নোবেল প্রাপ্তিতে পুরুষের চেয়ে নারীরা কেন এত পিছিয়ে

বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক বলে বিবেচিত নোবেল পুরস্কার। ১৯০১ সাল থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্য সাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক তুলনারহিত কর্মকাণ্ডের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা শাস্ত্র, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং শান্তি এই ছয়টি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মোট ৮৯২ জনকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে নারী নোবেল বিজয়ীর সংখ্যা মাত্র ৪৮ জন। মজার বিষয় হলো, এ বছরও নোবেল বিয়জী ১১ জনের সবাই পুরুষ।
নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ম্যারি কুরি। তেজস্ক্রিয়তার ওপর গবেষণার জন্য ১৯০৩ সালে স্বামী পিয়েরে কুরি এবং তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক অঁরি বেকেরেলের সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। এরপর ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল জেতেন ম্যারি কুরি। পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রসায়নে নোবেল জেতেন। তিনিই একমাত্র নারী বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় পৃথকভাবে নোবেল জয়ের কৃতিত্ব লাভ করেছেন।
মজার তথ্য হলো, ম্যারি কুরির মেয়ে ইরিনে জলিয়েট কুরিও নোবেল জিতে ছিলেন। ১৯৩৫ সালে রসায়নে অসামান্য অবদানের জন্য নোবেল জেতেন ইরিনে জলিয়েট কুরি। পদার্থ বিজ্ঞান কিংবা রসায়নে এককভাবে কোনো নারীর নোবেল জয়ের রেকর্ড থাকলেও ১৯৮৩ সালের আগ পর্যন্ত চিকিত্সা শাস্ত্রে কোনো নারীর নোবেল জয়ের কৃতিত্ব ছিল না। ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো এককভাবে চিকিত্সা শাস্ত্রে নোবেল জেতেন মার্কিন নারী বারবারা ম্যাকক্লিটক। এর এক দশক পর জার্মান বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ানে নুসেলিয়েন ভোলহার্ডও চিকিত্সা শাস্ত্রে নোবেল জেতেন।
সব থেকে কম বয়সে নোবেল জয়ের নজির গড়েন পাকিস্তানের কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকা অঞ্চলে শিক্ষা এবং নারী অধিকারের ওপর আন্দোলনের জন্য মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে যাওয়ার পর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মালালা।
তবে নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নোবেল জয়ী নারীদের সংখ্যা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছেন অনেকেই। প্রায় ৯০০ জন নোবেল বিজয়ীর মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ৪৮ হওয়ার পেছনে কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে কিনা তা নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। বিবিসির পক্ষ থেকেও হয়েছে নানান অনুসন্ধান। কারণ এমন অনেক নারী ছিলেন যাদের অসামান্য অবদান থাকার পরও নোবেল পুরস্কার পাননি।
উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলীয় নারী বিজ্ঞানী লিসে মেইটনারের কথা বলা যেতে পারে। তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়ায় অবদান রাখার জন্য ১৯৩৭ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ২৯ বার নোবেল কমিটির বাছাইয়ে তার নাম থাকলেও তিনি কখনো নোবেল পুরস্কার লাভ করেননি। এছাড়া রসায়ন বিজ্ঞানের জন্যও তিনি বাছাই কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন ১৯ বার। কিন্তু তারপরও তিনি নোবেল পাননি। নোবেল মিউজিয়ামের কিউরেটরদের মতে, নারীদের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই।
নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই অভিবাসী আমেরিকান। এদের কেউ শিশু বয়সেই বাবা-মায়ের হাত ধরে গিয়েছিলেন আমেরিকায় আবার কেউ কেউ কর্মজীবন শুরুর পরই পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকায়।