• Bangla Dailies

    Prothom alo
    undefined
    Songbad
    daily destiny
    shaptahik
  • Weeklies

  • Resources

  • Entertainment

  • Sports Links

  • ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষেই জার্মানি

    ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অপরিবর্তিত রয়েছে শীর্ষ ছয় দলের অবস্থান। গতকাল সোমবার প্রকাশিত সবশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো সবার উপরে আছে জার্মানি।
    এরপর যথাক্রমে রয়েছে ব্রাজিল, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম এবং পোল্যান্ড। একধাপ উপরে উঠে ফ্রান্সের অবস্থান সপ্তম। তিন ধাপ উপরে উঠে ফরাসিদের পরে রয়েছে স্পেন। দলগুলো ইতোমধ্যে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে।
    চিলি নবম অবস্থানে থাকলেও তারা বিশ্বকাপের টিকিট পায়নি। দশম অবস্থানে থাকা পেরুকে ওশেনিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্বের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্লেঅফ খেলে মূলপর্ব নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে র‌্যাঙ্কিংয়ে আগের অবস্থান ১৯৬ নম্বরেই আছে বাংলাদেশ।

    নারীদের জন্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর কায়রো; সবচেয়ে নিরাপদ লন্ডন, টোকিও

    নারীদের জন্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক মেগাসিটি কায়রো অপর দিকে লন্ডন ও টোকিও সবচেয়ে সেরা, ১ কোটির বেশি লোকের বাস এমন শহর গুলোতে নারীরা কীভাবে বেড়ে উঠছে তার উপর প্রথম আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের জরিপে এ চিত্র দেখা যায়।

    টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত জরিপে বিশেষজ্ঞদের ১৯টি মেগাসিটিতে নারীদের ইস্যু কীভাবে নারীরা যৌন সহিংসতা থেকে ও ক্ষতিকারক সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে এবং তাদের ভাল স্বাস্থ্যসেবা, অর্থ এবং শিক্ষার সুযোগ -ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়।

    কায়রো, আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের রাজধানী, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে, এরপরেই রয়েছে পাকিস্তানের করাচি, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ দ্যা কঙ্গো’র কিনশাসা, ভারতের রাজধানী দিল্লি।

    লন্ডন সবচেয়ে মহিলা বান্ধবপূর্ণ শহর, তারপর টোকিও এবং প্যারিসের স্থান ছিল।

    এমন হার আগে দেখেনি বিশ্ব!

    দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অবশেষে সেঞ্চুরির দেখা পেল বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশী সেই সৌভাগ্যবান মুশফিকুর রহিম। একদিকে তার ব্যাটিং দৃঢ়তা অন্যদিকে সতীর্থদের কাছে থেকে পাওয়া ছোট ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসের সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে কিম্বার্লিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান তোলে মাশরাফি বাহিনী। অপরাজিত ১১০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত। এর আগে চট্টগ্রামে ২০১৫ সালে সৌম্য সরকার করেছিলেন ৯০ রানের ইনিংস। কিম্বার্লিতে গতকালের দলীয় সংগ্রহটিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৭ সালে মিরপুরে করা ৮ উইকেটে ২৫১।
    জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও ফাফ কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪৩ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা (২৮২/০)। এর আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে আড়াইশ’ বা ততোধিক রানের তাড়ায় ১০ উইকেটের জয় দেখেছিল একটি ম্যাচে। ২১টি চার ও দুটি ছক্কার ঝলমলে ইনিংস খেলে ডি কক অপরাজিত ছিলেন ১৬৮ রানে, আমলা ছিলেন ৮ চারে ১১০ রান নিয়ে। এর আগে সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ইংল্যান্ডের। গতবছর জানুয়ারিতে বার্মিংহ্যামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৫৬ তাড়া করে জিতেছিল ইংলিশরা।
    তামিমের সাথে হঠাৎই বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে মুস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরির খবর। অনুশীলনের সময় পায়ের গোড়ালিকে আঘাত পেয়েছেন কাটার মাস্টার। মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে তাই বোলিং আক্রমনে নেওয়া হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনকে। তাদের সহায়তার জন্যে আছেন সাইফউদ্দিন। এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-২০ ক্রিকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখানো তরুণ এই পেস অল-রাউন্ডারের। এছাড়া সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের সঙ্গে একাদশে ছিলেন নাসির হোসেনও।
    তবে তাদের সকলকে ছাপিয়ে এগিন কিম্বার্লির নায়ক একজনই, মুশফিক। তার হাত ধরেই যে ঘুচল সেঞ্চুরির অপূর্ণতা। এই ম্যাচের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে মুশফিকের রেকর্ড ছিল বিবর্ণ। আগের পাঁচটি ইনিংস ৬, ১, ২, ৩ ও ২৪ রানের। এবার উপহার দিলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি সেঞ্চুরি আছে মুশফিকের। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে একটি করে। তার আগের চার সেঞ্চুরির তিনটি দেশের মাটিতে, অন্যটি জিম্বাবুয়েতে। দক্ষিণ আফ্রিকায়ও বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক। দেশটিতে আগের সেরা ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের ৭৩। পঞ্চম সেঞ্চুরিতে শাহরিয়ার নাফীসকে (৪) ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল তামিম ইকবাল (৯) ও সাকিব আল হাসানের (৭)।
    ওয়ানডে সিরিজের আগে মোটেও ভালো অবস্থায় ছিলেন না টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক। বাজে দুই হারের দায় কিছুটা ছিল তার কাঁধে। সংবাদ সম্মেলনে বোলারদের সমালোচনা করে নিজেই পড়েছিলেন সমালোচনার মুখে। সংবাদ সম্মেলনে তার কথা-বার্তা পছন্দ হয়নি বোর্ডের। সামনে নেতৃত্ব হারানোর শঙ্কা। সেই মুশফিক ওয়ানডেতে লড়লেন বুক চিতিয়ে। দলকে পথ দেখালেন সামনে থেকে। তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি, এতটা চাপে আছেন। শুরু থেকেই খেলেছেন শট। একেকটি চার-ছক্কায় বেড়েছে রানের গতি। চাপও সব যেন সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
    মুশফিক যখন ক্রিজে আসেন তখন খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দুটি জুটিতে দলকে গড়ে দেন ভিত। এক প্রান্তে উইকেট পড়তে থাকলেও মুশফিক ছিলেন অবিচল। ডেন প্যাটারসনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ৫২ বলে ফিফটিতে পৌঁছান মুশফিক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসকে পরিণত করেন সেঞ্চুরিতে। কাগিসো রাবাদার বলে দুই রান নিয়ে তিন অঙ্কে যান তিনি। ১০৮ বলের ইনিংসে সেঞ্চুরি পেতে দুটি ছক্কার সঙ্গে হাঁকান ১০টি চার। বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদÐ মুশফিকের এই ইনিংস। চারে নেমে শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত ১১৬ বলে।
    ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে। এছাড়া লিটন (২১), সাকিব (২৯), মাহমুদুল্লাহ (২৬), সাব্বির (১৯), নাসির (১১) সবাই দারুণ শুরু করেও কেউই নিজেদের ইনিংস টেনে লম্বা করতে পারেনি। তবে এক প্রান্তে অবিচল ছিল মুশফিকের ব্যাট। দারুণ ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। ১১৬ বলে ১১টি চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস উপহার দেন মুশফিক। অভিষিক্ত মোহাম্মাদ সাইফউদ্দিন ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ বলে করেন ১৬ রান। প্রোটিয়াদের হয়ে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নেন কাগিসো রাবাদা, ৪৮ রানে ২টি নেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস।
    স্কোর কার্ড
    বাংলাদেশ-দ.আফ্রিকা, ১ম ওয়ানডে
    টস : বাংলাদেশ, কিম্বার্লি
    বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
    ইমরুল ক ডি কক ব প্রিটোরিয়াস ৩১ ৪৩ ৪ ১
    লিটন ক ডু প্লেসি ব রাবাদা ২১ ২৯ ৪ ০
    সাকিব ক আমলা ব তাহির ২৯ ৪৫ ২ ০
    মুশফিক অপরাজিত ১১০ ১১৬ ১১ ২
    মাহমুদউল্লাহ ক মিলার ব প্রিটোরিয়াস ২৬ ২৭ ৩ ১
    সাব্বির ক প্যাটারসন ব রাবাদা ১৯ ২১ ১ ১
    নাসির ক আমলা ব রাবাদা ১১ ৮ ২ ০
    সাইফ ক প্যাটারসন ব রাবাদা ১৬ ১১ ১ ১
    অতিরিক্ত (লেবা ৫, ও ১০) ১৫
    মোট (৭ উইকেট, ৫০ ওভারে) ২৭৮
    উইকেট পতন : ১-৪৩ (লিটন), ২-৬৭ (ইমরুল), ৩-১২৬ (সাকিব), ৪-১৯৫ (মাহমুদউল্লাহ), ৫-২৩৭ (সাব্বির), ৬-২৫৩ (নাসির), ৭-২৭৮ (সাইফ)।
    বোলিং : রাবাদা ১০-১-৪৩-৪, প্যাটারসন ৯-০-৬৯-০, তাহির ১০-০-৪৫-১, প্রিটোরিয়াস ১০-০-৪৮-২, ফেহলুকাওয়ে ১০-০-৬০-০, ডুমিনি ১-০-৮-০। অসমাপ্ত

    ইন্টারনেট থেকে শীত নিবারণ!

    শিরোনামটি অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর লাগতে পারে। মনে হতে পারে ইন্টারনেটের পক্ষে কিভাবে শীত নিবারণ সম্ভব। তবে এই প্রকল্পে জড়িতরা বলছেন, ইন্টারনেট নিজে না পারলেও এর ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ ব্যবহার করে বাসিন্দাদের বাড়িঘর গরমের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ সরবরাহ করা সম্ভব। আর সেই চেষ্টাই করছে সুইডেন।

    ইন্টারনেটের ডাটাসেন্টারে গেলে নজরে পড়বে ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ঘরে হাজার হাজার কম্পিউটার সারি সারি রাখা। ভেতরে ঠান্ডা হাওয়া। অথচ আমরা ভালো করেই জানি একটি কম্পিউটার যখন চলে তখন পেছন দিক দিয়ে কি পরিমাণ গরম হাওয়া বের হয়। যারা কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন তারা বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পান। তাহলে হাজার হাজার কম্পিউটার একসাথে দিনরাত ২৪ ঘন্টা বিরামহীন চললে কি পরিমাণ তাপ উত্পন্ন হয় তা সহজে অনুমেয়।  কম্পিউটারগুলোকে টানা চালু রাখতে গেলে এই তাপ শোষণ করে শীতল হাওয়া সরবরাহ করতে হয়।

    সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত ডাটাসেন্টারের তাপ বের করে ভেতরের পরিবেশ শীতলীকরনের কাজ করে ফরটুম ভার্মি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেন্টারের চারপাশ দিয়ে বসানো আছে বিশেষভাবে তৈরী পাইপ। এই পাইপের ভেতর দিয়ে শীতল পানি প্রবাহিত হয়। ডাটাসেন্টারে উত্পন্ন হওয়া তাপ শোষণ করে এই পানি গরম হয়ে যায়। এরপর প্রচন্ড গরম এই পানি বহির্গমন পথ দিয়ে বাইরে চলে যায়। কিন্তু ফরটুম ভার্মি পরিকল্পনা করেছে এই গরম পানি ব্যবহার করে বিশেষ কায়দায় আগামী বছর নাগাদ স্টকহোমের ২৫০০ আবাসিক বাড়িতে শীত নিবারনের ব্যবস্থা করবে। ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ অপচয় করতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি। আর দীর্ঘমেয়াদে তার লক্ষ্য ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের ১০ শতাংশ আবাসিক বাড়িতে ডাটাসেন্টারের তাপ ব্যবহার করা। সরকারি সূত্র জানায়, স্টকহোমের ২০ হাজার বাড়িতে শীত নিবারনের জন্য পর্যাপ্ত তাপ উত্পাদন করতে কমপক্ষে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ খরচ হয়। ফেসবুক ডাটাসেন্টারে ১২০ মেগাওয়াট শক্তি খরচ হয়।

    এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আমরা এতদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ইন্টারনেটের এই ‘উপজাত’ নিয়ে একটুও ভেবে দেখিনি। ডাটাসেন্টারে উত্পাদিত তাপ শত শত ফ্যান দিয়ে টেনে বাইরে বের করে দেয়া হতো। পরে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে তাপ শোষণ প্রযুক্তি ব্যবহার কর হয়। এখন এই তাপও যে মানুষের কাজে লাগানো যাবে সেটা অনেকের কল্পনাতেও ছিল না।

    ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’

    আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন-

    كُلُّ نَفْسٍ ذَآىِٕقَةُ الْمَوْتِ ؕ

    প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।

    যে কোন প্রাণীই হোক তার উপর মৃত্যু একবার আসবেই। ভালো হোক খারাপ হোক তাকে মরতে হবে। আপনারা পত্রিকায় পড়েছেন হয়তো, গত মঙ্গলবার মাগরিবের পর দুনিয়া থেকে এক বড় বুযুর্গ আল্লাহর খাস ওলী হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে গেছেন। ইন্তেকাল করেছেন আবরারুল হক হারদুঈ রহ.। বাংলাদেশে খুব আসা-যাওয়া ছিল তাঁর। অনেক বারই এসেছেন। সর্বপ্রথম ১৯৮১ তে এসেছিলেন। ২০০৪ এর ডিসেম্বরে শেষ বার এসেছেন। প্রায় সপ্তাহ খানেক ছিলেন। বয়সও হয়ে গিয়েছিল তাঁর ৮৫ থেকেও বেশি। মাঝে একবার বেশি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, আশা ছিল না তিনি দুনিয়াতে থাকবেন। এরপর আল্লাহ রাববুল আলামীন সুস্থ করলেন। সুস্থ হওয়ার পর আরো প্রায় চার বছরের মত তিনি দুনিয়াতে ছিলেন। এরপর চলে গেছেন।

    এ রকম দুনিয়াতে যেই আসে সেই চলে যাবে। এখানে আসার অর্থই তাকে যেতে হবে। আর আসার পর থেকেই যাওয়ার সময় এগুচ্ছে। একজন লোক আসার পর থেকে আমরা দেখছি সে বড় হচ্ছে। কিন্তু আসলে তার যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। যাওয়ার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে। এই দুনিয়াতে কতজন আসে আবার কতজন যায়। কারো যাওয়াটা একটা বড় বিষয় আর কারো যাওয়াটা কোন বিষয়ই নয়। কোথায় সেই হিন্দুস্তানে আবরারুল হক সাহেবের ইন্তেকাল হয়েছে, কিন্তু হরদুঈ এলাকা বা শুধু হিন্দুস্তান নয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আলোচনা চলছে যে, আল্লাহর খাস এক ওলী ছিলেন তিনি। মানুষকে সঠিক রাস্তা দেখাতেন, সুন্নতের রাস্তা দেখাতেন, খারাপ ছেড়ে ভালো পথে চলার পথ দেখাতেন। এই নেক কাজ তিনি করতেন, মানুষকে নেক কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাঁর দিন-রাতের সাধনা ছিল এবং জীবন-মরণ শুধু সুন্নতের জন্যই ছিল। কিভাবে সুন্নাত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, প্রতিটা ঘরে প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে কিভাবে সুন্নতী জীবন আসতে পারে এবং কিভাবে মানুষ গুনাহ থেকে, বিদআত থেকে, কুফর ও শিরিক থেকে বাঁচতে পারে- সেই এক ফিকির আর মাথা ব্যথা ছিল সর্বদা। উম্মতের দরদে, উম্মতের ব্যথায় তিনি ব্যথিত ছিলেন সব সময়। এই কথাটাই দেখবেন এখন আলোচনা হচ্ছে। শুধু এখানে নয় সব জায়গায়। কারণ তিনি নিজেকে আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন, নিজের জীবনকে আল্লাহর দ্বীনের জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন।

    ‘আমার জীবন আমার মরণ আল্লাহর জন্য।’ তিনি তাঁর জীবনকে আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন। আর আল্লাহর বিধান এবং আ্ল্লাহর নীতি হল, যে আল্লাহর জন্য হয়েছে, নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দিয়েছে আল্লাহর জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছে আল্লাহ তার হয়ে যান। আর যখন আল্লাহ তার হয়ে যাবেন তখন সকল মানুষ তার হয়ে যাবে। সমস্ত মাখলুকের অন্তর তো আল্লাহর হাতে। আল্লাহর কুদরতের কব্জায়। মাখলুকের দিলের খালেক আল্লাহ, দিলের মালিক আল্লাহ। তাদের অন্তরে তোমার মুহাববত আল্লাহই দিয়ে দিবেন। তো আজকে হযরত আবরারুল হক রহ. এর জীবনী বলা উদ্দেশ্য নয়, জীবনী বের হবে। পত্রিকায়ও আপনারা কিছু পড়েছেন, আরো অনেক কিছু জানা যাবে। যে কথাটা আজকের মজলিসে আমি বলতে চাই সেটা হল এই যে, আল্লাহর বান্দারা যাচ্ছেন। চলে যাচ্ছেন আল্লাহর ওলীরা। তাঁদের জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু নেওয়ার আছে। কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন-

    اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ هَدَی اللّٰهُ فَبِهُدٰىهُمُ اقْتَدِهْ ؕ

    এদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়েত দান করেছেন। সুতরাং তুমিও তাদের পথের অনুসরণ কর। তুমিও তাদের হেদায়েতের পথে চল। যাদেরকে আল্লাহ তাআলা হেদায়াত দান করেছেন। যারা সিরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনিত শরীয়তের উপর, রাসূলের সুন্নতের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আল্লাহ বলেছেন, তুমি তাদের রাস্তায় চল। তাহলে সেটাই হল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর   রাস্তা, সাহাবায়ে কেরামের রাস্তা। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রাস্তায় চলেছেন সেটাই হেদায়েতের একমাত্র রাস্তা। আল্লাহকে রাজী-খুশি করার, আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র রাস্তা। তো এই যে লোকটা জীবনভর সুন্নতের দাওয়াত দিয়ে গেলেন, তাঁর শিক্ষা-দীক্ষার মধ্যে ছোট ছোট কিছু কথা আছে। একেবারে ছোট ছোট এক-দুইটা বাক্য, অল্প কয়েকটা কথা। যদি ভালোভাবে বুঝে এগুলোর উপর আমল করা যায় তাহলে সুন্নত এবং শরীয়তের রাস্তায় চলা আমাদের জন্য অনেক আসান। এই ধরনের কথা তাঁর জীবনে এবং শিক্ষা-দীক্ষার মধ্যে অনেক আছে। এটা তাঁর আবিস্কৃত নয়, তার আবিষ্কৃত হলে কে তার অনুসরণ করত? সব রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের জীবন ও সীরাত থেকে নেওয়া জিনিস। সে জন্যই বলা।

    একটা ‘মাকূলা’ তিনি বলতেন বেশি বেশি ‘মা লা ইউদরাকু কুল্লুহু লা ইউতরাকু কুল্লুহু।’ আমরা বাংলায়ও বলি- ‘পূর্ণ নয় তো আধাই সই।’ এটা একটা থিওরি ছিল তার। এটা সহজ সরল কথা, যা দুনিয়ার ব্যাপারে আমরা বুঝি, আখেরাতের কাজের ব্যাপারে এটার দিকে লক্ষ করি না। আবরারুল হক সাহেব বলতেন, এটার দিকে তোমরা লক্ষ রাখ। যেটুকু পার শুরু কর। আমরা মনে করি, আহা বুযুর্গ হতে জানি কত কিছু করা লাগে। এত কিছু কি করা যাবে? এর জন্য অনেক বড় সাধনা দরকার। একেবারে বড় কোরবানী দরকার, ত্যাগ-তিতিক্ষা দরকার। সেটার জন্য তো আমরা ফারেগ নই। সেই সুযোগ আমাদের নেই। সেই হিম্মত আমাদের নেই। হযরত বলেন যে, না এটা কোনা কথা নয়। বরং তুমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুটি হাদীসের দিকে লক্ষ কর। অর্থাৎ কোনো নেক কাজকে ছোট মনে করে ছেড়ে দিবে না। এমন ভাববে না যে, এটুকু করলে আর কি হবে? আল্লাহর রাসূল বলেন, যেটুকু পার সেটুকুই কর। এটুকু করলেও অনেক কিছু করা হবে। কতটুকু? চিন্তাও করবেন না আপনি যে, এটাও একটা নেক কাজ। রাসূল বলছেন, একজন কুয়া থেকে পানি নিয়ে এসেছে। তুমিও পানি উঠাচ্ছ। তুমি তোমার পাত্র দিয়ে তার পাত্রে একটু পানি ঢেলে দাও, এটা একটা নেক কাজ। একজন মুরুববী ওযু করবেন, তাকে কল চিপে এক লোটা পানি ভরে দাও। এই যে একটা নেক কাজ এটাকে তোমরা ছোট মনে করো না। এটাও তোমার কাজে আসবে, তোমার উপকারে আসবে। এমনকি একজনের সাথে সাক্ষাত হয়েছে তো তার সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত কর। হাসিমুখে জিজ্ঞাসা কর- ভাই ভালো আছেন? হাসিমুখে সাক্ষাত না করে যদি একেবারে মুখ কালো করে একজনের সামনে দিয়ে সালাম কালাম ছাড়া চলে যায় তাহলে তার কাছে খারাপ লাগবে না? সালাম দিলে সে ওয়া আলাইকুমুস সালাম বলল। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলে সে বলল ভাল আছি। এটাকে তো তুমি কিছুই মনে করলে না। আল্লাহর রাসূল বলেন, এটাও একটি নেক কাজ। এটাকেও তুমি ছোট মনে করো না। এর মানে এই নয় যে, আমাকে বড় নেক কাজ করতে হবে না। তা না। তারপরও ছোটগুলোকে ছোট মনে করে যে ছেড়ে দিচ্ছ এতে তুমি অনেক সওয়াব হাতছাড়া করছ। এটা করো না। এই হাদীসের উপর বেশি বেশি আমল কর। কোন নেকীকে ছোট মনে করে ছাড়বে না। আর আরেকটি হাদীস – ‘কোন গুনাহকে ছোট মনে করবে না’ যে, এটা করলে কী হবে? এটাতো ছোট্ট একটা অপরাধ। অপরাধ তো অপরাধই। ছোট হোক না কেন। গুনাহ তো গুনাহই। পাপ পাপই, ছোট আর বড় কী? নাফরমানীটা কার সাথে হচ্ছে দেখতে হবে না? তাহলে অপরাধটা ছোট হোক আর বড় হোক কিন্তু যার সাথে অপরাধ, যার অবাধ্যতা, তিনি কি ছোট? নাউযুবিল্লাহ তিনি তো সেই মহান রাববুল আলামীন । তাহলে এ গুনাহ ছোট বা এটা করলেই আর কী হবে- এমন মনে করব না। অপরাধতো অপরাধ। গুনাহ তো গুনাহই। এটা ছোট হলেও আমি করব না। আর নেক কাজ ছোট হলেও যেহেতু নেক কাজ তাই আমি করব। এই থিওরি এবং যেটা হাদীসের কথা সেটা খুব বেশি বেশি করব। যা পার শুরু কর। সবগুলো এক সাথে ধরতে পারবে না। তো একটা একটা করে শুরু কর। কিন্তু আমাদের সমস্যা হল সব নেক কাজ করতে পারব না এজন্য একেবারে ছোটগুলোও করব না। যেটা পারি ওটাও করব না। দুনিয়া পাল্টে গেছে। যমানা পাল্টে গেছে। এখন এই সমস্ত পুরান ওয়াজ করলে চলে না। এখন নেক আমল করতে সমস্যা। সমাজ এটাকে বাধা দেয়। কিন্তু হাজারো নেক আমল এমন আছে যেগুলোতে সমাজ কিছু বলবে না। বিবাহে আলোকসজ্জা না করলে, অপচয় না করলে হয়তো কিছু বলবে। ছেলেকে বিয়ে করাল অথচ কিছুই করল না। আমি সমাজে থাকব, তাদের সাথে বসবাস করব, তাই আমি তাদের মন-মানসিকতার বিরোধিতা কি করে করি। বুঝলাম এটা আপনার দুর্বলতা যার ফলে এ নেক কাজটা আপনি করতে পারলেন না। কিন্তু এই মসজিদে ঢুকতে এবং বের হতে কতগুলো সুন্নত, ডান পা দিয়ে ঢোকা সুন্নত, বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত, দরুদ শরীফ পড়া সুন্নত। বিসমিল্লাহী ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক, এটুকু দোয়া শেখার ব্যাপার শুধু। আর দোয়াটা মুখস্থ হওয়া পর্যন্ত শুধু বিসমিল্লাহই পড়ি। আর ‘আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক’ তো লেখাই থাকে মসজিদের সামনে। এটা পড়লেন। ডান পা দিয়ে ঢুকলেন বের হওয়ার সময় আগে বাম পা দিয়ে বের হলেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’ পড়লেন। এখানেও ঢোকার সময়ের মত বিসমিল্লাহ আছে দুরূদ শরীফ আছে। বের হওয়ার সময়ও ‘বিসমিল্লাহী ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা’ পড়ে নিলেন। এতেও কি সমাজে বাধা দিবে? ঘরে ঢুকতে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে ডান পা দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বললে সমাজ বাধা দিবে? কেউ বাধা দিবে না। সমাজ কিসের নাম? আমার আর আপনার নামইতো সমাজ। আমি আপনি ঠিক হলেইতো সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। এমনিভাবে যমানা কিসের নাম? যমানা পাল্টে গেছে না আমরা পাল্টেছি? বরং আমরা পাল্টে গেছি। সমাজে তো আসমান থেকে এসে কোন কিছু নাযিল হয়নি। সমাজ আমি আর আপনিই তো। যে বিষয়টা আমি বুঝছি। সে বিষয়টাকে বিবেক ও শরীয়ত খারাপ বলছে সেটা আমি বলি না কেন? এটা গলত কাজ অতএব আমি তা করব না। আমি একথা বলি, তারপর আরেকজন বলবে। আবার আরেকজন বলবে। তাতেই তো সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। আপনি বলবেন, আমি বললে কি হবে আরেকজন তো বলবে না। কিন্তু তাতে কি যায় আসে? আপনি বলুন। আপনাকে কি কেউ মেরে ফেলবে নাকি? কেটে ফেলবে আপনাকে?

     

    কেন মানবাধিকারের এই যমানায় যদি আপনি সমাজের বিরোধিতা করে কোন কাজ ছাড়েন তাহলে আপনাকে মেরে ফেলবে কেউ? সেই বর্বর যুগ তো চলে গেছে। এখন তো স্বর্ণযুগ, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুগ (!) এ যুগে কেন ভয় পান আপনি? যেটাকে খারাপ মনে করি, সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ খারাপ মনে করে তাও করব? আনুষ্ঠানিকতা খারাপ। তা করব কেন? সমাজ, সামাজিক চাপ। সবাই এই কথা বলি। কিন্তু কে কাকে চাপ দেয়? এটা স্মরণ রাখতে হবে আমাদেরকে। সমাজ ভিন্ন কিছুর নাম নয়, বরং আমার আপনার নাম। যমানা বদলায়নি। আমি আর আপনি বদলেছি। তাহলে আমরা যদি পরিপূর্ণ সংকল্প নিয়ে এগুলো করার ইচ্ছা করি এবং দুই একজনে হিম্মত করে নিজেদেরকে সঠিক রাস্তায় আনার এবং গলত কাজ থেকে বাঁচার জন্য কাজ শুরু করি অল্প কয় দিনেই দেখবেন যমানা ঠিক হয়ে গেছে, সমাজ ঠিক হয়ে গেছে। এই কথাটা আবরারুল হক সাহেব বার বার বলতেন যে, সমাজের দিকে তাকিও না, যমানা পাল্টে পেছে এই সমস্ত অজুহাত দিও না।

    শরীয়তের মাসআলা কী? সুন্নত তরীকা কী? তুমি সেটা শোন। আলেমদের থেকে বুঝ। আর হিম্মত করে এটার উপর আমল শুরু কর। তোমাকে দেখে দেখে অন্যেও পাল্টাতে থাকবে নিজেদের তরীকা। তুমি তাদেরকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এরকম রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের, সীরাতের অনেক দিক তিনি বার বার বলতে বলতে অনেক কিছুর পরিবর্তন শুধু তাঁর এলাকায়ই নয় অনেক জায়গায় এরকম অনেক পরিবর্তন এসেছে। এমনকি সেই পরিবর্তন অনেককে খারাপ কাজ ফেলে রাসূলুল্লাহর সেই আসল সুন্নাত এবং তরীকার দিকে নিয়ে গেছে।

    মেসির হ্যাটট্রিক, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

    খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, তার কাঁধে চড়েই দল উঠেছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেই লিওনেল মেসির কাঁধে চড়েই সব শঙ্কা দুর করে এবার বিশ্বকাপের মূলপর্ব নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে তিনটি গোলই করেন ফুটবল জাদুকর।

    দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে ছয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণও ছিল অনিশ্চিত। ইকুয়েডরে আজ তাই জিততেই হতো আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু দলের সাম্প্রতিক হতচ্ছাড়া ফুটবল আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৭শ’ মিটার উচ্চতার বৈরী আবহাওয়া চোখ রাঙাচ্ছিল মেসিদের। এরপর ম্যাচ শুরু হয়ে ঘড়িতে মিনিটের কাটা একবার ঘুরে আসার আগেই গোল খেয়ে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন আরো ধুসর করে ফেলে দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

    কিন্তু দলে যে আছেন একজন লিওনেল মেসি। দলকে সমতায় ফেরাতে ফুটবল জাদুকর সময় নেন মাত্র ১১ মিনিট। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার সাথে ওয়ান টু খেলে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। আট মিনিট বাদে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে নেন দলকে।

    এরপরও ইকুয়েডরের বৈরী আবহাওয়ায় ঠিক ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল না আর্জেন্টাইনরা। বল দখলের লড়াইয়েও তারা ছিল পিছিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ১৭তম মিনিটে আবারো চোখ জুড়ানো এক শৈল্পিক জাদুতে ব্যবধান ৩-১ করে দেন মেসি। ১৯৭০ সালের পর বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা কাটিয়ে তার দলও পৌঁছে যায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে।
    একই রাতে বলিভিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে রাশিয়ার টিকিট হাতে পেয়েছে উরুগুয়ে। পেরুর মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে উরুগুয়ের সঙ্গী কলম্বিয়া। তবে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপের স্বপ্ন চূর হয়েছে টানা দুবারের কোপা চ্যাম্পিয়ন চিলির। পাঁচে থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে পেরু। প্রথম দল হিসেবে এই অঞ্চল থেকে আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ব্রাজিল।

    আপনি দেশত্যাগ করবেন না: প্রধান বিচারপতিকে বার সভাপতি

    সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আপনি (প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) দেশত্যাগ করবেন না। দেশের মানুষ আপনার সঙ্গে আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আপনাকে স্বপদে বহাল করব।
    গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বার সভাপতি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করুন। তিনি স্বেচ্ছায় ছুটিতে গেছেন কি না এটা জাতি জানতে চায়।
    সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগ আজ গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। যেখানে প্রধান বিচারপতি নিজেও ছাড় পাচ্ছেন না।
    বার সম্পাদক এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান বিচারপতি বিদেশ যেতে চান না। রবিবার দিনভর উনার বাস ভবনে জিও  লেটারে সই দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সই করেননি। আইনজীবীদের আহ্বান, আপনি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
    মানববন্ধনে আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সানাউল্লাহ মিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, বার সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সদস্য আয়শা আক্তার, শামীমা সুলতানা দীপ্তি, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মোহাম্মদ আলী এবং  গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ শতাধিক আইনজীবী অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

    হোক্কাইদো ভিডিওতে ধরা পড়লো বিরল প্রজাতির কালো শিয়ালঃ উৎস অজানা

    উত্তর হোক্কাইদো’তে ধারণ করা একটি ভিডিও থেকে বিশেষজ্ঞরা একটি কালো শিয়াল সনাক্ত করেছেন কিন্তু তারা এর উৎস সম্পর্কে কেবল মাত্র অনুমানই করতে পারছেন কেননা এটি একটি অত্যন্ত বিরল প্রজাতির শিয়াল।

    একটি গতি-সক্রিয় ক্যামেরা সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ বিকেল ৩টার দিকে সম্পূর্ণ কালো রঙা রেড ফক্স শিয়ালটির হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করে।

    “আমি তো প্রথমে ওটাকে কুকুর ভেবেছিলাম” শিরেতোকো যাদুঘরের কিউরেটর তাকাহিরো মুরাকামি (৪৭) বলেন, “কিন্তু মনে হলো লেজটা কুকুরের তুলনায় খুব বেশি মাত্রায় ফুঁয়োফুঁয়ো লাগছে এবং পরে দেখলাম আসলে ওটা শিয়াল।”

    “যাদুঘরে ১০ বছরের কর্মজীবনে আমি এই প্রথম কোনো কালো শিয়াল দেখলাম”।

    মুরাকামি বলেন, শিয়ালের জন্যে কালো একটি বিরল রং এবং জিনগত পরিবর্তনের ফলে তা ঘটে থাকতে পারে।

    তিনি আরো জানান, লোমের জন্যে তাইশো যুগ (১৯১২-১৯২৬) এবং শোওয়া যুগে (১৯২৬-১৯৮৯) কানাডা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে কালো শিয়াল আমদানি করা হয়েছিলো এবং সেগুলোই পরে বন্য হয়ে থাকতে পারে এবং তাদের জিন স্থানান্তর করে থাকতে পারে।

    হোক্কাইদো ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ’র মেডিকেল জীববিজ্ঞান গবেষক কোজি উরাগুচি (৫৯) বলেন কয়েকটি আইনু শব্দ রয়েছে যে গুলো “কালো শিয়াল”কে উদ্ধৃতি করেছে।

    “প্রাচীন জাপানে কালো শিয়াল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কিন্তু তারা খুবই বিরল” উরাগুচি বলেন “আমি বুনো শিয়াল পর্যবেক্ষণ করে আসছি ৩০ বছর ধরে এবং এ পর্যন্ত মাত্র দু’টি কালো শিয়াল দেখতে পেয়েছি”।

    ফুকুশিমা প্রিফেকচারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

    শুক্রবার রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে ফুকুশিমা প্রিফেকচার ও তার আশেপাশে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫.৯।

    ০ থেকে ৭ মাত্রার জাপানি স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৫ এর কম।

    জাপানের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিলো ফুকুশিমা প্রিফেকচারের উপকূলের নিকট মাটির ৫০ কিলোমিটার গভীরে। ধারণা করা হচ্ছে এটি ছিলো ২০১১ সালের ১১ মার্চের ভূমিকম্পের আফটারশক। সুনামির কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি।

    ফুকুশিমা ১নং পরমাণু চুল্লী সহ তোহোকু অঞ্চলে পারমাণবিক স্থাপনা গুলোতে কোনো ধরণের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়নি।

    জাপান মার্কিন গরুর মাংসরক্ষারপর্যালোচনা প্রস্তাব প্রস্তাব

    জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই মাসে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক আলোচনায় জরুরি কর পর্যালোচনা প্রস্তাব করা হয়েছে।

    দেশের কৃষকদের রক্ষা করার জন্য আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের হিমায়িত গরুর মাংস আমদানির উপর জারি করা হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে গেলে ৩৮.৫ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর বসানো হয়েছে।

    মার্কিন সরকার জাপানের গৃহীত ব্যবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কেননা তারা জাপানে তাদের রপ্তানি সম্প্রসারণ করতে চাইছে।

    জাপানি কর্মকর্তারা প্রতি মাসে একবারের পরিবর্তে প্রতি ১০ দিনে একবার আমদানি পরিমাণ পরীক্ষা করার প্রস্তাব দিচ্ছেন। এটি প্রচলিত ব্যবস্থাতেই উত্তরোত্তর সমন্বয় সাধন করতে পারে।

    আমেরিকার দাবি আরো কঠোর হওয়া ঠেকাতেই এই প্রস্তাব করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এনএইচকে।

    অলিম্পিক সাইট গুলোতে ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা সীমা অতিক্রম করে গেছে

    ২০২০ টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক সাইট গুলোতে ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি অনুমোদিত স্তরের চেয়ে উচ্চতর পাওয়া গেছে।

    টোকিওর সাংগঠনিক কমিটি এবং টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার ২৬ জুলাই এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শহরের ওয়াটারফ্রন্ট এলাকা এবং ওদাইবা মেরিন পার্কে জলবায়ুর জরিপ পরিচালনা করে।

    পার্কটিকে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উন্মুক্ত সাঁতার এবং ট্রাইথলনের ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

    জরিপের ফলাফলে কলিনফর্ম ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য পদার্থ ২৬ দিনের অর্ধেকের বেশি সময়ের জন্যে জাপান সরকার এবং গেমস আইনে নির্ধারিত মান অতিক্রম করে গেছে।

    পার্কে পানির গুণমান উন্নত করার জন্য মেট্রোপলিটন সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি বিবেচনা করবে এবং ক্রীড়া সংগঠন ও আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটিকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করবে।

    রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসায় যুক্তরাষ্ট্র

    যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ষষ্ঠবারের মতো দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপ ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংলাপে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
    একইসঙ্গে মানবিক সহায়তা, শান্তিরক্ষা মিশন, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, সামরিক সহযোগিতা, সন্ত্রাস মোকাবিলা, নৌ সীমান্ত নিরাপত্তাসহ আঞ্চলিক ইস্যুতে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।
    ঢাকায় প্রাপ্ত এক খবরে বলা হয়েছে, রাখাইনে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর রোহিঙ্গাদের চরম মানবিক সংকটে সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ।
    সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মিলার। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আমেরিকা) আবিদা ইসলাম।

    সুচির ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননা প্রত্যাহার

    রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে দেয়া সম্মাননা ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের জন্য তাকে এই সম্মাননা দেয় অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল।
    কিন্তু অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, মিয়ানমারের নেত্রীর জন্য এই সম্মাননা যথোপযুক্ত নয়। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পরে বাংলাদেশে ৫ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের কারণে অং সান সুচি দীর্ঘদিন ইয়াংগুনে গৃহবন্দী ছিলেন। এজন্য তিনি ও তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে থাকেন। ২০১৫ সালে উন্মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে তার দল সরকার গঠন করে।
    কিন্তু সম্প্রতি রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর শুরু হওয়া নতুন সংঘাত ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকায় আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব ও সংস্থা তার সমালোচনা করেছে। সোমবার অক্সফোর্ড সিটি কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, জাতিসংঘের কাছ থেকে যেসব তথ্যপ্রমাণ আসছে তাতে অং সান সুচি আর ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননার জন্য যথোপযুক্ত নন। আগামী মাসের বিশেষ বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা প্রত্যাহার করা হবে, তবে মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই সিদ্ধান্তের বদল হতে পারে।
    এর আগে জানা যায়, অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজ সুচির একটি পোট্রেট প্রদর্শনী থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। বিবিসি।

    ঈসালে সওয়াব : কিছু মাসনূন পদ্ধতি

    ‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ইহদাউস সাওয়াব’)। এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা।

    ঈসালে সওয়াবের প্রেরণা

    কষ্টার্জিত আমলের সওয়াব যে কাউকে দান করা হয় না। এ সাধারণত তাকেই দান করা হয় যার প্রতি মহব্বত ও আন্তরিকতা আছে। প্রিয়জন আখেরাতের পথিক হয়ে গেলে তার জন্য এমন কিছু করা মানুষের স্বভাবজাত আগ্রহ, যা তার শান্তি-সফলতার পক্ষে সহায়ক হবে, তার জন্য আল্লাহর রহমত ও করুণার উপায় হবে। ফলে তিনি তার গোনাহ মাফ করে দিবেন, মর্যাদা উঁচু করবেন এবং সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে তুলবেন।

    এই মহব্বতের একটি অনুষঙ্গ হল আত্মীয়তা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ঈমান, সৎকর্ম ও সদ্ব্যবহার। এজন্য পিতা-মাতা, দাদা-দাদী প্রমুখের জন্য যেমন ঈসালে সওয়াব করা হয়, তেমনি উস্তাদ-মুরব্বী, আলেম-উলামা, ওলী-বুযুর্গ ও নবী-রাসূলগণের জন্যও করা হয়; বরং ঈমান, সৎকর্ম ও সদাচারে যারা অগ্রগামী তাদের জন্যই বেশি ঈসালে সওয়াব করা হয়। আর তাতে সহযোগিতার চেয়ে সৌভাগ্য ও সাআদাত অর্জনের মনোভাবই কাজ করে বেশি। কোনো নেক লোকের সঙ্গে ঈসালে সওয়াবের সম্পৃক্ততাও সৌভাগ্য বৈকি?

    এ কারণে সবার গুরুত্ব ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত ঈমান, সৎকর্ম ও  উত্তম আচার-ব্যবহারে অগ্রগামিতা এবং তা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।

    মূল বিষয়টি সম্পূর্ণ স্বীকৃত

    জীবিতদের দান করা আমল মৃতদের জন্য কল্যাণকর হওয়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর কাছে একটি স্বীকৃত বিষয়। মৌলিক দিক থেকে তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই; মতভেদ শুধু বিস্তারিত ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু মুতাযিলা সম্প্রদায় তা অস্বীকার করেছে। এদের মতে জীবিতদের দান করা কোনো আমলই মৃত ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর নয়, দুআ-ইস্তিগফার ও সদকাও নয়।

    এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা-বিরুদ্ধ। এজন্য এর উপর কোনো মন্তব্য না করে সরাসরি ঈসালে সওয়াবের পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হল।

    ঈসালে সওয়াবের কিছু পদ্ধতি

    এক. দুআ

    ইবাদতের সারনির্যাস হচ্ছে আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ সমর্পণ এবং চূড়ান্ত বিনয় ও মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ। আর এটা দুআর মধ্যে সর্বোত্তমরূপে প্রকাশিত হয়। দুআ অর্থ ডাকা। নিজেকে অসহায় ও নিঃস্ব মনে করে কারো সামনে দু’হাত প্রসারিত করার চেয়ে বিনয় ও সমর্পণ আর কী হতে পারে? তাই দুআর মর্যাদা ও গুরুত্ব অসীম। হাদীসে দুআকে ইবাদত বরং ইবাদতের মগজ বলা হয়েছে।

    ইসলামী ভ্রাতৃত্বের একটি সাধারণ হক হল, আপনপর জীবিত-মৃত নির্বিশেষে সকল মুসলিম ভাইয়ের জন্য দুআ করা। আর যারা না-ফেরার জগতে পাড়ি জমিয়েছেন তারা যেহেতু কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন এবং আমাদের আগে ঈমান এনেছেন তাই তাদের জন্য বিশেষভাবে কাম্য। দুআ জীবিত-মৃত সকলের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। এ কুরআন ও হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে কিছু আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করছি।

    ১. কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে,

    وَ الَّذِیْنَ جَآءُوْ مِنْۢ بَعْدِهِمْ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَ لِاِخْوَانِنَا الَّذِیْنَ سَبَقُوْنَا بِالْاِیْمَانِ وَ لَا تَجْعَلْ فِیْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا رَبَّنَاۤ اِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ۠ .

    এবং (ফাই-এর সম্পদ তাদেরও প্রাপ্য আছে ) যারা তাদের (অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদের) পরে এসেছে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! ক্ষমা করুন আমাদের এবং আমাদের সেই ভাইদেরও যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে এবং আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের প্রতি কোনো  হিংসা-বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি অতি মমতাবান, পরম দয়ালু। Ñসূরা হাশর (৫৯) : ১০

    এখানে পূববর্তী মুমিনদের জন্য (যাতে জীবিত ও মৃত সকলই আছেন) দুআ করার প্রশংসা করা হয়েছে। দুআ যদি তাদের জন্য উপকারী না হয়, তবে এ প্রশংসার কী অর্থ থাকে?

    হাফেয সাখাবী রহ. (৯০২হি.) বলেন, এখানে পূর্ববর্তীদের জন্য দুআ করায় তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। বোঝা গেল যে, দুআ উপকারে আসে। Ñকুররাতুল আইন পৃ. ১২৩

    ২. অন্যত্র ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    رَبَّنَا اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ یَوْمَ یَقُوْمُ الْحِسَابُ.

    হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন। Ñসূরা ইবরাহীম (১৪) : ৪১

    ৩. অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    رَبِّ اغْفِرْ لِیْ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِمَنْ دَخَلَ بَیْتِیَ مُؤْمِنًا وَّ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ  وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیْنَ اِلَّا تَبَارًا۠.

    হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। Ñসূরা নূহ (৭১) : ২৮

    ৪. সূরা মুহাম্মদ-এ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে,

    فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ اللهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ.

    জেনে রেখো, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং ক্ষমাপ্রার্থনা কর নিজ ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এবং মুসলিম নর-নারীদের জন্যও। Ñসূরা মুহাম্মদ (৪৭) : ১৯

    ৫. অন্যত্র ফিরিশতাদের এ দুআ বর্ণিত হয়েছে,

    اَلَّذِیْنَ یَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَ مَنْ حَوْلَهٗ یُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَ یُؤْمِنُوْنَ بِهٖ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِیْنَ اٰمَنُوْا  رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَیْءٍ رَّحْمَةً وَّ عِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِیْنَ تَابُوْا وَ اتَّبَعُوْا سَبِیْلَكَ وَ قِهِمْ عَذَابَ الْجَحِیْمِ رَبَّنَا وَ اَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ ِالَّتِیْ وَعَدْتَّهُمْ وَ مَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآىِٕهِمْ وَ اَزْوَاجِهِمْ وَ ذُرِّیّٰتِهِمْ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِیْزُ الْحَكِیْمُ وَ قِهِمُ السَّیِّاٰتِ  وَ مَنْ تَقِ السَّیِّاٰتِ یَوْمَىِٕذٍ فَقَدْ رَحِمْتَهٗ  وَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ.

    যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তাঁর তাসবীহ পাঠ করে ও তাঁর প্রতি ঈমান রাখে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করে, হে আমাদের  প্রতিপালক! তোমার রহমত ও জ্ঞান সমস্ত কিছু জুড়ে ব্যাপ্ত। যারা তাওবা করেছে ও তোমার পথ অনুসরণ করেছে তাদের ক্ষমা করে দাও এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দাখিল কর স্থায়ী জান্নাতে, যার ওয়াদা তুমি তাদের সাথে করেছ এবং তাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেক তাদেরকেও। নিশ্চয়ই তুমিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। এবং তাদের সকল অকল্যাণ থেকে রক্ষা কর। সে দিন তুমি যাকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবে তার প্রতি তো তুমি দয়াই করবে। আর এটাই মহাসাফল্য। Ñসূরা মুমিন (৪০) : ৭-৯

    এ দুআগুলোতে জীবিত-মৃতের পার্থক্য ছাড়া সাধারণ মুমিনদের জন্য দুআ করা হয়েছে।

    ৬. দুআ মৃতের পক্ষে কল্যাণকর হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল হল জানাযার নামায। জানাযার নামায বস্তুত সালাতরূপ দুআ। জানাযার নামাযে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব দুআ পড়তেন সেগুলো থেকেই তা পরিষ্কার। এজন্য নিষ্ঠার সাথে দুআ করা কাম্য।

    হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

    إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء.

    তোমরা যখন মাইয়িতের নামায পড়বে তখন তার জন্য নিষ্ঠার সাথে দুআ করবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৯৯

    এখানে জানাযার নামাযের দু-একটি দুআ উল্লেখ করা যেতে পারেÑ

    اللهم اغفر لحينا وميتنا، وشاهدنا وغائبنا، وصغيرنا وكبيرنا، وذكرنا وأنثانا، اللهم من أحييته منا فأحيه على الإسلام، ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان.

    ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের জীবিত-মৃতদের মাফ করুন। আমাদের উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সকলকে মাফ করুন। ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখেন তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন আর যাকে মৃত্যু দেন তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দিন। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৮০৯

    اللهم اغفر له وارحمه، وعافه واعف عنه، وأكرم نزله، ووسع مدخله، واغسله بالماء والثلج والبرد، ونقه من الخطايا كما نقيت الثوب الأبيض من الدنس، وأبدله دارا خيرا من داره، وأهلا خيرا من أهله، وزوجا خيرا من زوجه، وأدخله الجنة، وأعذه من عذاب القبر.

    ইয়া আল্লাহ, তাকে মাফ করে দিন, তার প্রতি রহম করুন, তাকে নিরাপদে রাখুন, তার ভুলত্রুটি মার্জনা করুন। তার সম্মানজনক আপ্যায়ন করুন, তারা প্রবেশস্থলকে প্রশস্ত করে দিন। তাকে পানি, বরফ ও বৃষ্টি দ্বারা ধুয়ে-মুছে দিন এবং গোনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার করেছেন। তাকে দান করুন তার ঘরের চেয়ে উত্তম ঘর, তার পরিবারের চেয়ে উত্তম পরিবার এবং তার স্ত্রীর চেয়ে উত্তম স্ত্রী । তাকে জান্নাতে স্থান দিন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৩

    ৭. মৃত্যুর পরে বেশ কটি মনযিল রয়েছে। আর প্রত্যেকটি মনযিলই ভয়াবহ। প্রথম মনযিল হল কবর। এখানে দাফনপর্ব শেষে মাইয়িতের ‘সুয়াল-জওয়াব’ হয়। তাই এ সময় তার জন্য দুআ করা বিশেষভাবে কাম্য, যাতে আল্লাহ তাআলা তার ‘সুয়াল-জওয়াব’ সহজ করে দেন।

    উসমান ইবনে আফফান রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেনÑ

    استغفروا لأخيكم، وسلوا له بالتثبيت، فإنه الآن يسأل.

    তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা কর এবং সে যেন সুদৃঢ় থাকতে পারে সে দুআ কর। কারণ এখনই তাকে ‘সুয়াল’ করা হবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২২১

    ৮. কবর যিয়ারত আখেরাতের স্মরণে সহায়ক হওয়ায় হাদীসে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যিয়ারতকারীর এক বড় করণীয় সাব্যস্ত করা হয়েছে মৃতের জন্য দুআ ও ইস্তিগফার। এ ক্ষেত্রে হাদীসে বেশ কিছু দুআ বর্ণিত হয়েছে। একটি দুআ এ রকমÑ

    السلام على أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، ويرحم الله المستقدمين منا والمستأخرين، وإنا إن شاء الله بكم للاحقون.

    এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪

    ৯. জানাযার নামায ও কবর যিয়ারতের বাইরেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করেছেন। উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সালামাকে দেখতে এলেন, তখন তার চোখ খোলা ছিল। তিনি চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন, যখন রূহ কবয করা হয় তখন চোখ তার অনুসরণ করে। এ কথা শুনে লোকেরা কান্না শুরু করে দিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ভালো ছাড়া অন্য কিছু বলাবলি করো না। কারণ, তোমরা যা কিছু বল ফিরিশতারা তার উপর আমীন বলেন। তারপর তিনি এভাবে দুআ করলেন,

    اللهم اغفر لأبي سلمة، وارفع درجته في المهديين، واخلفه في عقبه في الغابرين، واغفر لنا وله يا رب العالمين، وافسح له في قبره، ونور له فيه.

    হে আল্লাহ! আপনি আবু সালামাকে ক্ষমা করে দিন, হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা উঁচু করুন, তার পরিবারের অভিভাবক হয়ে যান। হে জগতসমূহের প্রতিপালক! তাকে ও আমাদেরকে মাফ করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত ও নূরানী করে দিন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯২০

    একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু আমের রা.-কে এক যুদ্ধে আমীর নিযুক্ত করে পাঠিয়েছিলেন। একটি তীরের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার আগে ভাতিজা আবু মূসা আশআরী রা.-কে বলে গেছেন, তিনি যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার সালাম পৌঁছান এবং তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে বলেন। আবু মূসা আশআরী রা. তা-ই করলেন। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি আনিয়ে অযু করলেন এবং দু’হাত প্রসারিত করে দুআ করলেনÑ

    اللهم اغفر لعبيد أبي عامر، اللهم اجعله يوم القيامة فوق كثير من خلقك أو من الناس.

    হে আল্লাহ! আপনি আবু আমেরকে মাফ করে দিন। তাকে কিয়ামতের দিন আপনার বহু সৃষ্টির উপর (বর্ণনাকারী বলেন, অথবা বলেছেন, মানুষের উপর) মর্যাদা দিন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৯৮

    এই আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, দুআ জীবিত ও মৃত সকলের জন্য কল্যাণকর।

    দুই. সদকা

    আল্লাহ তাআলা নিজ ইলম ও হিকমতের ভিত্তিতে কাউকে করেছেন সচ্ছল, কাউকে অসচ্ছল। তবে সবার রিযিকের দায়িত্ব তাঁর হাতে। কিন্তু তা বান্দা পর্যন্ত পৌঁছার উপায় সকলের ক্ষেত্রে এক নয়; বরং বয়স, ব্যক্তি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিভিন্নতায় তা বিভিন্ন হয়ে থাকে। একটি উপায় হল সদকা বা দান-খায়রাত। এটা অনেক ফযীলত ও সওয়াবের কাজ। তবে এর একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তে সামান্য সদকাও মূল্যবান। আর অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বিশাল সদকাও মূল্যহীন।

    এই সদকা জীবিতদের মত মৃতদের জন্যও করা যায় এবং এর সওয়াব তাদের কাছে পৌঁছে। এ বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এখানে কিছু হাদীস পেশ করা যেতে পারে।

    ১. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? বললেন, হাঁ। সাদ রা. বললেন, আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মা’র জন্য সদকা। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৫৬

    عن ابن عباس رضي الله عنهما: أن سعد بن عبادة رضي الله عنه توفيت أمه وهو غائب عنها، فقال: يا رسول الله! إن أمي توفيت وأنا غائب عنها، أينفعها شيء إن تصدقت به عنها؟ قال: نعم. قال: فإني أشهدك أن حائطي المخراف صدقة عليها.

    ২. আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, একলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন, কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সদকা করে যেতেন। আমি তার পক্ষ থেকে সদকা করলে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন?  বললেন, হাঁ। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৪

    عن عائشة أن رجلا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: يا رسول الله! إن أمي افتلتت نفسها ولم توص، وأظنها لو تكلمت تصدقت، أفلها أجر، إن تصدقت عنها؟ قال: نعم.

    ৩. আবু হুরায়রা. থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? বললেন, হাঁ। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৩০

    عن أبي هريرة أن رجلا قال للنبي صلى الله عليه وسلم: إن أبي مات وترك مالا، ولم يوص، فهل يكفر عنه أن أتصدق عنه؟ قال: نعم.

    ৪. আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, আস ইবনে ওয়ায়েল জাহেলীযুগে একশো উট যবাহ করার মানত করেছিল। অতপর (তার ছেলে) হিশাম তার পক্ষ থেকে ৫০টি উট যবাহ করে। (বাকি ৫০টি অপর ছেলে আমর যবাহ করতে চান।) এ ব্যাপারে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তোমার পিতা যদি তাওহীদ স্বীকার করত আর তুমি তার পক্ষ থেকে রোযা রাখতে বা সদকা করতে, তবে এ তার কাজে আসত। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৭০৪

    عن عمرو بن شعيب، عن أبيه، عن جده، أن العاص بن وائل نذر في الجاهلية أن ينحر مائة بدنة، وأن هشام بن العاص نحر حصته خمسين بدنة، وأن عمرا سأل النبي صلى الله عليه وسلم عن ذلك؟ فقال: أما أبوك فلو كان أقر بالتوحيد، فصمت وتصدقت عنه، نفعه ذلك.

    এ হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হল যে, সদকার সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে।

    মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ ও সদকা কল্যাণকর হওয়া উম্মাহর সর্বসম্মত মত। এতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর কোনো দ্বিমত নেই।

    ইমাম নববী রহ. (৬৭৬হি.) إذا مات الإنسان -এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় লেখেন,

    وفيه أن الدعاء يصل ثوابه إلى الميت، وكذلك الصدقة، وهما مجمع عليهما.

    এ থেকে প্রমাণ মেলে যে, দুআর সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে। এমনিভাবে সদকার সওয়াবও। এ দুটি সর্বসম্মত বিষয়। Ñশরহু সহীহ মুসলিম ১১/৮৫

    অন্যত্র এক প্রসঙ্গে লিখেছেন,

    ৃمن أراد بر والديه فليتصدق عنهما، فإن الصدقة تصل إلى الميت وينتفع بها، بلا خلاف بين المسلمين، وهذا هو الصواب، وأما ما حكاه أقضى القضاة أبو الحسن الماوردي البصري الفقيه الشافعي في كتابه >الحاوي< عن بعض أصحاب الكلام من أن الميت لا يلحقه بعد موته ثواب، فهو مذهب باطل قطعا، وخطأ بين مخالف لنصوص الكتاب والسنة وإجماع الأمة، فلا التفات إليه ولا تعريج عليه.

    …যে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে চাই সে যেন তাদের পক্ষ থেকে সদকা করে। সদকা মাইয়িতের কাছে পৌঁছে এবং তার উপকারে আসে। এতে কোনো দ্বিমত নেই। আর এটাই সঠিক। আর মাওয়ারদী কতক ‘আহলে কালাম’ থেকে যে কথা বর্ণনা করেছেন যে, মাইয়িতের কাছে কোনো সওয়াব পৌঁছে না, সেটা সম্পূর্ণ বাতিল ও ভুল। কিতাব-সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা বিরুদ্ধ। সুতরাং তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। Ñশরহু সহীহ মুসলিম ১/৮৯-৯০

    আবুল হাসান আলী ইবনে মুহাম্মদ আলখাযিন (৭৪১হি.) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও ইবনে আব্বাস রা.-এর হাদীস দুটি উল্লেখ করে বলেন,

    وفي الحديثين الآخرين دليل على أن الصدقة عن الميت تنفع الميت ويصله ثوابها. وهو إجماع العلماء.

    وكذلك أجمعوا على وصول الدعاء وقضاء الدين، للنصوص الواردة في ذلك.

    হাদীস দুটিতে এ কথার প্রমাণ আছে যে, সদকা মৃতের উপকারে আসে এবং এর সওয়াব তার কাছে পৌঁছে। এটা আলেমদের সর্বসম্মত মত। এমনিভাবে তারা এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন যে, দুআ ও ঋণ পরিশোধের সওয়াবও পৌঁছে। কারণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীস রয়েছে। Ñতাফসীরে খাযিন ৪/২১৩

    আরো দেখুন : ইকমালুল মুলিম ৩/৫২৪; আলআযকার, নববী পৃ. ১৫১; শরহে মিশকাত, তীবী ১/৩৬২; কিতাবুর রূহ পৃ. ১৩২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৭/৪৪০; সুবুলুস সালাম ২/১৬৯; তাসহীলুল ইলমাম বি ফিকহি আহাদীসি বুলূগিল মারাম ৪/২৯৪

    গাজর ভেবে স্পোর্টস কার খেয়ে ফেললো গাধা

    সব সময়ই গাধা কঠোর পরিশ্রমী প্রাণি কিন্তু পৃথিবীর সব দেশেই গাধা সম্পর্কে মানুষের ধারণাটা একটু অন্যরকম। অনেক সময় দেখা যায় কম বোধবুদ্ধি সম্পন্ন লোককে লোকে গাধা বলে ডাকে।
    জার্মানিতে একটি দামী স্পোর্টস কারের একজন মালিক একটি গাধার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং এতে জয়লাভ করেছেন। মার্কাস জাহ্ন নামের এই লোক গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তার বহুমূল্য ম্যাকলারেন স্পাইডার স্পোর্টস কারটি ভোগেলসবার্গ শহরের একটি আস্তাবলের কাছে পার্ক করেন।
    ফিরে এসে তিনি দেখেন যে গাড়ির পেছন দিকের অংশটি কেউ চিবিয়ে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। খোঁজখবর নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে এই কাজটি ছিল ঐ আস্তাবলের ভাইটাস নামের এক ক্ষুধার্ত গাধার। স্থানীয় পুলিশের ধারণা, কমলা রঙের গাড়িটিকে ঐ গাধা একটি বিশাল গাজর বলে ভুল করে থাকতে পারে।
    এরপর ঐ গাড়ির মালিক গাধার মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার রায়ে আদালত ৬৮০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ভাইটাসের মালিককে আদেশ দেন।
    এই রায়ের বিরুদ্ধে গাধার মালিক আপিল করবেন বলে জানা যাচ্ছে। তার যুক্তি, এই ঘটনায় ভাইটাসের কোন দোষ নেই। আর তিন লক্ষ ১০ হাজার ইউরো দামের এই গাড়িটিকে আস্তাবলের পাশে পার্ক করে রাখা গাড়ির মালিকের মোটেই উচিত হয়নি বলে তিনি বলছেন। খবর বিবিসি।