্পীরা ভাটিয়ালী, দেশাত্মবোধক, বাউল গান পরিবেশন করেন।

    বিএনপি চেয়ারপার্সন দলীয় নেতা-কর্মীদের আহবান জানিয়ে বলেন, আজকে প্রয়োজন ঐক্যের, প্রয়োজন শান্তির, প্রয়োজন কল্যাণের। আসুন বাংলা নতুন বছরে আমরা আজকে শপথ করি, দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করবো এবং জনগণের কল্যাণ করবো।

    দেশের মানুষ কষ্টে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগের যে বৃষ্টি ও বাইর থেকে পানি এসে আমাদের হাওড় অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেজন্য গরীব কৃষকদের পাশে গিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে।তাদের সাহায্য করতে হবে তারা যেন এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারে।

    খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের পানি সমস্যা একটা বড় সমস্যা। সামনে শুকনো মৌসুম আসছে, এই মৌসুমে আমাদের পানির প্রয়োজন। সেজন্য আমরা বলতে চাই, আমাদের যে পানির প্রাপ্য যে পানি আমরা চাই। আমরা কারো কাছে দয়া চাচ্ছি না, কিন্তু আমরা আমাদের যতটুকু অধিকার, সেই অধিকারটুক চাই।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু নিজের দেশের মানুষের স্বার্থের কথা, নিজের দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারেননি, কিছু করতে পারেননি। বরং আজকে তিনি নিজের দেশের মানুষের জন্য কিছু না করে দেশের মানুষের স্বার্থের কথা কিছু চিন্তা না করে নিজের দেশের সব কিছু অন্যের কাছে দিয়ে এসেছেন, তার বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।

    তিনি বলেন, আজকে এতোগুলো চুক্তি ও এমইউ হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যদি তিনি(শেখ হাসিনা) সাহস করে শুধু একটা কথা বলতেই পারতেন, যে বলতে পারতেন হ্যাঁ চুক্তি ও সমঝোতাগুলো আমার দেশের সাথে আলাপ করে আমরা করবো। কিন্তু আজকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দেন, তাহলে আমি সমঝোতা করবো, তা নাহলে করবো না। এটা বললে আমরা সবাই তার পাশে থেকে সাহস ও সমর্থন জানাতাম।

    বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম যদি করতে হয়, আমরা সেই সংগ্রাম করবো ইনশাল্লাহ এবং আমরা বিজয়ী হবো।

    অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন।

    জাসাস সভাপতি অধ্যাপক মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক চিত্র নায়ক হেলাল খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শাহজাহান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা, আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, নিপুণ রায় চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল, রাজীব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    জাসাসের চিত্র নায়ক আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, বাবুল আহমেদ, শায়রুল কবির খান, মনিরুজ্জামান মুনির, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, সানাউল হক, সিবা সানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    পরে খালেদা জিয়া বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

    খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন : ভারতের সহযোগিতায় আ.লীগ ক্ষমতায়

    ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি রিভিউ হবে : প্রতিরক্ষা সমঝোতায় দেশবাসী আতঙ্কিত : দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী তৃপ্ত হলেও জনগণ হতাশ
    স্টাফ রিপোর্টার : ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসে তাদের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করে। এখনও আওয়ামী বলয়ের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তারা সরাসরি সহায়তা করছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই এদেশের জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এ জন্যই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দিল্লীকে খুশি করতে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের প্রতিরক্ষা সমঝোতায় এ অঞ্চলে ভারতের সামরিক ও ভ‚-রাজনৈতিক আধিপত্য বাড়বে। আমরা ক্ষমতায় গেলে স্বার্থবিরোধী চুক্তি রিভিউ করা হবে। আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ব্যর্থ। নতজানু মানসিকতার কারণে ওই সফরে ওরা অনেক কিছু পেলেও বাংলাদেশের জনগণ কিছুই পায়নি। গতকাল এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
    প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বিভিন্ন চুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে দোষারোপের জবাব দিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পূর্ব নির্ধারিত বিকাল সাড়ে চারটার কয়েক মিনিট পরে লিখিত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট ছাড়া বিদেশী মদতে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উল্টো শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বিদেশীরা বিএনপিকে এদেশে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিলো বলে অসত্য অভিযোগ করেন। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। বিদেশী চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা স্বাধীন দেশের সরকার এতো নতজানু হয় কিভাবে? নতজানুর কারণেই দিল্লীর কাছ থেকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে পারেননি। আশ্বাস নিয়ে তাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। এতে জনগণের প্রতাশা পূরণ হয়নি। এই সফরকে দেশবাসী কেবলই দেওয়ার এবং কোনো কিছুই না পাওয়ার এক চরম ব্যর্থ সফর বলেই মনে করে। ভারতের সঙ্গে এতোগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ে প্রধানমন্ত্রী তৃপ্ত হলেও দেশের জনগণ আতঙ্কিত। প্র্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশে পরিণত করেছেন।
    ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশজাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কোনো বিষয়ে বিএনপি নীরব থাকতে পারে না। ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি ও সমঝোতার বিরুদ্ধে বিএনপি প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তা রিভিউ করার ঘোষণা দেন বেগম খালেদা জিয়া।
    তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ না করে কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলেছে। এতে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা। খর্ব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সফরের ফলাফলে তৃপ্ত তো নয়ই বরং আতঙ্কিত। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী একগাদা চুক্তি ও সমঝোতা চায়নি। হিসাবের পাওনা চেয়েছে। তিস্তার পানি আমাদের অধিকার, কারও দয়া বা দাক্ষিণ্য নয়। এটা আমাদের জীবন মরণ সমস্যা। কিন্তু সেই অধিকার আদায় বা সমস্যা সমাধানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করলে আরও ভাল হতো। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
    গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে ভারতের অনুমতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এখন এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি করলেই বিএনপির গায়ে লাগে-প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ভারত বিরোধী নই। ভারত কেন যেকোন রাষ্ট্রের সঙ্গে দেশ বিরোধী চুক্তি করলে বিএনপির তার প্রতিবাদ জানাবে। কওমী মাদরাসার প্রতিনিধি ও ইমামদের সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তিনি আবারও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রাখার যে আহŸান জানিয়েছেন সে প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) ওপর আস্থা রেখে বাংলাদেশ কোনো কিছু অর্জন করতে পারেনি, পারবেও না।
    বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ ছিল জানিয়ে খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন আগামী নির্বাচনে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
    লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বিগত সময়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ১০টি একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়ির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ।
    ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপ ভাসানীর এডভোকেট আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
    গত ৭ এপ্রিল থেকে চার দিনের সফর শেষ করে গত সোমবার দেশে ফিরে পরদিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সফরে তিনি নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক ৩টি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
    দীর্ঘ বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে জনসমর্থিত ও গণতান্ত্রিক কোনো সরকার না থাকলে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ আদায় করে আনা সম্ভব নয়। সে কারণেই বর্তমান প্রশ্নবিদ্ধ সরকার যতই বন্ধুত্বের বুলি আওড়াক না কেন, প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকেও সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে তারা পারেনি, পারবেও না।
    ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীকে আপ্যায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আপ্যায়নের চাইতে তাদের ন্যায্য পাওনা কী এসেছে সেটা জানতে চায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় জমকালো আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে বাংলাদেশ যে বঞ্চিত ছিলো সেই বঞ্চিতই থেকে গেলো। বাংলাদেশ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখন সেই গণতন্ত্র নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
    ভারত সফর শেষে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশবাসী বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি দিল্লিতে কিছু চাইতে যাননি। কেবল বন্ধুত্বের জন্য গিয়েছিলেন এবং সেটা তিনি পেয়েছেন। কিসের এই বায়বীয় বন্ধুত্ব তা দেশবাসীই বিচার করে দেখবেন। তবে এই কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন যে, ভারত থেকে তিনি দেশের জন্য কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। বরং ভারতের চাহিদা মোতাবেক সবকিছুই দিয়ে এসেছেন।
    সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তি ও সমঝোতাগুলো প্রকাশ করার বদলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তার নিজের উপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার উপর আস্থা রেখে দেশবাসী আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং ভোট দেয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন অধিকার হারিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে অতীতে জনগণ দেখেছে তিনি একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসংখ্য চুক্তি করেছেন। ভারতকে একতরফাভাবে কেবল দিয়েই এসেছেন। বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।
    ভারতের সঙ্গে করা সমঝোতা ও চুক্তির বিষয় উলেখ করে তিনি বলেন, এসবের ফলে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক, রাজনৈতিক ও ভ‚-রাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
    তিস্তা চুক্তি খালেদা জিয়া বলেন, ভাটির দেশ হিসাবে সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারো কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এ জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। তৃৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারের আন্তর্জাতিক ফোরামে যাওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি। যারা সরকারে আছেন তাদেরই যাওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
    প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবার মতামতকে উপেক্ষা করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমরাও শংকিত। তিনি বলেন, নানা বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ও দ্ব›দ্ব রয়েছে। তা সত্তে¡ও জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার বিষয়ে আমরা সকলে মিলে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা এসব বিষয় সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভ‚মিকা পালন করলে আমরা অকুণ্ঠ চিত্তে তার সেই ভ‚মিকার প্রতি সমর্থন জানাতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বরং তিনি বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন।
    প্রতিরক্ষায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রসঙ্গে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা যাই বলুন না কেন একমাত্র ভারতই হবে ওই ঋণের আওতায় একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী। এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে ভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
    সশস্ত্রবাহিনী এখন বিভিন্ন দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক উচ্চমান অর্জন করেছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোনো অস্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে এই বাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে সেই মানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
    চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চীনের অস্ত্র ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত। আমরা যখন অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি বা সমঝোতা করেছি তখন সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চুক্তি ও সমঝোতা করেছি। আমরা পুরাতন জিনিস ক্রয় করিনি। চীন কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অনেক দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
    তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ফলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত মান ও স্বাতন্ত্র্য সমঝোতার নামে ব্যাহত হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
    বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, কারও সঙ্গে পরামর্শ বা জনগণকে অন্ধকারে রেখে গোপনীয়ভাবে চুক্তি করায় সবার মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিলো সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশী রফতানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে এই সফরে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। জনগণের দাবি সত্বেও আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের সুন্দরবন-বিনাশী এবং পরিবেশ বিধ্বংসী রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের জন্য তিনি একটি কথাও বলেননি। বরং প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে আরো লক্ষ্য করেছি যে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।
    ভারতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বৈরিতা নেই বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলীর নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। ভারতের জনগণের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার আবহে আমরা পাশাপাশি বাস করতে চাই। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্তে¡ও প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভ‚মিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করি ভারতের বর্তমান সরকার অতীতের সেই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন।
    প্রধানমন্ত্রী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন এমন মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভ‚তিকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমী মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অতীতেও তাই করেছেন।
    বিদেশীরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিল প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য দাবি করে তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু কোনো প্রভু নেই। বিদেশী চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। বরং আওয়ামী লীগই ভোট ছাড়া বিদেশী মদদ নিয়ে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
    এক প্রশ্নের পাল্টা সাংবাদিকদের কাছে তিনি জানতে চান, দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তিসহ কিভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে তা তো আপনারা ভাল জানেন।
    বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস উলেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে একসঙ্গে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি।
    সংবাদ সম্মেলনের শেষে সবায় উঠে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রী তো আপনাদের দিলিকা লাড্ডু খাওয়াচ্ছেন আজ আমি আপনাদের বাংলাদেশের লাড্ডু খাওয়াচ্ছি। খেয়ে যাবেন সবাই। তার এমন মন্তব্যে সবাই হেসে দেন।
    ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরে সম্পাদিত প্রতিরক্ষা সমঝোতাসহ নানা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া। গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে রাত ৭টায় এই বৈঠক বসে। বিকালে সংবাদ সম্মেলনের এক ঘন্টা পরে জোট নেতাদের নিয়ে বসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
    বৈঠকের জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতে ইসলামীর আব্দুুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, জাগপা‘র শফিউল আলম প্রধান, এলডিপির আব্দুুল করীম আব্বাসী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গনি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহেমেদ, জমিয়তের উলামে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শফিকউদ্দিন, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মনি। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন।
    খালেদা জিয়ার বক্তব্য সম্প্রচারে সরকারি হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা
    গতরাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল ( বুধবার) বিকাল সাড়ে চারটায় বিএনপিসহ ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু হলে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের শুরু করলেও সাথে সাথে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে গুরুত্বহীনভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে বা কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেলে তা সম্পূর্ণ বøাকআউট করা হয়েছে।
    বিএনপির অভিযোগ, সরকারের সরাসরি নির্দেশেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের বক্তব্য প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের উপর সরকারের এই আচরণ স্বেচ্ছাচারি, অগণতান্ত্রিক ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। এই ঘটনায় ভোটারবিহীন সরকারের গণবিরোধী কুৎসিত রূপটি আরো প্রকটভাবে ফুটে উঠলো। এটি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতি সরকারের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। এরা বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী একটি রাজনীতিক দল, যারা দুঃশাসন চালিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করেছে। একদলীয় অপশাসন প্রলম্বিত করার জন্যই বিরোধী মত দমনে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার নিরন্তরভাবে সদা তৎপর। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বর্তমান সরকার গণমাধ্যমকে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করতে যাবতীয় কর্মকাÐ চালিয়ে এসেছে। সুতরাং সত্য প্রকাশিত হওয়ার ভয়েই সরকার বিএনপি’র সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারপার্সনের বক্তব্য ইলেক্টনিক্স গণমাধ্যমে প্রচারে বিঘœ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, চেয়ারপার্সনের বক্তব্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারে বাধা সৃষ্টি করতে সরকারের ন্যক্কারজনক স্বৈরাচারী হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

    হাডসন নদী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম নারী বিচারকের মৃতদেহ উদ্ধার

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী মুসলিম বিচারকের লাশ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে সে দেশের পুলিশ। ৬৫ বছর বয়সী ওই বিচারকের নাম শেইলা আব্দুস সালাম। তিনি নিউইয়র্কের সহযোগী বিচারক ছিলেন। তিনি আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যেও প্রথম মহিলা যিনি বিচারক হয়েছিলেন।
    এরআগে বুধবার সকালে তিনি তাঁর হার্লিনের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তার স্বামী পুলিশকে স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন।
    জানাযায়, ম্যানহাটনের হাডসন নদীতে স্থানীয় সময় পৌনে দুইটার দিকে এক নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী। পরে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধারের পর জানা যায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা মুসলিম বিচারকের মৃতদেহ।
    বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিউইয়ক পোস্টকে উদ্ধৃত করে জানায়, বুধবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন শেইলা। এরপর অনেক খুঁজলেও তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর কারণ কি তা জানা যায়নি।
    পুলিশ বলছে, উদ্ধারের সময় তার শরীর পুরোটাই কাপড়ে আবৃত ছিল। কোন ধরনের ট্রমা কিংবা শারীরিক আঘাতের নিশ্চিত চিহ্নও ছিলনা। আসলে ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
    বার্নার্ড কলেজ ও কলাম্বিয়া ল স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ইস্ট ব্রুকলিন লিগ্যাল সার্ভিসে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। নিউইয়ক স্টেট অ্যাসিসটেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিউইয়র্ক সিটির বিচারক হওয়ার পর তিনি বিচারবিভাগীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দ্যা গার্ডিয়ান।

    অমঙ্গলের পথে শোভা-যাত্রা?

    হামদ ও ছানার পর :

    وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ اَرَادَ اَنْ یَّذَّكَّرَ اَوْ اَرَادَ شُكُوْرًا .

    وقال عليه الصلاة والسلام : كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا.

    [তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী বানিয়েছেন; তার জন্য, যে চিন্তা-ভাবনা করতে চায় বা শোকর করতে চায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬২

    নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রতিটি মানুষ প্রত্যুষে উপনীত হয়ে নিজেকে বিক্রয় করে। এরপর সে হয়ত নিজেকে মুক্ত করে অথবা ধ্বংস করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৩]

    হিজরী নববর্ষ শুরু হয়েছে এক দু’মাস আগে। তখন কিন্তু পয়লা মুহাররমের  কোনো অনুষ্ঠান করেননি। আসলে ইসলামে থার্টি ফার্স্ট নাইট, পয়লা বৈশাখ বা নববর্ষ নামে কিছু নেই। কারণ এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতায় যদি ভালো কিছু থাকে, তা বছরে একবার করার বিষয় নয়; তা হওয়া দরকার প্রতিদিন। ইসলাম শুধু নববর্ষের কদর করতে বলে না; বরং নব দিন, নব রাত,নব সকাল, নব দুপুর- সকল সময়েরই কদর করতে বলে; এ সবই তো নতুন। সবগুলোই তো আমার ইবাদতের অংশ। এ সবকিছুরই আমার কদর করতে হবে। এ সব কিছুর জন্য আমাকে মুহাসাবা করে ভালোর জন্যে শোকর আদায় করতে হবে,মন্দের জন্যে ইস্তিগফার করতে হবে।

    সূরা ফুরকানের উক্ত আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

    وَ هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ خِلْفَةً لِّمَنْ اَرَادَ اَنْ یَّذَّكَّرَ اَوْ اَرَادَ شُكُوْرًا.

    তিনিই সেই সত্তা যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী বানিয়েছেন তার জন্যে যে চিন্তা-ভাবনা করতে চায় বা শোকর করতে চায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬২

    তো এই যিক্র ও ফিক্র এবং হামদ ও শোকর সময়ের প্রতিটি পরিবর্তনের সময় কাম্য। এই যে দিন রাত আরবীতে কিন্তু এ দুটিকে একসঙ্গে ‘আলজাদীদান’ (দুই নতুন) বলা হয়। কারণ প্রতিটি দিনই নতুন, প্রতিটি রাতই নতুন। পেছনের কোনো দিন আবার কিন্তু ঘুরে আসছে না। তো যদি আমরা নতুন-এর জন্য কিছু করতে চাই- প্রতিটি দিনই নতুন, প্রতিটি রাতই নতুন; প্রতিটি সকাল নতুন, প্রতিটি সন্ধ্যা নতুন। শরীয়তে ইবাদতের বিধান, যিকির  ও দুআর অযীফা সেভাবেই দেওয়া হয়েছে। হাদীস শরীফে মুহাসাবার যে তাকীদ করা হয়েছে, তা বছরে একবার নয় সে মুহাসাবা হতে হবে প্রতি সকালে, প্রতি সন্ধ্যায়; ২৪ ঘণ্টায় একবার তো বটেই। শোয়ার সময় তুমি হিসাব লাগাও তোমার দিন কেমন কেটেছে। আজকে কার উপর যুলুম করেছ, কার হক নষ্ট করেছ। তোমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছ কি না। আল্লাহর হকগুলো পালন করেছ কি না। বান্দার হকগুলো আদায় করেছ কি না। দৈনিক কমছেকম একবার তোমার হিসাব মিলাও। শুধু দোকানের খাতার হিসাব নয়, এটাও মিলাও। তোমার নিজের আমলের,নিজের আখলাকের, নিজের চরিত্রের, দিনরাত কার সাথে কী আচরণ করেছ- এরও হিসাব লাগাও। কোন্ আচরণে আল্লাহ খুশি হয়েছেন, কোন্ আচরণে আল্লাহ নারায হয়েছেন। এ হালখাতা বছরে একবার হয় না! এ হালখাতা দৈনিকের!

    আলী রা.-এর ঘটনা কতবার শুনিয়েছি- আলী রা. কী বলেছিলেন? আমাদের মাযহাবের ইমামের কী নাম? হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমাম আবু হানীফা রাহ.। ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর আব্বার নাম ছাবিত। দাদার নাম যূতাহ। প্রথমে তিনি (দাদা) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা পারস্যের ছিলেন। অগ্নি পূজক ছিলেন।  তাঁর সন্তান হলেন ছাবিত, ছাবিতের সন্তান হলেন ইমাম আবু হানীফা রাহ.। ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর পিতা ছাবিতকে তার আব্বা নিয়ে গিয়েছিলেন আলী রা.-এর কাছে। কুফাতে থাকতেন তাঁরা। আলী রা.ও তাঁর খেলাফতের সময় কুফায় ছিলেন। তিনি ছাবিতকে আলী রা.-এর কাছে নিয়ে বললেন- এ আমার ছেলে। ছাবিত রাহ.-এর জন্য দুআ করে দিয়েছেন আলী রা.। দুআর সময় শুধু ছাবিতের জন্য দুআ করেন নি; ছাবিত এবং তার বংশধরের জন্য করেছেন। ওই দুআর সবচেয়ে বেশি ভাগ পেয়েছেন ইমাম আবু হানীফা রাহ.। যেহেতু আলী রা.-এর সাথে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর দাদার সম্পর্ক ছিল, তাই বিভিন্ন উপলক্ষে যাতায়াত ছিল। তাঁরা যেহেতু পারস্য থেকে এসেছেন,নতুন নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এখনও ইসলামের সব বিধিবিধান আয়ত্তে আসেনি। তাই আগের তালে তালে মনে হল যে,আজকে তো আমাদের নওরোয, এটা একটা সুযোগ, তিনি আলী রা.-এর জন্য কিছু হাদিয়া নিলেন। হাদিয়া নিলেন নববর্ষ উপলক্ষে। আলী রা. জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আজকে তো আমাদের ওখানো (পারস্যে) নওরোয, সে হিসেবে কিছু হাদিয়া আনলাম। এ কথা শুনে আলী রা. বললেন, ‘নওরোযুনা কুল্লা ইয়াওম’ (প্রতিটি দিনই আমাদের নববর্ষ)। তুমি তো মুসলিম, ইসলাম গ্রহণ করেছ; জান মুসলিমের নওরোয কী? প্রতিটি দিনই মুসলিমের নওরোয। এটা বছরে একবার আসে না,প্রতিদিন আসে।

    এখন আমরা সেই ইসলামী শিক্ষা ভুলে গিয়েছি। যখন আমার প্রধান পরিচয় বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘বাঙালী’, তো বাঙালী নববর্ষ আমি পালন করব। এখন প্রশ্ন হল, বাঙালী নববর্ষ কোন্টা? ২০ বছর আগে আমরা যেটা দেখিছি ওটা? ৫০ বছর আগে যেটা দেখেছি ওটা, নাকি বছর বছর এর সাথে যুক্ত হওয়া সবকিছু? কোন্টার নাম বাঙালী নববর্ষ?  আপনারা মুরব্বিরা বলেন আমাদেরকে,কোনটার নাম? আমরা তো ছোট, কালো দাড়িওয়ালা, আপনারা যারা মুরুব্বী আপনারা বলেন, আপনারা কী নববর্ষ দেখেছেন?মুরুব্বীদের দায়িত্বে পড়ে নতুন প্রজন্মকে জানানো, বুঝানো- এটা কি আসলে নববর্ষ পালন, না ঈমান ও আখলাক নষ্ট করা। পশ্চিম বঙ্গে যারা আসা যাওয়া করেন, অনেকের তো বাড়িও আছে পশ্চিম বঙ্গে। এখানে থাকেন, জন্ম হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে। কিছু দিন পশ্চিম বঙ্গে কাটিয়েছেন। পশ্চিম বঙ্গে নববর্ষের কথা বলুন। যে ভয়াবহ অবস্থা হয় এখানে, ওখানেও কি ঠিক এরকম?

    শুভ নববর্ষ। মঙ্গল শোভাযাত্রা। আমার বছর শুভ হবে কীভাবে? মঙ্গল-কল্যাণ দান করবেন কে? আল্লাহ। আল্লাহ তাআলার বিধান কি আপনি শোনেন? মূর্তি-ভাস্কর্যের সাথে কি রহমত আছে, কল্যাণ-মঙ্গল আছে? এর সাথে কোনো রহমত নেই, কল্যাণ নেই। আমার নববর্ষ যদি মূর্তি-ভাস্কর্যের সাথে যুক্ত হয়, রহমত আসবে কোত্থেকে? মঙ্গল হবে কীভাবে? আমার বছর শুভ হবে কীভাবে?

    যত অশ্লীলতা আছে, আল্লাহ তা অপছন্দ করেন। আল্লাহ কোনো ধরনের অশ্লীলতা পছন্দ করেন না। إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفُحْشَ، وَلَا التَّفَحُّشَ। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও পছন্দ করেন না। অশ্লীলতার প্রতি আল্লাহ তাআলার ক্রোধ অনেক বেশি। পৌত্তলিকতার সাথে, অশ্লীলতার সাথে, পর্দাহীনতার সাথে যে যাত্রা হবে সেই যাত্রায় মঙ্গল হবে কীভাবে? এর মাধ্যমে আমার বছর শুভ হবে কীভাবে? আর যদি আমাদের আকিদা হয় -নাউযুবিল্লাহ- হিন্দুদের মতো! এক একটা দেব-দেবী এক একটার মালিক। ওরা যেভাবে মঙ্গল কামনা করে আমরাও…। তাহলে তো আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ’ থাকল না। শুভ-অশুভর মালিক যদি আল্লাহ হন, লাভ-ক্ষতির মালিক যদি আল্লাহ হন, কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক যদি আল্লাহ হন, আমার বছর শুভ হবে কীভাবে তা আল্লাহর কাছ থেকে জানতে হবে। আল্লাহর দ্বীন থেকে আল্লাহর শরীয়ত থেকে জানতে হবে।

    আমি  মুরুব্বীদের কাছে অনুরোধ করব, সামনের প্রজন্মকে আমরা জানাই-  এটা আসলে নববর্ষ নয়, এটা আমাদের ঈমান ও আখলাককে নষ্ট করা। একেকবার একেক ধরনের অশ্লীলতা যোগ হচ্ছে, একেক ধরনের পৌত্তলিকতা যোগ হচ্ছে, আর সব নববর্ষের নাম দিয়ে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। কেউ কিছু বলতে পারবে না; কারণ, বললেই তো শেষ। কিছু বললেই রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে যাবে। যে বলল, সে দেশের সভ্যতার বিরুদ্ধে বলল নববর্ষের বিরুদ্ধে বলল। আমরা তো ভয় পাই না। আমরা একমাত্র আল্লাহকে ভয় পাই। একমাত্র আল্লাহকে ভয় করি। আমরা এসব ফাঁক-ফোঁকর আল্লাহর রহমতে বুঝি। কোন্টা বাঙালী সংস্কৃতি  আর কোন্টা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিকে বাংলাদেশী সংস্কৃতি, বাংলার সভ্যতা বলে আমাদেরকে খাইয়ে দিবেন, খেয়ে খেয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম নষ্ট হবে, আমরা কিছু বলতেও পারব না, এই কি তাহলে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ? এটা কী স্বাধীনতা যে, হক কথা বলতে পারব না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের সুন্নত মোতাবেক চলার তাওফিক দান করুন। মুমিনের সভ্যতা হল রাসূলের সুন্নাহ। বাংলার মুমিন  হোক, হিন্দুস্তানের মুমিন হোক, পাকিস্তানের মুমিন হোক, আমেরিকার-লন্ডনের মুমিন হোক, যেই জায়গার মুমিন হোক, মুসলিম হোক; মুসলিম আর মুমিনের সভ্যতা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।

    لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

    রাসূলুল্লাহ্র কালচার যা, আমাদের কালচারও তা।

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সহীহ সমঝ নসীব করুন। আল্লাহ বলেছেন- إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ

    তোমরা যদি উপযুক্ত হয়ে যাও, ভালো হয়ে যাও। ভালো মানে? এমনি বলে দিলাম, সে ভালো মানুষ। এটাকে ভালো বলে না। ভালো মানে, সব দিক থেকে আল্লাহ্র বিচারে, আল্লাহ্র আদালতে আমি  উপযুক্ত হই তাহলেই আমি ছালেহ-ভালো। ভালো হলে কী পাওয়া যাবে? আল্লাহ বলেন, তোমরা ছালেহ হও, আমি চাই তোমরা ছালেহ হয়ে যাও। ছালেহ হলে তোমাদের দোষত্রুটি যা হয়েছে তওবা করে ফেল, ক্ষমা করে  দিব। কিন্তু হতে তো হবে! নিয়ত তো করতে হবে ছালেহ হওয়ার, উপযুক্ত হওয়ার, আমরা তো নিয়তই করছি না। হিম্মত করতে হবে, নিয়ত করতে হবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক নসীব করুন। আমীন!

    وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

    পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাবেন না : দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রী

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়া পরিহার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
    মঙ্গলবার ভারত সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা উপলক্ষে গণভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। সাংবাদিক সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণার পর সাংবাদিকরা যখন আসন ছেড়ে উঠতে শুরু করেন, তখন প্রধানমন্ত্রী অকস্মাত্ বলেন, কথা আছে, কথা আছে। এ সময় তিনি দাঁড়িয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা ইলিশ খাবেন না, ইলিশ ধরবেন না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখের একটি খাদ্য তালিকাও দিয়ে দেন। এই তালিকায় রয়েছে, খিঁচুড়ি, সবজি, মরিচ ভাজা, ডিম ভাজা ও বেগুন ভাজা।