চ্যাম্পিয়নদের দলে বাংলাদেশও
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি মূলত চ্যাম্পিয়নদেরই খেলা। আসরে অংশ নেয়া আট দলের পিছনের রেকর্ডের দিকে তাকালেই তা স্পষ্ট হয়। এই আট দলের মধ্যে কেবল পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডেরই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের কোন রেকর্ড নেই। তবে তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন করার কোন সুযোগ নেই। তাহলে তাদের ভীড়ে কেন বাংলাদেশ? বাংলাদেশ তো আর চ্যাম্পিয়ন কোন দল নয়!
সামর্থের প্রশ্ন করলে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বাংলাদেশকে নিয়ে এমন প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল দুবছর আগেও, এখন তা অতীত। বিশেষ করে একদিনের ক্রিকেটে তো বটেই। ধারাবাহীক পারফরম্যান্সের প্রমাণ দিয়ে সকল ক্রিকেট পরাশক্তির কাছ থেকেই সমীহ আদায় করে নিয়েছে টাইগাররা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও তাই এবারের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে রাখছেন আলাদা কাতারে। সফলতার ব্যাপারে খেলোয়াড়দেরও আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই একটুও। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পেছনে ফেলে ওয়ানডেতে ছয় নম্বরে উঠে আসার খবরেও সাকিব-মাশরাফিদের বিষ্মিত না হওয়া তো তারই প্রমাণ।
ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে না মাখলেও এর আগে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত দুই আসরেই ফাইনালে খেলেছে তারা।  এবারো তাদের ফেভারিট তকমাকে অস্বীকার করবেন না কেউই। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই এই ইংল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বিচারে ওয়ানডের দুই সেরা দলই মুখোমুখি হচ্ছে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে। তবু কোন প্রশ্ন ছাড়াই ওভালের আজকের ম্যাচে ফেবারিট ইংলিশরাই।
তবে প্রেরণার জায়গা আছে সাকিব-মাশরাফিদেরও। শুনতে অদ্ভত লাগলেও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে এদিয়ে বাংলাদেশই! দু’দলের শেষ ৭ ওয়ানডেতে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ইংলিশদের শেষ আট থেকে বিদায় নেয়ার স্মৃতি হয়তো এখনো অনেকের কাছেই টাটকা। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে তিন ম্যাচের সিরিজ ইংল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জিতলেও সিরিজটা হতে পারত বাংলাদেশেরও। মিরপুরের প্রথম ওয়ানডেতে নিশ্চিত জয়টা হাতছাড়া না হলে ইতিহাসটা তো লেখা হতো অন্যভাবেই।
তবে সাকুল্য বিচারে অনেক এগিয়ে ক্রিকেটর প্রাচীনতম দল ইংল্যান্ড। মোট ১৯ ম্যাচে ৪ জয় বাংলাদেশের, হার বাকি ১৫ ম্যাচেই। কিন্তু অতীত আর বর্তমানের বাংলাদেশে যে ঢের পার্থক্য। এটাই মাশরাফি বাহিনীর প্রধাণ শক্তি। এখন আর টাইগাররা ‘সান্তনা মূলক হার’এর লক্ষ্যে মাঠে নামে না, নামে জয়ের দৃড় মানসিকতা নিয়েই। আজও নিশ্চয় এর বত্যয় হবে না।
বিশেষ করে তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহরা যদি নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, ইংলিশ পেসিং কন্ডিশনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মাশরাফি যদি মুস্তাফিজ-রুবেল-তাসকিনদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনতে পারেন, সাব্বির-সৌম্য-মোসাদ্দেকরা যদি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পতাকাটা দৃড়হস্তে ধরতে পারেন তাহলে ভালো কিছুর আশা করতেই পারে চাতকের দৃষ্টিতে সুদর বিদেশভুমে চেয়ে থাকা দেশের ষোল দু গুনে বত্রিশ কোটি চোখ।
২০০০ সালে প্রথম বাংলাদেশ অংশ নেই এই আসরে। তখন অবশ্য এর নাম ছিল আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট। এরপর ২০০২ ও ২০০৪ সালে আসলে ছিল বাংলাদেশের নাম। ২০০৯ সাল থেকে ওয়নডে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ আট দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দর্শকের সারিতে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এমন বিশ্বমঞ্চে তখন অবশ্য বাংলাদেশের অংশগ্রহণই দেখা হত অর্জনের দৃষ্টিতে। সময়ের পরিক্রমায় এখন সেই আসরই যেমন নাম নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, তেমনি বদলেছে বাংলাদেশের অবস্থান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত সাবেক বিশ্ব ও ২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দলকে পেছনে ফেলে তাই আসরে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মাঝের আট বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে পরির্তন এসেছে সেটাই এবার প্রামাণের পালা মাশরাফিদের।