নেপালে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্ত

নিহত ৫০ : জীবিত ২০ : বø্যাক বক্স উদ্ধার : পাইলটকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগ : বিমানে ৪ ক্রু বাংলাদেশের ৩২ নেপালের ৩৩ মালদ্বীপ ও চীনের ১ জন করে যাত্রী ছিলেন : প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী : সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন।

বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে (টিআইএ) বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট পৃথুলা রশিদসহ বাংলাদেশ ও নেপালের নাগরিকসহ কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন । বেঁচে গেছেন অন্তত ২০ জন। তাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালের সেনা সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ত্রিভূবন বিমান বন্দরের মুখপাত্র প্রিম নাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে, বিমানটি অবতরণ করার সময় বিমান বন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এস২-এজিইউ নামের এ বিমানটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় এবং স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে টিআইএ অবতরণ করে। বিধ্বস্ত হবার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দরের উদ্ধারকারী দল এবং নেপাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে বিমানের বø্যাক বক্স উদ্ধার করেছেন এবং তা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ও ঘটনাস্থল নেপালে পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেল সিভিল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা আজ কাঠমাÐুর উদ্দেশে উড়ে যাবেন। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারা নিহতদের জন্য পরম করুণাময়ের শান্তি কামনা করেছেন এবং আহতের দ্রæত সুস্থতা কামনা করেছেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনাও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তের খবর নিচ্ছেন। তিনি তার সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ দেশে ফিরছেন।

ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন প্রধান পাইলট আবিদ সুলতান। ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা হলেন, ইমরানা কবির হাসি, কবির হোসেন, মেহেদী হাসান, রিজওয়ানা আব্দুল্লাহ স্বর্ণা সাঈদা কামরুন নাহার, শাহরিন আহমেদ, মো. শাহীন বেপারি, মো. রিজওয়ানুল হক, প্রিন্সি ধামি, সামিরা বায়জানকার, কিশোর ত্রিপাটি, হরিপ্রসাদ সুবেদী, দয়ারাম তামরাকার, কিষাণ পান্ডে, আশিস রঞ্জিত, বিনোদ পৌদাল, সনম সখ্য, দিনেশ হুমাগাইন, বসন্ত বহরা।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পাইলট, কো-পাইলটসহ ৪ ক্রু ও ৬৭ জন আরোহীর মধ্যে ছিলেন ৩৭ জন পুরুষ, ২৭ জন নারী ও দুইজন শিশু। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২, নেপালের ৩৩ এবং মালদ্বীপ ও চীনের ১ জন করে যাত্রী ছিলেন। বিধ্বস্তের পরপরই ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও নেপাল সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেমনাথ ঠাকুর জানান, ২৫ জনকে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে পাইলট পৃথুলা রশিদ ও ক্রু খাজা হোসেনের নাম রয়েছে। তবে অপর ক্রু’র সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নেপালের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গোকুল ভান্ডারি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ৫০টি লাশ উদ্ধার করেছি। জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে’। ওই সেনা মুখপাত্র জানান,  নয়জনের এখনও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নেপালের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সঞ্জীব গৌতম বলেন, রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটা দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে। তিনি বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’

আর্নিকো পান্ডে নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী নেপালের সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকাকে বলেছেন, রানওয়েতে বাঁক নেওয়ার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তিনি বলেন, আমি সংযোগ সড়কে ছিলাম। দেখলাম বিমানটি টার্মিনালকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ দিকে দ্রæত বাঁক নিলো। এরপরই রানওয়ে থেকে তা অদৃশ্য হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিশালাকার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। তিনি জানান, খুব নিচে দিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারের ওপর দিয়ে বিমানটিকে উড়তে দেখেছিলেন।

বিমানটির যাত্রীরা হলেন, উম্মে সালমা, মো. রফিকুজ্জামান, মো. নুরুজ্জামান, মো. অনিরুদ্ধ জামান, সৈয়্যদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা, শেখ রাশেদ রুবায়েত, তাহিরা তানভীন শসী রেজা, পিয়াস রায়, ইমরানা কবির হাসি, কবির হোসেন, সানজিদা হক, হাসান ইমাম, রায়েনা আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মিনহাজ বিন নাসির, এসএম মাহমুদুর রহমান, মো. মতিউর রহমান, মেহেদী হাসান, রকিবুল হাসান, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, শাহীন বেপারী, আক্তারা বেগম, নুরুন্নাহার বানু, বিলকিস আরা, আলমিন নাহার অ্যানি আলিফুজ্জামান, ইয়াকুব আলী, শাহরিন আহমেদ, ফয়সাল আহমেদ, আলিফুজ্জামান, রিজওয়ানুল হক, আশনা সানিয়া, সানাম সানিয়া, কৃষ্ণ কুমার শাহানী, আঞ্জিলা শ্রেষ্ঠা, সারুনা শ্রেষ্ঠা, হরি প্রসাদ সুবেদী, দয়ারাম কর্মকার, বাল কৃষ্ণ থাপা, শ্বেতা থাপা, কিশোর ত্রিপাতি, অবদেশ কুমার যাদব, দিনেশ হিমাগায়েন, শ্রেয়া ঝা, পূর্ণিমা লোহানী, মিলি মেহেরজান, নেগা মেহেরজান, সঞ্চয় মেহেরজান, জেন মিং, আখি মনি, পেশব পান্ডে, প্রসন্ন পান্ডে, বিনোদ রাজ পদুয়াল, হরি শঙ্কর পদুয়াল, সঞ্চয় পদুয়াল, আশিষ রঞ্জিত, তাহাররা প্রিয়ন্বয়ী, এফএইচ প্রিয়ক, সাজানা দেবকোটা, বসন্ত বহরা, রবীন্দ্র বহরা, মিসেস গিয়ানি গুরুং, মিসেস প্রিন্সি ধাম, প্রবীণ চিত্রকর, সামিরা বায়ানজানকার, চারু বড়াল, আলগিনা বড়াল ও শিলা বাজগাইন।

প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত, দেশে ফিরছেন আজ

নেপালে বিমান দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চার দিনের সফর শেষে আগামীকাল বুধবার দেশে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু কাঠমাÐুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের পর সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ মঙ্গলবারই শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে কথা বলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। সিঙ্গাপুর থেকে স্থানীয় সময় ৭টা ৫০ মিনিটে নেপালের প্রধানমন্ত্রী খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলিকে ফোন করেন শেখ হাসিনা। ফোনালাপে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। খাড়গা প্রসাদ শর্মা অলি জানান, দুর্ঘটনা ঘটার পর তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিভূবন বিমানবন্দর খোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাহায্যকারী দল নেপালে পাঠানোর কথা বলেন। এছাড়াও তিনি প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তার আশবাস দেন নেপালী প্রধানমন্ত্রীকে।

কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছিল : ইউএস বাংলার সিইও

নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার কারণেই ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আফিফ। তিনি দাবি করেন, এ দুর্ঘটনায় বিমানের পাইলটের কোনও গাফিলতি ছিল না। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বারিধারায় ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করতে গিয়ে ইমরান আফিফ এসব কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে সিইও বলেন, আমাদের ফ্লাইটটি অবতরণ করার আগের তিন মিনিটের একটি কথোপকথন আমাদের হাতে এসেছে। ফ্লাইটের পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের যে কথা হয়, তা রয়েছে ওই কথোপকথনে। এটা থেকে আমরা ধারণা করছি, দুর্ঘটনায় আমাদের পাইলটের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না।

সিইও ইমরান আফিফ আরও বলেন, ‘ফ্লাইট অবতরণের আগে কাঠমান্ডুর কন্ট্রোল রুম থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোন রানওয়ে দিয়ে অবতরণ করতে হবে, সে সম্পর্কে ওই তিন মিনিটের কথোপকথনে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। অবতরণের তথ্য সঠিকভাবে না দেওয়ার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’

ইউএস বাংলার সিইও আরও বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ১৬ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

নেপাল টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, ৭৮ জনকে ধারণে সক্ষম ওই বিমানে যাত্রীদের পাশাপাশি ৪ ক্রু ও ৬৭ যাত্রী মিলে ৭১ জন আরোহী ছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন এ দুর্ঘটনায়। তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহতের খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার এয়ারলাইন্সের বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী। তারা সবাই নেপালি বংশোদ্ভূত। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ওই ১৩ শিক্ষার্থী বাড়ি যাচ্ছিলেন। কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. মো. আবেদ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে দুর্ঘটনার পর এই শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় স্বজনরা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এস২-এজিইউ ফ্লাইটের যাত্রীরা বাংলাদেশে রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। তাদের প্রায় সবাই স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন সানজিদা বিপাশা, রফিক জামান রিমু ও তাদের ছয় বছর বয়সী ছেলে অনিরুদ্ধ। বিপাশার ভাই শাহরিয়ার মিঠুন বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টায় তাদেরকে তুলে দেওয়ার সময় সবশেষ কথা হয়েছিল। এরপর দুর্ঘটনার খবর শুনছি। আমরা খুবই আপসেট’।

প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। গতকাল পৃথক শোকবার্তায় তারা নিহতদের জন্য শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সিঙ্গাপুর থেকে জানান, চারদিনের সরকারি সফরে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।’

প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের জন্য শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘনায় আহতদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করেছেন।

বিমান দুর্ঘটনার প্রাণহানিতে আরো শোকবার্তা দিয়েছেন, স্পিকার শীরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছাতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয়েও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের নম্বর ৯৫৪৫১১৫, ৯৫৪৯১১৬।

নেপালে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি কাঠমান্ডুতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।  সোমবার ওই দুর্ঘটনার পর সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি ওই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই দুর্ঘটনায় ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এই দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। চালু হওয়ার পরপরই ইউএস-বাংলার ফিরতি ফ্লাইটের যাত্রীদের আনতে রিজেন্টের একটি উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে রওনা হয়। রিজেন্টের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এজিএম (এয়ারপোর্ট সার্ভিস) মোহাম্মদ জাফরুজ্জামান বলেন, ‘সন্ধ্যে পৌনে ৭টায় রিজেন্ট এয়ার ওয়েজের আরএক্স ৭৯৫ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম, সিভিল এভিয়েশনের এক্সিডেন্ট এক্সপার্ট সারোয়ার ভুঁইয়া আর ইউএস বাংলার ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করেন।”

নেপাল থেকে ৩৫ জন যাত্রী ইউএস-বাংলার ফিরতি ফ্লাইটে আসার কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের রিজেন্ট নিয়ে আসবে’।

ইউএস বাংলার মোট আটটি বিমান আছে, এর মধ্যে চারটি ড্যাশ এইট, চারটি বোয়িং। এর মধ্যে একটি ড্যাশ এইট নষ্ট থাকার কারণে কিছুদিন যাবত হ্যাঙ্গারে পড়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন গন্তব্য ছাড়াও কোলকাতা, কাঠমান্ডু, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, দোহা এবং মাসকট রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে ইউএস বাংলা। এছাড়া এপ্রিলে চীনের গুয়াংঝু শহরে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ১৯৮৪ সালে। ওই বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হলে ৪৯ জন নিহত হন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, নেপালের ওয়েবসাইট।