• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ‘মাংস’, ‘মাংশ’ নাকি ‘গোশত’ : চলমান বিতর্কের অবসান

    যারা “প্রাণীর দেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী শরীরের অংশবিশেষ”কে ‘মাংস’ না বলে ‘গোশত’ বলতে চান তাদের উদ্দেশ্য ভালো বলেই মনে হয়। তারা ইসলামী স্বাতন্ত্রিকতাকে বজায় রাখতে ও সম্ভব্য শাব্দিক অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে বাঁচতে চাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্য যেহেতু সৎ (ইতিবাচক ধারণা থেকে ধরে নিচ্ছি) সেহেতু তাদের সমালোচনা করা বা তাদেরকে কটাক্ষ করা আমার উদ্দেশ্য নয়।

    ০২. যারা ‘মাংস’ শব্দ বলা উচিত-অনুচিতের প্রশ্নটিকে জায়েয-না জায়েযের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তারা কোন গ্রহণযোগ্য দলীল, সেটি কুর’আন, হাদীস, ইজমা, ইজতিহাদ থেকে হোক কিংবা আকল অর্থাৎ যুক্তি থেকে হোক, দেননি এবং দিতে আগ্রহ বোধ করছেন না। অথচ ইসলামে কোন কিছু জায়েয-না জায়েয হতে হলে তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রমাণ-যুক্তি লাগবে। প্রমাণহীন কোন বক্তব্য গ্রহণ করতে কোন মুসলিম বাধ্য নয়।

    ০৩. বাংলা ভাষায় ব্যবহারিত শব্দগুলো উৎপত্তিগতভাবে ৫ প্রকার। ১. তদ্ভব, ২. তৎসম, ৩. অর্ধ তৎসম, ৪. দেশি এবং ৫. বিদেশী। ‘মাংস’ শব্দটি উপরোল্লিখিত কোন প্রকার থেকে এসেছে তা জানা এক্ষেত্রে জরুরি। বাংলা অভিধানগুলো ঘেঁটে আমি যতটুকু জেনেছি, তা হলো ‘মাংস’ শব্দটির উৎস হচ্ছে সংস্কৃত (মন + স) থেকে।

    ০৪. ‘মাংস’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে আসলেও এটি কোন কালেই ‘মাংশ’ বানানে ছিলো না। আমার দেখা সকল বাংলা অভিধানেই শব্দটির বানান ‘মাংস’ লেখা হয়েছে। (দেখুনঃ ঢাকার বাংলা একাডেমী (জানুয়ারী, ২০১১) প্রকাশিত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এর ৯৬৮ পৃ.; কলকাতার সাহিত্য সংসদ (অক্টোবর, ২০০৭) প্রকাশিত ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এর ৬৯৩ পৃ.; কলকাতার এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লি. (ত্রয়োদশ সংস্করণ, ১৩৮৯) প্রকাশিত আধুনিক বঙ্গভাষার অভিধান ‘চলন্তিকা’ -এর ৫৮২ পৃ.।) তাহলে আমরা ‘মাংস’ শব্দের বানান ‘মাংশ’ পেলাম কোথায়?

    ০৫. ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী ও স্বরোচিষ সরকার সম্পাদিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’, কলকাতার সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত ও শৈলেন্দ্র বিশ্বাস সংকলিত ‘সংসদ বাংলা অভিধান’ ও কলকাতার এম. সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লি. প্রকাশিত ও রাজশেখর বসু সংকলিত ‘চলন্তিকা’, কোথাও ‘মাংশ’ বানানে কোন শব্দ নেই।

    ০৬. বাংলা একাডেমি ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছে, ‘প্রাণীর দেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী শরীরের অংশবিশেষ’। (৯৬৮ পৃ.) শৈলেন্দ্র বিশ্বাস ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছেন, ১. ‘জীবদেহের হাড় ও চামড়ার মধ্যবর্তী কোমল অংশবিশেষ’; ২. ‘মানুষের ভোজ্য মনুষ্যেতর প্রাণীর আমিষ বা পলল’। (৬৯৩ পৃ.) রাজশেখর বসু ‘মাংস’ শব্দের অর্থ লিখেছেন, ‘পশু মনুষ্যইঃর দেহের চর্ম ও অস্থির মধ্যবর্তী কোমল অংশ পিশিত’। (৫৮২ পৃ.) উপরোল্লিখিত অর্থসমূহ ছাড়া অন্য কোন অর্থ এসব অভিধানে লেখা হয় নি।

    ০৭. ‘মাংস’ শব্দের বানান ‘মাংশ’ লিখে যারা ‘মায়ের (গরুর) অংশ’ ব্যাসবাক্যে সন্ধিবিচ্ছেদ (!) করেন তারা বাংলা ব্যকরণের কোন নিয়মে তা করেন তা আমার বুঝে আসে না। আমার জানা মতে বাংলা ব্যকরণের কোনো নিয়মেই এই সন্ধিবিচ্ছেদ ও ব্যাসবাক্য গ্রহণযোগ্য নয়।

    ০৮. বাংলা ভাষার কোনো বিশেষজ্ঞ (হিন্দু কিংবা মুসলিম) ‘মাংস’কে তথাকথিত ‘মাংশ’ শব্দের অপভ্রংশ বা পরিবর্তিত রূপ বলে আখ্যায়িত করে তাকে হিন্দুদের বিশ্বাসজাত কোন শব্দ বলে উল্লেখ করেন নি, যেমনটা করেছেন কীর্তন বেদী, স্নাতক, আচার্য, উপাচার্য, বিশ্বভ্রম্মাণ্ড ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রে। তাহলে কেন মাংসকে মাংশ ভেবে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে? বিস্তারিত জানতে ও প্রমাণ পেতে বাংলাভাষার যে কোন অভিধানে এই শব্দগুলোর অর্থ ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা দেখুন। সনাতন ধর্মের বিশ্বাসজাত কিন্তু বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দের ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট’ জানতে পড়তে পারেন সালেহুদ্দীন জহুরী’র লেখা ‘শব্দ সংস্কৃতির ছোবল’ বইটি।

    ০৯. অনেকেই ‘মাংস’কে ‘গোশত’ বলতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু বাংলা ‘মাংস’ শব্দ বাদ দিয়ে ফার্সী শব্দ ‘গোশত’ (ফার্সী গাফ লিখতে পারছি না।) শব্দের প্রতি এতো আগ্রহের কারণ কী তা আমি জানি না। তবে কেউ যদি ফার্সীকে ইসলামী ভাষা আর বাংলাকে অনৈসলামিক ভাষা বলে ভাবেন এবং মনে করেন, এবং সেই ভেবে ‘গোশত’ বলতে উৎসাহিত করেন তাহলে ভুল করবেন। কারণ আল্লাহর নিকট কোন ভাষাই খারাপ বা পরিত্যাজ্য নয়। ফার্সীর প্রতি এতো আগ্রহ কেনো? বেশি আগ্রহ থাকা উচিত আরবীর প্রতি। এর অনেক কারণ আছে। সে হিসাবে মাংসকে “লাহম” বলা উচিত। আমরা কি সেটি বলবো?

    ১০. তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, ‘মাংস’ দ্বারা হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী মা (গরু)-এর অংশ বুঝাচ্ছে, তাহলে শুধু গাভীর মাংসকে গোশত বলতে হবে। অন্যগুলোর যেমন ছাগল, খাসি, মুরগী ইত্যাদির ‘গোশত’কে কি মাংস বলতে দোষ হবে?

    মোটকথা, আমার এখন পর্যন্ত স্টাডি অনুযায়ী ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ কিংবা ‘গোশত’ কোনটা বলাই না জায়েয নয়। এক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, “আল-আসলু আল-ইবাহা” অর্থাৎ মূল হলো বৈধতা। মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আকীদা বা ইবাদাত নয় এমন সকল ক্ষেত্রে মূল হলো সবকিছু বৈধ। যতক্ষণ না তা হারাম বা নিষিদ্ধ হওয়ার দলীল পাওয়া যায়। তবে ‘মাংস’কে ‘মাংশ’ বললে এবং বিশ্বাস করলে সমস্যা হতো। যা কোন মুসলিম তো করেই না এমন কি কোন হিন্দুও করে না। কারণ আসলে বাংলায় ‘মাংশ’ বানানে কোন শব্দই নেই। তাহলে কেন এই আজগুবি ব্যাখ্যা? আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র নই, তাই ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনী কাম্য। তবে আবেগ দিয়ে নয়, দলীল ও বিবেক দিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা জরুরি। নয়তো এই সব সামান্য বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে আরও বড় গুনাহে আমরা লিপ্ত হয়ে যেতে পারি। ইসলামী আকীদা ও সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক এমন শব্দ, তা বাংলা ভাষার হোক বা অন্য কোন ভাষার হোক, তা বর্জন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

    শাহাদাৎ হুসাইন খান ফয়সাল
    গবেষক, হায়ার ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ, উত্তরা, ঢাকা।

     

     

    খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানো নিয়ে হাইকোর্টের রুল

    চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনের মেয়াদ ৫ এপ্রিল

    জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বাড়ানো হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্র ও খালেদা জিয়াকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে হবে। রুলের শুনানি আপিলের শুনানির সময় এক সঙ্গে হবে।

    গতকাল বুধবার দুদকের রিভিশন আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সাহেদুর করিমের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছেন, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল দুর্নীতি দমন কমিশন করতে পারে কি না- সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এদিকে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিযার জামিন আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন বিশেষ আদালত। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দুদুকের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছেন, রাজনৈতিক চাপে সাজার বিরুদ্ধে রিভিশন করেছেন দুদক। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামালসহ বিএনপি আইনজীরা।
    দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বিচারপতিরা আসন গ্রহণ করেন। শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে জানান, দুদক খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে যে আবেদন (রিভিশন) করেছেন আমরা এখনও তার কপি (রিভিশনের) পাইনি। তখন খুরশিদ আলম খান বলেন, আমরা কপি দিবো। অবশ্যই দিবো। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ তার আসন থেকে উঠে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান।তিনি জয়নুল আবেদীনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে শুনানি করেন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, দুদক স্বাধীন। কিন্তু কার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হবে এটাতো পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) ব্যাপার। সাজা কম ছিলো না বেশি ছিলো- এটা নিয়ে তারা কিভাবে এগ্রিভড (দুদক কিভাবে সংক্ষুব্ধ)? খুরশিদ আলম খান তার শুনানিতে এ সংক্রান্ত মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের কয়েকটি ধারার ওপর ব্যাখ্যা দেন এবং কয়েকটি কেস রেফারেন্সের ওপর আদালতে শুনানি করেন। এসময় আদালত বলেন, দুদক আইনে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ধরনের রিভিশন বা আপিল করতে পারে কি না- সে বিষয়টি আলোচনা ও ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তাই আবেদন অনুসারে রুল দিলাম। চার সপ্তাহের।
    এর আগে সকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য ধার্য করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ২৭ মার্চ আবেদনটি উপস্থাপনের পর আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন। গত ২৫ মার্চ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করা হয়।
    চ্যারিটেবল মামলায় জামিন ৫ এপ্রিল পর্যন্ত:
    চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জামিন মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন বিশেষ আদালত। গতকাল পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ আদেশ দেন। গত ১৩ মার্চ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক হয়। সেদিন বিচারক ২৮ ও ২৯ মার্চ শুনানির নতুন তারিখ রেখে নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়াকে হাজিরের নির্দেশ দেন।
    আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে আবদুর রেজাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান তপনসহ বিএনপি আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিচারককে বলেন, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কিন্তু কেন হাজির করা হয়নি তা বলতে পারছি না। কোনো কারণ আছে নিশ্চয়। আদালতের পরোয়ানার ফিরতি কাগজ দেখেছেন বলে জানিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া অসুস্থ। যেহেতু তিনি অসুস্থ, আমরা খুবই চিন্তিত। কারণ, আমরা জানতে পারছি না। উনারাও পরিষ্কার করে কিছুই বলেননি। তিনি আরো বলেন, তিনি কী রোগে ভুগছেন, তিনি কেন এলেন না সরকারের পক্ষ থেকে, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। শুধু লেখা আছে, বেগম খালেদা জিয়া জেলে অসুস্থ। এই মামলার আগামী তারিখ ধার্য করেছে ৫ এপ্রিল। এই আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার পর্যন্ত জামিন থাকায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আগামী ৫ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করেন। জিয়াউল ইসলাম মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্কের শুনানি করতে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এদিন আদালতে উপস্থিত থাকলেও শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় তার আর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়নি। আগামী তারিখে তিনি আবার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন।
    বিশেষ আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোড়দার:
    বেগম খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষের শুনানি দিন ধার্য থাকায় সকাল থেকে আদালত পাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়। সকাল থেকেই প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সর্তক অবস্থা নেয়। আদালতের প্রাঙ্গণের বাইরেরও সড়কে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। এ সময় পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানকেও রাস্তায় দেখা যায়। আইনজীবী ও সাংবাদিকদের তল্লাশি করে তারপর আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেয়া হয়। এদিকে, এ মামলার নিরাপত্তার কারণে আশপাশের দোকানপাট থেকে শুরু করে রাস্তাগুলোতেও জনসাধারণ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
    প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। এর পর থেকে তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। পরে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। এর পরে দুদক সে জামিনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ১৯ মার্চ আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেন।### ##
    খালেদা জিয়াকে হাজির না করায়
    কারা কর্তৃপক্ষকে শোকজ কুমিল্লা আদালতের
    ইনকিলাব ডেস্ক : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৮ এপ্রিল কুমিল্লার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ও বিকেলে দুই দফা শুনানি শেষে কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিন এসব নির্দেশ দেন।
    কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আটজনকে হত্যার মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি ছিল বুধবার। কিন্তু গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
    খালেদা জিয়ার আইনজীবী জানান, বেলা সাড়ে ১১টায় ও তিনটায় দুই দফায় কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে মামলার জামিনের বিষয় নিয়ে শুনানি হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে কেন হাজির করা হয়নি, সে জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া আগামী ৮ এপ্রিল জামিনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’
    এর আগে ১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে আবেদন নিয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে খালেদা জিয়াকে উপস্থিতিতেই গতকাল (২৮ মার্চ) শুনানির দিন ধার্য রেখেছিলেন। কুমিল্লার আমলি আদালত-৫-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন।
    কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রæয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১২ মার্চ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে আদালতের বিচারক তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
    এর আগে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই আদালতের বিচারক কুমিল্লা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম ওই আদেশ দেন।

    এটা বানর না মানুষ?

    Posted by admin on March 28
    Posted in Uncategorized 

    এটা বানর না মানুষ?

    চীনের টিয়ানজিন চিড়িয়াখানার একটি বানর এখন সেদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ‘হিরো’। কারণ, প্রাণীটি বানর হলেও তার মুখাবয়ব অনেকটা মানুষের মতো। প্রথমদিকে বানরটির ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে একে কম্পিউটারের কারসাজি বলে উড়িয়ে দেন।
    কিন্তু সন্দেহবাদীদের মুখ বন্ধ করতে এর ভিডিও ছাড়া হয়। সেটি দেখে মানুষ তাজ্জব বনে গেছে। অনেকে মজা করে বলেছে, এটা ওই চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়কদের একজন হতে পারে! হয়তো তার শরীরটা একটু বেশি লোমশ!

    ইয়োকোহামায় পরিবেশ বান্ধব স্মার্ট টাউনের উদ্বোধন

    জাপানের প্রধান একটি বৈদ্যুতিক সামগ্রী নির্মাণ কোম্পানি প্যানাসোনিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্য ধরে নেয়া স্মার্ট টাউন নামে পরিচিত একটি অঞ্চল উদ্বোধন করেছে।

    টোকিওর কাছের ইয়োকোহামা শহরে ৩.৮ হেক্টর এলাকার উপর সেই অঞ্চলটি তৈরি করা হয়।

    একটি আবাসন কমপ্লেক্স, বিপণি বিতান, একটি ছাত্রাবাস এবং বিশাল আকারের ইন্টারনেট কোম্পানি এপেলের পরিচালিত একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র সেখানে আছে।

    সেখানে ব্যবহারের কিছু বিদ্যুৎ সোলার প্যানেল ব্যবহার করে উৎপাদনের পরিকল্পনা আয়োজকরা করছে।

    এছাড়া হাইড্রোজেন জ্বালানি ভরার একটি স্টেশনও সেখানে তৈরি করা হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ না করা ফুয়েল সেল গাড়ির ভাগাভাগি ব্যবহারের একটি সেবা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে।

    জমির চুক্তিতে তাঁর স্ত্রীর জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেন আবে

    জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানিয়েছেন একজন স্কুল পরিচালনাকারীকে একটি জমির বিতর্কিত চুক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানানোর যে অভিযোগ তা তাঁর স্ত্রী ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করেছেন।

    মিস্টার আবে সোমবার উচ্চকক্ষের একতি কমিটির বৈঠকে একথা জানান।

    চুক্তি সম্পর্কিত দলিলে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে সে সম্পর্কে মঙ্গলবার সংসদ-ডায়েটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা নোবুহিসা সাগাওয়া’র শপথ নিয়ে সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে।

    মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দলিলে পরিবর্তন আনার কথা স্বীকার করে নেয়।

    অর্থ মন্ত্রণালয় স্কুল পরিচালনাকারী মোরিতোমো গাকুয়েন-এর কাছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি বাজার মূল্যের এক ভগ্নাংশে বিক্রি করে দেয়। এতে পক্ষপাতমূলক সুবিধা প্রদানের অভিযোগ উঠে।

    মিস্টার আবের স্ত্রী আকিএ ছিলেন ঐ জমিটিতে চালু হতে যাওয়া নতুন একটি স্কুলের অবৈতনিক অধ্যক্ষ।

    মূল দলিল থেকে যেসব অন্তর্ভূক্তি সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাঁর মধ্যে মিজ আকি’র বিষয়ে উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল যাতে তিনি মোরিতোমোকে লেনদেন চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন।

    বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সদস্য মিস্টার আবে’কে বলেন মোরিতোমোর সাবেক প্রধান ইয়াসুনোরি কাগোইকে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতাদের গত সপ্তাহে জানিয়েছেন যে মিজ আকিএ ঐ মন্তব্যটি করেন। তিনি মিস্টার আবেকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁর স্ত্রীকে এর জন্য দায়ী করা যাবে বলে তিনি মনে করেন কীনা।

    মিস্টার আবে মিস্টার কাগোইকের মন্তব্য নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং একটি অপরিবর্তিত দলিলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে এই চুক্তিতে তাঁর কোন হাত নেই।

    প্রধানমন্ত্রী আবে বলেন, তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন না।

    এছাড়াও মিস্টার আবে বলেন, তিনি আশা করছেন যে আর্থিক ব্যুরোর সাবেক প্রধান মিস্টার সাগাওয়া তাঁর আসন্ন সাক্ষ্যতে কি ঘটেছিলো তা পরিষ্কার করবেন।

    মিস্টার আবে আরো বলেন, সরকার সত্য উদ্‌ঘাটন করতে যা যা করা প্রয়োজন, সরকারকে তাই করতে হবে এবং ডায়েটে একটি তদন্ত কর্তৃপক্ষ স্থাপন করার বিষয়কে তিনি সমর্থন করেন।

    মিস্টার সাগাওয়ার উত্তরসূরি মিৎসুরু ওতা কমিটিকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় দলিলে পরিবর্তন আনা একজন কর্মচারিকে চিহ্নিত করেছে। তবে আদেশ প্রদানকারীকে খুঁজে বের করতে চলমান তদন্তের স্বার্থে তিনি তাঁর নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

    আজ রাজধানীতে বিএনপির স্বাধীনতা শোভাযাত্রা

    মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে এই শোভাযাত্রার মৌখিক অনুমতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
    সূত্র জানায়, আজ বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র্যালি শুরু হবে। শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে র্যালি শেষ হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমকে জানান, তারা র্যালি করবেন এবং পুলিশ তাদেরকে এই র্যালির মৌখিক অনুমতি দিয়েছে।
    গতকাল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বিকালে নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৩১ মার্চ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা করবে বিএনপি।

    মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

    ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস আজ। ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল একাত্তরের এদিনে। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুÐলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সবুজ পতাকা। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র ¯েøাগান তুলে ট্যাংকের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক। আজ থেকে ৪৭ বছর আগের ঠিক এমনি এক ভোররাতে পাক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
    পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে যখন রাজধানীতে এক নৃশংস গণহত্যায় মেতে ওঠে, তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসায় গ্রেফতার হওয়ার আগমুহুর্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠান। বার্তায় তিনি বলেছিলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। একে যে রকম করেই হোক শত্রæর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’ ইপিআরের ওয়্যারলেস থেকে তার এই বার্তা প্রচারিত হয়েছিল। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতারা মাইকে এটি প্রচার করেন। পরে চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা তার পক্ষে বেতারে পাঠ করলে দেশবাসী স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার বিষয়টি আরো ভালভাবে জানতে পারে।
    পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলা শুরুর পরপরই দেশের বীর সন্তানেরা বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো যার যা আছে তা-ই নিয়ে মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেয় বাঙালি। ৯ মাস মরণপণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় চিরকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের।
    স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন।
    এ বছর আমাদের মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছর পদার্পনের শুভ মুহুর্তে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের গ্রæপ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন বিশেষ মাত্রা যোগ হয়েছে। একই সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে একাত্তরের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া সেই কালজয়ী ভাষণও ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যর স্বীকৃতি লাভ করে।
    যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।
    সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি ক‚টনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
    সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এবারই প্রথম স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সারাদেশে ও বিদেশে একযোগে একই সময়ে শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে।
    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল- দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তানেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
    ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তনি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে গণহত্যা করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
    সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রæর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহŸান জানান। মূহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

    গুগলে বাংলাদেশের পতাকা

    স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা জানাতে লাল সবুজ পতাকা দিয়ে ডুডল প্রকাশ করেছে গুগল। গতকাল ডুডল (গুগলের হোম পেজে দেখানো বিশেষ লোগো) দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। যেখানে রয়েছে লাল সবুজের পতাকা। গুগল শব্দটিও লেখা হয়েছে লাল-সবুজের ওপর।
    ২০১৩ সাল থেকে মোট পাঁচটি বিশেষ ডুডল প্রকাশ করল গুগল। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মানুষ গুগলে ঢুকে সুন্দর একটি ডুডল দেখে চমকে যায়। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চে আবারও ডুডল প্রকাশ করে গুগল। ২০১৬ সালের স্বাধীনতা দিবসে গুগলের ডুডলে ফুটিয়ে তোলা হয় উন্নতির দিকে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে। ২০১৭ সালেও ডুডলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য।

    গৃহবন্দি হতে পারেন সু চি !

    বিশ্রাম অজুহাতে হঠাৎ পদত্যাগ মিয়ানমার প্রেসিডেন্টের

    রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের কারণে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখোমুখি রেখে পদত্যাগ করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট উ থিন কিয়াও। তার কার্যালয় সূত্রে এই পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। গত প্রায় এক বছর ধরে তার পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তার কার্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পোস্টের অস্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্রাম নেওয়ার স্বার্থেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। হারিয়েছিলেন কাজের সক্ষমতা। থিন কিয়াও সু চির বহুদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু। খবরে বলা হয়, তার পদত্যাগে আলোড়িত আন্তর্জাতিক মহল। তবে কী কারণে তিনি পদ ছাড়লেন সেই বিষয় পরিষ্কার নয়। আশঙ্কা ফের সেনা শাসনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। সেই সাথে নোবেলজয়ী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে ফের গৃহবন্দি করা হতে পারে বলেও জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সু কি-র ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া প্রেসিডেন্ট থিন কিউ। আগামী সাত দিনের মধ্যে তার স্থানে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসবেন। গত বছর থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচার ও গণহত্যার অভিযোগে বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে মিয়ানমার। দেশটির রাখাইন প্রদেশ থেকে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। ঘটনার সূত্রপাত মিয়ানমার সেনার চৌকিতে হামলা দিয়ে। সরকারের অভিযোগ, রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলা জড়িত। তারপরেই সেনা অভিযান শুরু হয়। আর এই অভিযান ঘিরেই বিতর্ক দানা বাধে। এই পরিস্থিতিতে গণহত্যায় মদদ দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার এমনই দাবি করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। জাতিসংঘে বারবার সমালোচিত হয়েছে মিয়ানমার সরকার। সু চি-র মতো নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব বিষয়টিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এদিকে, বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখেও সু চি দীর্ঘ সময় নীরব থাকায় তার অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। ধারণা করা হয় সেনা শাসনের ঘেরাটোপেই আছেন তিনি। পরে তিনি সেনা অভিযানকে সমর্থন করায় বিষয়টি আরও জমাট হয়। এমনই পরিস্থিতিতে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয় মিয়ানমারের উপর। এরপরই রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় সু চি সরকার। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলেছে। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে টানা সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে সু চি-র দল। তবে সেখানকার পার্লামেন্টে বড় অংশ সেনা প্রশাসকের দখলে। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

    ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন জাকারবার্গ

    ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরকে না জানিয়েই লাখ লাখ গ্রাহকের তথ্য নিজেদের বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিল রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ এনালিটিকা। তারা ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে—এমন তথ্য ফাঁস হলে আলোড়ন শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন তারা ‘ভুল করেছেন’।

    ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফেসবুক প্রধান। বিভিন্ন অ্যাপ ভবিষ্যতে যাতে ফেসবুককে ব্যাবহার করে গ্রাহকদের তথ্য সহজে হাতিয়ে নিতে না পারে সেজন্য সামনের দিনগুলোতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও বেশ কিছু পরিবর্তন আনার অঙ্গিকারও করেছেন তিনি।

    জাকারবার্গ গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনার তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটি দিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সেবা দেয়ার কোনও অধিকার থাকবে না। আমি ফেসবুক শুরু করেছি এবং দিনশেষে এই প্ল্যাটফর্মে যা-ই ঘটুক না কেন দায়-দায়িত্বও আমার।”
    ক্যামব্রিজ এনালিটিকা ট্রাম্পের পক্ষে ডিজিটাল প্রচারণা চালানোর সুবিধার জন্য গ্রাহকদের তথ্য ফেসবুক থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয়, এই অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তুমুল আলোড়ন শুরু হয় এবং গত মঙ্গলবার ক্যামব্রিজ এনালিটিকার প্রধান নির্বাহীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।ফেসবুক ব্যবহারকারীদেরকে না জানিয়েই লাখ লাখ গ্রাহকের তথ্য নিজেদের বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিল রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ এনালিটিকা। তারা ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে—এমন তথ্য ফাঁস হলে আলোড়ন শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন তারা ‘ভুল করেছেন’।

    ফেসবুকে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ফেসবুক প্রধান। বিভিন্ন অ্যাপ ভবিষ্যতে যাতে ফেসবুককে ব্যাবহার করে গ্রাহকদের তথ্য সহজে হাতিয়ে নিতে না পারে সেজন্য সামনের দিনগুলোতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও বেশ কিছু পরিবর্তন আনার অঙ্গিকারও করেছেন তিনি।

    জাকারবার্গ গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনার তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটি দিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সেবা দেয়ার কোনও অধিকার থাকবে না। আমি ফেসবুক শুরু করেছি এবং দিনশেষে এই প্ল্যাটফর্মে যা-ই ঘটুক না কেন দায়-দায়িত্বও আমার।”

    ক্যামব্রিজ এনালিটিকা ট্রাম্পের পক্ষে ডিজিটাল প্রচারণা চালানোর সুবিধার জন্য গ্রাহকদের তথ্য ফেসবুক থেকে কৌশলে হাতিয়ে নেয়, এই অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই তুমুল আলোড়ন শুরু হয় এবং গত মঙ্গলবার ক্যামব্রিজ এনালিটিকার প্রধান নির্বাহীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। বিবিসি বাংলা।

    এক নজরে নেপালে ইউ এস বাংলা বিমান দুর্ঘটনা!

     

    ঢাকা: সোমবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া নেপালগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নেপালের ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

    নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ১৭ জন আহত যাত্রীদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেও বলে জানা গেছে। কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনের সূত্রে দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

    ইউএস বাংলা বিমানের যাত্রীদের মধ্যে ৩৩ জন নেপালি, ৩২ জন বাংলাদেশি, একজন মালদ্বীপ এবং একজন চীনা নাগরিক ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে দুজন শিশু ছিল বলেও জানা গেছে।

    বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজ কুমার ছেত্রী বলেন, বিমানটির ৫৭ আরোহী মারা গেছেন। তবে এ মুহূর্তে হতাহতের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। তবে নিহত ইউএস-বাংলা বিমানের ক্রুদের নাম জানাগেছে। ক্রুরা হলেন- প্রিথুলা রশীদ, রকিবুল হাসান খাজা হোসাইন ও নাবিলা।

    ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ৭৬ আসন বিশিষ্ট এই বিমানটি সোমবার দুপুর ২.৩০ মিনিটে কাঠমুন্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের সময় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

    ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের পূর্ব দিকে ফুটবল খেলার মাঠে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নেপালের সেনাবাহিনীরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

    এদিকে দেশটির বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সানজিব গৌতম বলেন, রানওয়েতে অবতরণের চেষ্টার সময় বিমানটির পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

    তিনি বলেন, ইউএস-বাংলার বিমানটিকে বিমানবন্দরের দক্ষিণ-প্রান্ত থেকে রানওয়েতে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিমানটি বিমানবন্দরের উত্তর অংশ থেকে অবতরণের চেষ্টা করে। এ সময় হঠাৎ বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। পরে বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

    দুর্ঘটনার কারণে ত্রিভুবন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সব ধরনের বিমান ওঠানামা এখন বন্ধ রয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক আমেরিকার নাগরিক জানিয়েছেন, বিমানটি মাটির খুব কাছে দিয়ে উড়ে আসছিল।

    এদিকে এই ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে নেপাল।

    বিয়েবার্ষিকীর আনন্দ উদযাপন করতে গিয়ে সপরিবারে নিহত হয়েছেন মেহেদী হাসান অমিও ও সোনা মণি নামে এক দম্পতি। ঘটনার পর সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্বজন এভাবে তার আহাজারির কথা জানান।

    এই দম্পতি তাদের শিশু সন্তানসহ বিয়েবার্ষিকী পালনের জন্য কাঠমান্ডুতে যাচ্ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু দুটির মধ্যে একজন এই দম্পতির বলে ধারণা করা হচ্ছে।এনি প্রিয়ক সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে লিখেছিলেন, Ready to fly to Kathmandu from Hazrat Shahjalal International Airport …Pls keep us on your prayer…। কিন্তু এই হানিমুনে তাদের ভাগ্যে কী ঘোটেছে তা এখনো জানা যায়নি। বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রী কবির হোসেনের ছেলে শাওন এসেছেন ইউএস-বাংলা অফিসে বাবার খোঁজ নিতে। তাদের বাড়ি উত্তরখান এলাকায়।

    শাওন বলেন, ‘আমার বাবা দুজনকে নিয়ে ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিমান বিধ্বস্তের পরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে নেপালের স্থানীয় একটি মাধ্যমে জানতে পেরেছি তিনি সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাই এখানে খোঁজ নিতে এসেছি।’

    এদিকে বিমানের একটি জানালা ভেঙে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে যাওয়া বসন্ত বহরা নামের এক যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে বিমানটি ছাড়ার সময় কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার আগমুহূর্তে হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিতে থাকে। এতে যাত্রীরা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আমি জানালার পাশের ছিটে বসা ছিলাম। আমি জানালা ভেঙে বেরিয়ে আসি।

    তিনি বলেন, আমি জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়ার পর আর কিছু বলতে পারি না। কারা যেন আমাকে সিনেমঙ্গল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে আমার বন্ধুরা সেখান থেকে আমাকে নরভিক হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।

    জানা গেছে, বিধ্বস্ত বিমানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীর স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আহমেদ ছিলেন। ফ্লাইটের যাত্রীদের তালিকা থেকেই এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

    এ ব্যাপারে বৈশাখীর হেড অব নিউজ অশোক চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সোমবার থেকে পাঁচদিনের ছুটি নিয়েছিলেন ফয়সাল আহমেদ। তবে তিনি অফিসকে এই সফরের বিষয়ে কিছু জানাননি। পরে ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় নাম দেখে পাসপোর্ট নম্বর মিলিয়ে আমরা বুঝতে পারি ফয়সাল সেই ফ্লাইটে ছিলেন। ফয়সাল বৈশাখীর হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিটের খবর কভার করতেন।

    এদিকে ঐ বিমানের যাত্রীদের তালিকা প্রকাশ করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্তৃপক্ষ।

    ইউএস বাংলার সূ্ত্রে বিমানের যাত্রীদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। সেই তালিকায় যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- রিজনা আব্দুল্লাহ, ফয়সাল আহমেদ, শামরিন আহম্মেদ, ইয়াকুব আলী, আলিফুজ্জামান, আলমুন নাহার অ্যানি, বিলকিস আরা, শিলা বসগেইন, নুরুন্নাহার বেগম, আলজিনা বড়াল, চারু বড়াল, আক্তারা বেগম, শাহীন বেপারী, সোভিন্দ্র বোহারা, বসন্ত বোহারা, সামিরা বাজানকার, প্রবীণ চিত্রকর, নাজিয়া চৌধুরী, সাজেনা দেবকোটা, প্রিন্সি ধামী, গয়োন্ত গ্রুঙ, রেজোয়ানুল হক, রকিবুল হাসান, মেহেদী হাসান, মো. কবির হোসেন, দিনেশ হুমাগাইন, সানজিদা হক, হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, শ্রেয়া ঝা, পূর্ণিমা লোহানী, মিলি মহারাজন, নিগা মহারাজন, সঞ্জয় মহারাজন, ঝাং মিং, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, শেখর পান্ডে, প্রসন্ন পান্ডে, বিনোদ রাজ পাডোয়াল, শঙ্করহরি পাডোয়াল, সঞ্জয় পাডোয়াল, এফএইচ প্রতিক, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মতিউর রহমান, শেখ রুবায়াত, কৃষ্ণকুমার শাহানী, উম্মে সালমা, আসেনা শাকিয়া, সানাম শাকিয়া, অঞ্জিলা শ্রেষ্ঠা, সারোনা শ্রেষ্ঠা, সত্য শর্মা, হরিপ্রসাদ সুবেদি, দয়ারাম তাম্রকার, বালকৃষ্ণ থাপা, সেতা থাপা, কিশোর ত্রিপাঠি, অবদেশ কুমার যাদব, অনিরুদ্ধ জামান, নুরুজ্জামান, রফিক জামান।

    এদিকে বিমানটিতে সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১৩জন শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে ১১ জন ছাত্রী ও ২ জন ছাত্র।

    এদিকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    আলাদা শোক বার্তায় সোমবার বিকেলে তারা নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

    রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। এছাড়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই  বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে।

    এক টুইট বার্তায় মোদি লিখেন- কাঠমুন্ডুতে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের জন্য প্রার্থনা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
    এক শোক বার্তায় মমতা বলেছেন, এই দুর্ঘটনায় যে সমস্ত মানুষ হতাহত হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজনকে আমার হূদয় থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এই দুঃসময়ে বাংলাদেশ এবং নেপাল সরকারের নেতৃত্ব এবং জনগণের প্রতি জানাই আমার গভীর সহমর্মিতা, সহানুভূতি এই বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ শোক প্রকাশ করেছেন। এবং কাঠমান্ডুতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। একইসাথে এই ‍বিমান দুর্ঘটনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শোক প্রকাশ করেছেন।

    এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের মরদেহ দেশে আনা ও আহতদের চিকিৎসা বাবদ সকল খরচ ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ বহন করবে। মঙ্গলবার ইউএস-বাংলার জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

    উল্লেথ্য, নেপালে এমন বিমান দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। বিগত ৭ বছরে ১৫টি ছোট-বড় বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে নেপালে। নেপালের জরিপ সংস্থা নেপাল ইন ডাটা অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এসব প্লেন ক্রাশের ঘটনায় মোট ১৩৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। ওই ৭ বছরের প্রতিবছর কমপক্ষে একটি করে বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

    টোকিওর সাবওয়েতে সারিন হামলার ২৩তম বার্ষিকী

    টোকিওর সাবওয়েতে ওম শিনরিকিও গোষ্ঠীর মরণঘাতি সারিন গ্যাস হামলার ২৩তম বার্ষিকী মঙ্গলবার।

    ১৯৯৫ সালের ২০শে মার্চ এই গোষ্ঠী টোকিওর মধ্যাঞ্চলে ব্যস্ত সময়ে জনাকীর্ণ সাবওয়ে কোচের ভিতরে বিষাক্ত এই নার্ভ গ্যাস ছাড়ে। এতে ১৩ ব্যক্তি নিহত এবং ছয় হাজারের বেশি লোক আহত হন।

    হামলার এক লক্ষ্যস্থল কাসুমিগাসেকি স্টেশনে মঙ্গলবার সকালে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ বছর আগে হামলা পরিচালনার প্রায় একই সময় সকাল আটটায় স্টেশন কর্মীরা কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করেন। ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও অন্য শোকাতুর ব্যক্তিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

    ঐ গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হামলা ও অন্যান্য অপরাধে আনীত ফৌজদারি মামলার বিচার জানুয়ারিতে সম্পন্ন হয়। শোকো আসাহারা ছদ্মনামের নেতা চিযুও মাৎসুমোতোসহ ওম শিনরিকিওর ১৩ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।

    উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখতে জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার মতৈক্য

    জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরমাণু মুক্ত করণের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।

    গতকাল ওয়াশিংটনে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোও কোওনো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিয়োন হোয়া এক বৈঠকে মিলিত হন।

    তাঁরা, অতীতে অনুষ্ঠিত আলোচনা উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু মুক্ত করণের পথে ধাবিত না করায় দেশটির উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখা প্রয়োজনীয় বলে একমত হন।

    মিঃ কোওনো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদের গ্রহণ করলে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ব্যয় মেটানোর জন্য সহায়তা করতে জাপান প্রস্তুত রয়েছে।

    মিঃ কোওনো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেইন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ায় জাপানী নাগরিক অপহরণ সমস্যাটি তুলে ধরতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

    মিঃ কোওনো, সমন্বিত উপায়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অপহরণ সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করা জাপানের অবস্থান জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

    বিনোদন নারী হিসেবে পরিচিত সমস্যাটির বিষয়ে মন্ত্রীরা, এবিষয়ে তাঁদের দেশগুলো উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি ভবিষ্যতমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলে একমত হন।

    বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিঃ কোওনো, উত্তর কোরিয়া পর্যায়ক্রমে পরমাণু মুক্ত করণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    তিনি, সমস্যাটি মোকাবিলায় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে তাঁদের অবস্থানে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয় বলে উল্লেখ করেন।

    উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখতে জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার মতৈক্য
    জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরমাণু মুক্ত করণের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ার উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।

    গতকাল ওয়াশিংটনে, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারোও কোওনো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাং গিয়োন হোয়া এক বৈঠকে মিলিত হন।

    তাঁরা, অতীতে অনুষ্ঠিত আলোচনা উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু মুক্ত করণের পথে ধাবিত না করায় দেশটির উপর সর্বোচ্চ চাপ বজায় রাখা প্রয়োজনীয় বলে একমত হন।

    মিঃ কোওনো বলেন যে, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদের গ্রহণ করলে এজন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ব্যয় মেটানোর জন্য সহায়তা করতে জাপান প্রস্তুত রয়েছে।

    মিঃ কোওনো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জেইন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ায় জাপানী নাগরিক অপহরণ সমস্যাটি তুলে ধরতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

    মিঃ কোওনো, সমন্বিত উপায়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অপহরণ সমস্যাগুলোর সমাধান কামনা করা জাপানের অবস্থান জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

    বিনোদন নারী হিসেবে পরিচিত সমস্যাটির বিষয়ে মন্ত্রীরা, এবিষয়ে তাঁদের দেশগুলো উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি ভবিষ্যতমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করবেন বলে একমত হন।

    বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে মিঃ কোওনো, উত্তর কোরিয়া পর্যায়ক্রমে পরমাণু মুক্ত করণের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

    তিনি, সমস্যাটি মোকাবিলায় জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে তাঁদের অবস্থানে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয় বলে উল্লেখ করেন।

    আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

    প্রথম কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না এবারও। ভারতের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফি টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালে দুর্দান্ত একটা আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। ১৬৭ রানের টার্গেটে শেষ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল পাঁচ রানের। সেই বলে ছক্কা মেরে চার উইকেটের নাটকীয় জয় তুলে নেয় ভারত। তাই পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে ওঠেও বহুজাতিক টুর্নামেন্টে ট্রফি জেতার অপেক্ষায় থাকতে হলো টাইগারদের।
    ফাইনালে জয়ের জন্য ১৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারত দুর্দান্ত সূচনা করেছিল। ৩৭ রানের মধ্যে শিখর ধাওয়ান ও সুরেশ রায়নার উইকেট হারায়। এর মধ্যে রোহিত শর্মা ও লুকেস রাহুলের ব্যাটে প্রত্যাবর্তন করে ভারত। তবে হঠাৎই দুই উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে পড়ে যায়। ৫৬ রান করে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও রাহুল (২৪) আউট হয়ে যান। ১৪ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেটে ১০৪ রান।
    এরপর সমান তালেই লড়েছে বাংলাদেশ। ১৮তম ওভারে মুস্তাফিজ মাত্র ১ রান দিয়ে এক উইকেট তুলে নেন। শেষ দুই ওবারে ৩৪ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। কিন্তু পরের ওভারে রুবেল ২২ রান দিয়ে ভারতের কাজকে সহজ করে দেয়। যে কারণে শেষ ওভারে সৌম্য দুর্দান্ত প্রচেষ্টা চালিয়েও জয় আটকাতে পারেননি। জয়ের মূল নায়ক বলতে হবে দিনেশ কার্তিককেই। শেষ দিকে মাত্র ৮ বল থেকে দুটি চার ও তিনটি ছক্কার মারে ২৯ রান করে ভারতের জন্য অসম্ভবকে সম্ভব করে দেন তিনি।
    এর আগে ভারতকে ১৬৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করেছে সাকিব আল হাসানের দল। দুর্দান্ত একটা সূচনার আভাস দিয়ে আউট হয়ে যান দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৭ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে সুরেশ রায়নার হাতে ধরা পড়েন লিটন।
    ওয়ানডাউনে তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাব্বির রহমান। কিন্তু দলের স্কোরে কোন রান যোগ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান তামিমও। চাহালের বলে সীমানার দড়ির একেবারে উপরে শারদুল ঠাকুরের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৩৩ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। চতুর্থ উইকেটে সাব্বিরকে আশা জাগাতে থাকলেও জুটিতে ৩৫ রান করে ফিরেন মুশফিকও। দলীয় ১০৪ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ (২১)। সাব্বিরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন তিনি। এরপর রান আউট হন অধিনায়ক সাকিব।
    আর দলীয় ১৪৭ রানে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান সাব্বিরও ফিরেন সাজঘরে। ৫০ বল থেকে সাতটি চার ও চারটি ছক্কায় সাব্বির করেন ৭৭ রান। দলীয় স্কোরে এক রান যোগ হতেই ফিরেন রুবেল হোসেনও। তবে শেষ দিকে মিরাজ কিছুটা উত্তেজনা ছড়ান। ৭ বল থেকে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ১৯ রান করেন মিরাজ।
    স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিদেশীয় এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করে শ্রীলঙ্কা।

    স্বাধীনতার মাস মার্চ : ইতিহাসের প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

    সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

    ১৯৪০ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখ, তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম মহানগরী লাহোরে তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল : অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে তৎকালীন বাংলার অবিসংবাদিত রাজনৈতিক নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। ওই প্রস্তাব মোতাবেক তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির কথা বলা হয়েছিল। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশ মিলিতভাবে ১৯৪০ সালে ভৌগোলিক ও প্রশাসনিকভাবে যেমন ছিল, সেই বঙ্গপ্রদেশ নিয়ে। দ্বিতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বর্তমানের পাকিস্তান নামক দেশটি। তৃতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হতো বাকি ভারতের অমুসলিম অংশটি নিয়ে। চতুর্থ বা পঞ্চম বা এ রূপ আরো স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টির যৌক্তিকতা ও অবকাশ ওই প্রস্তাবে ছিল। ২৩ মার্চ ১৯৪০ তারিখে এই প্রস্তাবটি অত্যন্ত উষ্ণভাবে ও জোরালোভাবে সমর্থিত হয়ে পাস হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি ইতিহাসে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে খ্যাত। আজকের (২০১৮) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর মহানগরীতে ‘মিনার-এ পাকিস্তান’ নামক একটি বিরাট স্মৃতিস্তম্ভ আছে ওই জায়গাতেই, পাকিস্তান প্রস্তাব পাস হওয়ার ঐতিহ্যস্বরূপ। এ পাকিস্তান প্রস্তাব বাস্তবায়ন হওয়ার পথে যখন ছিল, তখন তৎকালীন মুসলিম লীগের অভ্যন্তরে এবং তৎকালীন মুসলিম নেতৃত্বের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র রচিত হয়। ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৪৬ সালে তৎকালীন অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উদ্যোগে, মুসলিম লীগের সভায়, পাকিস্তান প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত পাকিস্তান প্রস্তাব মোতাবেক, তৎকালীন (অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের) ব্রিটিশ-ভারতের পূর্ব অংশে অবস্থিত বঙ্গপ্রদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এবং তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের পশ্চিম অংশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগুলো মিলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে যার নাম পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়; যার পূর্ব অংশ ছিল পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান। ২৩ বছরের মাথায় সেই পূর্ব পাকিস্তান, রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে।
    স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করে রাখছি। পয়লা মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রতিশ্রæতি ভঙ্গের প্রথম পদক্ষেপ নেন; তিনি নবনির্বাচিত সদস্যসংবলিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন; ১৯৭১ সালের মার্চের ৩ তারিখ ছিল সেই অধিবেশনের তারিখ। ২ মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে, তৎকালীন ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রবের হাত দিয়ে, এক বিশাল ছাত্র সমাবেশে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ৩ মার্চ একই কলাভবনের সামনে তৎকালীন ছাত্রনেতা শাজাহান সিরাজের কণ্ঠ দিয়ে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। ৭ মার্চ ছিল অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ভাষণের দিন; তৎকালীন ঢাকা মহানগরের রমনা রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাখ লাখ মানুষের সামনে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণটি এখন ইউনেস্কোর সময়োপযোগী সৌজন্যে বিশ্ব মেমোরির ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ৭ মার্চের ভাষণ ছিল ওই মুহূর্তের প্রেক্ষাপটে বাঙালি জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। সেই দিকনির্দেশনার ভিত্তিতেই পরবর্তী দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়নে, ওই দিন তথা ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তারিখে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা না থাকলেও, স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য সব ধরনের উপাত্ত ও ইন্ধন উপস্থিত ছিল। ১৯ মার্চ ১৯৭১-এর কথা বলি। তখনকার আমলে জায়গাটি প্রসিদ্ধ ছিল জয়দেবপুর নামে; এটি ছিল একটি থানা সদর দপ্তর এবং ইতিহাসখ্যাত ভাওয়াল রাজাদের রাজধানী বা আবাসস্থল। সেই আবাসস্থলের নাম ছিল জয়দেবপুর রাজবাড়ী। বর্তমানে সেখানে গাজীপুর জেলার সদর দফতর অবস্থিত। ওই ১৯ মার্চ তারিখে, ভাওয়াল রাজাদের রাজবাড়ীতে অবস্থানকারী দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট স্থানীয় বেসামরিক জনগণকে নিয়ে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। তখন আমি ছিলাম ওই দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কনিষ্ঠতম অফিসার এবং বিদ্রোহীদের একজন।
    ২৫ মার্চের দিনের শেষে রাত্রি ছিল বাংলার ইতিহাসের কালরাত্রি, নিরীহ মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের রাত। ২৫ মার্চ দিনের শেষে পাকিস্তানিদের হামলার মুখে সমগ্র দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ হয়েছিল; প্রথম বিদ্রোহটি ছিল চট্টগ্রামে তার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও ঐতিহাসিক বিদ্রোহ হলো চট্টগ্রাম মহানগরের ষোলোশহরে অবস্থিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ওই রেজিমেন্ট কর্তৃক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা। একই ২৬ মার্চ তারিখে, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল-গাজীপুর থেকে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে; কুমিল্লা-মৌলভীবাজার-ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে। ২৬ মার্চ কাপ্তাই-চট্টগ্রাম-চুয়াডাঙ্গা ইত্যাদি এলাকা থেকে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালিরা বিদ্রোহ করে। ২৬ মার্চ হলো মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিন তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিন। ২৭ মার্চ তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরের অদূরে অবস্থিত কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে, তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা; তিনি প্রথমে নিজের নামে ঘোষণা করেন এবং কয়েক ঘণ্টা পরেই বঙ্গবন্ধুর নামে আবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন; এ ঘোষণাটিই পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে শুনেছিল। তৎকালীন রংপুর জেলার সৈয়দপুর সেনানিবাসে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক ছিলেন পাকিস্তানি লেফটেন্যান্ট কর্নেল, ফলে তারা বিদ্রোহ করার সময় প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তৎকালীন যশোর সেনানিবাসে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক একজন বাঙালি লেফটেন্যান্ট কর্নেল হলেও সিদ্ধান্তহীনতা বা যেকোনো কারণে তিনি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে পারেননি; ফলে দুই দিন বিলম্বে ২৯ মার্চ তারিখে তৎকালীন ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে, এ ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করে এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে যুদ্ধ করতে করতেই ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দুইটি পরিষ্কার স্বচ্ছ পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্ব হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাত্রি থেকে নিয়ে পেছনের দিকে বা অতীতের দিকে পাঁচ বছর বা সাত বছর বা উনিশ বছর বা ২৩ বছর ধরে ব্যাপ্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস দ্বিতীয় পর্বের শুরু হচ্ছে ২৬ মার্চ থেকে এবং শেষ হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে। প্রথম পর্বের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলো, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক দল ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্ব দুই ভাগে বিভক্ত। দ্বিতীয় পর্ব তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ পরবর্তী নেতৃত্বের একটা অংশ হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং দ্বিতীয় অংশ হলো মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সামরিক নেতৃত্ব। দ্বিতীয় পর্বের তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে পরবর্তী নয় মাস রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করেছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর বা কলকাতাকেন্দ্রিক প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। দ্বিতীয় পর্বের তথা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে পরবর্তী ৯ মাস রণাঙ্গনের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন, প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী এবং চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করেন সেক্টর ও ফোর্স কমান্ডাররা, সাবসেক্টর কমান্ডাররা, ব্যাটালিয়ন কমান্ডাররা, কোম্পানি কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রæপ কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের জেলা কমান্ডাররা, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের থানা কমান্ডাররা ইত্যাদি।
    স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস কোনোমতেই ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে নয় বরং আরো বহু বছর আগে থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস শুরু; এই কথা অতীতেও বহু কলামে বা আমার লেখা বইয়ে লিখেছি। আজ তার ব্যাখ্যায় যাবো না। যুদ্ধকালীন সময়েও, রণাঙ্গনে যেমন মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন, তেমনই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরাও রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের পেছনে সহায়কশক্তি ছিলেন। বিগত ৪৬ বছরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পরিচয়ধারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল। কিন্তু রণাঙ্গনের যোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। একটি দুঃখজনক অনুধাবন বা মূল্যায়ন উপস্থাপন করছি। ৪৬ বছরের ক্রমাগত ও অব্যাহত চেষ্টার ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসটিকে গৌণ ও প্রান্তিকরণ (ইংরেজি পরিভাষায় মার্জিনালাইজড) করে ফেলা হয়েছে। এই প্রান্তিকরণ বা মার্জিনালাইজেশন প্রক্রিয়া ১৯৭২-এর শুরুতেই আরম্ভ হয়েছিল। পরবর্তী অনুচ্ছেদে যৎকিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা আছে।
    সেই সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের সামনে দুইটা রাজনৈতিক চয়েজ বা অপশন ছিল। একটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সব দলের মানুষকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে বাংলাদেশ শাসন করা। আরেকটি চয়েজ ছিল যেহেতু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে সেহেতু শুধু আওয়ামী লীগকে দিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ শাসন করা। বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় অপশন তথা আওয়ামী লীগের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেন। ফলে জাসদের জন্ম হয়; যদিও জাসদের জন্মের এটাই একমাত্র কারণ নয়। ১৯৭২ সালের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু সরকার আহŸান জানিয়েছিল রণাঙ্গনের সব মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য সব মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধের আগে তার যেই পেশা ছিল সে যেন ওই পেশাতেই ফিরে যায়। উদাহরণস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার মৎস্যজীবীরা, মুক্তিযুদ্ধের আগের স্কুল শিক্ষকেরা, মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার মুদি দোকানদাররা, মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার কৃষক-শ্রমিক-ছাত্ররা সবাই নিজ নিজ পেশায় ফেরত গেলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগেরকার পুলিশরা পুলিশে ফেরত গেলেন, ইপিআর ইপিআরে (নতুন নামে বিডিআর, বর্তমান নাম বিজিবি) ফেরত গেলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সামরিক বাহিনীতে ফেরত গেলেন, সিএসপি বা ইপিসিএস বা পাকিস্তান আমলের অন্যান্য আমলা-ক্যাডারের কর্মকর্তা নতুন দেশ (বাংলাদেশের) ক্যাডারগুলোতে ফেরত গেলেন বা প্রশাসনে যুক্ত হলেন। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তথা বাংলাদেশের মাটিতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন এমন মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে, যুদ্ধ পূর্বকালের রাজনৈতিক কর্মী তুলনামূলকভাবে কমই ছিলেন; বেশির ভাগ রাজনৈতিক কর্মীই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন অথবা বিএলএফের সদস্য ছিলেন। বিএলএফ মানে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স; যার জনপ্রিয় নাম ছিল মুজিব বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্যরা অবশ্যই ছাত্রলীগ-যুবলীগের পরীক্ষিত কর্মী ছিলেন। সেই বাহিনীটি ১৯৭১-এর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। বিএলএফ নামক বাহিনীর জন্ম, গঠন, লালন-পালন, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সব কিছুই ছিল ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। ১৯৭১ সালে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আপন ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনি। অতএব ১৯৭২ সালের শুরুতে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সাড়া দিয়ে, সব মুক্তিযোদ্ধা সাবেক রাজনৈতিক কর্মী, তাদের সাবেক পেশা তথা রাজনীতিতেই ফেরত গেলেন। অতএব ১৯৭২ সালের শুরু থেকেই নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ শাসন করার জন্য পাওয়া গেল সাবেক রাজনৈতিক কর্মীদের এবং সাবেক আমলাদের যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। যেসব মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের শাসনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারলেন, তারা ছিলেন বিএলএফ। তাদের সাথে যুক্ত হলেন কিছুসংখ্যক নব্যরাজনৈতিক কর্মী, যারা কোনো প্রকারেই মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ট হতে পারেননি এবং যুক্ত হলেন হাজার হাজার পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তারা যারা ৯ মাস যেকোনো কারণেই হোক যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সারমর্ম: রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি বা প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারেননি; ১৯৭২-এর শুরু থেকেই তাদের স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারির মতো অবস্থানে বসানো হলো। তাদের চোখের সামনেই হয় বাংলাদেশ উন্নতি করছিল অথবা বাংলাদেশ স্থবির হয়েছিল অথবা বাংলাদেশের অবনতি হচ্ছিল। সন্তান জন্ম দেয়ার পর সন্তানের ভালো-মন্দ এবং লালন-পালনে সন্তানের মা-বাবারা যতটুকু আবেগের চেতনায় ও দায়িত্বের চেতনায় সক্রিয় থাকেন, ততটুকু বেতনভুক নার্স থাকতে পারেন না; এটাই স্বাভাবিক। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সেই আমলের বেদনা, সেই আমলের কোনো পর্যায়েই উপযুক্তভাবে মূল্যায়িত হয়নি। এই অবমূল্যায়নের খেসারত বাংলাদেশ অনেক দিয়েছে। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের প্রবীণত্বে এসে একান্ত কামনা আর যেন খেসারত দিতে না হয়।
    রাম ও অযোধ্যা বাংলাদেশের সাহিত্যে ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুপরিচিত শব্দ ও নাম। ইতিহাসের বা অতীতের কোনো কিছুর সাথে বর্তমানের বিচ্যুতি বা পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে অনেক সময় বাংলা ভাষায় প্রচলিত প্রবাদ ব্যবহার করা হয়। যথা: সেই রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই। রাম ও অযোধ্যার কাহিনী বা ইতিহাস হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্রগ্রন্থে (নাম : রামায়ণ) আছে। ২০১৮ সালে এসে রামের মতো পিতৃভক্ত ও ভ্রাতৃপ্রিয় এবং প্রজাঅনুরাগী শাসক যেমন পাওয়া যাবে না, তেমনই অযোধ্যার মতো শান্তি ও স্থিতিশীল নগরীও পাওয়া যাবে না। এটা ১৯৭২ না, তখনকার রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা এর সংখ্যাও আর অত নেই, ওই আমলের মতো সচেতনতাও আর নেই। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত ইতিহাস কেন পুনরাবৃত্তি করলাম? পুনরাবৃত্তি করার উদ্দেশ্য- এই কলামের তরুণ পাঠকরা যেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্নপর্যায়ের, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাস বা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট কিঞ্চিৎ হলেও অনুধাবন করতে পারেন। যেহেতু আজকের তরুণ পাঠকেরাই, তরুণ রাজনৈতিক কর্মীরাই, যেকোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের অনুঘটক হতে বাধ্য। যেই পুনরাবৃত্তি আমি করলাম, যেই বিচ্যুতিগুলোর কথা ওপরে তুলে ধরলাম, সেগুলো যদি অনুসরণ করি, ছাপার লাইনগুলোর মাঝখানে শূন্যস্থানের কথাগুলো যদি অনুমান করি, তাহলে, বর্তমান নিয়ে চিন্তা ও পরিষ্কার মূল্যায়ন করা সহজ হবে। সংক্ষিপ্ত কলামে কোনোমতেই পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
    লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি