এমন হার আগে দেখেনি বিশ্ব!

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অবশেষে সেঞ্চুরির দেখা পেল বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশী সেই সৌভাগ্যবান মুশফিকুর রহিম। একদিকে তার ব্যাটিং দৃঢ়তা অন্যদিকে সতীর্থদের কাছে থেকে পাওয়া ছোট ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসের সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে কিম্বার্লিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান তোলে মাশরাফি বাহিনী। অপরাজিত ১১০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত। এর আগে চট্টগ্রামে ২০১৫ সালে সৌম্য সরকার করেছিলেন ৯০ রানের ইনিংস। কিম্বার্লিতে গতকালের দলীয় সংগ্রহটিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৭ সালে মিরপুরে করা ৮ উইকেটে ২৫১।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও ফাফ কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪৩ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা (২৮২/০)। এর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে আড়াইশ’ বা ততোধিক রানের তাড়ায় ১০ উইকেটের জয় দেখেছিল একটি ম্যাচে। ২১টি চার ও দুটি ছক্কার ঝলমলে ইনিংস খেলে ডি কক অপরাজিত ছিলেন ১৬৮ রানে, আমলা ছিলেন ৮ চারে ১১০ রান নিয়ে। এর আগে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ইংল্যান্ডের। গতবছর জানুয়ারিতে বার্মিংহ্যামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৫৬ তাড়া করে জিতেছিল ইংলিশরা।
তামিমের সাথে হঠাৎই বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে মুস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরির খবর। অনুশীলনের সময় পায়ের গোড়ালিকে আঘাত পেয়েছেন কাটার মাস্টার। মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে তাই বোলিং আক্রমনে নেওয়া হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনকে। তাদের সহায়তার জন্যে আছেন সাইফউদ্দিন। এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখানো তরুণ এই পেস অল-রাউন্ডারের। এছাড়া সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের সঙ্গে একাদশে ছিলেন নাসির হোসেনও।
তবে তাদের সকলকে ছাপিয়ে এগিন কিম্বার্লির নায়ক একজনই, মুশফিক। তার হাত ধরেই যে ঘুচল সেঞ্চুরির অপূর্ণতা। এই ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে মুশফিকের রেকর্ড ছিল বিবর্ণ। আগের পাঁচটি ইনিংস ৬, ১, ২, ৩ ও ২৪ রানের। এবার উপহার দিলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি সেঞ্চুরি আছে মুশফিকের। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে একটি করে। তার আগের চার সেঞ্চুরির তিনটি দেশের মাটিতে, অন্যটি জিম্বাবুয়েতে। দক্ষিণ আফ্রিকায়ও বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক। দেশটিতে আগের সেরা ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের ৭৩। পঞ্চম সেঞ্চুরিতে শাহরিয়ার নাফীসকে (৪) ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল তামিম ইকবাল (৯) ও সাকিব আল হাসানের (৭)।
ওয়ানডে সিরিজের আগে মোটেও ভালো অবস্থায় ছিলেন না টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক। বাজে দুই হারের দায় কিছুটা ছিল তার কাঁধে। সংবাদ সম্মেলনে বোলারদের সমালোচনা করে নিজেই পড়েছিলেন সমালোচনার মুখে। সংবাদ সম্মেলনে তার কথা-বার্তা পছন্দ হয়নি বোর্ডের। সামনে নেতৃত্ব হারানোর শঙ্কা। সেই মুশফিক ওয়ানডেতে লড়লেন বুক চিতিয়ে। দলকে পথ দেখালেন সামনে থেকে। তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি, এতটা চাপে আছেন। শুরু থেকেই খেলেছেন শট। একেকটি চার-ছক্কায় বেড়েছে রানের গতি। চাপও সব যেন সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মুশফিক যখন ক্রিজে আসেন তখন খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দুটি জুটিতে দলকে গড়ে দেন ভিত। এক প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও মুশফিক ছিলেন অবিচল। ডেন প্যাটারসনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৫২ বলে ফিফটিতে পৌঁছান মুশফিক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসকে পরিণত করেন সেঞ্চুরিতে। কাগিসো রাবাদার বলে দুই রান নিয়ে তিন অঙ্কে যান তিনি। ১০৮ বলের ইনিংসে সেঞ্চুরি পেতে দুটি ছক্কার সঙ্গে হাঁকান ১০টি চার। বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদÐ মুশফিকের এই ইনিংস। চারে নেমে শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত ১১৬ বলে।
ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে। এছাড়া লিটন (২১), সাকিব (২৯), মাহমুদুল্লাহ (২৬), সাব্বির (১৯), নাসির (১১) সবাই দারুণ শুরু করেও কেউই নিজেদের ইনিংস টেনে লম্বা করতে পারেনি। তবে এক প্রান্তে অবিচল ছিল মুশফিকের ব্যাট। দারুণ ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। ১১৬ বলে ১১টি চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস উপহার দেন মুশফিক। অভিষিক্ত মোহাম্মাদ সাইফউদ্দিন ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ বলে করেন ১৬ রান। প্রোটিয়াদের হয়ে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা, ৪৮ রানে ২টি নেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, ১ম ওয়ানডে
টস : বাংলাদেশ, কিম্বার্লি
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
ইমরুল ক ডি কক ব প্রিটোরিয়াস ৩১ ৪৩ ৪ ১
লিটন ক ডু প্লেসি ব রাবাদা ২১ ২৯ ৪ ০
সাকিব ক আমলা ব তাহির ২৯ ৪৫ ২ ০
মুশফিক অপরাজিত ১১০ ১১৬ ১১ ২
মাহমুদউল্লাহ ক মিলার ব প্রিটোরিয়াস ২৬ ২৭ ৩ ১
সাব্বির ক প্যাটারসন ব রাবাদা ১৯ ২১ ১ ১
নাসির ক আমলা ব রাবাদা ১১ ৮ ২ ০
সাইফ ক প্যাটারসন ব রাবাদা ১৬ ১১ ১ ১
অতিরিক্ত (লেবা ৫, ও ১০) ১৫
মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভারে) ২৭৮
উইকেট পতন : ১-৪৩ (লিটন), ২-৬৭ (ইমরুল), ৩-১২৬ (সাকিব), ৪-১৯৫ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-২৩৭ (সাব্বির), ৬-২৫৩ (নাসির), ৭-২৭৮ (সাইফ)।
বোলিং : রাবাদা ১০-১-৪৩-৪, প্যাটারসন ৯-০-৬৯-০, তাহির ১০-০-৪৫-১, প্রিটোরিয়াস ১০-০-৪৮-২, ফেহলুকাওয়ে ১০-০-৬০-০, ডুমিনি ১-০-৮-০। অসমাপ্ত