গ্রিক মূর্তি সরিয়ে নিন

সুপ্রিমকোর্টের সামনে থেকে গ্রিক মূর্তি সরিয়ে (স্থানান্তর) নিতে বা ঢেকে দিতে প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার  প্রধান বিচারপতিকে এ পরামর্শ দিয়েছেন বলে  গতকাল সোমবার  মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজেই জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারপতিদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তার কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অনুষ্ঠানে আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, সুপ্রিমকোর্টের সামনে যে গ্রিক ভাস্কর্য জাস্টিশিয়া তৈরি করেছেন, এ জাস্টিশিয়া কোথায় পেয়েছেন? এ ভাস্কর্যে আবার শাড়ি পরিয়েছেন। যা পরা ছিল, তাই পরান। দেখতেও তো সুন্দর না, আবার পরানো হয়েছে শাড়ি- শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা একেকজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, কাছেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। সেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। ওখান থেকে এ ভাস্কর্য দেখা যায়। হয় ওই ভাস্কর্য ওখান থেকে সরিয়ে (স্থানান্তর) দেন, আর না হলে ওই ভাস্কর্যকে ওই দিক থেকে আড়াল করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন, যেন ঈদগাহ থেকে দেখা না যায়।
সূত্র জানায়, বিচারপতিদের আবাসিক ভবনের উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে যে বক্তব্য দেন, সে বক্তব্যের প্রশংসা হয় মন্ত্রিসভায়। এ সময় সুপ্রিমকোর্টের সামনের নবনির্মিত গ্রিক মূর্তি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তোলেন বলে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে
আগামী নভেম্বরে উৎক্ষেপণ হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম রেপ্লিকাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উৎক্ষেপণের পর ২০১৮ সালের এপ্রিল নাগাদ এ স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সরকার। ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে এ স্যাটেলাইট নির্মাণের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে সরকার আশা করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) ‘রিকগনিশন অফ এঞ্জিলেন্স’ পুরস্কারও পেয়েছে।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন চ‚ড়ান্ত অনুমোদন
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রেখে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
বৈঠক শেষে  মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী টাউন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডন্যান্স-১৯৭৬ অনুযায়ী আরডিএ চলছিল। সামরিক শাসনামলে জারিকৃত আইন-অধ্যাদেশকে সুপ্রিমকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় নতুন করে এই আইন করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন আইনে আরডিএ কর্তৃপক্ষকে ভূমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং শহরের জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আগের মতোই আছে। মহাপরিকল্পনা পরিপন্থী ভূমি ব্যবহার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য এক বছরের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন।
তিনি আরো বলেন, জলাধার আইনের বিষয়টি ওই সময়ে ছিল না, এটা প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় এখানে (নতুন আইনে) আনা হয়েছে। জলাধার খনন বা ভরাট করলে এবং পাহাড় বা টিলা কাটলে মালিককে (এই কর্তৃপক্ষ) বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিতে পারবে জানিয়ে শফিউল বলেন, আদেশ অমান্য করলে এক বছরের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। নিচু জমি ভরাট করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করলেও একই সাজা হবে।
কালারফুল ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের ভারত সফর অনেক ‘কালারফুল’ এবং অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ছিল বলে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়েছে। মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ওপর উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করাটাও ছিল সম্মানের। সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাক্ষরিত হয় ৩৫টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থানের সুযোগ ও সম্মান পৃথিবীর খুবই কমসংখ্যক বিদেশি সরকারপ্রধান পেয়ে থাকেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও দেশ পরিচালনায় ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পদ্মা বা গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, জনযোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক স¤প্রসারণ, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
ভুটান ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের অনুমোদন
বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটান ও ওমানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একটি খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরে এই চুক্তি হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) ভুটান যাচ্ছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি আদান-প্রদান অন্যান্য চুক্তির মতোই গতানুগতিক। পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি হবে। তবে দুই পক্ষ চাইলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এই চুক্তি নবায়ন করতে পারবে। সভায় বাংলাদেশ ও ওমানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই চুক্তি হলে উভয় দেশের মধ্যে শিল্প উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগের প্রভাব বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
‘আয় অধ্যাদেশ’ হবে আয়কর আইন
‘আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪’-এর বিধানাবলী ‘আয়কর আইন, ২০১৭’ হিসেবে পাস করার প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
অধ্যাদেশটি সামরিক শাসনামলে করা হয়েছে, এটা পরিবর্তন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ১৯৮৪ থেকে অধ্যাদেশের যত সংশোধন হয়েছে সবগুলোকে একত্রিত করে একটা সমন্বিত আইন করা হয়েছে। সময় না থাকায় এটা আপাতত ইংরেজিতে করা হয়েছে, পরে বাংলায় নতুনভাবে করা হবে। নতুন আইনে কোনো পরিবর্তন আইন হয়নি।
মুজিবনগর দিবসে জাতিকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৭ এপ্রিল (মুজিবনগর দিবস) উপলক্ষে মন্ত্রিসভা জাতিকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। যেহেতু এটা একটি ঐতিহাসিক দিবস, আজকের এই দিনে প্রথম বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। সেজন্য মন্ত্রিসভা সবাইকে অভিনন্দন জানায় এবং ওই সময়ে যারা নেতৃস্থানীয় ছিলেন যেমন- মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ সবাইকে স্মরণ করা হয়।