• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • শবে বরাত : কিছু ভ্রান্তি নিরসন

    আলকাউসারের শাবান ১৪২৬ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় ‘বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত’ শিরোনামে, শাবান ১৪২৭ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৬ ঈ.) সংখ্যায় ‘উলামায়ে সালাফের উক্তির আলোকে শাবান শবে বরাত’ শিরোনামে এবং রজব ১৪২৮ হি. (আগষ্ট ’০৭ ঈ.) সংখ্যায় ‘অজ্ঞতা ও রসম-রেওয়াজের কবলে শাবান-শবে বরাত : নববী নিদের্শনাই মুক্তির উপায়’ শিরোনামে শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কথা পাঠকের সামনে এসে গেছে। ওয়াল হামদু লিল্লাহি তাআলা আলা যালিকা হামদান কাছীরা।

    এ সংখ্যায় শুধু কিছু ভুল ধারণা চিহ্নিত করে দিতে চাই। কেননা এগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।

    প্রশ্ন ১ : আমি এক কিতাবে পড়েছি যে, শবে বরাত বিষয়ক সকল হাদীস ‘মওযু’। ইবনে দিহয়ার উদ্ধৃতিতে কথাটা ওই কিতাবে লেখা হয়েছে।

    উত্তর : এটা একটা ভুল কথা। ইবনে দিহয়া কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। যিনি তার উদ্ধৃতিতে এ কথা লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। ইবনে দিহয়া শুধু এটুকু বলেছেন যে, শবে বরাতে বিশেষ নিয়মের নামায এবং সে নামাযের বিশেষ ফযীলতের যে কথাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তা মওযু। তাঁর মূল আরবী বক্তব্য তুলে দিচ্ছি :

    أحاديث صلاة البراءة موضوعة

    ‘শবে বরাতের বিশেষ নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মওজু।’

    (তাযকিরাতুল মওজুআত, মুহাম্মাদ তাহের পাটনী পৃ. ৪৫)

    আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’

    আল্লামা শাওকানীও ‘আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ’ পৃ. ৫১)তে এই ভুল ধারণা সংশোধন করেছেন।

    প্রশ্ন ২ : একজন আলিমের কাছে শুনেছি যে, শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া ‘মাসনূন’ নয়। আর আজকাল যেভাবে এ রাতে কবরস্থানে মেলা বসানো হয় এবং মহিলারাও বেপর্দা হয়ে সেখানে গিয়ে ভিড় করে, তা তো একেবারেই নাজায়েয।

    প্রশ্ন এই যে, যতটুকু নাজায়েয তা তো অবশ্যই নাজায়েয, কিন্তু যদি মহিলারা বেপর্দা না হয় এবং কোনো গুনাহর কাজও সেখানে না হয় তবুও কি এ রাতে কবর যিয়ারত মাসনূন বলা যাবে না? হাকীমুল উম্মত ‘ইসলাহুর রুছূম’ কিতাবে একে ‘মাসনূন’ লিখেছেন।

    উত্তর : মহিলাদের জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে যাওয়া এমনিতেও নিষেধ। এরপর যদি পর্দাহীনতা ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। আর কবরস্থান যদি নিকটবর্তী হয় এবং মাযার না হয় আর সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কাজকর্ম না হয় তাহলে পুরুষের জন্য এ রাতে সেখানে গিয়ে যিয়ারত করার বিধান কী? হাকীমুল উম্মত রাহ. প্রথমে একে মাসনূন লিখেছিলেন। পরে আরো চিন্তা-ভাবনা ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মত বিনিময় করার পর ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন এবং লেখেন যে, আমি কবরস্থানে যাওয়া থেকে বারণ করাকেই অধিক সতর্কতার বিষয় মনে করি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮) শরীয়তের নীতিমালার আলোকে হযরত থানভী রাহ-এর দ্বিতীয় মতই অগ্রগণ্য।

    প্রশ্ন ৩ : সুনানে ইবনে মাজাহ-তে (হাদীস নং : ১৩৮৮) পনেরো শা‘বান রাত সম্পর্কে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে :

    قوموا ليلها وصوموا نهارها

    এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

    এই হাদীসটি থানভী রাহ. ‘খুতবাতুল আহকাম’-এ উল্লেখ করেছেন এবং ‘ইসলাহুর রুসূম’-এ পনেরো শাবান-এর রোযাকে মাসনূন বলেছেন। কিন্তু এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে মওযু বলেছেন। এরপর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তকী উছমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘ইসলাহী খুতবাত’-এ দেখলাম যে, সেখানে এই হাদীসটিকে ‘জয়ীফ’ লেখা হয়েছে এবং এই রোযাকে ‘সুন্নত’ মনে করা ভুল বলা হয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি বুঝে আসছে না। আশা করি সাহায্য করবেন।

    উত্তর : ইবনে মাজাহর উপরোক্ত হাদীসটি ‘মওজু’ তো কখনোই নয়। তবে সনদের দিক থেকে ‘জয়ীফ’। যেহেতু ফাযাইলের ক্ষেত্রে ‘জয়ীফ’ গ্রহণযোগ্য তাই আলিমগণ শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে এ হাদীস বয়ান করে থাকেন।

     

    শায়খ আলবানী ‘সিলসিলাতুয যয়ীফা’ (৫/১৫৪) তে এই বর্ণনাকে ‘মওজূউস সনদ’ লিখেছেন। অর্থাৎ এর ‘সনদ’ মওজূ। যেহেতু অন্যান্য ‘সহীহ’ বর্ণনা উপরোক্ত বর্ণনার বক্তব্যকে সমর্থন করে সম্ভবত এজন্যই শায়খ আলবানী সরাসরি ‘মওজূ’ না বলে ‘মওজূউস সনদ’ বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তথাপি শায়খ আলবানীর এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা এই যে, এই বর্ণনা ‘মওজূ’ নয়, শুধু ‘জয়ীফ’। ইবনে রজব রাহ. প্রমুখ বিশেষজ্ঞদের এই মতই আলবানী সাহেব নিজেও বর্ণনা করেছেন।

    এ প্রসঙ্গে আলবানী সাহেব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা এই যে, এ বর্ণনার সনদে ‘ইবনে আবী ছাবুরা’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তার সম্পর্কে হাদীস জাল করার অভিযোগ রয়েছে। অতএব এই বর্ণনা ‘মওজু’ হওয়া উচিত। তবে এই ধারণা এ জন্য সঠিক নয় যে, ইবনে আবী সাবুরাহ সম্পর্কে উপরোক্ত অভিযোগ ঠিক নয়। তার সম্পর্কে খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, জয়ীফ রাবীদের মতো তার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা ছিল। রিজাল শাস্ত্রের ইমাম আল্লামা যাহাবী রাহ. পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণেই তাকে জয়ীফ বলা হয়েছে।’ দেখুন সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/২৫০

    সারকথা এই যে, উপরোক্ত বর্ণনা মওজু নয়, শুধু জয়ীফ।

    পনেরো শাবানের রোযা সম্পর্কে থানভী রাহ. যে ‘মাসনূন’ বলেছেন তার অর্থ হল মুস্তাহাব। আর ইসলাহী খুতবাতের আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়া হলে দেখা যায় যে, তা এ কথার বিপরীত নয়। ওই আলোচনায় ‘জয়ীফ’ হাদীসের ওপর আমল করার পন্থা বিষয়ে একটি ইলমী আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। হযরত মাওলানা পনেরো তারিখের রোযা রাখতে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন যে, একে শবে বরাতের রোযা বলবে না। গোটা শাবান মাসেই শুধু শেষের দুই দিন ছাড়া, রোযা রাখা মুস্তাহাব। তাছাড়া প্রতিমাসের ‘আয়্যামে বীজ’ (চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ) রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দিনের রোযা রাখা হলে ইনশাআল্লাহ ছওয়াব পাওয়া যাবে।

     

    প্রশ্ন ৪ : আমি একটি পুস্তিকায় পড়েছি যে, শবে বরাত সম্পর্কে যেসব রেওয়ায়েত পাওয়া যায় তন্মধ্যে সনদের বিবেচনায় সবচেয়ে উত্তম রেওয়ায়েতটিই হল ‘জয়ীফ।’ তাহলে অন্যগুলোর অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। এ কথা কি সঠিক?

    উত্তর : এ কথাটা একেবারেই ভুল। শবে বরাত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদীস এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদীস ‘সহীহ’, কিছু হাদীস ‘হাসান’ আর কিছু ‘জয়ীফ’। এ জন্য শবে বরাতের ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস জয়ীফ-একথা ঠিক নয়। সনদের বিচারে সবচেয়ে উত্তম বর্ণনা সেটা যা ইবনে হিববান ‘কিতাবুস সহীহ’ তে (হাদীস ৫৬৬৫) বর্ণনা করেছেন।

    عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.

    হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’

    আরো একাধিক হাদীসে এ বিষয়টি এসেছে। যেগুলোর সনদ ‘হাসান লিযাতিহী বা হাসান লিগায়রিহী।’ যথা মুসনাদে আহমদ এর ৬৬৪২ নং হাদীস, এবং মুসনাদুল বাযযার (২০৪৫)-এ আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিত হাদীস।

    এছাড়া এ রাতের আমল সম্পর্কে ‘শুআবুল ঈমান’ বায়হাকীর নিম্নোক্ত হাদীসটি লক্ষণীয়।

    হযরত আলা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

    هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

    ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

     

    ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

    هذا مرسل جيد

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য।

    এধরনের বেশ কয়েকটি সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কি এ কথা বলা উচিত যে, এ বিষয়ে সর্বোত্তম হাদীসটি সনদের বিচারে জয়ীফ? ভালোভাবে না জেনে কথা বলা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন।

    প্রশ্ন ৫ : লোকেরা বলে, এ রাতের ফযীলত শবে কদরের সমান। কুরআন মজীদে ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। এ কথাটা কি সঠিক?

    উত্তর : দুটো কথাই ভুল। শবে বরাতকে শবে কদরের সমান মনে করা ভুল। কুরআন-হাদীসে শবে কদরের যত ফযীলত এসেছে শবে বরাত সম্পর্কে আসেনি। বিশেষত কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার মতো বরকতময় ঘটনা শবে কদরেই সংঘটিত হয়েছে। এই ফযীলত অন্য কোনো রজনীতে নেই।

    ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে কদরকেই বোঝানো হয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সূরা কদরে। এজন্য এখানে শবে বরাত উদ্দেশ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরনের প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক অবস্থানে দৃঢ়পদ থাকার তাওফীক দান করুন। ইমাম ইবনে রজব রাহ. এর ভাষায় : ‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে যিকির, দুআ ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামায পড়বে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যানের মওসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্য দেওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে ছওয়াব লাভের আশা নিয়ে পনেরো তারিখের রোযাও রাখবে। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দুআ কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যথা : শিরক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ। এগুলো সবগুলোই কবীরা গুনাহ। আর হিংসা-বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

    যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীন সম্পর্কে অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ ও গর্হিত অপরাধ। এজন্য মুসলমানদের কর্তব্য হল সর্বদা   অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পাক-পবিত্র রাখা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরী ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফিরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ -লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬#

    ভাবনা সবার নির্বাচন
    বদলে যাচ্ছে দেশ; বদলে যাচ্ছে রাজনীতির চালচিত্র। জুলুম-নির্যাতন ও সংঘাত-সংঘর্ষের বদলে বাতাসে ভাসছে নির্বাচনের গন্ধ। মাঠের বিরোধী দলকে ঠেঙ্গানোর বদলে নিজেরাই ভোটের প্রস্তুতিতে ঘর গোছানোর পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাচেতনার ভোটারদের ভোট নৌকায় উঠানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটের দৌড়ে সামিল হতে এরশাদ জোট গঠনের ঘোষণা দিলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ কার্যত নিষ্প্রভ। তার মতোই নিষ্প্রভ বর্তমান সংসদের দেড় শতাধিক এমপি। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে তারা সংসদে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন না করার ঘোষণায় আগামী ভোটে সে ধরনের সম্ভাবনা দেখছেন না। ‘এমপিত্বের আমলনামা’ খারাপ হওয়ায় সারাদেশের শোয়া শ’ থেকে দেড়শ এমপির দলীয় নমিনেশন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সভা সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সে ইংগিত দিচ্ছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের মধ্যে ততই বাড়ছে হতাশা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সংসদ কোনো ক্রিয়াকর্ম করছে না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব তারা সেটা না করায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জরুরী হয়ে পড়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের প্রস্তুতির সময়ই ইসির উচিত নেবেল প্লেইং ফিন্ড গঠনে মনোযোগ দেয়া। যদিও পুরোপুরি সেটা সম্ভব নয়; তারপরও চেস্টা করতেই হবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পাকিস্তানী কায়দায় ‘কম গণতন্ত্র অধিক উন্নয়ন’ থিউরি দিয়ে আমলাদের হাতে গণতন্ত্রের দায়িত্ব দেয়ায় ফেয়ার নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ক্ষমতাসীনরা সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে দেবে এটা বিশ্বাস করা দুস্কর।
    আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি সবাইকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ‘আমি কখনওই চাইব না আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠুক’। তিনি দিল্লী থেকে প্রকাশিত ‘দি হিন্দু’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর কোনও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন চাই না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাচ্ছেন জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। নানা দাবি উালেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্টজনেরাও গণতন্ত্র বাঁচাতে নির্বাচন ‘অত্যাবশ্যক’ মনে করছেন। তারা বলছেন নির্বাচনকালীণ সরকার কেমন হয় তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। বড় দুই দলের সিনিয়র নেতারা তৃর্ণমূল সফরে গিয়ে নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি, প্রার্থী নির্বাচন এবং দলের ‘বিতর্কিত’ নেতাদের সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু নেতা এবং বড় বড় পদধারী নির্বাচন ইস্যুতে অনেকটা উদাস। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়া এসব এমপি জনগণের মুখোমুখি হবেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন এমন আস্থা পাচ্ছেন না।
    গণতান্ত্রিক দেশ এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্য জরুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন জাতিসংঘ, ওআইসিসহ প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রভাবশারী দেশগুলোর নেতাদের ঢাকা সফর এবং ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের কথাবার্তায় তার প্রকাশ ঘটছে। দেশের সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়ে চাপা ক্ষোভে ফুঁসছে। বিশ্বপরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্যতা পেতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচন জরুরী। সে জন্যই আওয়ামী লীগ চায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করতে। যার কারণে রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ ইসলামী ধারার সংগঠন হেফাজতের ভোটের দিকে হাত বাড়িয়েছে। দলটি প্রচার করছে এটা রাজনৈতিক কৌশল। অন্যদিকে নানা বিতর্কের মধ্যেও বিএনপি নানা কারণে পর্যুদস্ত জামায়াতকে ছাড়ছে না। ভোটের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের নেতা এবং মন্ত্রীরা জেলা সফলে যাচ্ছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়ে বিতর্কিত নেতাদের বার্তা দিচ্ছেন আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হওয়া না হওয়া নিয়ে। অন্যদিকে বিএনপির তৃর্ণমূলে ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক পুনর্গঠন, থিঙ্কট্যাংকের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং কূটনীতিসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনার মাধ্যমে দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে। জেলা পর্যায়ে সংগঠনিক কর্মকান্ড দেখভালের লক্ষ্যে অর্ধশতাধিক কমিটি গঠন করেছে দলটি। ওই কমিটিগুলো সাংগঠনিক পুনর্গঠনে কাজ করছে। এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তত্ত¡াবধানে। বিএনপির দায়িত্বশীল সুত্রের মতে ‘নির্বাচনী সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি অব্যাহত রাখলেও যে কোনো প্রক্রিয়ায় হোক আগামী ভোটে দলটি অংশ নেবেই। গতকালও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার এবং নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। বিএনপিকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে অবিহিত করে তিনি বলেছেন, ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে বিএনপির ৯০০ প্রার্থী আছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৭ মে জোটের ঘোষণা দেয়া হবে। তবে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুশোচনায় এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি কার্যত পরিচিতি ক্রাইসিসে ভুগছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এরশাদ নিজের নের্তৃত্বে জোট গঠনের তৎপর হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ কার্যত হতাশ। তিনি নির্বাচনী এলাকার জনগণ দূরের কথা দলের নেতাকর্মীরাই তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
    নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ন্যাপ ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক পঙ্কজ ভট্টচার্য ইনকিলাবকে বলেন, দুনিয়াতে সবচেয়ে অভিনব তত্ত¡ কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ্যের নের্তৃত্বের দাবিদার আওয়ামী লীগ এখন ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’ থিউরি প্রচার করছে। ’৭১ এর আগে পাকিস্তান শাসকরা এটাই চাইতেন। যেখাবে গণতন্ত্রের জন্য দেশ স্বাধীন করলাম, সেখানে কম গণতন্ত্র প্রচারণায় আতঙ্কিত হই। পাকিস্তানের শাসকরা গণতন্ত্রের রশি টেনে ধরে আমলাদের হাতে দেয়। নির্বাচনের আওয়াজ শুনছি কিন্তু নির্বাচনকালীণ সরকার কেমন হয় সেটার ওপর নির্ভর করছে গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচনকালীণ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ভোটের তিন মাস আগে ও পরে প্রশাসনের মৌলিক বিষয়ে হাত দেবেন না। ফেয়ার ভোট চাইলে ইসির কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে নির্বাচন হতেই হবে। মানুষ চায় ফেয়ার এন্ড ফ্রি ইলেকশন। আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যা করছে তাতে তারা ফেয়ার নির্বাচন দেবে বিশ্বাস করা কঠিন। ওই সময় তো সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, একটি পৌরসভা এভাবে না জিতলে সমস্যা ছিল না। কাজেই নির্বাচনী আমেজ আছে কিন্তু আগাম কিছু বলা দুস্কর। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন বিএনপি হয়তো সে ভাবে পারবে না। তাদের অনেকেই মামলার কারণে নির্বাচনও করতে পারবেন না। তবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থেই। বর্তমানে বড় দুই দল নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেও ‘নিরপেক্ষ ভোট’ হবে কিনা তা নিয়ে স্বংশ্বয় রয়ে গেছে।