চ্যাম্পিয়ন সেই জার্মানিই
চার চারটি বিশ্বকাপ শিরোপা, তিনটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপ, গত শুক্রবার যোগ হয়েছে অনুর্ধ্ব-২১ ইউরো চ্যাম্পিয়ন্সশিপ শিরোপাও। বাকি ছিল কেবল কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফিটা। এবার সেটাও স্থান পেল জার্মানির অর্জনের শোকেসে। পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে জার্মানি।
কে ভেবেছিল, জার্মানির এই দলই আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় চড়াবে? গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা বধে অংশ নেওয়া মহানায়কদের কেউই ছিলেন না এই দলে। ম্যানুয়েল নয়্যার, মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস, টমাস মুলার, জেরোম বোয়েটাংদের ছাড়াই তরুণ এবং অখ্যাত এক দল নিয়ে রাশিয়া মিশনে নাম লেখান কোচ জোয়াকিম লো। যে দলের গড় বয়সই মাত্র ২৪ বছর ৪ মাস! যুবা দল বললেও তাই মোটেও অত্যুক্তি হয় না। লোর সেই দলটিই কিনা জার্মানিকে উপহার দিলো প্রথম কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা! এমন একটি মুহুর্ত ফিফার আমন্ত্রণে মাঠে বসে উপভোগ করেছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দুই কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা এবং রোনালদো নাজারিও।
ভাগ্য সহায়তায় টানা দুই কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানো চিলি এদিন ভাগ্যকে পাশে পায়নি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যে রক্ষণকে তারা প্রধাণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, সেই রক্ষণের ভুলেই এদিন কেঁদে মাঠ ছাড়তে হয়েছে চিলিয়ানদের। ম্যাচের ২০তম মিনিটে করা লার্স স্টিনডলের একমাত্র গোলটি ছিল চিলির রক্ষণের দেওয়া উপহার। মিডফিল্ডার মার্সেলো দিয়াজের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার পর চাইলে গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভোকেও পরাস্থ করতে পারতেন টিমো ভের্নার। কিন্তু তিনি বল বাড়িয়ে দেন ডানপ্রান্তে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা স্টিনডলকে। ক্যারিয়ারের সহজতম ও স্বরণীয় গোলটি করতে ভুল করার কোন সুযোগই ছিল না বরুশিয়া ম’শেনগøাডবাখ স্ট্রাইকারের সামনে। কেননা, এগিয়ে যাওয়া ব্রাভো তার নাগালে পৌঁছুনোর আগেই জাল ছোঁয় বল। বিরতির আগ মুহূর্তে আবারো একই ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছিল চিলিকে। কিন্তু ব্রাভোর বীরত্বে সেবার তারা রক্ষা পায়।
জার্মানির গোলটি ছিল একেবারেই ¯্রােতের বিপরীতে করা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক খেলতে থাকে চিলি। সপ্তম মিনিটে অ্যালেক্স ভিদাল ও একাদশ মিনিটে এদগার্দো ভার্গাস পোস্টের বাইরে মেরে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন। বিংশ মিনিটেও গোলরক্ষক মার্ক-টার স্টেডেগেনর নৈপুণ্যে রক্ষা পায় জার্মানি। মিনিটের কাঁটা না ঘুরতেই চিলির ঐ ভুলে জার্মানদের এগিয়ে যাওয়া।
পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের ধার আরো বাড়ায় অ্যালেক্সিস সানচেসরা। কিন্তু প্রতিবারই জার্মানদের রক্ষণে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই আক্রমণ। কখনো দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জার্মানির বার্সেলোনা গোলরক্ষক টার স্টেগেন। জার্মানরাও প্রতি আক্রমণে ত্রাস ছড়ায়, কিন্তু ব্রাভো বাধা আর তারা পেরুতে পারেনি। শেষ দশমাংশে ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগটি বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে নষ্ট করেন চিলির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অ্যাঞ্জেলো সেহাল। যোগ করা সময়ে সানচেসের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকটি আরো দুর্দান্তভাবে প্রতিহত করেন স্টেগেন। অগোছালো ফুটবলের কারণে পরাশক্তি বধে চিলিও তাই এবার আর পেনাল্টি ভাগ্যকে পাশে পায়নি। জার্মানিও মাতে আসরের প্রথম শিরোপা উল্লাসে।
এমন জয়ে নিজের বিষ্ময় লুকাননি জার্মান অধিনায়ক হুলিয়ান ড্রক্সলার, ‘আমরা ভালোই লড়েছি, আগের চেয়ে অনেক ভালো। ট্রফিটা সাথে করেই এখন আমরা সবাই ছুটিতে যেতে পারি।’ পক্ষান্তরে, চিলি অধিনায়ক ব্রাভোর কন্ঠের হতাশার বানী, ‘দু’দলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। জিততে না পারায় আমরা মর্মাহত। তবে আমরা বিশ্বমানের একটা দলের কাছেই হেরেছি এবং ভুলগুলো থেকে আমাদের শিখতে হবে।’
তরুণ দল নিয়েও চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে লাগাতে পেরে উচ্ছ¡াসিত কোচ জোয়াকিম লো। এর পুরো কৃতিত্ব তিনি দিলেন শিষ্যদের, ‘আমি এবং আমার দল শিরোপা জিতে ভীষণ গর্বিত। আমলে কেউই আমাদের গোনায় ধরেনি এবং আমরা দারুণ সব দলকে হারাতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এর দাম অনেক, কারণ এর আগে জার্মানরা এই শিরোপা জেতেনি। তাই এই দল ও জয় ইতিহাসে লেখা থাকবে।’ ট্রফি হাতে একটু মজা করলেন জার্মারির বিশ্বকাপজয়ী কোচ, ‘এটা বিশ্বকাপের চেয়েও ভারী।’
জার্মানি ১ : ০ চিলি
এক নজরে কনফেডারেশন্স কাপ ২০১৭
স্বাগতিক দেশ রাশিয়া
দল ৮টি
ভেন্যু ৪টি
চ্যাম্পিয়ন জার্মানি
রানার্স-আপ চিলি
তৃতীয় স্থান পর্তুগাল
চতুর্থ স্থান মেক্সিকো
মোট ম্যাচ ১৬
মোট গোল ৪৩ (২.৬৯ প্রতি ম্যাচ)
সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওন গোরেৎকা (জার্মানি)
লার্স স্টিনডল (জার্মানি)
টিমো ভের্নার (জার্মানি)
(প্রত্যেকে ৩টি করে গোল করেন)
টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হুলিয়ান ড্রক্সলার (জার্মানি)
টুর্নামেন্ট সেরা গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো (চিলি)
ফেয়ার প্লে ট্রফি জার্মানি