• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ‘ওমর’ই সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিড়াল

    সম্প্রতি ইন্টারনেটে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ‘ওমর’ নামের একটি বিড়াল। মেইন কুনের এই গৃহপালিত প্রাণীটিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিড়াল হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম- বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
    জানা গেছে, ২০১৩ সালে এর মালিক যখন একে বাড়িতে নিয়ে যান তখন অন্যান্য বাচ্চা বিড়ালের মতোই দেখতে ছিলো সে। কিন্তু বর্তমানে পরিমাপ করে দেখা গেছে, ওমর নামের ওই বিড়ালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার বা ৩ ফুট ১১ ইঞ্চি।
    অবশেষে ইন্টারনেটে ছবি প্রকাশের পর এর মালিক হার্স্ট জানিয়েছেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের লোকজন ওমরের পরিমাপ পাঠানোর জন্য তাকে অনুরোধ করেছেন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিড়ালের রেকর্ডের মালিক পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের ১১৮ সেন্টিমিটার বা ৩ ফুট ১০ দশমিক ৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি বিড়ালের।
    হার্স্ট জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওমরের ছবি দেন তিনি। তারপর থেকে শুধু ইনস্টাগ্রামেই এর ছবি ২৭ হাজারবারেরও বেশি শেয়ার হয়েছে। এছাড়া ওমরকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন ও সংবাদপত্রেও খবর প্রচারিত হয়েছে।

    বিএনপি উজ্জীবিত

    ভিশন-২০৩০ রূপকল্প

    বদ্ধ পুকুরে ঢিল ছুঁড়লে পানিতে যেমন তোলপাড় শুরু হয়; দেশের রাজনীতিতে তেমনি তোলপাড়  সৃষ্টি করেছে বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ রূপকল্প। এ ঘোষণা একদিকে ক্ষমতাসীন দলকে স্নায়ুবিক চাপে ফেলেছে; অন্যদিকে দলের তৃর্ণমূল নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করেছে। মামলা মোকদ্দমা আর হতাশায় নির্জীব হয়ে পড়েছিল কেন্দ্র থেকে শুরু করে বিএনপির তৃর্ণমূল নের্তৃত্ব। ভিশন ২০৩০ ঘোষণায় ওই নির্জীব নেতারা সজীব দিয়ে উঠছেন। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। শুধু বিএনপি নয় সর্বমহলে আঢ়মোড়া ভেঙ্গেছে বেগম জিয়া ঘোষিত রুপকল্প। বুদ্ধিজীবী, সুশীল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং দেশী বিদেশী কূটনীতিকরা ভিশন-২০৩০ মধ্যে  সুস্থধারা এবং ভবিষ্যতের ইতিবাচক রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। এখন তারা উন্নয়ন, সরকারের সাফল্য এবং কর্মতৎপরতার স্তুতির বদলে ‘আঙ্গুর ফল টক’ প্রবাদের মতোই ভিশন-২০৩০ অন্তঃসারশূন্য প্রমাণে মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা ভিশন-২০৩০ বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এর বড় প্রমাণ দলের ‘ভিশন ২০৩০’। গত বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। এতে সবাইকে নিয়ে এক ‘রেইনবো নেশন’ বা রঙধনু জাতি গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতামূলক নতুন ধারার রাজনীতি, সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকারের প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার করে গণভোট, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লমেন্ট করা যায় কিনা সে ব্যপারে চিন্তাভাবনার ইংগিত দিয়েছেন। যা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তার খোড়াক জুগিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলকে করেছে আতঙ্কিত এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের করেছে উজ্জীবিত।
    দেশবাসীর সামনে রূপকল্প উপস্থাপনের সপ্তাহ না পেরুতেই ‘ভিশন’ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ‘ভিশন ২০৩০’ এর আলোকে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সঙ্কট ও সমাধানে বিএনপির ভাবনা নিয়ে ‘বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার করেছে। সে সেমিনারে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের চিন্তা চেতনা এবং করণীয় তুলে ধরেছেন। এভাবে প্রতিটি সেক্টর নিয়ে বিএনপি ধারাবাহিক ভাবে সেমিনার নিস্পোজিয়ামের আয়োজন করবে বলে জানা গেছে। বিএনপির ভিশন-২০৩০ রূপকল্পে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, মাথাপিছু আয় ৫ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা, প্রবৃদ্ধি দুই অংকে নেয়া, দেশীয় বিনিয়োগে নানা সুযোগ-সুবিধাসহ ২৫৬টি দফা তুলে ধরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। বিএনপির নেতারা বলছেন, এখন থেকে বিএনপির রাজনীতি চলবে ভিশনের আলোকেই। বিএনপির এই ভিশন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল যতই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করুক, সরকারের স্তবক বুদ্ধিজীবীরা যতোই অন্তঃসারশুন্য প্রমানে মরিয়া হোক না কেন এটা যে দেশের রাজনীতিতে বিএনপির ঘুড়ে দ্বাড়ানোর বার্তা তা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হতবিহব্বল (নার্ভাসনেস) দেখেই বোঝা যায়। কয়েক মাস আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সেমিনারে বিএনপিকে ফিনিক্স পাখির সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, বিএনপি একদিন ফিনিক্স পাখির মতোই ছাইভষ্ম থেকে ঘুরে দাঁড়াবে। মির্জা ফখরুলের সেদিনের কথা কেউ গুরুত্ব না দিলেও কার্যত দেশের রাজনীতিতে সেটাই ঘটতে যাচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকে মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন ‘দুই দলের লিখিত রূপকল্প থাকায় নাগরিকেরা তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুযোগ পাবেন। সব মানুষ তো আর আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বিএনপিকে কিংবা বিএনপির চোখ দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিচার করবেন না। তাঁদের নিজেদেরও তো চোখ আছে, আছে স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি। প্রত্যেক ফেরিওয়ালাই তার পণ্যের পক্ষে এবং অন্য বিক্রেতার পণ্যের বিপক্ষে প্রচার চালায়’।
    জুলুম নির্যাতন আর মামলা মোকদ্দমায় বিএনপি ছিল ছন্নছাড়া। গত তিন বছরে দেশের ৩০ জেলা ঘুরে এবং বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সেটাই মনে হয়েছে। এমনো চিত্র দেখেছি শুধু টিকে থাকার জন্য বা নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে বা ব্যবসার পার্টনার করে সুসম্পর্ক রক্ষা করে টিকে থাকছেন। হৃদয়ে বিএনপি কথাবার্তায় আওয়ামী লীগার প্রচার করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ওই বিপর্যন্ত নেতারা হঠাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই এই চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যেও দৃঢ় মনোবল লক্ষ্যণীয়। কয়েক দিন আগেও যেখানে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ছিলেন সেখানে তাদের বেশ দৃঢ় মনোবল দেখা যাচ্ছে। এছাড়া এতদিন নানান কারণে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পিছুটান লক্ষ্য করা গেলেও তারা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। জেলা পর্যায়ে দলীয় সাংগঠনিক কর্মসূচিগুলোতে উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। ‘নির্বাচনে যাবে বিএনপি’ এ বার্তা দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে। নতুন কমিটি ঘোষণার পর রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি জেলা-বিভাগীয় শহরেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা এখন আন্দোলনমুখী হচ্ছেন। কর্মসূচি চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও কর্মসূচি দেয়ার কথা আকারে ইংগিতে জানাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন নেতা জানান, তারা মনে করছেন বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতোই ঘুরে দাঁড়াবে। মাঠের রাজনীতি দিয়েই নব্বইয়ের মতো সাফল্যের পথে হাটবে বিএনপি। ’৮৬ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও বিএনপি যায়নি। ’৮৮ নির্বাচনেও যায়নি। নির্বাচনে না যাওয়ায় আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারপরও বিএনপি ’৯১ সালের নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে। যে কৌশলে আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিয়ে সকলকে অবাক করে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি; এবারও সে পথেই হাটবে। ঘোষিত ভিশন দলটিতে সে পথে নিয়ে যাবে বলেও নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
    প্রশ্ন হলো বিএনপিকে নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা কেন? কেনই বা হঠাৎ বিএনপির এই পরিবর্তন? এর পেছনে এমন কী মেসেজ থাকতে পারে যার জন্য বিএনপি চাঙ্গা ভাব? কারণ আর কিছু নয়; ভিশন ২০৩০ রূপকল্প । সুচিন্তিত এই রূপকল্পের মাধ্যমে বিএনপি দেশবাসীর সামনে নতুন বিএনপির আবির্ভাব ঘটিয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো যে রূপকল্প দেয় ক্ষমতায় গেলে তার সবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না। বিএনপিও হয়তো করবে না। কিন্তু রূপকল্প দিয়ে বিএনপি যে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা দিচ্ছে তা সুস্থধারার রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। এতে রাজনীতিতে কিছুটা হলেও গুনগত পরিবর্তন আসবে। বিএনপির জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণা তাদের নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন কেন্দ্র থেকে যেকোনো কর্মসূচি দেয়া হলে বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে না। প্রশাসনের লোকজনও তাদের দিকে এখন অন্যদৃষ্টিতে তাকাবে। মাঠের কর্মসূচি শুরু হলে নিজেদের মধ্যেকার বিরোধ বহুলাংশে কমে যাবে। বিএনপির তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা এতটাই চাঙ্গা হচ্ছে যে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করার মতোও মনোবল তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে বিএনপি ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের নেতা মন্ত্রীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। এটা কম সাফল্য নয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির ভিশন অনুযায়ী আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকান্ডকে যথাযথভাবে সম্মান দেওয়া হবে। এতে প্রশ্ন থেকে যায় বিএনপি আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতের কী হবে? এ বিষয়টি অস্পষ্ট। এই ভিশনে সত্যতা, সঠিকতা, আন্তরিকতা যেমন আছে, তেমনি আছে ভক্তিপ্রবণতা। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০ দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। দলটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে। ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন ধারার রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যে স্বপ্ন ভিশনে দেখানো হয়েছে তা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই মূল লক্ষ্য হবে। এটা তারা যতটা সক্রিয়ভাবে করতে পারবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘোষিত ভিশন-২০৩০ দলটির জন্য খুবই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তবে ঘোষণা করেই বসে থাকলে চলবে না। এটা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে জনমত গঠনে কাজ করতে হবে। শুধু বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরাই নয়; সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বড় অংশ মনে করছেন বিএনপি ঘোষিত ভিশন খুবই সুচিন্তিত। এ ধরনের ভিশনে দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবে এটা স্বাভাবিক। পাশাপাশি দেশের শিক্ষিত সমাজ, তরুণ-তরুণী ভোটার বিশেষ করে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ তারাও উজ্জীবিত হবে। কারণ তারা নীতিবাচক নয় ইতিবাচক রাজনীতি প্রত্যাশা করেন। যা এতোদিন কোনো দলই দিতে পারেনি। কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের ‘জেগে ওঠার সময়’ নামে একটা উপন্যাস রয়েছে। গ্রাম বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র নিয়ে রচিত ওই উপন্যাসের মতোই বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতাদের জেগে তোলার লক্ষ্যে  সঠিক সময়ে বদ্ধ পুকুরে ঢিল ছোঁড়ার মতোই রূপকল্প ঘোষণা করেছেন।

    শিশু কাঁদানো প্রদর্শনী!

    জাপানে অন্যরকম এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় প্রতি বছর। এই প্রদর্শনীর নাম ‘কাঁদানে সুমো’। সুমো কুস্তিগীরদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় শিশুদের। তারা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে জোরে জোরে ঝাঁকাতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না শিশুরা উচ্চস্বরে কান্নাকাটি শুরু করে।

    গত রবিবার রাজধানী টোকিওতে হয়ে গেল এ বছরের প্রদর্শনী। এতে কয়েকশ’ শিশুকে কাঁদানো হয়। জাপানিরা বিশ্বাস করে, এর মাধ্যমে শিশুর মঙ্গল হয়। দু’জন কুস্তিগীর একে একে শিশুদের ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে কাঁদাতে থাকেন। সন্তানদের এভাবে কাঁদতে দেখে অনেক বাবা-মাও কষ্টে কেঁদে   ফেলেন। কিন্তু তারপরেও তারা সহ্য করে গেছেন সন্তানের জন্য ভালো হবে মনে করে। তাদের ধারনা, এই দিন থেকে সন্তান কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করল, তাদের সহ্যশক্তি বাড়লো এবং অন্যায়ের প্রতি কঠোর মনোভাব তৈরী হলো।

    প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে এই ব্যক্তিক্রমী চর্চা। -ইউপিআই

    সবচেয়ে বড় কৃত্রিম সূর্য উদ্ভাবন করলো জার্মানরা

    মানুষের প্রয়োজনে বিজ্ঞানীরা কত কিছুই না উদ্ভাবন করেছেন। এবার জার্মানির বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকৃতির কৃত্রিম সূর্য।
    সূর্যের উপস্থিতি প্রাণী জগতের জন্য অনেক জরুরি। কিন্তু সব দিন একইভাবে পৃথিবীতে সূর্য আলো ও তাপ ছড়ায় না। যে কারণে অনেক সময়ই বাধাগ্রস্ত হতে পারে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড। যখন পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে না, তখন সোলার প্যানেল বা সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদনকাজ কিভাবে চলবে? যেহেতু সোলার প্যানেলের মূল খাবার আসে সূর্যের আলো থেকে, ফলে পৃথিবীর যেসব দেশে প্রায়ই সূর্যের দেখা মেলে না, তারা রীতিমত বিপদে পড়েন। সেই সংকটের জবাব খুঁজতে গিয়ে জার্মানির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কৃত্রিম এক সূর্য, যাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কৃত্রিম সূর্য।
    বিজ্ঞানীদের এই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. কাই উইগহার্ট, যিনি জার্মানির ইন্সটিটিউট অব সোলার রিসার্চ এর প্রধান। তিনি বলছেন, ‘‘এই সূর্যের মাধ্যমে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃত্রিম আলো পাবো, যা খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানির মতো জায়গায়, যেখানে প্রতিদিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না এবং আবহাওয়াও খুব একটা ভালো নয়।’’
    কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই কৃত্রিম সূর্য?
    ১৪৯টি ফিল্ম প্রজেকশন লাইট একত্রিত করে আলো প্রক্ষেপণ করা হয়। আর সেই সম্মিলিত আলো প্রতিদিন সূর্যের যে রশ্মি পৃথিবীতে আলো ছড়ায় তার থেকে ১০ হাজার গুন বেশি শক্তিশালী। এই আলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আগামী দিনের সোলার বা সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারছেন।

    মাহে রমযান : পারস্পরিক সহযোগিতা বিবেচনা দায়িত্ব ও ছাড়ের কিছু কথা

    অনন্য ইবাদতের মাস রমযান। এ মাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য মাসব্যাপি রোযা পালন করা। মাসের প্রতিটি দিন উপোস করে, সংযমের সঙ্গে কাটানো। এর সঙ্গে উতপ্রোতভাবে জড়িত সাহরী ও ইফতার-রোযার সূচনা ও শেষের খাবার-উপলক্ষ, আছে তারাবীহ। ফরয নামায ও জরুরি অন্যান্য আমলের পাশাপাশি নফল ইবাদত, তেলাওয়াত এবং দান-খায়রাতের সম্পর্কও এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এজন্য দ্বীনী প্রয়োজন ও নিয়মসহ স্বভাবজাত ও   বাস্তব নানা কারণে এ মাসটিতে মুসলমানদের জীবনে কিছু ব্যতিক্রমী রুটিন, প্রস্ত্ততি, উপলক্ষ ও প্রবণতা ফুটে ওঠে। এর প্রভাব মুসলিম প্রধান এ দেশটিতে অ-মুসলিমদেরও স্পর্শ করে যায়। এজন্য রমযানের রোযা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত আমল হওয়া সত্ত্বেও এ উপলক্ষে পারস্পরিক নির্ভরতা, সহযোগিতা ও একের প্রতি অন্যের বিবেচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও সামনে চলে আসে। এ বিষয়গুলো আসে     বিভিন্ন দিক থেকে। মনোযোগ, বিবেচনা ও সচেতনতা না দিলে এতে বিভিন্ন ধরনের বিপত্তি ও সংকটের সৃষ্টি হতে পারে ও হয়ে থাকে। মাহে রমযানে প্রাসঙ্গিক ও জরুরি এ বিষয়গুলোর প্রতি তাই সচেতন হওয়া আমাদের প্রত্যেকের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    দুই.

    প্রথমেই চলে আসে মুসলিম রোযাদার পরিবারগুলোর ঘরণী বা নারী সদস্যদের কথা। রমযানে ঘরের প্রয়োজনীয় সম্মিলিত আয়োজনগুলোতে তারাই সবচেয়ে বেশি শ্রম ও সময় দিয়ে থাকেন। সংসারের কঠিন কাজগুলোর পাশাপাশি ইফতার, সাহরী, রাতের খাবারের প্রস্ত্ততিসহ পরিবারের রোযাদার সদস্যদের নানা চাহিদা মেটানোর পেছনে অকাতরে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। আবার তারা রোযাও রাখেন। ফরয, ওয়াজিব, নফল ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার আবশ্যকতা ও আগ্রহ তাদের মাঝেও থাকে। রোযাজনিত অবসাদ ও ক্লান্তিও তারা বোধ করেন। কিন্তু পরিবারের পুরুষ-সদস্যরা অনেক সময়ই পরিবারের নারীদের সামর্থ ও সীমাবদ্ধতার এই দিকটির প্রতি চোখ রাখেন না। চাহিদা অনুযায়ী কিংবা মনমতো কিছু একটার ঘাটতি ঘটে গেলে তারা বিরক্তি বা ক্ষোভ লুকিয়ে রাখতে পারেন না। এটা রমযান ও রোযার সংযমনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। কখনো কখনো এসব ক্ষেত্রে মানসিক জুলুমের ঘটনাও ঘটে যায়-যেটা রমযান-অ-রমযান কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত নয়।

    এজন্য এ বিষয়টির প্রতি পূর্ণ সতর্কতা ও সর্বোচ্চ বিবেচনা বজায় রাখা রোযাদার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিলে সমস্যার মাত্রা কমে যাবে বলে আশা করা যেতে পারে। এক. রমযানে নারীদের ঘরোয়া আয়োজনগত সেবার মূল্যায়ন করা। কারো পক্ষ থেকে উপকৃত হলে মানুষ যেমন তাকে কথায়-আচরণে খুশি করার চেষ্টা করে, রমযানে ঘরের নারীদের প্রতি তেমন সৌজন্য ও সদাচার প্রকাশ করা উচিত। দুই. সাহরী-ইফতার ও অন্য যে কোনো আয়োজন এবং সেবায় কখনো কখনো মন ও রুচিমাফিক কিছু না পেলে সয়ে যাওয়া ও ধৈর্য্য ধরা। এ কারণে ঘরণীর প্রতি কোনো রকম তিক্ত আচরণ করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা উচিত। তিন. নিজে রোযাদার হয়েও ঘরণী যে শ্রম ও সময় দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা নেওয়া। এটা প্রত্যক্ষভাবে নিজে হাত লাগিয়েও করা যায়। আবার সহযোগী কাজের মানুষের ব্যবস্থা করেও তার কষ্ট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যায়। সময়, পরিস্থিতি ও সুবিধা অনুযায়ী সহযোগিতার ধরণটা ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। চার. রমযানে শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া নফল-মুস্তাহাব পর্যায়ের সেবার জন্য নারীদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দেওয়া। যেমন পরিবারের কর্তার মনে হল, আজ কয়েকজনকে দাওয়াত করে ইফতারের বিশেষ মেহমানদারি করবেন। এজন্য তিনি ঘরণীর সুবিধা-অসুবিধা, ক্লান্তি ও আয়োজনের শ্রম-কোনোদিকেই খেয়াল করলেন না। তার সঙ্গে আলোচনা করে আগেই তাকে মানসিকভাবে তৈরি করা সম্ভব হল না। তাকে শুধু জানিয়ে দিলেন, এতজন মেহমান আসছেন, এই এই আয়োজন করতে হবে। মেহমানদারির এ পদ্ধতি ঠিক নয়। রমযানে ইফতার করানো অনেক ছওয়াবের কাজ। এটা স্বতন্ত্র বিষয়। ঘরণীর ওপর চাপিয়ে না দিয়ে আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে সেটা করতে উদ্বুদ্ধ করা এটিও স্বতন্ত্র বিষয়। দুটির মাঝে সমন্বয় করেই এ ধরনের পুন্যের উপলক্ষগুলো সমাধা করতে হবে। কিংবা অন্য উপায়ও তো খোলা আছে। বাইরে থেকে ইফতার কিনে এনেও এটা করা যায়। আবার ঘটনা যদি এমন হয় যে, দাওয়াত কিংবা বিশেষ মেহমানদারির কোনো ব্যাপার নেই, মেহমান নিজেই বাসায় চলে এসেছেন, সেক্ষেত্রে পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যেইে সেটি পড়ে যায়। তখন আয়োজন নিয়ে অস্থিরতারও কিছু নেই। যা আছে এবং যতটুকু করা গেল, তাতেই ইফতার করানোর হক আদায় হয়ে যায়।

    ঘরণীর প্রতি, পরিবারের নারী সদস্যদের প্রতি সদাচার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের দাবি। রমযানুল মুবারকে এ দাবির জোর ও প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশি। সেজন্য রমযানে এ বিষয়টির প্রতি সবার বিশেষ মনোযোগ থাকা দরকার।

    তিন.

    রমযানে রোযা রাখা তো প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষেরই আমল। আর রোযার অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে, শারীরিক অবসাদ ও   ক্লান্তিবোধ। এ জন্য রমযান মাসে গৃহকর্মীদের প্রতি বিশেষভাবে সদয় ও ছাড়ের দৃষ্টি থাকা উচিত পরিবারে কর্তা-কর্ত্রীদের। পরিবারের সামর্থ ও সুবিধাভেদে গৃহকর্মীদেরও থাকতে পারে নানা পর্যায়। কাজের সহযোগী মহিলা, নিরাপত্তাকর্মী, গাড়ি চালক এবং এ রকম আরও অনেকেই। কোনো কোনো পরিবারে গৃহকর্মী মাত্র একজন থাকতে পারেন, কোথাও হয়ত দিনের খন্ড সময়ের জন্য একজন। তারা যদি রোযাদার হন তাহলে তাদের প্রতি গৃহের অভিভাবকদের কিছু দায়িত্ব চলে আসে। সেটি হচ্ছে, কাজেকর্মে তাদের সহযোগিতা করা। অর্থাৎ যে কাজটি সে একা করত, সেটিতে নিজেও হাত লাগানো যায়। এছাড়া রোযা অবস্থায় নির্ধারিত দায়িত্ব থেকে তার সেবা কিছু কম গ্রহণ করেও এটা করা যায়। অর্থাৎ অন্যান্য সময়ের হিসাব ধরে রমযানে তাকে সবটুকু কাজ করতে বাধ্য না করা। রমযানে তার সেবার বিনিময়ে অন্যান্য মাসের তুলনায় পারিশ্রমিকও কিছু বাড়িয়ে দেওয়া যায়। গৃহকর্মীও আল্লাহর বান্দা, তাকদীর ও তাকসীমে রিযিকের কুদরতী সিদ্ধান্তে সে এখন আমার অধীনস্থ-এ অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত রেখে রমযানে তার প্রতি যতটুকু সদয় হওয়া যায়, ততই কল্যাণ। রমযানুল মুবারক ও রোযার প্রতি সম্মানের ছওয়াব এবং অধীনস্থদের প্রতি সদয় ও সদাচারী হওয়ার ছওয়াব হাসিলের সৌভাগ্য এভাবে হাসিল হতে পারে।

    একইভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রমযানে রোযাদার কর্মচারীদের ওপর কাজের চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা যায়। একজন সুস্থ-সবল ও প্রাণচঞ্চল কর্মীর কাছে যতটুকু সময়ে যতটুকু কাজ নেওয়া হয়ে থাকে, রমযানে রোযাদারের জন্য সেক্ষেত্রে রোযাজনিত ক্লান্তিবোধের প্রতি কিছুটা হলেও সদয় হওয়া অত্যন্ত ছওয়াবের কাজ হবে। মানবিক ও ভ্রাতৃত্বমূলক আচরণ হিসেবেও সেটা গণ্য হবে। এটা অন্যভাবেও করা যায়। কাজের সময়-পরিমাণটাই কমিয়ে দিয়ে তাতে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করানোর ব্যবস্থা করা যায়। এতে রোযাদারের প্রতি সদয় আচরণের সুফল ও বরকত প্রতিষ্ঠানটি অন্যভাবে লাভ করতে পারবে বলেই আশা করা যায়-ইনশাআল্লাহ।

    আমাদের সমাজে অনেক সময় অর্থ-অপচয়, সময়-অপচয় নিয়ে সচেতনতার প্রসঙ্গ উঠিয়ে একশ্রেণীর মানুষ কেবল ধর্মীয় বিষয়গুলো টেনে আনেন। হজ্ব-কুরবানীর অর্থ-খরচ নিয়ে লম্বা কথা বলেন। অফিস চলাকালে নামাযের বিরতি কিংবা রমযানে রোযাজনিত ক্লান্তির কারণে কর্মঘণ্টা ‘নষ্ট’ হওয়ার গল্প ফাঁদেন। এটা মূলত ধর্মীয় জীবন থেকে দূরে সরে থাকার একটি স্বাভাবিক অথচ অবাস্তব প্রবণতা। কারণ এ সমাজে নেতিবাচক কাজে ও গুনাহর খাতে দৈনিক কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়। সেটা তারা ভুলে যান। ফাঁকিবাজি, ইউনিয়ন, অপরাজনীতি ইত্যাদি নেতিবাচক কারণে অফিস-আদালত, কলকারখানায় প্রতিদিন কোটি কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সেদিকে তাদের চোখ যায় না। তাই তাদের ভুলযুক্তির পেছনে না ছুটে ধর্মীয় জরুরি আচরণ-অনুষ্ঠান ও আল্লাহর ইবাদতে কর্মীদের নিমগ্নতার সময়টাকে প্রতিষ্ঠানের জন্য রহমতের কারণ মনে করা উচিত। অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার দিক থেকে দেখলে তেমনটিই ঘটতে দেখা যায়।

    এক্ষেত্রে জরুরি অপর একটি বিষয়ের উল্লেখ খুবই প্রাসঙ্গিক। সেটি হচ্ছে, রমযানে কাজের ক্ষেত্রে কর্মীদের মাঝে ইচ্ছাকৃত কোনো ধরনের ঢিলেমি না থাকা চাই। গৃহকর্মী বলি আর প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী বলি, নির্ধারিত সময় ও চুক্তিতে পুরো কাজ করার মানসিকতা ও প্রস্ত্ততি নিজেদের মাঝে লালন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্তার দায়িত্ব হচ্ছে রমযানে রোযাদার অধীনস্থদের প্রতি সদয় হওয়া। এটা তার কাজ। কিন্তু কর্মীদের মনে রাখতে হবে, কর্মীদের জন্য এটা অধিকার নয়। তারা তাদের কাজ যথা সময়ে, যথা নিয়মে করার চেষ্টা করবেন। মূলত দু’ দিক থেকে পরস্পরের প্রতি বিবেচনা থাকলে বিষয়টির বিবেচনা ও ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হয়ে যায়।

    চার.

    রমযানের খাবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় একটি জটিল ও বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা রমযানুল মুবারকে রোযাদার ভোক্তাদের প্রতি সুবিচার করবেন-এটাই তো ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক সুবিচার ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। অথচ এসব ব্যবসায়ী ভাইয়ের অধিকাংশই মুসলিম ও রোযাদার। তারপরও কেন এমন হয়-ভাবলে সবারই মন বিষিয়ে উঠে। এটা কি ব্যবসায়ীদের উপরতলার কয়েকজনের সিন্ডিকেটেই সীমাবদ্ধ, নাকি ‘সুবিধার ভাগ’ নিতে গিয়ে উপর-নিচের সবাই সমান আকাঙ্খী, সাধারণ রোযাদারদের পক্ষে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এটা বের করা কঠিন। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ী সমাজ এখানে রোযাদারদের হা-হুতাশ ও কষ্টের তীরে যে প্রতিমুহূর্তে বিদ্ধ হন-এটা আমরা অনুভব করি। রমযান মাসে রোযাদারদের সঙ্গে ‘চালাকি’ করে ব্যবসা না করলে ব্যবসায়ীদের কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। চোখে দেখা নগদ লাভের বাইরেও লাভ-ক্ষতির অন্য অংক আল্লাহ তাআলার হিসাবে চালু আছে। অনেক সময় সে হিসাব এ দুনিয়াতেও তার দাপট নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। তাই রমযানে রোযাদারদের ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা ‘বাড়তি’ ও ‘বিশেষ মৌসুমী’ মুনাফার চেষ্টা বন্ধ রাখলে প্রকৃত হিসাবে তারাও লাভবান হবেন। আর রোযাদাররাও স্বস্তি পাবেন। এর ফলে রমযানে রোযাদার ভাইদের বিক্রেতা ও ভোক্তা-দুটি শ্রেণীর মাঝে পরস্পরের হক ও ভ্রাতৃত্বের দাবিও কিছুটা পূরণ হবে।

    রমযানে পারস্পরিক সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত এরকম আরো বহু ক্ষেত্র সামনে চলে আসে। চলার পথ, কেনাকাটা, যানবাহনে উঠা-বসা ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে অনেক সময়ই পরিস্থিতি এমন হয় যে, কোনো একজনের অনঢ় অবস্থান কিংবা একগুঁয়েমির কারণে জটিলতা তৈরি হয়। এতে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন। এসব ক্ষেত্রে সহনশীলতাই প্রধান অবলম্বন। কেউ হয়তো ভুল করছেন, অপরজন নরম হয়ে, অন্য কেউ কোমলভাবে বুঝিয়ে পরিস্থিতি সহজ করতে উদ্যোগী হলে সবার জন্যই কল্যাণ হয়।

    পাঁচ.

    রমযানুল মুবারকে সব মুসলিমেরই রোযা রাখার কথা। সে হিসেবে রাস্তায় বের হলে রোযাহীন কোনো মানুষের সাক্ষাত পাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা এরকম নয। রমযানে প্রথম পাঁচ-সাত দিনের পরই রাস্তাঘাটে দেখা যায় রোযাহীন মানুষের উৎকট খাবার-দাবারের আয়োজন। কিছুদিন আগেও এ দৃশ্যটা কেবল ঢাকা শহরের কিছু কিছু জায়গায় সীমিত ছিল। এখন মফস্বলের ছোট শহরগুলোতেও এ জাতীয় লজ্জাহীন খাবার-দাবারের ধুম চোখে পড়ে। রমযানে দিনের বেলায় খানাপিনার এই প্রকাশ্য ও আধা-প্রকাশ্য ব্যবস্থা বা মহড়া শুধু মারাত্মক গুনাহর কাজই নয়, চরম অমানবিক ও বর্বরতাতুল্য কাজ।

    আলোচনার জন্য ধরে নিতে পারি এদেশে অ-মুসলিম যারা আছেন তারা তো আর রোযা রাখেন না। তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ-নারীরা বাসার বাইরে এলে বা পথে থাকলে তাদের তো কোথাও না কোথাও খেতে হয়। একই সঙ্গে এ তর্কও ওঠানো যায় যে, মুসলমানদেরও তো অনেকে মুসাফির থাকতে পারেন, কেউ কেউ রোযা না রাখার মতো অসুস্থতায় আক্রান্তও থাকতে পারেন। তারাও তো কোথাও না কোথাও খাবেন। এসব তর্ক আসলে শুধুই তর্ক। এগুলো যুক্তির সীমানার মধ্যে পড়ে না। এই তর্কের বাইরে গিয়ে একথাও বলা যায় যে, বহু লোক তো কোনো কারণ ছাড়াও রোযাহীন থাকতে পারেন, এটাও তো তার অধিকার (!) তাই তারও তো খেতে হবে। হ্যাঁ, আল্লাহ তাকে খাদ্য কিনে খাওয়ার সামর্থ দিয়েছেন, পেটে ক্ষুধা দিয়েছেন, আল্লাহর বিধান দিয়েছেন রোযা রাখার। কিন্তু এর জন্য আল্লাহ কোনো কুদরতি চাপ প্রয়োগ করেন না। বান্দা পয়সার জোরে, সুস্থতার জোরে নিজের ক্ষমতা দিয়ে জাহির করেছেন, তিনি রোযাহীন থাকতে পারেন। তিনি তা করেছেন। তার ফল অবশ্যই তিনি ভোগ করবেন।

    অমুসলিম, অসুস্থ, মুসাফির কিংবা অকারণ রোযাহীন যে-ই হোন, তার রোযা না রাখাটাকে হাজার হাজার রোযাদারের সামনে জাহির করার কী আছে! রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে খেতে থাকা, হোটেলগুলো প্রকাশ্যে খুলে রাখা, বিড়ি-সিগারেট, চা-পান প্রকাশ্যে চালিয়ে যাওয়ার কী প্রয়োজন! এটা হচ্ছে স্বভাবজাত নির্লজ্জতার পরিচায়ক একটি আচরণ। ইচ্ছা করে মাহে রমযানের অবমাননা, সচেতনভাবে রোযাদারদের কষ্ট দেওয়া ও অসম্মান করার মহড়া এটি।

    বাংলাদেশের মতো দেশে রমযান মাসে প্রকাশ্যে যারা খানাপিনা করেন, তারা কেবল ক্ষুধা মেটানোর জন্য এমন করেন না। এর সঙ্গে অত্যন্ত নীচুমানের জীঘাংসা ও ছোটলোকী মেজাজ জড়িত। তাই যারা না বুঝে অন্যের দেখাদেখি এমন করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, যে কোনো কারণেই হোক রমযান মাসে নিজে রোযা রাখতে না পারলেও রমযানুল মুবারক ও সিংহভাগ মানুষ -রোযাদারদের প্রতি সম্মান দেখান। এতে হতে পারে, একদিন আল্লাহ তাআলা আপনাকে বড় ক্ষতি থেকে বাঁচিয়ে দেবেন। আর যারা বুঝেশুনেই এমন করছেন তাদেরকে শুধু বলতে পারি, সামর্থ আর স্বাস্থ্যের জোরে রোযার দিনে প্রকাশ্যে উদরপূর্তির এই ‘ফুটানি’ আল্লাহ তাআলা সহ্য করেন না। এমন দিন তাদের না আসুক যে, টাকা থাকবে, খাবার থাকবে, ক্ষুধা থাকবে, খাওয়ার তীব্র আগ্রহও থাকবে, কিন্তু কিছুই খেতে পারছেন না এবং এভাবেই বছরের পর বছর ‘হর রোজ রোযা’ রেখে পার করতে হবে।

    ছয়.

    এ পর্যায়ে দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম কর্মকর্তাদের বিবেচনার জন্য একটি বিষয় আলোচনা হওয়া দরকার। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে শালীনতা-অশালীনতা প্রশ্নে বেশির ভাগ গণমাধ্যমের উপস্থাপন সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ। তারপরও মুবারক রমযান মাসে এ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থাপন ও পরিবেশনা একটা সংযমী অবয়ব ধারণ করতে পারে। এটা রমযান মাসের দাবি। এটা রোযাদারদের সংযম চেতনার দাবি। দাবি করেই বলা যায়, রমযানে গণমাধ্যমগুলো অপেক্ষাকৃত সংযমী পরিবেশনা রাখলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বৈ কমবে না। জরুরি খবরাখবর জানতে গিয়ে, দেশ-বিদেশের অবস্থা দেখতে গিয়ে কবীরা গুনাহর হাতছানির মধ্যে পড়ে যাওয়াটা রোযাদারের জন্য চরম ক্ষতিকারক ও অস্বস্তিকর। রোযাদারও তো মানুষ। রমযানের সংযমের মাঝেও তার পেছনে রিপুর প্ররোচনা চলতে থাকে। সেখানে তার চেষ্টা ও প্রয়োজন থাকে রিপুর ওপর জয়ের। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলো যদি রিপুর সহায়ক শক্তি হয়ে রোযাদারের সংযমের দূর্গে আঘাত করতে থাকে, সেটাতো সমীচীন কাজ হয় না। রিপুর সহযোগী না হয়ে শুদ্ধ সংযমী আত্মার সহায়ক শক্তি হিসেবে গণমাধ্যমগুলো ভূমিকা রাখুক। অন্তত রমযান মাসে। রমযান মাসে কোটি রোযাদারের এমন একটি নির্দোষ প্রত্যাশার মূল্য দিলে গণমাধ্যমের কর্তারাও কল্যাণের ভাগিদার হবেন বলে আমরা আশা করতে পারি।

    মাহে রমযানের পবিত্রতার সঙ্গে নানা প্রয়োজনে প্রকাশ্যে বিচরণশীল নারীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম নারীকে পর্দা করে চলার নির্দেশ দিয়েছে। আবরণের মধ্যে নিজেকে ঢেকে চলতে নারীদের ওপর ইসলাম ফরয করে দিয়েছে। এটা সব সময়ের জন্য, বাইরে বের হলে নারীর এভাবেই চলা উচিত। কিন্তু যারা এ নির্দেশটা পালন করেন না, এদেশে তাদের একটি অংশ অ-মুসলিম হলেও বড় অংশটি আসলে মুসলিম। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অবাধ্যতার এই আমলটি সেই মুসলিম বোনেরা অন্তত রমযান মাসে যদি বন্ধ রাখতে শুরু করেন তাহলে তাদের সামনে কল্যাণের দরজা খুলে যেতে পারে। মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, নারীর পর্দাহীনতা শুধু নারীর নিজের একটি করণীয় আমল পরিহারের বিষয় নয়, এর সঙ্গে পুরুষেরও চোখ ও অন্তরের আমল নষ্ট হওয়ার বিষয় জড়িত। পর্দা না করার গুনাহটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের হলে এক ব্যাপার ছিল। কিন্তু এটি তো সংক্রামক একটি গুনাহ। পর্দা না করে যারা আরেকটু খোলামেলা কিংবা টাইটফিট পোশাক পরে বাইরে বের হন তাতে তাদের কোনো মঙ্গল না হলেও স্বভাবগত কারণেই বহু পুরুষের ক্ষতি হয়ে যায়। এজন্য উগ্র-বেপর্দা নারীদের প্রতি অনুরোধ, আপনাদের গুনাহময় নিজস্ব লাইফ-স্টাইলের মাধ্যমে অন্যদের রমযানের সংযমে চিড় ধরানো থেকে বিরত থাকা আপনাদের দায়িত্ব। নিজের ধ্বংস নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা না থাকলেও (হয়তো সেটা আপনার অধিকার (!)) অপরের ক্ষতি তো আপনি করতে পারেন না। রমযান মাসে লজ্জাশীলতার পরিচয় দিয়ে একটু সদয় হয়ে রাস্তায় বের হলে বহু রোযাদার পুরুষের ‘জানটা’ বেঁচে যায়।

    সাত.

    রমযান মাসে রোযার প্রাণ ও আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের   বিভিন্ন বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা। তারা উদ্যোগী ও তৎপর হলে রমযানের সংযমী পরিবেশ গড়ে তোলা সহজ ব্যাপার। রমযানের বিভিন্ন জরুরি আনুষ্ঠানিকতাগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। উপরে আলোচিত বেশ কয়েকটি বিষয়ে রাষ্ট্র তৎপর হলে সমস্যাগুলোর সমাধান আপনা থেকেই হয়ে যেত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রাষ্ট্রের সেক্যুলার চরিত্র দিন দিন যতই খোলাসা হচ্ছে ততই এসব ক্ষেত্রে তার অমনোযোগ ও উন্নাসিকতা বেড়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় এবং ধর্ম সংশ্লিষ্ট জরুরি নৈতিকতার ক্ষেত্রগুলোতে রাষ্ট্রকে ইদানীং দূরবর্তী দর্শকের ভূমিকাতেই বেশি দেখা যাচ্ছে। তারপরও নাগরিক সুবিধা-অসুবিধার অতি সাধারণ ও অতি প্রয়োজনীয় বিবেচনা থেকে কয়েকটি বিষয়ে রমযানে রাষ্ট্রের মনোযোগী ভূমিকা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি।

    এর একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম, ঘাটতি প্রচুর। এগুলো পুরনো কথা। এর জন্য বর্তমান সরকার বহু হাঁকডাক করেও গত আড়াই বছরে কেন কিছু করতে পারেনি-সে তর্কেও যেতে চাই না। রমযানে লোডশেডিং-এর মাত্রাটা যেন কম থাকে শুধু এটুকুই নাগরিকদের এখনকার দাবি। বিশেষত সাহরী, ইফতার ও তারাবীহর সময়ে দু’ ঘণ্টা করে মোট ছয় ঘণ্টা সময় যেন দেশের কোথাও লোডশেডিং না হয়-এ বিষয়টি নিশ্চিত করা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। এর সঙ্গে যুক্ত হবে যোহর ও আসরের নামাযের সময় আরো দু ঘণ্টা। গত দুটি বিশ্বকাপে শুধু টিভিতে খেলা দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেশজুড়ে নিশি্ছদ্র বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ বিভাগ তার ‘সক্ষমতা’ দেখিয়েছে। রমযানে সে সক্ষমতা না দেখাতে পারলে আগের দেখানো সব সক্ষমতার ভুল অর্থ দাঁড় করিয়ে নিতে বাধ্য হবেন রোযাদার নাগরিকরা।

    অপর দুটি ক্ষেত্র হচ্ছে গ্যাস ও পানি। রমযান মাসে এ দুটি ক্ষেত্রে কোনো সংকট ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে রোযাদারদের সমস্যার অন্ত থাকে না। এ দুটি খাত নিয়ন্ত্রণে যারা ভূমিকা রাখেন, রমযানে তাদের মনোযোগ ও দক্ষ তৎপরতা দেখতে চায় দেশবাসী। যানজট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাষ্ট্রের কর্ণধাররা যদি এসব বিষয়ে রমযানে তৎপর না থাকেন তাহলে রোযাদাররা ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন, বিষয়টা এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে মনে হয় না। জনগণের ক্ষোভ ও বিক্ষোভের ঘটনাও রাষ্ট্র পরিচালকদের দুশ্চিন্তার কারণে পরিণত হতে পারে। এজন্য এসব ক্ষেত্রে মনোযোগদান নিজেদের প্রয়োজনেই তাদের দরকার।

    মাহে রমযানের রোযা ও অন্যান্য ইবাদত-আমলের মধ্য দিয়ে একটি সামগ্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। এজন্য রমযান ও রোযার বিষয়টিকে যার যার ব্যক্তিগত ধর্মপালনের পর্যায়ে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এর জন্য ব্যক্তির পর সমাজ, সমাজের পর রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতাকে সবারই গুরুত্বের চোখে দেখা উচিত। এটি কেবল এদেশীয় প্রেক্ষাপটের বিষয় নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বের সবকটি দেশেই এ মাসের চিত্রে একটি উজ্জ্বল ভিন্নতা ফুটে ওঠে। অমুসলিম-প্রধান দেশগুলোতেও মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে রমযানের পবিত্রতা ও জরুরি আনুষ্ঠানিকতা রক্ষায় জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন। তাহলে আমরা কেন সচেতন হব না? নিজেদের পরিমন্ডলে সহযোগিতা, সদয়তা ও ছাড়ের মধ্য দিয়ে সুন্দর ও কামিয়াব রমযান কাটানোর চেষ্টা আমাদের করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের কবুল করুন।

    সেন্ট্রাল কোরিয়ান নিউজ এজেন্সি’র হুমকি
    যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে হরহামেশা হুমকি দিয়ে আসলেও উত্তর কোরিয়া চীনের বিরুদ্ধে শক্ত কথা বলার নজির নেই বললেই চলে। কিন্তু এবার সরসারি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের মুখ থেকে উচ্চারিত না হলেও হুমকি এসেছে তাদের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা সেন্ট্রাল কোরিয়ান নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) থেকে। সংবাদসংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। কেসিএনএর এক মতামতে বলা হয়েছে, নিজের নিরাপত্তার জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত চীনের। সতর্ক করে বলা হয়েছে, চীন যদি আবার তাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়, তাহলে ভয়াবহ ফল ভোগ করতে হবে। উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র ও প্রধান কূটনৈতিক সমর্থক চীনকে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর চীনা গণমাধ্যমে এর জবাব দেওয়া হয়েছে। দেশটির গেøাবাল টাইমস পত্রিকায় বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্রধর উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কিছু ভ্রান্ত যুক্তির ফাঁদে পড়েছে। কোরীয় যুদ্ধের সময় থেকে উত্তর কোরিয়া ও চীনের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। ব্যবসা ও সহযোগিতা সব দিক থেকে দেশটির প্রধান বন্ধু চীন। স¤প্রতি তাদের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন হামলার হুমকি দিচ্ছে, তখনও চীন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে তাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। কিন্তু এই পরমাণু কার্যক্রম নিয়েই উত্তর কোরিয়ার ওপর পুরোপুরি খুশি নয় চীনও। দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন পাঁচ বছর হলো ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু এখনো বেইজিং সফর করেননি তিনি।

    শবে বরাত : কিছু ভ্রান্তি নিরসন

    আলকাউসারের শাবান ১৪২৬ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৫ ঈ.) সংখ্যায় ‘বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শাবান ও শবে বরাত’ শিরোনামে, শাবান ১৪২৭ হি. (সেপ্টেম্বর ’০৬ ঈ.) সংখ্যায় ‘উলামায়ে সালাফের উক্তির আলোকে শাবান শবে বরাত’ শিরোনামে এবং রজব ১৪২৮ হি. (আগষ্ট ’০৭ ঈ.) সংখ্যায় ‘অজ্ঞতা ও রসম-রেওয়াজের কবলে শাবান-শবে বরাত : নববী নিদের্শনাই মুক্তির উপায়’ শিরোনামে শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কে অনেকগুলো প্রয়োজনীয় কথা পাঠকের সামনে এসে গেছে। ওয়াল হামদু লিল্লাহি তাআলা আলা যালিকা হামদান কাছীরা।

    এ সংখ্যায় শুধু কিছু ভুল ধারণা চিহ্নিত করে দিতে চাই। কেননা এগুলো সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন এসে থাকে।

    প্রশ্ন ১ : আমি এক কিতাবে পড়েছি যে, শবে বরাত বিষয়ক সকল হাদীস ‘মওযু’। ইবনে দিহয়ার উদ্ধৃতিতে কথাটা ওই কিতাবে লেখা হয়েছে।

    উত্তর : এটা একটা ভুল কথা। ইবনে দিহয়া কখনো এমন কথা বলতে পারেন না। যিনি তার উদ্ধৃতিতে এ কথা লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। ইবনে দিহয়া শুধু এটুকু বলেছেন যে, শবে বরাতে বিশেষ নিয়মের নামায এবং সে নামাযের বিশেষ ফযীলতের যে কথাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত, তা মওযু। তাঁর মূল আরবী বক্তব্য তুলে দিচ্ছি :

    أحاديث صلاة البراءة موضوعة

    ‘শবে বরাতের বিশেষ নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মওজু।’

    (তাযকিরাতুল মওজুআত, মুহাম্মাদ তাহের পাটনী পৃ. ৪৫)

    আল্লামা লাখনৌবী রাহ. ‘আল আছারুল মারফুআ ফিল আখবারিল মওজুআ’ (পৃ. ৮০-৮৫)তে পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘শবে বরাতে রাত্রি জেগে ইবাদত করা এবং যেকোনো নফল আমল যাতে আগ্রহ বোধ হয় তা আদায় করা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। এ রাতে মানুষ যত রাকাআত ইচ্ছা নামায পড়তে পারে, তবে এ ধারণা ভুল যে, এ রাতের বিশেষ নামায রয়েছে এবং তার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যেসব বর্ণনায় এ ধরনের কথা পাওয়া যায় সেগুলো ‘মওযু।’ তবে এ রাত একটি ফযীলতপূর্ণ রজনী এবং এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগী করা মুস্তাহাব-এ বিষয়টি সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। মোটকথা, এ রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করা যেমন ভুল তদ্রূপ মনগড়া কথাবার্তায় বিশ্বাসী হওয়াও ভুল।’

    আল্লামা শাওকানীও ‘আল ফাওয়াইদুল মাজমূআ’ পৃ. ৫১)তে এই ভুল ধারণা সংশোধন করেছেন।

    প্রশ্ন ২ : একজন আলিমের কাছে শুনেছি যে, শবে বরাতে কবরস্থানে যাওয়া ‘মাসনূন’ নয়। আর আজকাল যেভাবে এ রাতে কবরস্থানে মেলা বসানো হয় এবং মহিলারাও বেপর্দা হয়ে সেখানে গিয়ে ভিড় করে, তা তো একেবারেই নাজায়েয।

    প্রশ্ন এই যে, যতটুকু নাজায়েয তা তো অবশ্যই নাজায়েয, কিন্তু যদি মহিলারা বেপর্দা না হয় এবং কোনো গুনাহর কাজও সেখানে না হয় তবুও কি এ রাতে কবর যিয়ারত মাসনূন বলা যাবে না? হাকীমুল উম্মত ‘ইসলাহুর রুছূম’ কিতাবে একে ‘মাসনূন’ লিখেছেন।

    উত্তর : মহিলাদের জন্য যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরস্থানে যাওয়া এমনিতেও নিষেধ। এরপর যদি পর্দাহীনতা ও অন্যান্য আপত্তিকর বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তা আরো কঠিন হয়ে যায়। আর কবরস্থান যদি নিকটবর্তী হয় এবং মাযার না হয় আর সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কাজকর্ম না হয় তাহলে পুরুষের জন্য এ রাতে সেখানে গিয়ে যিয়ারত করার বিধান কী? হাকীমুল উম্মত রাহ. প্রথমে একে মাসনূন লিখেছিলেন। পরে আরো চিন্তা-ভাবনা ও উলামায়ে কেরামের সঙ্গে মত বিনিময় করার পর ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন এবং লেখেন যে, আমি কবরস্থানে যাওয়া থেকে বারণ করাকেই অধিক সতর্কতার বিষয় মনে করি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২৮) শরীয়তের নীতিমালার আলোকে হযরত থানভী রাহ-এর দ্বিতীয় মতই অগ্রগণ্য।

    প্রশ্ন ৩ : সুনানে ইবনে মাজাহ-তে (হাদীস নং : ১৩৮৮) পনেরো শা‘বান রাত সম্পর্কে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে :

    قوموا ليلها وصوموا نهارها

    এই রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনে (অর্থাৎ পনেরো শা’বান) রোযা রাখ।

    এই হাদীসটি থানভী রাহ. ‘খুতবাতুল আহকাম’-এ উল্লেখ করেছেন এবং ‘ইসলাহুর রুসূম’-এ পনেরো শাবান-এর রোযাকে মাসনূন বলেছেন। কিন্তু এক ব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে, শায়খ আলবানী এই হাদীসটিকে মওযু বলেছেন। এরপর হযরত মাওলানা মুহাম্মদ তকী উছমানী ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম-এর ‘ইসলাহী খুতবাত’-এ দেখলাম যে, সেখানে এই হাদীসটিকে ‘জয়ীফ’ লেখা হয়েছে এবং এই রোযাকে ‘সুন্নত’ মনে করা ভুল বলা হয়েছে। প্রকৃত বিষয়টি বুঝে আসছে না। আশা করি সাহায্য করবেন।

    উত্তর : ইবনে মাজাহর উপরোক্ত হাদীসটি ‘মওজু’ তো কখনোই নয়। তবে সনদের দিক থেকে ‘জয়ীফ’। যেহেতু ফাযাইলের ক্ষেত্রে ‘জয়ীফ’ গ্রহণযোগ্য তাই আলিমগণ শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে এ হাদীস বয়ান করে থাকেন।

     

    শায়খ আলবানী ‘সিলসিলাতুয যয়ীফা’ (৫/১৫৪) তে এই বর্ণনাকে ‘মওজূউস সনদ’ লিখেছেন। অর্থাৎ এর ‘সনদ’ মওজূ। যেহেতু অন্যান্য ‘সহীহ’ বর্ণনা উপরোক্ত বর্ণনার বক্তব্যকে সমর্থন করে সম্ভবত এজন্যই শায়খ আলবানী সরাসরি ‘মওজূ’ না বলে ‘মওজূউস সনদ’ বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তথাপি শায়খ আলবানীর এই ধারণা ঠিক নয়। সঠিক কথা এই যে, এই বর্ণনা ‘মওজূ’ নয়, শুধু ‘জয়ীফ’। ইবনে রজব রাহ. প্রমুখ বিশেষজ্ঞদের এই মতই আলবানী সাহেব নিজেও বর্ণনা করেছেন।

    এ প্রসঙ্গে আলবানী সাহেব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তা এই যে, এ বর্ণনার সনদে ‘ইবনে আবী ছাবুরা’ নামক একজন রাবী রয়েছেন। তার সম্পর্কে হাদীস জাল করার অভিযোগ রয়েছে। অতএব এই বর্ণনা ‘মওজু’ হওয়া উচিত। তবে এই ধারণা এ জন্য সঠিক নয় যে, ইবনে আবী সাবুরাহ সম্পর্কে উপরোক্ত অভিযোগ ঠিক নয়। তার সম্পর্কে খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, জয়ীফ রাবীদের মতো তার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা ছিল। রিজাল শাস্ত্রের ইমাম আল্লামা যাহাবী রাহ. পরিষ্কার লিখেছেন যে, ‘স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার কারণেই তাকে জয়ীফ বলা হয়েছে।’ দেখুন সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/২৫০

    সারকথা এই যে, উপরোক্ত বর্ণনা মওজু নয়, শুধু জয়ীফ।

    পনেরো শাবানের রোযা সম্পর্কে থানভী রাহ. যে ‘মাসনূন’ বলেছেন তার অর্থ হল মুস্তাহাব। আর ইসলাহী খুতবাতের আলোচনা মনোযোগ দিয়ে পড়া হলে দেখা যায় যে, তা এ কথার বিপরীত নয়। ওই আলোচনায় ‘জয়ীফ’ হাদীসের ওপর আমল করার পন্থা বিষয়ে একটি ইলমী আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। হযরত মাওলানা পনেরো তারিখের রোযা রাখতে নিষেধ করেননি। তিনি শুধু এটুকু বলেছেন যে, একে শবে বরাতের রোযা বলবে না। গোটা শাবান মাসেই শুধু শেষের দুই দিন ছাড়া, রোযা রাখা মুস্তাহাব। তাছাড়া প্রতিমাসের ‘আয়্যামে বীজ’ (চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখ) রোযা রাখা মুস্তাহাব। এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দিনের রোযা রাখা হলে ইনশাআল্লাহ ছওয়াব পাওয়া যাবে।

     

    প্রশ্ন ৪ : আমি একটি পুস্তিকায় পড়েছি যে, শবে বরাত সম্পর্কে যেসব রেওয়ায়েত পাওয়া যায় তন্মধ্যে সনদের বিবেচনায় সবচেয়ে উত্তম রেওয়ায়েতটিই হল ‘জয়ীফ।’ তাহলে অন্যগুলোর অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। এ কথা কি সঠিক?

    উত্তর : এ কথাটা একেবারেই ভুল। শবে বরাত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদীস এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদীস ‘সহীহ’, কিছু হাদীস ‘হাসান’ আর কিছু ‘জয়ীফ’। এ জন্য শবে বরাতের ফযীলত বিষয়ক সকল হাদীস জয়ীফ-একথা ঠিক নয়। সনদের বিচারে সবচেয়ে উত্তম বর্ণনা সেটা যা ইবনে হিববান ‘কিতাবুস সহীহ’ তে (হাদীস ৫৬৬৫) বর্ণনা করেছেন।

    عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.

    হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’

    আরো একাধিক হাদীসে এ বিষয়টি এসেছে। যেগুলোর সনদ ‘হাসান লিযাতিহী বা হাসান লিগায়রিহী।’ যথা মুসনাদে আহমদ এর ৬৬৪২ নং হাদীস, এবং মুসনাদুল বাযযার (২০৪৫)-এ আবু বকর সিদ্দীক রা. থেকে বর্ণিত হাদীস।

    এছাড়া এ রাতের আমল সম্পর্কে ‘শুআবুল ঈমান’ বায়হাকীর নিম্নোক্ত হাদীসটি লক্ষণীয়।

    হযরত আলা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

    هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

    ‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

     

    ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন-

    هذا مرسل جيد

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এ রাতে দীর্ঘ নফল নামায পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য।

    এধরনের বেশ কয়েকটি সহীহ ও হাসান হাদীস বিদ্যমান থাকা অবস্থায় কি এ কথা বলা উচিত যে, এ বিষয়ে সর্বোত্তম হাদীসটি সনদের বিচারে জয়ীফ? ভালোভাবে না জেনে কথা বলা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন।

    প্রশ্ন ৫ : লোকেরা বলে, এ রাতের ফযীলত শবে কদরের সমান। কুরআন মজীদে ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে বরাত বোঝানো হয়েছে। এ কথাটা কি সঠিক?

    উত্তর : দুটো কথাই ভুল। শবে বরাতকে শবে কদরের সমান মনে করা ভুল। কুরআন-হাদীসে শবে কদরের যত ফযীলত এসেছে শবে বরাত সম্পর্কে আসেনি। বিশেষত কুরআন মজীদ নাযিল হওয়ার মতো বরকতময় ঘটনা শবে কদরেই সংঘটিত হয়েছে। এই ফযীলত অন্য কোনো রজনীতে নেই।

    ‘লায়লাতিন মুবারাকা’ বলে শবে কদরকেই বোঝানো হয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সূরা কদরে। এজন্য এখানে শবে বরাত উদ্দেশ্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব ধরনের প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত হয়ে সঠিক অবস্থানে দৃঢ়পদ থাকার তাওফীক দান করুন। ইমাম ইবনে রজব রাহ. এর ভাষায় : ‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে যিকির, দুআ ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্ত্তত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামায পড়বে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যানের মওসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্য দেওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে ছওয়াব লাভের আশা নিয়ে পনেরো তারিখের রোযাও রাখবে। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দুআ কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যথা : শিরক, হত্যা, হিংসা-বিদ্বেষ। এগুলো সবগুলোই কবীরা গুনাহ। আর হিংসা-বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

    যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীন সম্পর্কে অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষ বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ ও গর্হিত অপরাধ। এজন্য মুসলমানদের কর্তব্য হল সর্বদা   অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পাক-পবিত্র রাখা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরী ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফিরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ -লাতাইফুল মাআরিফ পৃ. ১৫৫-১৫৬#

    ভাবনা সবার নির্বাচন
    বদলে যাচ্ছে দেশ; বদলে যাচ্ছে রাজনীতির চালচিত্র। জুলুম-নির্যাতন ও সংঘাত-সংঘর্ষের বদলে বাতাসে ভাসছে নির্বাচনের গন্ধ। মাঠের বিরোধী দলকে ঠেঙ্গানোর বদলে নিজেরাই ভোটের প্রস্তুতিতে ঘর গোছানোর পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাচেতনার ভোটারদের ভোট নৌকায় উঠানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটের দৌড়ে সামিল হতে এরশাদ জোট গঠনের ঘোষণা দিলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ কার্যত নিষ্প্রভ। তার মতোই নিষ্প্রভ বর্তমান সংসদের দেড় শতাধিক এমপি। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে তারা সংসদে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন না করার ঘোষণায় আগামী ভোটে সে ধরনের সম্ভাবনা দেখছেন না। ‘এমপিত্বের আমলনামা’ খারাপ হওয়ায় সারাদেশের শোয়া শ’ থেকে দেড়শ এমপির দলীয় নমিনেশন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সভা সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সে ইংগিত দিচ্ছেন। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে তাদের মধ্যে ততই বাড়ছে হতাশা। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সংসদ কোনো ক্রিয়াকর্ম করছে না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যে দায়িত্ব তারা সেটা না করায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার জরুরী হয়ে পড়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটের প্রস্তুতির সময়ই ইসির উচিত নেবেল প্লেইং ফিন্ড গঠনে মনোযোগ দেয়া। যদিও পুরোপুরি সেটা সম্ভব নয়; তারপরও চেস্টা করতেই হবে। পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পাকিস্তানী কায়দায় ‘কম গণতন্ত্র অধিক উন্নয়ন’ থিউরি দিয়ে আমলাদের হাতে গণতন্ত্রের দায়িত্ব দেয়ায় ফেয়ার নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, ক্ষমতাসীনরা সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে দেবে এটা বিশ্বাস করা দুস্কর।
    আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি সবাইকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন ‘আমি কখনওই চাইব না আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠুক’। তিনি দিল্লী থেকে প্রকাশিত ‘দি হিন্দু’ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর কোনও ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচন চাই না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাচ্ছেন জনগণের কাছে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। নানা দাবি উালেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি তলে তলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্টজনেরাও গণতন্ত্র বাঁচাতে নির্বাচন ‘অত্যাবশ্যক’ মনে করছেন। তারা বলছেন নির্বাচনকালীণ সরকার কেমন হয় তার উপর সবকিছু নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। বড় দুই দলের সিনিয়র নেতারা তৃর্ণমূল সফরে গিয়ে নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি, প্রার্থী নির্বাচন এবং দলের ‘বিতর্কিত’ নেতাদের সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু নেতা এবং বড় বড় পদধারী নির্বাচন ইস্যুতে অনেকটা উদাস। ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়া এসব এমপি জনগণের মুখোমুখি হবেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবেন এমন আস্থা পাচ্ছেন না।
    গণতান্ত্রিক দেশ এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের জন্য জরুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন জাতিসংঘ, ওআইসিসহ প্রভাবশালী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছে এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। প্রভাবশারী দেশগুলোর নেতাদের ঢাকা সফর এবং ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের কথাবার্তায় তার প্রকাশ ঘটছে। দেশের সাধারণ মানুষ ভোটের অধিকার হারিয়ে চাপা ক্ষোভে ফুঁসছে। বিশ্বপরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্যতা পেতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচন জরুরী। সে জন্যই আওয়ামী লীগ চায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করতে। যার কারণে রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ ইসলামী ধারার সংগঠন হেফাজতের ভোটের দিকে হাত বাড়িয়েছে। দলটি প্রচার করছে এটা রাজনৈতিক কৌশল। অন্যদিকে নানা বিতর্কের মধ্যেও বিএনপি নানা কারণে পর্যুদস্ত জামায়াতকে ছাড়ছে না। ভোটের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের নেতা এবং মন্ত্রীরা জেলা সফলে যাচ্ছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের অভ্যন্তরে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়ে বিতর্কিত নেতাদের বার্তা দিচ্ছেন আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হওয়া না হওয়া নিয়ে। অন্যদিকে বিএনপির তৃর্ণমূলে ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক পুনর্গঠন, থিঙ্কট্যাংকের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং কূটনীতিসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনার মাধ্যমে দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে। জেলা পর্যায়ে সংগঠনিক কর্মকান্ড দেখভালের লক্ষ্যে অর্ধশতাধিক কমিটি গঠন করেছে দলটি। ওই কমিটিগুলো সাংগঠনিক পুনর্গঠনে কাজ করছে। এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তত্ত¡াবধানে। বিএনপির দায়িত্বশীল সুত্রের মতে ‘নির্বাচনী সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি অব্যাহত রাখলেও যে কোনো প্রক্রিয়ায় হোক আগামী ভোটে দলটি অংশ নেবেই। গতকালও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার এবং নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। বিএনপিকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে অবিহিত করে তিনি বলেছেন, ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে বিএনপির ৯০০ প্রার্থী আছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৭ মে জোটের ঘোষণা দেয়া হবে। তবে ৫ জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুশোচনায় এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি কার্যত পরিচিতি ক্রাইসিসে ভুগছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এরশাদ নিজের নের্তৃত্বে জোট গঠনের তৎপর হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ কার্যত হতাশ। তিনি নির্বাচনী এলাকার জনগণ দূরের কথা দলের নেতাকর্মীরাই তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
    নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ন্যাপ ঐক্য প্রক্রিয়ার আহবায়ক পঙ্কজ ভট্টচার্য ইনকিলাবকে বলেন, দুনিয়াতে সবচেয়ে অভিনব তত্ত¡ কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ্যের নের্তৃত্বের দাবিদার আওয়ামী লীগ এখন ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’ থিউরি প্রচার করছে। ’৭১ এর আগে পাকিস্তান শাসকরা এটাই চাইতেন। যেখাবে গণতন্ত্রের জন্য দেশ স্বাধীন করলাম, সেখানে কম গণতন্ত্র প্রচারণায় আতঙ্কিত হই। পাকিস্তানের শাসকরা গণতন্ত্রের রশি টেনে ধরে আমলাদের হাতে দেয়। নির্বাচনের আওয়াজ শুনছি কিন্তু নির্বাচনকালীণ সরকার কেমন হয় সেটার ওপর নির্ভর করছে গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচনকালীণ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থাকলেও ভোটের তিন মাস আগে ও পরে প্রশাসনের মৌলিক বিষয়ে হাত দেবেন না। ফেয়ার ভোট চাইলে ইসির কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২০১৯ সালে নির্বাচন হতেই হবে। মানুষ চায় ফেয়ার এন্ড ফ্রি ইলেকশন। আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে যা করছে তাতে তারা ফেয়ার নির্বাচন দেবে বিশ্বাস করা কঠিন। ওই সময় তো সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, একটি পৌরসভা এভাবে না জিতলে সমস্যা ছিল না। কাজেই নির্বাচনী আমেজ আছে কিন্তু আগাম কিছু বলা দুস্কর। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুনসেফ আলী ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন বিএনপি হয়তো সে ভাবে পারবে না। তাদের অনেকেই মামলার কারণে নির্বাচনও করতে পারবেন না। তবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থেই। বর্তমানে বড় দুই দল নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেও ‘নিরপেক্ষ ভোট’ হবে কিনা তা নিয়ে স্বংশ্বয় রয়ে গেছে।

    মার্কিন জ্বালানীবাহী জাহাজের নিরাপত্তায় জাপানের রণতরী প্রেরণ

    বিতর্কিত সামরিক আইন পাসের পর মার্কিন জ্বালানীবাহী জাহাজের নিরাপত্তায় এই প্রথম সবচেয়ে বড় রণতরী পাঠালো জাপান। কোরীয় উপসাগরে প্রেরিত মার্কিন নৌবহরের (কার্ল ভিনসন) জ্বালানীবাহী একটি জাহাজকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারবাহী ‘ইজুমো’কে প্রেরণ করা হয়েছে।
    এর আগে, ক্রমবর্ধমান উত্তর কোরিয়-মার্কিন উত্তেজনার মধ্যে কার্ল ভিনসনকে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ডুবিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন কিম জং উন। এমনকি গত রবিবার ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় নিভৃতাকামী কমিউনিস্ট দেশ উত্তর কোরিয়া। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য কয়েকটি দেশ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যকলাপ থামাতে বাববার সতর্কবানী দিয়ে আসছে।
    জাপান টাইমস জানাচ্ছে, প্রায় আড়াইশো  মিটার লম্বা ‘ইজুমো’ নয়টি পর্যন্ত হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম এবং এটিকে মার্কিনীদের উভচর হামলায় ব্যবহৃত রণতরীর মতো শক্তিশালী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    সংবাদসংস্থা কিয়োদো আরো জানাচ্ছে, জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল শিকোকুতে মার্কিন ওই জাহাজটিকে পাহারা দিতে টোকিওর দক্ষিণের বন্দর থেকে যাত্রা করেছে ইজুমো।

    মহান মে দিবস

    Posted by admin on May 2
    Posted in Uncategorized 

    মহান মে দিবস

    আজ মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে দিবসটি পালিত-উদযাপিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ১৮৮৬ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে পুলিশের গুলিবর্ষণে ১০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত হয়, আহত হয় অনেকে। শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশও নিহত হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়। প্রহসনমূলক বিচারে কয়েকজন শ্রমিক নেতার ফাঁসি হয়। শ্রমিক আন্দোলনের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের স্মরণে ১লা মেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তীকালে। সেই থেকে সারাবিশ্বে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। এত বছরেও শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বলা যাবে না যদিও অনেক ক্ষেত্রেই অবস্থার গুণগত পরিবর্তন ও উন্নতি হয়েছে। মে দিবস শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। তা একই সঙ্গে শ্রমিকদের কাছে বিজয়, আনন্দ, প্রতিজ্ঞা ও অনুপ্রেরণার উৎস। স্বীকার করতেই হবে, দীর্ঘ ও ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে শ্রমিকদের মানবিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, শোষণ-বঞ্চনা কমেছে। অবশ্য এখনো কম মজুরি, মজুরিবৈষম্য, নিয়মিত মজুরিপ্রাপ্তি, শ্রমক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা ইত্যাদির সমস্যা রয়েছে। এ কারণে শ্রমিক অসন্তোষও আছে। আছে আন্দোলন, সংগ্রাম। আসলে শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায়সঙ্গত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবি ও আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কারো অজানা নেই, শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা এবং শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক এখন আর সেই উনিশ শতকের অবস্থায় নেই। অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কেরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বস্ততপক্ষে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক ছাড়া উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো সহজ উপায় নেই। এ জন্য উভয় পক্ষের পারস্পরিক সুসম্পর্ক, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।
    শিল্প-কারখানার সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক ওতপ্রোত। শ্রমিক ছাড়া উৎপাদন হতে পারে না। শ্রমিকদের শ্রম যেমন উৎপাদনের নিয়ামক তেমনি এই শ্রম তাদের আয়- রোজগারেরও উপায়। মালিকরা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে মুনাফা ও আয় উপার্জনের জন্য। কিন্তু শ্রমিক ছাড়া কারখানা অচল। শ্রমিক-মালিক স্ব-স্ব স্বার্থে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। কারখানা আছে, শ্রমিক নেই কিংবা শ্রমিক আছে কারখানা নেই, এটা কল্পনাও করা যায় না। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক যত মধুর ও দৃঢ় থাকবে, উভয় পক্ষের লাভ ও সুবিধা ততই বেশি হবে। শিল্প-কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন চালু থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে, সচল থাকে। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে। অর্থনীতি গতিশীলতা লাভ করে। উৎপাদন ও অর্থনীতিতে সচলতা থাকলে, উন্নতি হলে তখন মালিকদের দায়িত্ব বর্তায় শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার। মালিকরা শ্রমিকদের দেখবে, শ্রমিকরা দেখবে মালিকদের, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের মূল কথা এটাই। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, মানবিক সুযোগ-সুবিধা, কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মালিকদের দায়িত্ব। শ্রমিকদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে, সততার সঙ্গে শ্রম দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখা।
    আমাদের দেশে, স্বীকার করতেই হবে, নানা কারণে উৎপাদন ব্যবস্থা ও শিল্প-কারখানার অবস্থা ততটা ভালো নয়। নানাবিধ সমস্যা-সঙ্কট এখানে রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ বন্ধত্ব, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাব, অবকাঠামো সুবিধার অপ্রতুলতা, যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতা ইত্যাদি কারণে উৎপাদন ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। যে গার্মেন্ট শিল্প আমাদের শিল্প সেক্টর, উৎপাদন ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান ও রফতানিতে বিপ্লব এনেছে সেই গার্মেন্ট শিল্পের অবস্থাও এখন শোচনীয়। নানা কারণে বহু গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ওদিকে শ্রমিকদের মজুরি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দান এবং কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত ও নিরাপদ করার বিষয়ে যে আলোচনা-বিতর্ক ছিল তা অবসানে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও সব কিছুর নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, বলা যাবে না। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজও চলছে। এই অগ্রগতিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। উৎপাদন ব্যবস্থা আরো গতিশীল হলে, উৎপাদন, রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে আমরা নিশ্চিত, মালিক-শ্রমিকরা লাভবান হব, অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাবে। অতএব, উৎপাদন, শিল্পায়নে যেমন নজর দিতে হবে, তেমনি মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে,  সস্তা শ্রমের দিন শেষ। এটা মাথায় রেখেই উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। মালিক-শ্রমিক সরকার একজোট হয়েই সবকিছু করতে হবে।