• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • মোবাইল ফোন : প্রয়োজনীয় মাসায়িল

    মোবাইল ফোন বর্তমান সময়ের একটি নতুন আবিষ্কার। এর কিছু ভালো দিক যেমন আছে তেমনি ক্ষতির দিকও রয়েছে। আর দশটা প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো এরও প্রয়োজন মাফিক ব্যবহার আপত্তিকর নয়, কিন্তু এখন যেভাবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

    মোবাইলের প্রয়োজনীয় দিকগুলোর তুলনায় এর যে ব্যাপক আর্থিক ও নৈতিক ক্ষতির দিক অভিজ্ঞতায় এসে গেছে, বিশেষত এলম চর্চায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এর যে ক্ষতিকর প্রভাব, তার তালিকা মোটেই ছোটো-খাটো নয়। তবে বাস্তবতা এই যে, মোবাইলের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নও আসছে। এজন্য এসব প্রশ্ন একত্র করে শরীয়তের দলীল ও নীতিমালার আলোকে তার জওয়াব প্রস্ত্তত করা এবং পাঠকবৃন্দের খেদমতে তা পেশ করা একটি প্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে হয়েছে। এ অনুভূতি থেকেই বর্তমান প্রবন্ধটি তৈরি হল। এ প্রসঙ্গে দু’টি বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হচ্ছে :

    ১. বেশ কিছু মাসায়িলে হাদীস, তাফসীর ও ফিকহের বিভিন্ন গ্রন্থের উদ্ধৃতি সংযুক্ত হয়েছে। এগুলো মূলত কুরআন, হাদীস ও ফিকহে ইসলামীর ওইসব নীতিমালার উদ্ধৃতি, যার আলোকে এই সমাধানগুলো পেশ করা হয়েছে। কেননা, উল্লেখিত প্রাচীন উদ্ধৃতিগুলোতে স্পষ্টভাবে মোবাইল ফোনের উল্লেখ যে থাকবে না তা তো বলাই বাহুল্য।

    কিছু মাসায়িল এমনও আছে, যেগুলো অনেকের কাছেই স্পষ্ট বলে মনে হবে। তারপরও ওই মাসআলাগুলো এজন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, এসব বিষয়েও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন এসেছে। আর সকল বিষয় সবার সমানভাবে জানা থাকবে-এটাও অপরিহার্য নয়।

    এই সংক্ষিপ্ত ভূমিকার পর ওই মাসয়িলগুলো বিশেষ কোনো বিন্যাস ছাড়াই পেশ করছি। আলোচনা সহজ করার উদ্দেশ্যে প্রশ্নোত্তরের আঙ্গিকটিই বহাল রাখা হয়েছে।

    ১. ভিডিও ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ক্রয় বিক্রয়

    প্রশ্ন : ‘মোবাইল’ ফোনেরই আধুনিক সংস্করণ। কিন্তু এ আবিষ্কার শুধু কথোপকথন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং মোবাইলের সাথে আজকাল গচ৩-৪, ক্যামেরা এবং ভিডিও, ইন্টারনেটসহ সবধরনের সুবিধা রয়েছে। মোবাইলের এ সুবিধাগুলো আজকাল ভাল-খারাপ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার হতে দেখা যায়। তাই প্রশ্ন দাঁড়ায় এ সকল সুবিধাযুক্ত মোবাইল ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি না?

    উত্তর : ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। তবে অবৈধ কোনো কাজে তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯১, আল-বাহরুররায়েক ৮/২০২, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৬, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ ১/৩৫৯

     

    ২. সিম হস্তান্তর

    প্রশ্ন : সিম ক্রয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করা জরুরি। এখন কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সিম ক্রয় করে কোম্পানীর অনুমোদন এবং পুনঃ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া অন্য ব্যক্তির কাছে সিম বিক্রি করা বৈধ কি না?

    উত্তর : বৈধ।

     

    ৩. চোরাই সেট ক্রয়-বিক্রয়

    প্রশ্ন : মোবাইলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। অনেকের মোবাইল হারিয়েও যায়। প্রশ্ন হল, এ ধরনের সেট ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম কী?

    উত্তর : ছিনতাইকৃত বা চোরাই সেট জেনে শুনে ক্রয় করা জায়েয নেই। কেউ ক্রয় করলেও এ সেট ক্রেতার জন্য ব্যবহার করা বৈধ হবে না। বরং মালিক জানা থাকলে মূল মালিকের নিকট পৌঁছে দেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে ক্রেতাবিক্রেতা থেকে মূল্য ফেরত নিতে পারবে। মালিকের সন্ধান পাওয়া না গেলে যার থেকে কিনেছে তাকে দিয়ে মূল্য ফেরত নিতে পারবে। আর কারো কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া সেট হস্তগত হলে কী করতে হবে তা তো সবারই জানা আছে। এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। -আল-মুহীতুল বুরহানী ৭/৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৬/৪৫, খানিয়া ৩/৪১৮, ফাতহুল কাদীর ৫/১৬৯

     

    ৪. ডাউন লোডিং ব্যবসা

    প্রশ্ন : মোবাইলে রিংটোন, মিউজিক, গান, ভিডিও-ছবি ইত্যাদি ডাউন লোড করার প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য অনেক সার্ভিসিং সেন্টারে পৃথক ব্যবস্থাপনা থাকে। জানতে চাই ডাউন লোড করে বিনিময় নেওয়া এবং এ ব্যবসা করা জায়েয কি না?

     

    উত্তর : মিউজিক সংবলিত গান, প্রচলিত অশ্লীল ছবির ভিডিও ফিল্ম, অবৈধ চিত্র ইত্যাদির ডাউনলোড ব্যবসা নাজায়েয। কারণ এতে নিজের তো গুনাহ হয়ই, উপরন্তু অন্যের নিকট গুনাহের উপকরণ সরবরাহ করা হয়। তাই এ ধরনের ডাউনলোড থেকে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে না। হাঁ, কোনো বৈধ চিত্র, মিউজিক ছাড়া রিংটোন, বাদ্যহীন গজল ইত্যাদি ডাউনলোড করা জায়েয এবং এ থেকে অর্জিত টাকাও হালাল।

    -সহীহ বুখারী ১/২৯৮, জামে তিরমিযী ১/২৪১, সহীহ মুসলিম ২১৯, শরহে নববী ২/২৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৫৫, আল-বাহরুররায়েক ৮/১৯

     

    ৫. স্ক্র্যাচকার্ডের নির্ধারিত মূল্য থেকে কম/বেশীতে ক্রয়-বিক্রয়

    প্রশ্ন : স্ক্র্যাচকার্ডের গায়ের মূল্যের (ঋধপব ঠধষঁব) এর চেয়ে কম-বেশীতে বেচা-কেনা করা জায়েয আছে কি না? যেমন ১০০ টাকার কার্ড অনেক দোকানে কোনো কোনো সময় দুই তিন টাকা বেশী নেয়। আবার কোন কোন মোবাইল কার্ডে ৪/৫ টাকা কমও রাখে। এখন ১০০ টাকার পরিবর্তে কম-বেশী করে লেনদেন করা কি জায়েয, এটি কি সুদ নয়?

    উত্তর : স্ক্র্যাচকার্ডের গায়ের মূল্য একটি নির্ধারিত পরিমাণ টেলিযোগাযোগ সুবিধা তথা আউটগোয়িং সেবা প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যান্য সেবার মত এটিও বিক্রিয়যোগ্য সেবা। সুতরাং কার্ডের (ঋধপব ঠধষঁব) গায়ের দাম যেহেতু টাকা নয় তাই কম-বেশীতে বিক্রি করা সুদ নয়। ১০০ টাকার কার্ড কম-বেশীতে ক্রয়-বিক্রয়কে সুদ মনে করা ভুল। তবে এখানে আরেকটি বিষয় আছে, তা হল, কোম্পানী থেকে পণ্যের বা সেবার মূল্য নির্ধারিত করে দিলে ঐ নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করা নিয়ম। কমবেশি করা ঠিক নয়। কেননা এতে বাজারের স্বাভাবিকতা বাঁধাগ্রস্ত হয়।

    -ফাতহুল কাদীর ৬/১৫৯; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৪০০

     

    ৬. ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা ও গ্রাহক থেকে ফ্লেক্সিকৃত অর্থের বেশী গ্রহণ করা

    প্রশ্ন : ঋষবীর খড়ধফ (ফ্লেক্সিলোড) করতে অধিকাংশ দোকানে অতিরিক্ত টাকা নেয় না। যত টাকার ফ্লেক্সি করা হয় তত টাকা নেয়। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে ২/৪ টাকা বেশি রাখে। এটা জায়েয কি না? এখানেও অতিরিক্ত নেওয়াকে কেউ কেউ সুদ মনে করে। এছাড়া দোকানীকে কোম্পানি ফ্লেক্সির উপর ১০% কমিশন দিয়ে থাকে। যেমন- ৯০০০ টাকা ফ্লেক্সি বাবদ জমা দিলে তার নামে ১০,০০০/- টাকার ফ্লেক্সি সুবিধা দেওয়া হয়। এটাকেও কেউ কেউ ৯০০০/-এর পরিবর্তে ১০,০০০/- টাকার লেনদেন মনে করে। বিস্তারিত জানতে চাই।

    উত্তর : ফ্লেক্সিলোডে যত টাকার ফ্লেক্সি করা হচ্ছে এর চেয়ে কম-বেশীতে লেনদেন করার হুকুম কার্ডের মতই। এতেও সুদ নেই। নির্ধারিত অংকের ফ্লেক্সি অর্থাৎ ঐ পরিমাণ টেলি যোগাযোগ আউটগোয়িং সেবা, যা বিক্রয়যোগ্য। তাই এটা নির্ধারিত মূল্যের বেশীতে লেনদেন করা সুদ নয়। কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে লোডকারী তথা দোকানীকে যেহেতু কমিশন দেওয়া হয় এবং গ্রাহক থেকে এবাবদ অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া কোম্পানি কর্তৃক নিষিদ্ধ তাই নির্ধারিত মূল্যের বেশী নেওয়া ঠিত হবে না। একইভাবে ফ্লেক্সিকারী দোকানীকে দেওয়া কমিশন তার জন্য বৈধ। এখানেও সুদের কিছুই নেই। বরং এ কারবারের ব্যাখ্যা হল, ১০ হাজার টাকার সেবা কোম্পানি তার ডিলারদের নিকট নয় হাজার টাকায় বিক্রি করছে। -প্রাগুক্ত

     

    দোকানগুলোর ফোন ব্যবসা

     

    ৭. কল-মিনিটের হিসাব কীভাবে হবে

    প্রশ্ন : সিটিসেল মোবাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেরই জানা যে, সিটিসেলের মিনিট গণনা শুরু হয় ডায়ালের পর থেকেই। এখন ৭-৮ টা রিং হওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে রিসিভ করলে রিসিভ করার আগেই প্রায় এক মিনিট চলে যায়। অনেক ব্যবসায়ীকেই দোকানে সিটিসেল ফোন রাখতে দেখা যায়। তারা এই এক মিনিটের বাড়তি সুবিধা ভোগ করে। অর্থাৎ এই অগ্রীম ১ মিনিটেরও বিল রাখে। জানতে চাই, রিসিভের আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয কি না? এক্ষেত্রে কী করণীয়?

    উত্তর : গ্রাহক থেকে কল রিসিভ হওয়ার আগের সময়ের বিল নেওয়া জায়েয হবে না। কারণ এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের সাথে চুক্তি হল, রিসিভের পর থেকে যত মিনিটের কথা হবে তার বিল নিবে। সুতরাং রিসিভের আগের মিনিটের বিল নেওয়া জায়েয হবে না। এজন্য সিটিসেল মোবাইল দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করতে চাইলে হয়ত পৃথক মিনিটমাইন্ডার রাখতে হবে যা দ্বারা রিসিভ করার সময় থেকে মিনিটের হিসাব করা হবে। এছাড়া কল ডিউরিশন অপশন থেকেও শেষ কলের সময় জেনে নেওয়া যেতে পারে। আর এখন সিটিসেল অপারেটরের পক্ষ থেকেই কল শেষে কলের মোট সময় সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। তাই সে অনুপাতেও বিল নেওয়া সহজ।

     

    ৮. পরবর্তী মিনিটের ১-২ সেকেন্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া

    প্রশ্ন : সাধারণত ফোন দোকানীরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় মিনিট শুরু হলেই এমনকি সেকেন্ড পরিমাণ কথা হলেও পরবর্তী পুরো মিনিটের বিল করে। মোবাইল কোম্পানী থেকে পাল্স সুবিধা থাকলেও তার হিসাব করে না। এটা জায়েয কিনা? এক্ষেত্রে করণীয় কী?

    উত্তর : ফোন ব্যবসায়ীর জন্য কোম্পানি কর্তৃক ঘোষিত পাল্স সুবিধা গ্রাহকদের দেওয়া জরুরি নয়। বরং পালস হিসাব না করতে চাইলে গ্রাহককে পূর্ব থেকেই অবহিত করবে যে, এখানে পরবর্তী মিনিটের এক সেকেন্ড হলেও পুরো মিনিটের বিল নেওয়া হয়। প্রয়োজনে গ্রাহকের দৃষ্টি পড়ে এভাবে দোকানের কোথাও লিখে রাখা যেতে পারে। তবে এব্যাপারে পরামর্শ হল, পরবর্তী মিনিটের ২/৩ সেকেন্ড হয়ে কথা শেষ হয়ে গেলে পুরো মিনিটের বিল না নিয়ে আধা মিনিটের বিল নেওয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাবের ওপর আমল উভয় পক্ষের জন্য ভাল।

     

    ৯. ভুল নাম্বারে গেলে এর বিল কার জিম্মায়

    প্রশ্ন : ফোন দোকানে ভুল নাম্বারে গেলেও গ্রাহক থেকে বিল আদায় করা হয়ে থাকে। আগে টিএন্ডটির এ্যানালগ লাইনে সঠিক নাম্বারে রিং করলেও ভুল নাম্বারে চলে যেত। এজন্য ফোন দোকানগুলোতে এ নিয়ম চলে আসছে যে, ভুল নাম্বারে গেলেও বিল দিতে হবে। সেই এ্যানালগ নাম্বার এখন আর নেই। মোবাইল করার পর ভুল নাম্বারে ডায়াল হলে এর বিল কে দিবে? এ বিল কি গ্রাহক দিতে বাধ্য?

    উত্তর : মোবাইলে যে নাম্বারে রিং করা হবে সে নাম্বারেই যাবে। সঠিক নাম্বারে রিং করার পরও ভুল নাম্বারে যাওয়ার অবকাশ নেই। তাই ভুল নাম্বারে চলে গেলে বুঝতে হবে নিশ্চয় ভুল নাম্বারে ডায়াল করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে এ ভুল কার। দোকানী ভুলে একটির পরিবর্তে অন্যটি টিপেছে, নাকি গ্রাহক নাম্বার দিতে ভুল করেছে? গ্রাহকের ভুল হলেই কেবল এর ক্ষতিপূরণ তার ওপর আসবে। আর দোকানীর ভুল হলে সেই ভুলের ক্ষতি তারই। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না।

     

    ১০. কল রিসিভের জন্য বিনিময় নেওয়া

    প্রশ্ন : গ্রামেগঞ্জে অনেকের হাতে মোবাইল থাকে না। অনেকের হাতে থাকলেও টিএন্ডটি ইনকামিং নেই। তাই বিদেশ থেকে কিংবা অন্য কোথাও থেকে দোকানীর মোবাইলে কল আসলে তার কিছু খরচ না হলেও সে গ্রাহক থেকে কিছু টাকা নিয়ে থাকে। এটাকা নেওয়া কি জায়েয?

    উত্তর : হাঁ, এ বাবদ বিনিময় নেওয়া জায়েয। বিল না কাটলেও তার সেট ও লাইন ব্যবহার হচ্ছে। সময় ব্যয় হচ্ছে। তাই সে এর ন্যায্য বিনিময় নিতেই পারে। দোকানী এ সেবা ফ্রি দিতে বাধ্য নয়।

     

    ১১. ভিওআইপি সংযোগ নিয়ে বিদেশে কম খরচে কথা বলা

    প্রশ্ন : এক ধরনের মেশিন দেশীয় টিএন্ডটি এবং মোবাইলের সাথে সংযোগ করলে সরাসরি বিদেশে অনেক কম খরচে কথা বলা যায়। কিন্তু এটি সরকার অনুমোদিত নয়। কেউ কেউ অবৈধভাবে এর ব্যবহার করে থাকে। এ ব্যবসা জায়েয কি না? এ ধরনের সুবিধাযুক্ত ফোনের গ্রাহকদের ফোন বা মোবাইল ব্যবহার করার কী হুকুম?

    উত্তর : এ ধরনের লাইনে কথা বলা বৈধ হবে না। কারণ, এতে সরকারীভাবে নিষিদ্ধ লাইন ব্যবহার করা হয়। সরকারের আদায়যোগ্য ফি অনাদায় থাকে এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ব্যবসায় সহায়তাও করা হয়। এছাড়া এতে অনেকগুলো টিএন্ডটি চোরা লাইনও থাকে। এমনটি হলে তো এর অবৈধতা আরো প্রকট।

    ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা এতে কোনো চোরা লাইন ব্যবহার করে থাকলে এ বাবদ উপার্জিত অর্থ হালাল হবে না। তবে চোরা লাইন ব্যবহার না করলে সরকারী নিয়ম ভঙ্গ করে এ কারবার করার জন্য গুনাহ হবে। কিন্তু এ কারণে কারবার থেকে উপার্জিত অর্থ অবৈধ গণ্য হবে না।

     

    ১২. মিউজিক, গানের কলির রিং টোন

    প্রশ্ন : মোবাইলের রিং টোন হিসাবে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক বা গানের কলি ইত্যাদি ব্যবহার করার হুকুম কী?

    উত্তর : মিউজিক, বাদ্য ইত্যাদি গানের সাথে শোনা তো কবীরা গুনাহ। গান ছাড়া পৃথকভাবে শোনাও গুনাহ। তাই যেকোনো ধরনের বাদ্য, মিউজিক টোন রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করাও গুনাহ। তদ্রূপ গানের কলি বা অংশবিশেষও রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা নাজায়েয। প্রকাশ থাকে যে, মিউজিক বা গান রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করলে নিজে শোনার গুনাহ তো আছেই, সাথে সাথে যে স্থানে মোবাইলটি ব্যবহার হচ্ছে তার আশপাশের লোকদেরকে বাদ্য, গান শোনানোর গুনাহও হয়। এছাড়া এমন রিংটোন মসজিদে বেজে উঠলে মসজিদের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করা হয়। তাই রিংটোন হিসাবে এর ব্যবহার নিতান্তই মন্দকাজ ও গুনাহ। সেজন্যই গান বা মিউজিক ছাড়া অন্যান্য শব্দ রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

    -সূরা লোকমান-৬, সহীহ বুখারী ২/৮৩৭, জামে তিরমিযী ১/২৪১; সুনানে ইবনে মাজা ৩০০; আলগিনা ফিল-ইসলাম ৮৭; ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮২

     

    ১৩. ওয়েলকাম টিউন হিসাবে গানের ব্যবহার

    প্রশ্ন : কারো কাছে ডায়াল করার পর তার মোবাইল বা ফোনে রিং হচ্ছে কিনা এটি বুঝানোর জন্য যে টোন বা শব্দ ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়েলকাম টিউন বলে। এখন এই টোনের পরিবর্তে গান ডাউন লোড করা যায়। কেউ ডাউন লোড করলে তাকে যে ব্যক্তি কল করবে সে রিং টোনের পরিবর্তে ঐ গান বা ডাউন লোডকৃত আওয়াজ শুনতে পাবে। এতে ডাউন লোডকারীর প্রত্যেক মাসে ২০/৩০ টাকা করে খরচ হয়। এটি জায়েয কি না?

    উত্তর : ওয়েলকাম টিউনে গান বা মিউজিক ডাউন লোড করলে এই নাম্বারের সাথে যোগাযোগকারী সকলকে বাধ্য হয়ে গান বা মিউজিক শুনতে হবে। এতে অন্যকে গান শোনানো তথা গুনাহের কাজে বাধ্য করার গুনাহ হয়। তাই এটিও নাজায়েয। -সূরা লোকমান ৬, সহীহ বুখারী ২/৮৩৭, ফাতহুল কাদীর ৬/৪৮২, প্রাগুক্ত

     

    ১৪. ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের ব্যবহার

    প্রশ্ন : গানের ব্যবহার যেহেতু নাজায়েয তাই অনেকেই এক্ষেত্রে কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত, আযান ইত্যাদি ডাউনলোড করে থাকে। ধারণা করা হয় যে, এতে গুনাহ তো হবেই না, বরং আমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তি কিছু সময় হলেও কুরআনের তিলাওয়াত শুনছে। বাহ্যত এটাকে ভাল মনে করা হয়। আযানের শব্দ বা জিকর শুনছে। এতে শ্রোতাকে সওয়াবের বিষয় শোনানো হচ্ছে। এদৃষ্টিতে একে অনেকেই ভাল বলে। জানতে চাই ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআন, জিকির, আযানের ব্যবহারের হুকুম কী?

    উত্তর : নিঃসন্দেহে প্রশ্নোক্ত উদ্দেশ্যেটি ভালো। রিংটোন, মিউজিক বা গান না শুনিয়ে সেস্থানে কুরআনের তিলাওয়াত বা জিকর, আযান ইত্যাদি শোনানোর ব্যবস্থা করা অবশ্যই একটি প্রশংসণীয় কাজ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এটি ভাল মনে হলেও এক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহারে একাধিক খারাপ দিক রয়েছে। যার একটিই এ থেকে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট। যেমন-

     

    (১) ওয়েলকাম টিউন-এর ব্যবহার হয় যার কাছে কল করা হয়েছে তার সাথে সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে কি না এটি বুঝার জন্যই। কারো কাছে কল করার পর রিংটোন পেলে বুঝা যায় যে, তার মোবাইলে রিং হচ্ছে। কল করার পর বিজিটোন আসলে বুঝা যায় সে এখনও অন্যের সাথে কথা বলছে। আবার ফোন বন্ধ থাকলেও এক ধরনের টোন পাওয়া যায়। মোটকথা কাঙ্ক্ষিত ফোনটিতে সংযোগ লাগার জন্য যে সংকেত-টোন রয়েছে সেস্থানে কুরআনের তিলাওয়াত, আযান ইত্যাদি ফিট করলে এই তিলাওয়াত ও আযানও ফোনকারীকে প্রথমে ঐ টোনের কাজ দিবে। অর্থাৎ ফোনকারী বুঝবে যে, কাঙ্ক্ষিত ফোনটিতে সংযোগ পেয়েছে, রিং হচ্ছে। আচ্ছা, বলুন তো আল্লাহর মহান কালাম কি এই কাজে ব্যবহার করা উচিত? এই কাজে তিলাওয়াতের ব্যবহার কি অপাত্রে কুরআনের ব্যবহার নয়? আযান যা শরীয়তের একটি মহান নিদর্শন ও জিকর, একে এই কাজে ব্যবহার করা কি সমীচীন?

    (২) কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে কল করার পর রিংটোন হিসাবে ফোনকারীর কানে কুরআনের তিলাওয়াত ভেসে আসছে, হয়ত রিসিভের অপেক্ষার সাথে সাথে তিলাওয়াতও শুনছে। কিন্তু যার নাম্বারে ফোন করা হয়েছে সে তো তিলাওয়াত শুনতে পাচ্ছে না। বিধায় সে এমন সময় রিসিভ করল যখন তিলাওয়াতের কোন শব্দের মাঝে কিংবা এমন স্থানে রিসিভ করা হল যখন থেমে গেলে আয়াতের অর্থই বদলে যায়। তদ্রূপ আযান ডাউনলোড করলে কেউ যদি ‘লা-ইলাহা’ পর্যন্ত উচ্চারিত হওয়ার পর ফোন রিসিভ করে ফেলে তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- ‘কোন মাবুদ নেই।’ ফলে অর্থের বিকৃতি ঘটে। এই সমস্যার কারণেও এস্থানে এগুলোর ব্যবহার করা যাবে না।

    (৩) এছাড়া বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যে থেকে ফোনে কথা বলার সময় কানে তিলাওয়াতের ধ্বনি আসলেও তা মনোযোগ সহকারে শোনা হয় না। ফলে তিলাওয়াত শোনার হক আদায় হয় না। তাই ওয়েলকাম টিউন হিসাবে কুরআন-তিলাওয়াত বা আযান কিংবা যিকরের ব্যবহার করা যাবে না। এর জন্য স্বাভাবিক রিংটোনই উপযোগী।

    -আত-তিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন- নববী ৪৬, হককুত্তিলাওয়া-হুসাইনী শাইখ উসমান-৪০১, আলমগীরী ৫/৩১৫, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, আল মুগনী ৪/৪৮২, আলাতে জাদীদাহ কী শরয়ী আহকাম- ১৭১

     

    ১৫. রিংটোন হিসাবে ‘সালাম’-এর ব্যবহার

    প্রশ্ন : অনেকে সালাম ডাউনলোড করে তা রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করে এটি জায়েয কিনা?

    উত্তর : হাঁ, এ ক্ষেত্রে সালামের ব্যবহার জায়েয। কারণ, শরীয়তে সালাম এর ব্যবহার দু’ভাবে এসেছে। একটি হল অভিবাদন হিসাবে সালামের ব্যবহার। দ্বিতীয়টি হল অনুমতি প্রার্থনামূলক সালাম। অর্থাৎ কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার জন্য সালাম দেওয়া। মোবাইলের রিংটোন হিসেবে সালামের ব্যবহার এ প্রকারের সাথে কিছু মিল রয়েছে। রিংটোনের জন্য সালামের ব্যবহার না জায়েয নয়।

     

    ১৬. আযান, জিকর বা তিলাওয়াত রিংটোন হিসাবে ব্যবহার

    প্রশ্ন : অনেকে রিংটোন হিসাবে ঘণ্টা, বাজনা ইত্যাদির পরিবর্তে আযান, যিকর ও তিলাওয়াতের ব্যবহারকে পছন্দ করে। জানতে চাই এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো খারাপী আছে কি না?

    উত্তর : তিলাওয়াত, যিকর ও তাসবীহ সবকিছুই অতীব মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। আযান আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক তথা ‘শিআর’। এগুলোর ব্যবহার একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। শরীয়তে এগুলোর ব্যবহার-ক্ষেত্র সুনির্ধারিত। মোবাইলের রিংটোন হিসাবে এগুলোর প্রয়োগ অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মোবাইলে রিং এসেছে, কেউ কথা বলতে চায় এই খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম ওহী, জিকর ও তাসবীহের ব্যবহার যে এগুলোর অপাত্রে ব্যবহার তা বলাই বাহুল্য।

     

    ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতার জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলা, তদ্রূপ প্রহরী জাগ্রত আছে একথা বুঝানোর জন্য জোরে জোরে যিকর করাকেই ফিকহবিদগণ অপব্যবহার হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাহলে মোবাইলে কল এসেছে এ খবর দেওয়ার জন্য এগুলোর ব্যবহার যে কেমন হবে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। উপরন্তু রিংটোন হিসাবে এগুলোর ব্যবহারে আরো অন্যান্য শরয়ী খারাবী রয়েছে যেমন : (ক) রিং আসলে কুরআনের তিলাওয়াত বেজে উঠছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে   ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করারই সুযোগ হয় না। তদ্রূপ কে রিং করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততা তো লেগেই থাকে এ কারণেও তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করে শ্রবণ করা হয় না।

    (খ) রিং আসলে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এটিই মূল উদ্দেশ্য থাকে তাই আয়াতের যেকোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাক সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।

    (গ) মোবাইল নিয়ে টয়লেট কিংবা বাথরুমে প্রবেশের পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহ তাআলার পবিত্র কালাম, যিকর ও আযান বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। মোটকথা অনেক কারণেই তিলাওয়াত, আযান ও জিকরকে রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

    -আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন-ইমাম নববী ৪৬, হক্কুততিলাওয়া- হুসাইনী শাইখ উসমান ৪০১, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩১৫, আলমুগনী ৪/৪৮২, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, ১/৫৪৬, আলাতে জাদীদা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ., আলকাফী ১/৩৭৬, আলআশবাহ ৩৫

     

    রেকর্ড/ডাউনলোভ

    ১৭. মোবাইল মেমোরিতে কুরআন তিলাওয়াত ডাউনলোড করা

    প্রশ্ন : মোবাইল মেমোরী বা মেমোরী কার্ডে কুরআন তিলাওয়াত বা কোন যিকর ডাউনলোড করে রাখা জায়েয কিনা?

    উত্তর : মেমোরি কার্ড বা মোবাইল মেমোরিতে তিলাওয়াত ডাউনলোড বা রেকর্ড করা জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এর হুকুম অন্যান্য রেকর্ডারের মতই। তবে যখন তিলাওয়াত চালানো হবে তখন খুব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে তিলাওয়াতের রেকর্ড ছেড়ে দেওয়া তিলাওয়াতের আদব পরিপন্থী কাজ।

     

    ১৮. কুরআন শরীফের সূরা বা পুরো কুরআন মোবাইলে ডাউনলোড করা

    প্রশ্ন : লিখিত কুরআন শরীফ বা তার অংশবিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করা যায়। আজকাল ইন্টারনেট থেকে অল্প খরচে ‘পকেট কুরআন’ নামে পুরো কুরআন শরীফ মোবাইলে ডাউন লোড করা যায়। তদ্রূপ হাদীস শরীফও ডাউন লোড করা যায়। লিখিত কুরআন ডাইনলোড করা এবং মেমোরিতে সংরক্ষণ করা জায়েয কি না?

    উত্তর : হাঁ, লিখিত পূর্ণ কুরআন বা তার অংশ বিশেষ ডাউনলোড করে মেমোরিতে রেখে দেওয়া জায়েয। তবে কখনো তা স্ক্রিনে আনলে এর অসম্মানী না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। মেমোরিতে হেফাযত করা অবস্থায় মোবাইল ধরতে অযুর প্রয়োজন নেই। তেমনিভাবে স্ক্রিনে থাকা অবস্থায়ও মোবাইল বিনা অযুতে ধরা যাবে।

     

    ১৯. মোবাইলের স্ক্রিনে ছবি সেভ করে রাখা

    প্রশ্ন : মোবাইলের স্ক্রিনে পুরুষ বা মহিলার ছবি সেভ করে রাখার হুকুম কী?

    উত্তর : স্ক্রিনে ছবি সেভ করে রাখলে ছবির প্রদর্শনী হয় এবং ছবি খুলে রাখা হয়। যা রহমতের ফিরিশতার আগমন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ। এছাড়া শরীয়তে ছবির প্রকাশ ও প্রদর্শন নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, স্ক্রিনে মানুষ বা কোন প্রাণীর ছবি সেভ করে রাখা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

    আর স্ক্রিনের ছবিটি যদি কোনো মহিলার হয় তবে গায়রে মাহরামদের জন্য ছবিটি দেখা এবং অন্যদের দেখানোর ভিন্ন গুনাহ হবে। এতে ছবি প্রদর্শনের গুনাহ ছাড়া পর্দা লংঘনের গুনাহ হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা আরো বেশী জরুরি।

    -সহীহ বুখারী ২/৮৮০; সহীহ মুসলিম ২/২০০; আলমাদখাল ইবনুল হাজ ১/২৭৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩০৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৯; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭২

     

    ২০. স্ক্রিনে কুরআনে কারীমের আয়াত, যিকর, বা এগুলোর ক্যালিগ্রাফী সেভ করে রাখা

    প্রশ্ন : মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনের আয়াত, জিকর বা আল্লাহ তাআলার নাম সেভ করে রাখা হয়। তদ্রূপ কেউ এগুলোর ক্যালিগ্রাফি সেভ করে রাখে। এটি জায়েয কি না?

    উত্তর : মোবাইল স্ক্রিনে আল্লাহ তাআলার নামের ক্যালিগ্রাফি বা লিখিত আয়াত কিংবা অন্য কোন যিকর ইত্যাদি সেভ করে রাখা ঠিক নয়। কারণ, এভাবে ক্ষেত্রবিশেষে এগুলোর সাথে বেয়াদবি হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া মোবাইল সাধারণত সম্মানের সাথে ব্যবহার করা হয় না। বরং অধিক ব্যবহারের ফলে যত্রতত্র রাখা হয়। অনেক সময় বসার স্থানে, নিচেও থাকে, চার্জের প্রয়োজনেও নিচে রাখতে হয় ইত্যাদি। সুতরাং স্ক্রিনে দৃশ্যমান অবস্থায় রেখে এর যথাযথ আদব রক্ষা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এ ধরনের কোন কিছু স্ক্রীন সেভারে রাখা ঠিক হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০

     

     

    মোবাইলের ব্যবহার

    ২১. পিকচার ম্যাসেজ

    প্রশ্ন : পিকচার ম্যাসেজের মাধ্যমে যেমনিভাবে বিভিন্ন চিত্র, ফুল ইত্যাদি কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে পাঠানো যায়। তদ্রূপ মোবাইলে ধারণকৃত মানুষ বা প্রাণীয় ছবিও পাঠানো যায়। ছবির এই ব্যবহার জায়েয কি না?

    উত্তর : এসএমএস মাধ্যমে প্রাণীর ছবি ছাড়া অন্য কিছু পাঠাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু মানুষ বা কোন প্রাণীর ছবি পাঠানো জায়েয হবে না। কেননা এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া ছবির ব্যবহার হচ্ছে। আর ছবিটি যদি কোন গায়রে মাহরাম মহিলার হয় তবে তো পর্দার হুকুম লংঘন করার গুনাহ হবে। এ ধরনের ছবি যার কাছে পাঠানো হচ্ছে সেও দেখে, আশপাশের অন্য পুরুষরাও দেখে। এতে ব্যাপকভাবে পর্দা লংঘনের গুনাহ হয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে জরুরতের সময় জায়েয। যেমন শরীয়তসম্মত বিশেষ প্রয়োজনে কারো ফটোর জরুরত হলে মোবাইলের মাধ্যমে অন্যত্র ছবি পাঠানো যাবে। প্রাপক মোবাইলের এই ছবি প্রিন্ট করে নিজ কাজে লাগাতে পারবে। তবে এক্ষেত্রেও এর ব্যবহার জরুরত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হওয়া কর্তব্য। -সহীহ মুসলিম ২/২০০; আলমাদখাল ১/২৭৩

     

    ২২. মিসডকল

    প্রশ্ন : মোবাইল ব্যবহারকারীর অনেকেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মিসডকল দেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে যাকে মিসডকল দেওয়া হচ্ছে সে বিরক্ত হয়। এছাড়া এতে অনর্থক নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখা হয়। গ্রামীণ ফোন কোম্পানি মিসডকলকে নিরুৎসাহিত করার জন্য একবার মিসডকলকে বিনষ্টকারী পোকার সাথে তুলনা করে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়েছিল। মোটকথা প্রয়োজনে ও অপ্রয়োজনে মিসডকল দেওয়া জায়েয কি না?

    উত্তর : বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দিলে অনর্থক নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখা হয়। ফলে প্রয়োজনীয় কথার জন্য অনেকের সংযোগ পেতে কষ্ট হয়। বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যস্ত রাখার কোন বৈধতা নেই। এতে মোবাইল কোম্পানীরও কোন উপকার নেই বরং এতে তাদের ক্ষতি হয়। এছাড়া বিনা প্রয়োজনে এ মিসডকল দেওয়ার দ্বারা যাকে মিসডকল দেওয়া হচ্ছে তাকে বিরক্ত করা হয়। তার একাগ্রতা বা কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এসবই মিসডকলের ক্ষতি। এসব কারণে বিনা প্রয়োজনে মিসডকল দেওয়া গুনাহ।

    তবে প্রয়োজনে মিসডকলের ব্যবহার বৈধ। যেমন কারো সাথে পূর্বেই কথা থাকল যে, তুমি প্রস্ত্তত হলে কিংবা অমুক স্থানে পৌঁছলে কিংবা অমুক জিনিস পেলে অথবা অমুক ব্যক্তি আসলে আমাকে মিসডকল দিবে। এসব ক্ষেত্রে মিসডকল দেয়ার দ্বারা কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। তদ্রূপ আত্মীয়-স্বজন কিংবা কম আয়ের লোকদের সহযোগিতা কামনার্থে অনেকেই বলে থাকে, তুমি আমাকে শুধু মিসডকল দিলেই আমি ব্যাক করব। তোমার কল করার প্রয়োজন নেই।’ তুমি কল করে টাকা খরচ কর না ইত্যাদি। এসবই মিসডকলের বৈধ ক্ষেত্র। এককথায় যে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মিসডকল করা হয় আর এর কারণে যাকে মিসডকল করা হচ্ছে তার অসন্তুষ্টি বা কষ্টের কারণ না হয় সেক্ষেত্রে এতে কোন অসুবিধা নেই।

    ২৩. মোবাইলে কে আগে সালাম দিবে

    প্রশ্ন : মোবাইলে কোন পক্ষ আগে সালাম দিবে এ নিয়ে দুধরনের মতামত শোনা যায়। কেউ বলেন, যে ব্যক্তি রিং করবে সে আগে সালাম দিবে। আবার কেউ বলেন, যে রিসিভ করবে সে সালাম দিবে। জানতে চাই শরীয়তের দলীলের আলোকে কোনটি সঠিক? মহিলার সাথে কথা বললে সালাম দেওয়া যাবে কি না? কোন বড় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় যে ছোট সেই কি শুধু সালাম বলবে?

    উত্তর : ‘আস্সালামু কাব্লাল কালাম’এর ভিত্তিতে যে ব্যক্তি আগে কথা বলবে সেই সালাম দিবে। সাধারণত যে রিসিভ করে সেই যেহেতু আগে কথা বলে থাকে তাই সে কথা শুরু করার আগে সালাম দিবে। কারণ রিসিভ করার পর কথা না বললে অনেক সময় রিসিভ হয়েছে কি না তা বুঝা যায় না। তাই রিসিভকারী সাধারণত আগে কথা বলে থাকে।

    অবশ্য কখনো রিসিভকারী যদি রিসিভ করে কথা না বলে বা কোন কারণে কলকারী কথা শুনতে না পায় অথবা বুঝতে না পারে তখন কলকারী আগে কথা বলে থাকে। এক্ষেত্রে যেহেতু কলকারী আগে কথা বলছে তাই কথা শুরুর আগে সে সালাম দিবে, এমনকি হ্যালো বলার আগে সালাম বলবে।

     

    ২৪. গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে মোবাইলে সালাম আদান-প্রদান

    গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে প্রয়োজনে পর্দায় থেকে কথা বলা জায়েয। (যদি ফেতনার আশংকা না থাকে।) তাই মোবাইলে মহিলার সাথে কথা বলতে হলেও সালাম দিয়েই কথা শুরু করবে।

    যে আগে কথা বলবে সে সালাম দিবে। মহিলা আগে কথা বললে সে আগে সালাম দিবে। আর পুরুষ আগে কথা বললে সে সালাম দিবে।

    যার নাম্বারে কল করা হচ্ছে তিনি যদি বড় ও সম্মানী ব্যক্তি হন তখন তিনি সালাম দিলে এ সালামের উত্তর দেওয়া হয় না। বরং কলকারী উল্টো তাকে সালাম দেয়। এটা ভুল নিয়ম। তাই বড় ও সম্মানী ব্যক্তি রিসিভ করে সালাম দিলে অপর প্রান্ত থেকে এর শুধু উত্তরই দিবে। পাল্টা সালাম দিবে না। -সুনানে তিরমিযী ২-৯৯

     

    আগে হ্যালো না আগে সালাম

    ২৫. প্রশ্ন : ফোনে অনেকে আগে হ্যালো বলে এরপর সালাম বলে। এটি কি ঠিক নিয়ম?

    উত্তর : এ নিয়ম সুন্নত পরিপন্থী। কারণ, সুন্নাত নিয়ম হল,…….সবধরনের কথার আগে সালামের ব্যবহার হবে। এমনকি হ্যালো বলার আগেও। তাই হ্যালো বলে সালাম বলা ঠিক নয়। বরং আগে সালাম বলবে। এটিই সুন্নত। -জামে তিরমিযী ২/৯৯, রদ্দুল মুহতার ৫/৮৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫

     

    উভয় পক্ষের সালাম মুখোমুখী হলে

    ২৬. প্রশ্ন : অনেক সময় দেখা যায় উভয় পক্ষ থেকেই সালাম দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কি করণীয়?

    উত্তর : যদি রিসিভকারী এবং কলকারী উভয়ে একই সাথে সালাম বলে তবে প্রত্যেককেই উত্তর দিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি আগে সালাম দিয়ে দেয় তাহলে অপর পক্ষের জন্য উত্তর দেওয়া নির্ধারিত। সে ভুলে বা ইচ্ছাকৃত পাল্টা সালাম দিলে দ্বিতীয় ব্যক্তির সালাম উত্তর হিসাবে ধর্তব্য হবে।

    -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫, রদ্দুল মুহতার ৬/৪৯৬, শরহুল মুহাযযাব ৪/৪৬৩

     

    মসজিদে মোবাইলের ব্যবহার

    ২৭. প্রশ্ন : মসজিদের ভিতরে থেকে মোবাইলে কথাবার্তা বলা যাবে কি না? কী ধরনের কথাবার্তা বলা যাবে?

    উত্তর : মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর। এখানে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি করে বৈধ কথাবার্তাও নাজায়েয। অবশ্য ইবাদতের উদ্দেশ্যে এসে অন্য ইবাদতকারীর ক্ষতি না হয় এভাবে বৈধ কথাবার্তা বলার অবকাশ আছে। তবে মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলাই উচিত। আর মসজিদে প্রবেশের আগেই রিংটোন বন্ধ করে দেয়াই আদব। বিশেষ করে কেউ ইবাদতে মগ্ন থাকলে বা জামাতের সময় হলে এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী।

    -আল মাসনূ ফী মাআরিফাতিল হাদীসিল মাওজু’ ৯২, আলমুহাল্লা-৩/১৬০, শরহুল মুনইয়াহ ৬১০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১,ফাতহুল বারী ১/৬৫৩, এলামুস সাজিদ ০৩২৬

     

    এতেকাফে মোবাইলের ব্যবহার

    ২৮. প্রশ্ন : ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল রাখা যাবে কি না? ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইলে কথাবার্তা বলার হুকুম কী?

    উত্তর : ইতিকাফকারীর জন্য পূর্ণ সময় বাইরের সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে ইবাদতে নিমগ্ন থাকা এবং আল্লাহমুখী হয়ে থাকাই কাম্য। তাই অধিক প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইলের ব্যবহার না করাই শ্রেয়। আর অন্য কোন মুসল্লী বা ইবাদতকারীর ক্ষতি না করে মোবাইলে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে পারবে। -আল বাহরুর রায়েক ২/৩০৪, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪১২

     

    ভুল নাম্বারে ফ্লেক্সি হলে টাকা কে দিবে?

    ২৯. প্রশ্ন : ফ্ল্যাক্সিলোডে ভুল হলে কোনো কোনো সময় অন্যের মোবাইলে টাকা চলে যায়। এক্ষেত্রে এর ক্ষতিপূরণ কে দিবে? অনেক দোকানীকে এ টাকা জোরপূর্বক ফ্লেক্সি করতে আসা গ্রাহক থেকে আদায় করতে দেখা যায়। এটা জায়েয কি না?

    উত্তর : যে নাম্বারে ফ্লেক্সি করা হবে সে নাম্বারেই টাকা জমা হবে। ভুল নাম্বারে করা হলে ভুল নাম্বারে যাবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে টাকা উদ্ধার না করা গেলে দেখতে হবে ভুল কার থেকে হয়েছে। সাধারণত ফ্লেক্সিকারী গ্রাহকের নাম্বার ভিন্ন খাতায় প্রথমে নোট করা হয়। সেটা কখনো দোকানী নিজে লিখে কখনো গ্রাহকের হাতে লেখায়। দোকানী লিখলে গ্রাহকের জন্য ঐ লিখা মিলিয়ে নেওয়া কর্তব্য। এরপর খাতার নোটকৃত নাম্বারে ফ্লেক্সি না করে ভুলে অন্য নাম্বারে করলে এর ক্ষতি দোকানীর নিজেরই। এ বাবদ গ্রাহক থেকে কিছুই নিতে পারবে না। হাঁ, গ্রাহক যদি স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু দিতে চায় তবে তা নিতে বাধা নেই।

     

    আর খাতায় যা নোট করা হয়েছে দোকানী যদি সে নাম্বারেই ফ্লেক্সি করে থাকে তবে এ ভুলের ক্ষতিপূরণ গ্রাহককে দিতে হবে। অবশ্য দোকানী খাতায় ভুল নাম্বার নোট করেছে এ কথা প্রমাণিত হলে এ ভুলের দায়দায়িত্ব দোকানীর, গ্রাহকের নয়।

    জাপানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির সরকার একথা জানিয়েছে। উপদ্রুত এলাকাগুলোতে এখনো শতাধিক লোক আটকা পড়ে আছে। কাদার পুরু স্তর পেরিয়ে তাদের উদ্ধার করতে উদ্ধারকারীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কিউশুতে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের বৃষ্টিপাত ও বন্যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপটির বহু পথঘাট, বাড়িঘর ও স্কুল ভেসে গেছে এবং কয়েক হাজার লোককে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে হয়েছে। তবে আরো বহু মানুষ উপদ্রুত এলাকাগুলোতে আটকা পড়েছে।

    স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুওকা ও ওইতা অঞ্চলের প্রায় দেড়শ লোক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহি সুগা সাংবাদিকদের বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে এখন পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছে এবং আরো ২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১২ হাজার উদ্ধারকারী জীবিতদের সন্ধানে ‘প্রাণপণে’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
    উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এস্তোনিয়ায় তার সফর বাতিল করেছেন। এছাড়া পূর্ব নির্ধারিত ইউরোপ সফরের শেষ ভাগে তার দেশটিতে যাওয়ার কথা ছিল। তার এই ইউরোপ সফরের মধ্যে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনও ছিল। দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিন টোকিও ফিরবেন বলে জানা গেছে। এএফপি।

    লরি শোকে কাঁদছে ফুটবলবিশ্ব

    মাত্র ৬ বছরের আয়ু নিয়ে এই দুনিয়ায় এসেছিল ব্র্যাডলি লরি। কাল সে চলে গেল না–ফেরার দেশে। মাত্র ১৮ মাস বয়সে শরীরে প্রাণঘাতী ক্যানসার বাসা বাঁধার পর ফুটবল দুনিয়ার গভীর সখ্য গড়ে উঠেছিল ফুটবল-অন্তঃপ্রাণ শিশুটির সঙ্গে। কিন্তু সেই ভালোবাসার বাঁধনটা ছিঁড়তেই হলো শেষ পর্যন্ত।
    লরির মৃত্যু হয়েছে মা-বাবার কোলেই। খবরটা তাঁরাই জানিয়েছেন ফেসবুকে। সান্ডারল্যান্ডের সমর্থক লরির চিকিৎসার জন্য উঠেছিল লাখ লাখ পাউন্ড। সবার কায়মনো-প্রার্থনা ছিল, বিধাতা যেন তাঁর শক্তির বলে সুস্থ করে দেন মায়াভরা চোখের এই শিশুকে। কিন্তু ক্যানসার তাকে ছিনিয়েই নিয়ে গেল জোর করেই, সবার ভালোবাসার মাঝখান থেকে। ইংল্যান্ড ছাড়িয়ে পুরো ফুটবল বিশ্বই ভালোবেসে ফেলেছিল এই সান্ডারল্যান্ড-ভক্তকে। বিশেষকরে সান্ডারল্যান্ড দলের ইংলিশ তারকা জারমেইন ডিফো। তার সঙ্গে ছোট্ট লরির সাক্ষাৎ হবার পর থেকেই প্রতিনিয়ত খোঁজ রেখেছেন তার চিকিৎসার, দেখতে গেছেন হাসপাতালে। ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হিসেবে প্রায়শই তাদের দু’জনকে দেখা গেছে মাঠে। এসব এখন শুধু স্মৃতি হয়েই থাকবে ভেঙ্গে পড়া ডিফোর মনে। চিকিৎসকেরা অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ক্যানসার যে প্রাণঘাতী হয়েই বাসা বেঁধেছিল ছোট্ট লরির শরীরে।
    লরির জন্য গত মৌসুমে বিশেষ আয়োজন হয়েছিল সান্ডারল্যান্ড-এভারটন ম্যাচে। ছোট্ট শিশুটির নামে সেদিন ¯েøাগান তুলে গ্যালারি মুখর করেছিলেন দর্শকেরা। সান্ডারল্যান্ডের জার্সি পরে মাঠে নেমে সে একটি ‘গোল’ও করেছিল। পেনাল্টি থেকে পরাস্ত করেছিল এভারটনের গোলকিপার বোগোভিচকে। পুরোটাই ছিল লরির জন্য এক আনন্দ আয়োজন। সেই আয়োজন লরি উপভোগ করেছিল, কিন্তু ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল গোটা গ্যালারি। সান্ডারল্যান্ড কিংবা এভারটনের সব ফুটবলার তাকে কোলে নিয়ে আদর করেছিলেন। গ্যালারিতে উঠেছিল প্রার্থনা- সৃষ্টিকর্তা যেন ক্যানসার সারিয়ে মা-বাবার কোলে ফিরিয়ে দেন লরিকে। এই তো সেদিন ইংল্যান্ড-লিথুনিয়া ম্যাচেও সে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে সে এখন দূর আকাশের তারা।

    জাপানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫

    জাপানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫
    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। শনিবার দেশটির গণমাধ্যম একথা জানিয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অঞ্চলের মানুষকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীরা।
    টানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়ে দু’কুল উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে এবং জাপানের দক্ষিণ প্রান্তের চারটি প্রধান দ্বীপের অন্যতম কিউশু কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণে পথঘাট ভেসে গেছে এবং বাড়ি-ঘর ও কয়েকটি স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। জিজি প্রেস জানিয়েছে, নিখোঁজ লোকদের সন্ধান করতে ও আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে কয়েক হাজার উদ্ধারকর্মীকে ভারী কাদা ও বৃষ্টির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। এখনো ৬শ’র বেশি লোক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
    জিজি প্রেস ও সরকারি সংবাদ সম্প্রচারকারী সংস্থা এনএইচকে জানিয়েছে, আরো কয়েকটি লাশ উদ্ধার করায় মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্যায় সাতজন মারা গেছে ও ২২ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানায়। পার্বত্যাঞ্চলের পুরু কাদার স্তর ও ভেজা পথঘাটের পাশাপাশি সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। তবে জাপান সরকার উদ্ধার অভিযানে প্রায় ১২ হাজার পুলিশ, সেনা, দমকল কর্মী ও কোস্টগার্ড সদস্যদের মোতায়েন করেছে।
    বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুওকা এলাকার আসাকুরা নগরীর বাড়িঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়েছে। এখানে বুধবার রাত পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার আসাকুরার বাসিন্দা কায়োকো ইশিবাশি বলেন, ‘আমার বাবা-মা আরো ১৬ জনের সঙ্গে এখনো কুরোগাওয়া এলাকায় আটকা পড়ে আছেন। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’ আতঙ্কিত এই নারী আরো বলেন, ‘এখন আমি শুধু আশা করতে পারি, হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারীরা আমাদের উদ্ধার করবেন।’ এএফপি।

     

    ভক্তদের চীন ঘুরিয়ে ফিরলেন সাকিব
    ঈদের ছুটিতে সাকিব আল হাসানের সাথে চীন ঘুরে এলো ভাগ্যবান পাঁচ ভক্ত। গত ২৯ জুন থেকে ৪ জুলাই বিশ্বের সেরা এ অলরাউন্ডারের সাথে তার ভক্তদের চীন সফরের আয়োজন করে হুয়াওয়ে কনজ্যুমার বিজনেস গ্রæপ। ‘সাকিবের সাথে চায়না, কে যেতে চায় না’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় সৌভাগ্যবান ৫ ভক্তকে। সফরে সাকিব আল হাসানে সাথে চীনে অবস্থিত হুয়াওয়ের কার্যালয়সহ চীনের ঐতিহাসিক এবং আধুনিক নির্দশনগুলো ঘুরে দেখেন ভক্তরা।

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় নিখোঁজ ১৫

    জাপানের দক্ষিণাঞ্চলে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় বহু বাড়িঘর ভেসে গেছে এবং অন্তত ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে পথঘাট পানিতে ডুবে গেছে ও গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ একথা জানিয়েছে।
    আবহাওয়া কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা জানান, প্রবল বর্ষণে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথঘাট কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে করে আটকা পড়া হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে সেনা ও উদ্ধারকারীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থার এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এর আগে এমন ভারি বৃষ্টিপাত দেখিনি।’তিনি আরো বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’
    বৃহস্পতিবার চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান দ্বীপ কিউশুর বন্যা উপদ্রুত এলাকাগুলোতে সাড়ে সাতহাজার পুলিশ, উদ্ধারকারী ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে তল্লাশি অভিযানের জন্য ৪০টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বহু মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’
    এদের মধ্যে একটি শিশু নদীতে ভেসে গেছে এবং এক দম্পতির বাড়ি ভেসে যাওয়ার পর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ফুকুওকা ও ওইতার কর্মকর্তারা জানান, তাদের কাছে ১৫ জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগটিতে যে কয়েকটি অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আসাকুরা নগরীর তাদের অন্যতম। টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে নগরীটির রাস্তাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
    আসাকুরা নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা নাওহিসা ওউচিদা বলেন, ‘আমরা শুনেছি যে এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে। শিশুটি বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে।’ বুধবার কিউশুর কয়েকটি অংশে ১২ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এএফপি।
    চ্যাম্পিয়ন সেই জার্মানিই
    চার চারটি বিশ্বকাপ শিরোপা, তিনটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্সশিপ, গত শুক্রবার যোগ হয়েছে অনুর্ধ্ব-২১ ইউরো চ্যাম্পিয়ন্সশিপ শিরোপাও। বাকি ছিল কেবল কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফিটা। এবার সেটাও স্থান পেল জার্মানির অর্জনের শোকেসে। পরশু সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে জার্মানি।
    কে ভেবেছিল, জার্মানির এই দলই আসরের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় চড়াবে? গেল বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা বধে অংশ নেওয়া মহানায়কদের কেউই ছিলেন না এই দলে। ম্যানুয়েল নয়্যার, মেসুত ওজিল, টনি ক্রুস, টমাস মুলার, জেরোম বোয়েটাংদের ছাড়াই তরুণ এবং অখ্যাত এক দল নিয়ে রাশিয়া মিশনে নাম লেখান কোচ জোয়াকিম লো। যে দলের গড় বয়সই মাত্র ২৪ বছর ৪ মাস! যুবা দল বললেও তাই মোটেও অত্যুক্তি হয় না। লোর সেই দলটিই কিনা জার্মানিকে উপহার দিলো প্রথম কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা! এমন একটি মুহুর্ত ফিফার আমন্ত্রণে মাঠে বসে উপভোগ করেছেন আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দুই কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা এবং রোনালদো নাজারিও।
    ভাগ্য সহায়তায় টানা দুই কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানো চিলি এদিন ভাগ্যকে পাশে পায়নি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যে রক্ষণকে তারা প্রধাণ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, সেই রক্ষণের ভুলেই এদিন কেঁদে মাঠ ছাড়তে হয়েছে চিলিয়ানদের। ম্যাচের ২০তম মিনিটে করা লার্স স্টিনডলের একমাত্র গোলটি ছিল চিলির রক্ষণের দেওয়া উপহার। মিডফিল্ডার মার্সেলো দিয়াজের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার পর চাইলে গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভোকেও পরাস্থ করতে পারতেন টিমো ভের্নার। কিন্তু তিনি বল বাড়িয়ে দেন ডানপ্রান্তে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা স্টিনডলকে। ক্যারিয়ারের সহজতম ও স্বরণীয় গোলটি করতে ভুল করার কোন সুযোগই ছিল না বরুশিয়া ম’শেনগøাডবাখ স্ট্রাইকারের সামনে। কেননা, এগিয়ে যাওয়া ব্রাভো তার নাগালে পৌঁছুনোর আগেই জাল ছোঁয় বল। বিরতির আগ মুহূর্তে আবারো একই ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছিল চিলিকে। কিন্তু ব্রাভোর বীরত্বে সেবার তারা রক্ষা পায়।
    জার্মানির গোলটি ছিল একেবারেই ¯্রােতের বিপরীতে করা। শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক খেলতে থাকে চিলি। সপ্তম মিনিটে অ্যালেক্স ভিদাল ও একাদশ মিনিটে এদগার্দো ভার্গাস পোস্টের বাইরে মেরে দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন। বিংশ মিনিটেও গোলরক্ষক মার্ক-টার স্টেডেগেনর নৈপুণ্যে রক্ষা পায় জার্মানি। মিনিটের কাঁটা না ঘুরতেই চিলির ঐ ভুলে জার্মানদের এগিয়ে যাওয়া।
    পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের ধার আরো বাড়ায় অ্যালেক্সিস সানচেসরা। কিন্তু প্রতিবারই জার্মানদের রক্ষণে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই আক্রমণ। কখনো দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জার্মানির বার্সেলোনা গোলরক্ষক টার স্টেগেন। জার্মানরাও প্রতি আক্রমণে ত্রাস ছড়ায়, কিন্তু ব্রাভো বাধা আর তারা পেরুতে পারেনি। শেষ দশমাংশে ম্যাচে ফেরার সহজতম সুযোগটি বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে নষ্ট করেন চিলির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অ্যাঞ্জেলো সেহাল। যোগ করা সময়ে সানচেসের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকটি আরো দুর্দান্তভাবে প্রতিহত করেন স্টেগেন। অগোছালো ফুটবলের কারণে পরাশক্তি বধে চিলিও তাই এবার আর পেনাল্টি ভাগ্যকে পাশে পায়নি। জার্মানিও মাতে আসরের প্রথম শিরোপা উল্লাসে।
    এমন জয়ে নিজের বিষ্ময় লুকাননি জার্মান অধিনায়ক হুলিয়ান ড্রক্সলার, ‘আমরা ভালোই লড়েছি, আগের চেয়ে অনেক ভালো। ট্রফিটা সাথে করেই এখন আমরা সবাই ছুটিতে যেতে পারি।’ পক্ষান্তরে, চিলি অধিনায়ক ব্রাভোর কন্ঠের হতাশার বানী, ‘দু’দলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। জিততে না পারায় আমরা মর্মাহত। তবে আমরা বিশ্বমানের একটা দলের কাছেই হেরেছি এবং ভুলগুলো থেকে আমাদের শিখতে হবে।’
    তরুণ দল নিয়েও চ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে লাগাতে পেরে উচ্ছ¡াসিত কোচ জোয়াকিম লো। এর পুরো কৃতিত্ব তিনি দিলেন শিষ্যদের, ‘আমি এবং আমার দল শিরোপা জিতে ভীষণ গর্বিত। আমলে কেউই আমাদের গোনায় ধরেনি এবং আমরা দারুণ সব দলকে হারাতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এর দাম অনেক, কারণ এর আগে জার্মানরা এই শিরোপা জেতেনি। তাই এই দল ও জয় ইতিহাসে লেখা থাকবে।’ ট্রফি হাতে একটু মজা করলেন জার্মারির বিশ্বকাপজয়ী কোচ, ‘এটা বিশ্বকাপের চেয়েও ভারী।’
    জার্মানি ১ : ০ চিলি
    এক নজরে কনফেডারেশন্স কাপ ২০১৭
    স্বাগতিক দেশ রাশিয়া
    দল ৮টি
    ভেন্যু ৪টি
    চ্যাম্পিয়ন জার্মানি
    রানার্স-আপ চিলি
    তৃতীয় স্থান পর্তুগাল
    চতুর্থ স্থান মেক্সিকো
    মোট ম্যাচ ১৬
    মোট গোল ৪৩ (২.৬৯ প্রতি ম্যাচ)
    সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওন গোরেৎকা (জার্মানি)
    লার্স স্টিনডল (জার্মানি)
    টিমো ভের্নার (জার্মানি)
    (প্রত্যেকে ৩টি করে গোল করেন)
    টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হুলিয়ান ড্রক্সলার (জার্মানি)
    টুর্নামেন্ট সেরা গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো (চিলি)
    ফেয়ার প্লে ট্রফি জার্মানি

    জাপান সাগরে ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো উত্তর কোরিয়া

    উত্তর কোরিয়া তার পশ্চিমাঞ্চল থেকে জাপান সাগরের দিকে আবারো ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ এ দাবি করে জানাচ্ছে, স্থানীয় সময় ৯টা ৪০ মিনিটে উত্তর পিয়ংগান প্রদেশ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
    দক্ষিণ কোরিয়ান বার্তা সংস্থা- ইয়োনহাপ সেদেশের সেনাবাহিনীর বরাতে জানাচ্ছে, টোকিও জানাচ্ছে যে ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের অর্থনৈতিক সমুদ্রাঞ্চলে গিয়ে আঘাত করেছে। প্রায় ৪০ মিনিটে ৯৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছে এটি।
    যদিও এর একদিন আগেই উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারপরও আন্তর্জাতিক সকল নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ি আরোপের মধ্যেই একেরপর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছে নিভৃতকামী দেশ উত্তর কোরিয়া।

    সেক্স ডলের’ দিকে ঝুঁকছে জাপানি পুরুষরা

    ভালোবাসার কোনো রীতিনীতি নেই, ধর্ম নেই।সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে জাপানের অসংখ্য পুরুষ কৃত্রিম রোমান্সের দিকে ঝুঁকছে ও এদের সংখ্যাটাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
    প্রতি বছর দেশটিতে প্রায় দুই হাজারের মতো ‘ সেক্স ডল’ বিক্রি হয়, যার দাম অন্তত ছয় হাজার ডলার। মানুষের তৈরি এসব সঙ্গীদের সাথে মানসিক বন্ধনও গড়ে তুলেছেন অনেক ক্রেতা। জাপানের অনেক পুরুষ তাদের মানুষরূপী সঙ্গীদের নিয়ে অনেক খুশী এবং অনেকে বলছেন তারা আর কখনো কোনো মানুষের কাছে ফিরে যাবেন না।
    ৪৫ বছর বয়সী মাসায়ুকি ওজাকি বলছেন তাঁর ‘সেক্স ডলের’ প্রেমেই তিনি এখন মগ্ন হয়ে থাকেন। এমনকি কর্মক্ষেত্রে যদি কোনো কিছু ভালো না যায়, বা দিনটা যদি ভালো নাও কাটে তাতেও ওই পুতুলের প্রতি তার ভালোবাসা কমে না। ওজাকি বলেন, ‘সে সবসময় জেগে আছে, আমার জন্য অপেক্ষায় আছে এটা মনে করে আমি নিরাপদ বোধ করি’।
    সমালোচকেরা বলছেন পুরুষেরা যে একাকীত্ব বোধ করে সে কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিবিসি বাংলা।
    চীন কি সত্যই বিশ্ব নেতা হতে চলেছে
    বাণিজ্য ও পরিবেশ রক্ষার মত ক্ষেত্রগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করার পর সৃষ্ট শূন্যতা পূরণে এগিয়ে এসেছে চীন। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্ব ব্যবস্থার এক অপছন্দনীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হামবুর্গে জি ২০ শীর্ষ বৈঠকের আগে পর্যবেক্ষকরা চীনা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিশ্বায়নের দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন।
    জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার পর সবার নজর গিয়ে পড়ে চীনের উপর। বিশে^র বৃহত্তম গ্রীনহাউস গাস নির্গমনকারী কিন্তু নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে বৃহত্তম বিনিয়োগকারী চীন প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করার অঙ্গীকারের জন্য প্রশংসিত হয়।
    যুক্তরাষ্ট্র যখন প্যারিস চুক্তি থেকে পিছিয়ে যায়, তখন এ চুক্তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য চীন আরেকবার প্রশংসা লাভ করে। বিশ্লেষক ও মিডিয়া ভবিষ্যদ্বাণী করে যে চীন বিশে^র নয়া জলবায়ু নেতা হতে চলেছে। তারা সম্ভবত বেশী আশাবাদী হয়েছিলেন।
    ট্রাস্প যখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন চীনা নেতৃত্ব তখন চীন-ইইউ শীর্ষ বৈঠকে ব্রাসেলসে ছিলেন। তাদের ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের সাথে প্যারিস চুক্তির প্রতি জোর সমর্থন জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। সেই খসড়া বিবৃতি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
    পরিবেশবিদরা এতে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেন এবং তা ঘোষণার জন্য দু’ পক্ষের অপেক্ষায় থাকেন।
    কিন্তু তারা কখনোই তা ঘোষণা করেনি।
    চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার সাথে ‘বাজার অর্থনীতি মর্যাদা’য় চীনের প্রবেশ লাভের জন্য ইইউ-র সমর্থন লাভ করতে এ বিবৃতিকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তা যখন হল না তখন তিনি জলবায়ু বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানান।
    ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র অধিকতর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকায় চীন জলবায়ু ও বাণিজ্যের মত ক্ষেত্রগুলোতে এক অপছন্দনীয় বিশ^নেতা হিসেবে আলোচনায় প্রবেশ করে। এ জুলাইতে হামবুর্গে প্রধান শিল্পোন্নত ও উদীয়মান  অর্থনীতির জি ২০ শীর্ষ বৈঠককালে চীনের অবস্থান পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে ব্রাসেলস অধ্যায়ের মত বিশ^ নেতৃত্বের পথে চীনের যাত্রা হচ্ছে দু’পা এগোনো আর এক পা পিছানোর মত। পর্যবেক্ষকরা বলেন, স্বচ্ছতার অভাব ও আইনের বন্ধন প্রবণতার কারণে তার উচ্চাকাক্সক্ষা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
    সাংহাই বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক জিয়াং শিজু জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার দেশের লড়াই প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গেøাবাল টাইমসকে বলেন, চীনের জন্য বিশ^ নেতৃত্ব গ্রহণ খুব বেশী, খুব দ্রæত হয়ে যায়।
    চীন গত বছর নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে ৭৮.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের চেয়ে  বেশী। ২০২০ সাল নাগাদ সে অতিরিক্ত ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে এবং ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বিশ^ব্যাপী কর্মশক্তির ৪০ শতাংশেরও বেশী নিয়োগ করেছে।
    কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, চীন পরামর্শ প্রদান, অন্যদের বোঝানো, অথবা আরো উপরে যাওয়া ও তার নিজের নির্ধারিত লক্ষ্য অতিক্রমের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয় না।
    বিশ^ যখন নেতা হিসেবে চীনের ব্যাপারে কথা বলছে তখন সে অর্ধেক পথে রয়েছে।
    বার্লিনে চায়না ইনসিটিউট মেরিকস-এর মিক্কো হুয়োতারি বলেন, আমরা উপলব্ধির শক্তির অবমূল্যায়ন করেছি।
    ট্রাম্পের সংরক্ষণশীল ব্যবস্থার বিপরীতে চীন মুক্ত বাণিজ্যের একজন রক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরি করছে।
    চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানুয়ারিতে মুক্ত বাণিজ্য ও বিশ^ায়নের পক্ষে দাভোসে এক স্মরণীয় বক্তৃতা দেন যা তখন থেকে ‘সারমন অন দি মাউন্ট’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে।
    মঙ্গলবার চীনের দালিয়ান শহরে সামার দাভোস নামে পরিচিত এক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের সময় বক্তৃতায় একই ধারণার পুনরাবৃত্তি করেন। ট্রাম্পের সুষ্ঠু বাণিজ্য চুক্তি ও অতিরিক্ত শুল্ক বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগ প্রসঙ্গে লি বলেন, মুক্ত বাণিজ্যের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু বাণিজ্য। লি অঙ্গীকার করেন যে চীন তার নির্মাণ ও সেবা খাতে আরো উন্মুক্ত প্রবেশাকিার দেবে এবং বিদেশী ও দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সমমর্যাদা দেবে।
    সমালোচকরা বলেন, বাস্তবে চীন তার নিজের বাজারে অত্যধিক প্রতিবন্ধকতা বজায় রেখেছে। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো গত মাসে বলে, তারা চীনে ব্যবসা করাকে কঠিন মনে করে এবং তাদেরকে আগের চেয়ে কম স্বাগত জানানো হচ্ছে বলে দেখছে।
    অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উনানয়ন সংস্থা (ওইসিডি)-র উপদেষ্টা জোয়ার্গ উটকি বলেন, ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে একটি বাণিজ্য কাঠামো তৈরি করেছে এবং আমরা এখন তা থেকে সরে আসছি।
    তিনি বলেন, এ প্রেক্ষিতে চীন কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে ঐকমত্য লাভের চেষ্টায় হয়ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি পছন্দ করতে পারে।
    হুয়োতারি বলেন, চীন তার নিজের জন্য যেখানে প্রয়োজন সেখানে দায়িত্ব নেয় এবং তা নিজের শর্তে। তিনি বলেন, চীনের দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হবে দ্বিপাক্ষিক, অস্পষ্ট, ক্ষুদ্র দেশগুলোকে রক্ষার জন্য বেশী আইন বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া, তবে সে কøাবগুলোর সাথে যেগুলোর চালিকা শক্তি হিসেবে আছে চীন।
    এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনে চীনের অংশগ্রহণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিষয়ে চীনা নেতৃত্বের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
    চীনের সর্বাপেক্ষা উচ্চাভিলাষী বিদেশ ও অর্থনৈতিক নীতি হচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ যার লক্ষ্য ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা বরাবর বাণিজ্য ও অবকাঠামো সৃষ্টি।
    চীনে জার্মানির রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লাউস চীনের বিদেশী সংবাদদাতা ক্লাবের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, এ উদ্যোগ নীতিগত ভাবে ইতিবাচক , কারণ তা বিশ^ায়নের বিস্তার করছে। এটা সে সব দেশের জন্য বিনিয়োগ নিয়ে আসছে যেগুলো ঐতিহ্যগতভাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড দেশগুলোর দু’তৃতীয়াংশের বিনিয়োগ গ্রেডের  নীচে সার্বভৌম ঋণ হার রয়েছে।
    তিনি বলেন, এ প্রকল্পের ব্যাপারে রক্ষণশীল ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের এর সাথে অধিকভাবে জড়িত হওয়া এবং একে এক স্বচ্ছ, আইন ভিত্তিক ব্যবস্থায় আনা উচিত যা সামাজিক ও পরিবেশগত মানকে বিবেচনায় নেবে।
    ক্লাউস বলেন, এটি হচ্ছে চীনা বৈশিষ্ট্যের বিশ^ায়ন, অনুক্রমিক ও বেইজিং-এর সাথে বলিষ্ঠ ভাবে সংযুক্ত।
    শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার সওয়াব:  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
    অল্পসংখ্যক নেকআমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিম (স)-এর মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল বা ঐচ্ছিক সিয়াম পালন। বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণবছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪)
    শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের  রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫)
    জাগতিক কল্যাণকর কাজে মানুষের প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল সিয়াম পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কোনো ঈমানদারের পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেকআমলটা বিরাট ফজিলতসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদিন রাসূলুল্লাহ (স)-কে সারা বছর সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে।’ নবী করিম (স) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হজরত দাউদ (আ)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় থাকতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
    বান্দার ওপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দেবেন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তাঁর দরবারে পেশ করে, আল্লাহ তখন বান্দার এই আমলকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর পরম দয়া ও অনুগ্রহ বান্দারা তখনই লাভ করবেন যখন তারা নেকআমল করবেন। তাই মুসলমানরা যেন আল্লাহর খাস রহমতকে হাতছাড়া না করেন, বরং অল্প নেকআমলের বিনিময়েই যেন আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যান। সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অনন্তর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সূরা আয-যিলজাল, আয়াত: ৭-৮)
    শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়। তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবেন, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক সিয়াম পালনে ব্রতী হবেন। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরো করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (মুগনি: ৪/৪৪০)
    রাসূলুল্লাহ (স) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে ফজিলতময় শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে বরকতময় শাওয়ালের নফল সিয়াম। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে দেয়। কারণ রোজাদার কখনো অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি খারাপ ও পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচতে পারে না, যা তার রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয়। একজন মুমিন বান্দা যেন রমজান-পরবর্তী দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের শিক্ষা অনুসারে সর্বাবস্থায় মিথ্যাচার, পরচর্চা-পরনিন্দা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা, কপটতা-অসাধুতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, ঝগড়া-বিবাদ, সন্ত্রাস-সহিংসতা ইত্যাদি সামাজিক অনাচার জাতীয় শরিয়ত-গর্হিত ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, সহিহ-শুদ্ধভাবে ফরজ ও নফল সিয়াম পালন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার— এসব ইবাদতের মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন খাঁটি আবেদ বা প্রিয় মকবুল বান্দা হিসেবে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবেন!
    লেখক: পরিচালক, এশিয়ান ইন্সটিটিউট, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। সম্পাদক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বার্তা
     
    হলি আর্টিজানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা
    গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার এক বছর পূর্ণ হওয়ায় সেখানে জঙ্গিদের হাতে নিহত দেশি-বিদেশিদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের এ রেস্তোরাঁয় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও নিহতদের পরিবারের স্বজনসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এক বছর আগে যে স্থানে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২২ জন, গুলশানের সেই ভবনে ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হল তাদের।
    সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে ও দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মিকিও হাতায়েদা ওই ভবনে গিয়ে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন নিহতদের। সকাল ১১টার দিকে ফুল দিতে যান ঢাকায় ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমাসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ফুল দেয়ার পর একটি শোকবাণী পাঠ করেন ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তা। এসময় কয়েকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ফুল দিয়ে পুলিশ পাহারায় তারা চলে যান। জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন বিদেশি; তার মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন ছিলেন জাপানি। নিহত জাপানিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন। সকালে সাংবাদিকদের হলি আর্টিজানের ফটকের সামনে যেতে দেয়া না হলেও পরে সেখানে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশিদের অনুরোধ ছিল, তাদের ছবি তোলা যাবে না। সকাল ১১টার আগে শ্রদ্ধা মঞ্চে ফুল দেয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আইজি মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে। সেদিন হামলা ঠেকাতে গিয়ে এখানে নিহত হয়েছিলেন পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও পরিদর্শক সালাউদ্দিন। পুলিশ কর্মকর্তা মোখলেছুর গুলশান হামলার ঘটনাটিকে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, সে ঘটনার পর জঙ্গিবাদের যে ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল, তা মোকাবেলা করতে পেরেছি। আমরা এমন ঘটনার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। আমরা সেদিন তাৎক্ষণিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজেদের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে সে ঘটনার মোকাবেলা করেছিলাম। সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানানো শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিবাদ পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়নি, দুর্বল হয়েছে। শুধু ফোর্সের (আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) উপর নির্ভর করলে চলবে না। দেশপ্রেমিক জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। সকাল ১১টার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধামঞ্চে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ইতিহাস বন্ধুত্বের। সেই জায়গা থেকে কখনও ভাবিনি বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনা আমাদের বিপুলভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সরকারের নানামুখী ভূমিকা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের  পথ রুখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ফুল দেয়ার পর একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের বলেন, যারা এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত তাদের দর্শন কোনো সাধারণ দর্শন নয়। শ্রদ্ধা জানান সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সেলিম রেজা নূর, আসিফ মুনীর, শমী কায়সার। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা আজ ব্যথিত, মর্মাহত ও একইসঙ্গে ক্ষুব্ধ। ধর্মের নামে সেদিন মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন সরকারের একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অপশক্তিতে মোকাবেলায় জনতা ও রাজনীতির এক সম্মিলিত রাজনৈতিক ঐক্য দরকার।
    হলি আর্টিজানের অন্যতম মালিক সাদাত মেহেদী জানান, এক বছর আগে এদিন এখানে অনেক দেশি-বিদেশি মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের স্বজনেরা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। মূলত এ বিষয়টি মাথায় রেখে চার ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি বাড়িটির সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো লম্বা আকৃতির একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এদিকে হলি আর্টিজানের বর্ষপূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাতে ইতালি সরকারের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। ইতালি দূতাবাস এবং বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে হবে ওই স্মরণ অনুষ্ঠান। জাপানের সাত নাগরিকের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করছে জাপান দূতাবাস ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হয় তিন বাংলাদেশি নাগরিকসহ ২০ জন। অন্যদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের এবং একজন ভারতীয়। এছাড়া জঙ্গিদের হামলার শুরুতেই  তাদের আক্রমণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। রেস্তোরাঁর ভেতরে রাতভর জিম্মি ছিলেন অন্তত ২৫ জন, যাদের প্রায় ১১ ঘণ্টা পর পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টের সময় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাতের বিভিন্ন সময় উদ্ধার করা হয় আরও অন্তত ৭ জনকে। অপারেশন থান্ডারবোল্টের পর রেস্তোরাঁ থেকে ৫ জঙ্গিসহ ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া পালাতে গিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেক রেস্তোরাঁকর্মী। এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তদন্ত করছে।

    ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে

    ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকসহ শরণার্থীদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। আর এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন না থাকলে এমনকি কোনো ধরণের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ছাড়া এই দেশগুলোর কোনো ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হবেন। এছাড়া তাদের ভিসাও বাতিল করা হতে পারে।
    গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও সুদানের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ জারি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তারপর থেকে দেশটির অনেক রাজ্যের আদালতে তা খারিজ হয়ে গেলেও, গত সপ্তাহে তা আংশিক বহালের পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর পর থেকেই নড়েচড়ে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।
    জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত ৮টায় এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে চাচা, চাচী, ভাতিজা, ভাতিজি কিংবা দাদা-দাদীকে ‘ঘনিষ্ঠ’ আত্মীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।
    যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন বিদেশিদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। আগামী অক্টোবরে এ বিষয়টি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। বিবিসি।

    টাকা নিয়ে তোলপাড়

    সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের আমানতের হিড়িক

    টাকা পাচার অস্বীকার করার উপায় নেই : ড. ফরাস উদ্দিন
    অবৈধ অর্থ লুকাতেই সুইস ব্যাংকে রাখছে : ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
    বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত কারণ বলতে পারবে : অধ্যাপক আবু আহমদ
    দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকাই দায়ী : অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল
    টাকা পাচারের প্রকৃত কারণ শনাক্ত জরুরী : অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন
    আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই দায়ী : ড. ইফতেখারুজ্জামান
    স্টালিন সরকার : বাংলাদেশীদের সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে টাকা জমা রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার খবরে সর্বত্রই তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যপক হৈচৈ হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে নানা তীর্যক মন্তব্য আসছে। দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী নেতারা টাকা পাচার করে সুইস ব্যাংকে রাখার প্রবণতায় বিষ্ময় প্রকাশ এবং কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। সুশীল সমাজের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা যাচ্ছ। তারা বৈধ-অবৈধ পথে দেশ থেকে টাকা নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে রাখার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার জন্য দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, আস্থাহীনতা, ব্যাংকগুলোতে অর্থ রেখে মুনাফা না পাওয়া, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, বিনিয়োগ করলেও নিরাপত্তার অভাব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করাকেই দায়ী করেছেন। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে দেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে অর্থপাচার কমে যাবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, অবৈধ অর্থ আড়ালের পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থাহীনতাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জগন্ন্াথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতির বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রিয়ব্রত পাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে সুচিন্তিত বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
    ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমে গেলেও এক বছরে বাংলাদেশ থেকে জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এই সময়ে জমার পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২০ শতাংশ। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ তথ্য হলো- এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশীদের এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালে ছিল ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ। সেটা ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ (এক সুইস ফ্রাঁ = বাংলাদেশের ৮৬ টাকা)। শুধু সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমা রাখাই নয়; বাংলাদেশীরা বিদেশে যে বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করছে তা গত বছর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারীতেও উঠে আসে। গত বছর পানামা ভিত্তিক আইন প্রতিষ্ঠান মোসাক ফোনসেকোর অভ্যন্তরীণ পৌনে তিন টেরাবাইট নথি ফাঁস হয়ে যায়। জার্মানির একটি স্থানীয় পত্রিকা সে তথ্য প্রকাশ করে। পত্রিকাটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনমূলক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসর (আইসিআইজে) অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করে। অর্থ পাচারের তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৬ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ পায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পরিবারকে এ নিয়ে নাকানিচুবানি খেতে হলেও তালিকায় থাকা বাংলাদেশী কারো বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। বরং সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমার রাখার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের যে অর্থ জমা রাখার পরিমাণ বলা হচ্ছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে গেছে বিষয়টি এমন নয়। দেশের বাইরে বৈধ ভাবে যারা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন, বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী ও সুইজারল্যাÐে বসবাসকারী বাংলাদেশীরাও সে দেশের ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
    সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমা রাখা প্রবণতা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, সুইচ ব্যাংকে টাকা পাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে বক্তব্য দিয়েছে তারা কিসেই ভিত্তিতে তা দিয়েছে আমি জানি না। তবে বিগত ১১ বছরে দেশ থেকে যে ৬ হাজার ৫শ কোটি ডলার পাচার হয়েছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে বাংলাদেশী যারা প্রবাসে থাকেন তাদের অনেকেই সম্পদশালী। তারা আগ থেকেই সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখেন। সেখানে অর্থ টিআইএম দিয়ে রাখলে শতকরা ১০ সুদ এবং এমনিতেই রাখলে শতকরা ১৫ সুদ দেয়। ব্যাংকে অর্থ জমা রেখে এই মুনাফা হয়। এটাও ঠিক ২০১৪ সালে আÐারইনভয়েসিং এবং ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ৯শ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখে খুব বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং আমানতকারীদের মূলধন লোকসান হচ্ছে। এ কারণে যাদের সুযোগ আছে তারা টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের একটি শ্রেণী অবৈধ অর্থ লুকানোর জন্য বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে পণ্যের কম অথবা অতিমূল্য ঘোষণার মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার বিষয়টির প্রকৃত কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ভাল বলতে পারবে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশীদের এ ধরণের অর্থ পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমা রাখার কথা অস্বীকারও করছে না। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে তাতে বাংলাদেশীদের এই অর্থ প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ কেন বাংলাদেশ থেকে গেলেও কিছুই করার নেই। অতীতে আইন দিয়ে টাকা পাচার আটকানো সম্ভব হয়নি; হবেও না। জগন্ন্াথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতির বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রিয়বত পাল ইনকিলাবকে বলেন, দেশের অর্থ যদি বিদেশের ব্যাংকে চলে যায়, এটা অবশ্যই দু:খজনক। এটা দেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ওই অর্থ যদি দেশের বিনিয়োগ হতো তাহলে দেশের অর্থনীতি ভাল হতো। এতে বুঝা যায় দেশে বিনোয়োগ পরিবেশের অভাব। যেখানে পার্শ্ববতী দেশে ভারতেও বিদেশের ব্যাংকে অর্থের পরিমাণ কমছে; সেখানে আমাদের মতো গরীব রাষ্ট্রের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াটা অর্থনীতির জন্য উদ্ধেগের। তবে সব টাকা কিন্তু বৈধ উপায়ে যাচ্ছে না। বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশে বিনোয়োগ না করে দেশের বাইরে করছেন। ক্ষমতাসীনরাসহ অনেকে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে বাড়ি গাড়ি কিনছেন। এজন্য সরকারের উচিত সর্বপ্রথম দেশে বিনোয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা। সরকারের বির্ভিন্ন পর্যায়ে জবাবদিহেতা না থাকায় ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিদেশের ব্যাংকের টাকার পাহাড় গড়ছেন। অর্থ মন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ ব্যক্তিরা জানেন ব্যাংক খাতসহ সকল পর্যায়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়; কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেন না। এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে অর্থপাচার কমে যাবে। তখন আর কেউ বিদেশের ব্যাংকে অর্থ রাখতে আগ্রহী হবে না। অনেকেই বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখার পর আর তার হদিস পান না। সরকার এখন ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে। ফলে অর্থপাচার কমে যাবে। শুধু আইন করে, সাজা কার্যকর করে অর্থপাচার প্রতিরোধ সম্ভব নয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশে ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার পরিমান বৃদ্ধি বিশ্বের অন্যদেশগুলোর অন্যতম। দেশের অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে এর পরিমান বাড়তেই থাকবে। সরকার চাইলে আÐার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যারা বিদেশে অর্থ পাচার করছে তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে পারে।
    বিএফআইইউয়ের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, এই টাকার পুরোটাই কিন্তু দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা নয়। এ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য অনেক দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি আছে, যারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা অনেকেই বৈধভাবে উপার্জিত অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে রাখেন। এদের সবার তথ্য আমাদের পক্ষে কেন, কোনো দেশের পক্ষেই বের করা সম্ভব নয়। আমরা কেবল যাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ বা সন্দেহ করছি, তাদের তথ্য চাইতে পারি। এরই মধ্যে অনেকের তথ্য আনাও হয়েছে। বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে বসে সুইজারল্যান্ডের কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ থেকে যারা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার করছে, তারা সুইজারল্যান্ডে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে এসে অর্থ পাচার করছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এভাবে বিদেশে অ্যাকাউন্ট খোলাও অবৈধ। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দুর্নীতি আর লুটের টাকা বিদেশে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। জনগণ বিশ্বাস করে টাকা পাচারের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত। তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভুমিকায় অবর্তীণ হতেন না। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা রাখার পরিমাণ আরো বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইচ ব্যাংকে। অথচ সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে। জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনীতি করে কেউ এমন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর এবং কোনও আপোস হবে না। অর্থ পাচারের রেকর্ড বিএনপির আছে দাবী করে তিনি বলেন, তাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। কোকোর টাকার কথা সিঙ্গাপুরে প্রমাণিত। তাদের মানি লন্ডারিং বিষয়টি সবার কাছে সুপরিচিত এবং আদালতে প্রমাণিত। অর্থ পাচারকারীদের খুঁজে বের করতে সরকারী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, স্বচ্ছতার প্রয়োজনে যা করার দরকার তা করতে আমরা রাজি আছি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখবে। সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার উদ্বেগজনক কথাটা অসত্য নয়। উদ্বেগজনক বলেই তো আমরা তদন্ত করতে বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, যারা অবৈধ, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে অর্থ আয় করেন তারা অর্থ বিদেশে পাঠায়। কানাডার বেগম পাড়া বা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ট হোম করে এমন ব্যাক্তিরাও বিদেশে টাকা পাচার করছে। আবার অর্থ সম্পদশালী যারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে চায় অথচ দেশে সেটা সম্ভব হয় না তারা বিদেশে টাকা পাচার করে। সুইচ ব্যাংকের বাংলাদেশীদের রাখা সব টাকা যে অবৈধ আয়ের তা বলা মুশকিল। তাছাড়া রাজনৈতিক ভাবে হয়রানীর কারণে অনেকেই নিজেদের অর্থ নিরাপদে রাখতেই বিদেশে পাচার করে। ভারত সরকার যেমন সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ্যের সঙ্গে চুক্তি করেছে তাদের দেশের কারা অর্থ জমা রাখে তাদের তালিকা দেয়ার ব্যাপারে। বাংলাদেশ সরকারও সে ধরণের উদ্যোগ নিতে পারে। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়ায় ভারত থেকে বিদেশে টাকা পাচার কমে গেছে এমন নয়। কেন বিদেশে টাকা পাচার হয় এর কারণগুলো খুঁজে বের করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।