পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন: ফাইনালে লজ্জাজনক পরাজয় ভারতের

জয়ের মঞ্চটা সাজানোই ছিল। অপেক্ষা ছিল কেবল উদযাপনের। শেষ ব্যাটসম্যান ফিরতেই শুরু হল উদযাপন। কিন্তু হঠাৎ তাতে বাধ সাধলেন অধিনায়ক সরফরাজ! আগে সৃষ্টিকর্তারকে স্বরণ করা যাক, তারপর উদযাপন করা যাবে।
পাকিস্তানের এই উদযাপন ভারতকে গুড়িয়ে প্রথমবারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। গ্রæপ পর্বে এই ভারতের কাছে হেরেই খাঁদের কিনারে চলে গিয়েছিল পাকিস্তান। তারাই এবার ১২৪ রানের হারের বদলা নিলো ভারতকে ১৮০ রানের নির্মম পরাজয়ের লজ্জা দিয়ে।
পাকিস্তানের এই অর্জনে ক্রিকেট রোমান্টিকরা তো বটেই পাক ক্রিকেট ভক্তরাও কি একটু হলেও আশাহত? তা বলাই যায়। ফাইনালের মঞ্চে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দল। রোমাঞ্চে ঠাসা ঐতিহাসিক এক ম্যাচেরই তো সাক্ষি হতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু লড়াইটা এমন একপেশে হবে আর প্রতাপশালী ভারত যে এমন অসহায়ভাবে ধরা দেবে এমনটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল? বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপই কিনা মুখ থুবড়ে পড়ল মাত্র ১৫৮ রানে।
রোমাঞ্চকর ১০০ ওভারের অপেক্ষার ইতি ঘটে মূলত ভারতের ইনিংসের শুরুতেই। মোহাম্মাদ আমিরের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই শূন্য রানে এলবিডবিøউয়ের ফাঁদে পড়েন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী রোহিত শর্মা। ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই লড়াইটা একপেশে করে ফেলেন আমির। তৃতীয় বলে প্রথম ¯িøপে আজহার আলীর কাছ থেকে লাইফ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। পরের বলেই পয়েন্টে ফখর জামানের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করে তাকে সাজঘরের পথ ধরান আমির। তখনই লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেনাপতির বিদায়ে বাকিরা ঘুরে দাঁড়াবে কি আরো অসহায়ভাবে দেখা দিলেন তারা। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ভারতীয় দর্শকদের কিছুটা অপেক্ষায় রেখেছিলেন হৃদিক পান্ডিয়া। সপ্তম উইকেটে ৯.৩ ওভারে ৮০ রানের জুটির পথে ৪৩ বলে ৬ ছক্কা ও ৪ চারে ৭৬ রান করে রানআউটের ভাগ্যে কাটা পড়েন এই পেসার অলরাউন্ডার। লেজটুকু গুটিয়ে ইনিংসের সমাপ্তি টেনে দেন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রকারী হাসান আলী।
এর আগে পাকিস্তান ইনিংসে কেবলই ফখর জামানের গল্প। তার বীরত্বময় ব্যাটিংয়েই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৩৩৮ রান) সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেও যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শেষ ৫ ওভারে মাত্র তিনটি বাউন্ডারিতে আটকে না থাকলে সংগ্রহটা আরো বড় হত তা বলাই যায়।
ক্যারিয়ারে এই প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পেলেন ফখর। তাও আবার চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীর বিপক্ষে ফাইনালের মত মঞ্চে। এমন সেঞ্চুরির কথা নিশ্চয় ভুলবেন না ২৭ বছর বয়সী। চলতি আসরেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে বাহারী শটে ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী ৩১ রানের ইনিংসের পর টানা দুই ফিফটি। এবার খেললেন ১০৬ বলে ১২টি চার ও ৩টি বিশাল ছক্কায় ১১৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।
আসরের প্রতিটা ম্যাচে পরে ব্যাট করেছে পাকিস্তান। তাদের সেই স্বাভাবীক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাতেই টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোহলির সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে ঝড়ো ব্যাটিয়ে উদ্বোধনী জুটিতেই ২৩ ওভারে ১২৮ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। দেড় দশক পর এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি জুটির দেখা পেল তারা। ভুল বোঝাবুঝিতে আজহার আলী (৫৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কা)  রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন। ফখর হয়ত বুঝেছিলেন সতীর্থের রানআউটে তার দায়টাও কম নয়। এটাই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে। ৬০ বলে ফিফটি করা ফখর পরের ৫০ করেন ৩২ বলে। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে যখন দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তখন পাকদের সংগ্রহ পুরোপুরি ২০০। সাহসী ফখরের ভাগ্যটা ভালো বলতেই হয়। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বুমরাহ’র প্রথম বলে উইকেটের পিছনে ধোনির হাতে ক্যাচে দিয়েছিলেন। উদযাপনও শুরু করেছিলেন বুমরাহ, কিন্তু আম্পায়ারের নো বলের সংকেতে উদযাপন থেমে যায় ভারতের।
পরে বাবর আজমের ৫২ বলে ৪৬ ও মোহাম্মাদ হাফিজের ৩৭ বলে ৫৭ রানের উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৫৪ রানে উইকেটশূন্য থাকা আশ্বিন ১০ওভারে ৭০ রান দিয়ে এদিনও ছিলেন উইকেটশূন্য। শুরুর ৫ ওভারে মাত্র ১০ রানের দুর্দান্ত এক স্পেল উপহার দেয়া ভুবেনেশ্বর কুমার শেষ ৫ ওভারে দেন ৩৪ রান। ৮ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন জাদেজাও।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করা দলের পক্ষে কিন্তু ভাগ্য কথা বলেছে কমই। এ পর্যন্ত ২০১৩ সালের ফাইনালেই কেবল প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছিল। বাকি ৫ আসরেই জয়ী হয়েছে পরে ব্যাট করা দল। তবে ২৬৫ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের কোন রেকর্ড ছিল না। জিততে হলে তাই রেকর্ড গড়ে হত ভারতকে।
পাকিস্তানের জয়ের সাথে সাথে একটা দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে বাংলাদেশকে। পাকিস্তাকে জায়গা দিতে ছয় থেকে সাতে নেমে যেতে হয়েছে মাশরাফিদের। ভারতকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পেয়ে পাকিস্তানের পয়েন্ট এখন ৯৫। সেমিতে হেরে বাংলাদেশের পয়েন্ট এক কমে ৯৪। ফাইনালের হারে র‌্যাংকিংয়ের দুই থেকে তিনে নেমে যেতে হয়েছে ভারতকেও।