জাপানের সাথে আসিয়ানের সম্পর্ক

এবারে রয়েছে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া দেশ সমূহের সমিতি আসিয়ান, জাপানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। আসিয়ান হল ১০ সদস্যের এক আঞ্চলিক সম্প্রদায় এবং এর মোট জনসংখ্যা হল ৬৩ কোটি। এর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ হল ২ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি ডলার এবং এশিয়াতে চীন ও জাপানের পর এর স্থান হল তৃতীয়। গত বছর, আসিয়ান তার প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী পালন করেছে এবং পরবর্তী অর্ধ শতকের দিকে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে চলেছে। এই সংস্থা জাপানের কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করছে এবং জাপান কি ধরনের ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে? জাপান আসিয়ান কেন্দ্রের মহাসচিব মাসাতাকা ফুজিতাকে আমরা এই প্রশ্ন করি।

জাপান ও আসিয়ানের মধ্যেকার ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হলে আমাদেরকে ফুকুদা মতবাদের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন জাপানি প্রধানমন্ত্রী তাকেও ফুকুদা জাপানের আসিয়ান নীতির ভিত্তি হিসাবে এই মতবাদ প্রবর্তন করেন। তিনটি নীতির উপর ভিত্তি করে এটি গড়ে তোলা হয় যার মধ্যে প্রথমটি হল- জাপান সামরিক শক্তিতে পরিণত হবে না। দ্বিতীয় নীতি হল, আসিয়ান দেশগুলোর সাথে খোলাখুলি ভাবে সমঝোতার উপর ভিত্তি করে জাপান সম্পর্ক গড়ে তুলবে। জাপান আসিয়ানের সাথে সমপর্যায়ে সহযোগিতা করবে হল তৃতীয় নীতি। এই নীতিগুলো শুনতে ভালো লাগলেও আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এগুলো শুধুমাত্র ধারণা হয়েই বিদ্যমান ছিল বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ দেখা যায় নি।

ওই মতবাদ গৃহীত হওয়ার পর ৪০ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং আসিয়ান প্রতিষ্ঠার পর পাঁচ দশক কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে জাপান ও আসিয়ানের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যাপক হারে পরিবর্তিত হয়ে তা এখন দৃঢ় এক অংশিদারিত্বে পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকে, জাপানের সাথে আসিয়ানের সম্পর্ক অনেকটাই একপক্ষীয় ছিল যেখানে জাপানের অবদান ছিল অনেক বেশি। এর কারণ ছিল উভয়ের মধ্যেকার বিরাট অর্থনৈতিক ব্যবধান। তবে আজকের দিনে, এই সম্পর্ক আর একপক্ষীয় নয়। সময়ের সাথে সাথে আসিয়ান প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং এর প্রভাব বিস্তার করেছে।

তবে এটাও ঠিক যে জাপানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আসিয়ানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার অন্যতম কারণ ছিল সমন্বিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্য নিয়ে এটি সম্ভব হয়েছে। কোম্পানিগুলো এই অঞ্চলে ব্যবসা করতে শুরু করলে, নিয়মাবলী শিথিল করার জন্য তারা স্থানীয় সরকারের প্রতি অনুরোধ রাখে। কর্তৃপক্ষ তাদের এই আহ্বানে সাড়া দেয় এবং নিজেদের নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখে।

আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশের মধ্যে একটি হল মিয়ানমার। মিয়ানমার হল তুলনামূলকভাবে নতুন এক সদস্য এবং সম্প্রতি সেদেশে প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে। আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে কিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে এবং কিভাবে অন্যদের জবাবে সাড়া দিতে হবে তা খুব গুরুত্বপূর্ন এক বিষয়। আসিয়ান গ্রুপটির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দেশ রয়েছে এবং এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও ভিন্ন।

অপর এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্থানীয় শিল্পগুলোকে প্রতিপালন করা। সাধারণত, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ থেকে আসা মুনাফার অর্ধেক পরিমাণ অভ্যন্তরীণ শিল্পে পুনরায় বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে আসিয়ানের ক্ষেত্রে মুনাফার শুধুমাত্র ২৫ শতাংশ পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় কেননা এই বিনিয়োগের সুবিধা নিতে পারে এই ধরনের স্থানীয় কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি নয়। এই বিষয়ে জাপান সহযোগিতা প্রদান করছে। আইন প্রণয়নে স্থানীয় লোকের সাথে সহযোগিতা, সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ছোট আকারের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বা নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে জাপান এই কাজ করছে।

আসিয়ানে যে সকল বেসরকারী কোম্পানিগুলো ব্যবসা করছে তাদের উচিত নিজেদেরকেও ওই অঞ্চলের বলে বিবেচনা করা এবং স্থানীয় লোকজনের যাতে উন্নতি ঘটে সেই লক্ষ্য নিয়ে চলা। সফল এক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মূল চাবিকাঠি হল অন্য দেশের বা অঞ্চলের দৃষ্ঠিভঙ্গী বিবেচনা করে পারস্পারিক লাভজনক সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রচেষ্টা চালানো।

সংবাদ বিশ্লেষণটি এখানেই শেষ হল। এতে আজ শুনলেন জাপান আসিয়ান কেন্দ্রের মহাসচিব মাসাতাকা ফুজিতার মতামত।